ডেস্ক থেকে বিশেষ ক্রীড়া প্রতিবেদক: ফুটবল ফেডারেশন নারীমর্যাদা নাকি শৃঙ্খলাকে প্রাধান্য দিবে। এভাবেও বাফুফের কাছে নারী মর্যাদা’ নাকি ‘শৃঙ্খলা’ প্রাধান্য পাবে। হ্যাঁ, শুধু জাতীয় নারী ফুটবল দলের কথা বলছি না; দু’দুবার সাফজয়ী জাতীয় নারী ফুটবলের দলের কথা বলছি। ভেবেছিলাম বিশেষত: গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে নারী ফুটবলারদের নারী মর্যাদা বা নারী হিসেবে নারী সম্মানের প্রতি অবজ্ঞা-অবমাননার বিষয় নারীবাদী সংগঠনগুলো ফুঁসে উঠেবে। একইভাবে নারীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার নারী-পুরুষ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহনে, রক্তার্জিত সফল গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে; নির্বাচিত রাজনৈতিক সচেতন বিএনপির নেতৃস্থানীয় ফুটবলপ্রেমী সভাপতি তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বাফুফে কমিটি নারীদের অসম্মানের বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এবং সম্মানজনক সমাধান হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এমন ভাবনাই যেন, যথাযথ নয়।
অনস্বীকার্য যে, একটি ‘মরা লাশ, যত নাড়াচাড়া করা যাবে, তত গন্ধ ছড়াবে’। ধর্মীয় দিক থেকে এবং পরিবেশগত কারণে ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, মৃত্যুর পর যত দ্রুত সম্ভব লাশ দাফন করা ও সৎকার করা আবশ্যক। মরা লাশের সাথে তুলনার হেতু, একজন নারীর বড় সম্পদ-তাঁর ‘ইজ্জত’। সেই আলোকে নারী সম্মান বা নারী মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার পর এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে, হত্যা ধর্ষণের হুমকির মধ্য দিয়ে দশ-দশদিন পার হয