Sat. Jul 12th, 2025
পাকিস্তান কি সামরিক শাসনের দিকেপাকিস্তান কি সামরিক শাসনের দিকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তান কি সামরিক শাসনের দিকে। ইন্টারনেট-অনলাইন যুগে চলমান বিশ্বটাই যেন মানুষের হাতের মুঠোয়। যে দেশেই যে ঘটনাই ঘটুক; তন্মধ্যে যে সব ঘটনায় বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয় থাকে। বিশ্ব শান্তিতে সহায়ক বিষয়টি আগ্রহী-গণতন্ত্রকামী বিশ্ববাসীর নজরে আসে মূহুর্তেই। পাকিস্তানের  সরকার ও প্রধান বিরোধী দল পিটিআইয়ের মধ্যকার চলতি জানুয়ারির ২ তারিখের বৈঠকটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। এতে সৃষ্ট সংকট সমাধানে অগ্রগতি না হওয়ায়ই সচেতনদের মধ্যে উত্থাপিত প্রশ্নই-আজকের আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের শিরোনাম।

পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ‘ডনে’র পরিবেশিত তথ্য মতে, পাকিস্তানের তেহরিকে ইনসাফ (পিটি আই) দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আবারো আলোচনায় আগ্রহী। পিটিআই উভয় পক্ষকে আন্তরিকতা নিয়ে গনতন্ত্রের স্বার্থে যুক্তিযুক্ত আলোচনার জন্য ৩১ জানুয়ারির পর আবারো আলোচনার প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। গণতান্ত্রিক  ব্যবস্থা স্থায়ী করতে প্রস্তাবটি বিবেচ্য বলে গণতন্ত্রকামী-বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ মনে করেন। নয়তো, ‘পাকিস্তান কি সামরিক শাসনের দিকে’ শিরোনাম থেকে কি শব্দটি বাদ দিলে যা হয়, এক পর্যায়ে তাই হয়তো হবে।

ক্রিকেট বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমিদের প্রিয় কৃতি ক্রিকেট ব্যাক্তিত্ব পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পিটিআই প্রধান ইমরান খাঁনসহ অন্যান্য বন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিটি বৃহৎস্বার্থে বিবেচনার দাবি রাখে বলে অনেকে মনে করেন। এদিকে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রক্তার্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের কাছে মুক্তিযুদ্ধে সামরিক জান্তাদের ভূমিকার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে ইমরান খান যে মন্তব্য করেছেন। সেই মন্তব্যকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সচেতন শান্তিকামি মানুষ পাকিস্তান সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মেনে নেয়াও প্রয়োজন বলে মন্তব্য করছেন পিটিআইয়ের এসব যৌক্তিক ও বিবেচ্য প্রস্তাবাদি বিবেচ্য। ইমরান খান ও অন্যান্য নেতাদের মুক্তির বিষয় আলোচনার একটা সমাধান বের হবে বলেও মন্তব্য অনেকের। তার জন্যও সৃষ্ট-সংকট সমাধান আবশ্যক।

পাকিস্তানের সরকার ও পিটিআইয়ের মধ্যে শুধু একাধিকবার নয়, প্রয়োজনে বারবার, আন্তরিকতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার মধ্যে দিয়ে সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ওপরই নির্ভর করছে। তবে এটাকে উপেক্ষা করলে ‘আম ও ছালা’ (আম নেয়ার বস্তা) দুটোই ক্ষমতালোভী সামরিক কর্মকর্তাদের ঘরে পৌঁছে যাবে। যদিও শুধু পাকিস্তান নয় বিশ্বের সকল দেশ বা রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অতন্দ্র প্রহরী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ভূমিকা থেকে বিদ্যমান বাহিনীর (সংখ্যাগরিষ্ঠ যেহেতু অতন্দ্র প্রহরী) শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলবেন; দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিবেকবান মানুষ এমনটাই আশা করেন।

পাকিস্তানের অতীত  ইতিহাসও স্বাক্ষ্য দেয় ক্ষমতালোভী সামরিক কর্মকর্তারা লোভী মনোবাসনা পূরণে রাষ্ট্র ক্ষমতার প্রতি দৃষ্টি রাখে বটে। কিন্তু রাজনৈতিক আঙ্গনে যে কোন সংকট রাজনৈতিকভাবে যদি আলোচনার মাধ্যমে যথাযথ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়, তাহলে রাজসিংহাসনের দিকে তারা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকে মাত্র। সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা লোভী কর্মকর্তাদের অতীত ইতিহাস পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের অনুধাবন করতে হবে এবং বিবেচনা রাখতে হবে। কেননা, অতীত বলছে সরকার ও পিটিআইয়ের আলোচনা সফল হোক, ক্ষমতালোভী সেনা কর্মকর্তারা তা চায় না। বরং নানা কৌশলি ষড়যন্ত্রের  মাধ্যমে সংকট ঘণীভূত করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সেই পরিস্থিতিতে ক্ষমতা দখলেরও সুযোগ নিতে স্বার্থান্বেষী বিচারকদের প্রভাবিত করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘কলকাটি’ অতীতেও নেড়েছে, নারছে। তাই রাজনীতিবিদরা দায়িত্ব-সুযোগ দেওয়ার পথ রুদ্ধ করা। যাতে ক্ষমতালোভীরা পাকিস্তানবাসীকে সামরিক শাসনের অধিনে ছুড়ে ছুড়ে দিতে না পারে।

পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক সচেতন জনগণ এবং সামরিক বাহিনীকে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় বিশ্বে কি ঘটছে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় রাখতে হবে। কেননা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার এক বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘একলা চলো নীতিতে চলা’ সম্ভব নয়। এমনিতেই বিশ্বের ছোট মাঝারি দেশ সমূহে বাজার দখল ও অধিপত্য বিস্তার নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সমূহ যুদ্ধ বাঁধাতে কুন্ঠা করেনি, করছে না ও করবেও না। উপরন্ত সাম্রাজ্যবাদ হিসেবে বিশ্বের সামনে নিজেদের প্রকাশ ঘটাতে ভারত উদগ্রীব হয়ে উঠেছে। এবং অখন্ড ভারত গড়ার স্বপ্নে বিভোর উগ্রহিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোট সরকার ভারতের কূটকৌশলি অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে সম্প্রসারণবাদী ভারত তার চারদিকের রাষ্ট্রগুলোতে অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত রাখা উভয় পক্ষের জন্য বাঞ্চনীয়। তবে সময় ক্ষেপন শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে।

গণতন্ত্রকামী-শান্তিপ্রিয় মানুষের পক্ষ থেকে আশাবাদ থাকবে-‘পাকিস্তানের সরকার ও পিটিআই নেতৃবৃন্দকে বিশ্ব পরিস্থিতিসহ ভারতের মোদি সরকারের আকাঙ্খা বিবেচনায় নিয়ে অভ্যন্তরীন সংকট সমাধানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুদৃঢ় করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সচেষ্ট হবেন। একইভাবে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে আফগানিস্তানসহ ভারতের চারদিকের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে দেশ জনগণের স্বার্থে।

এতদসঙ্গে বিবেচ্য, সারা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো অব্যাহত রাখতে বিশ্বের ছোট মাঝারি দেশগুলোর বাজার দখল ও আধিপত্য বিস্তারের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ বাঁধিয়ে অস্ত্র বিক্রি করতে যেমন তৎপর হয়ে উঠেছে। তেমনি সেই তৎপরতায় যুদ্ধ ঘিরে ধরতে ধরতে, বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে। সেই মূহুর্তে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বিশ্বপরিসরের একজন মানষীর উক্তি অবলম্বনে উল্লেখ্য, ‘ব্যক্তির চেয়ে সংগঠন বড়, সংগঠনের চেয়ে দেশ বড়। আর জনগণই ক্ষমতার উৎস’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *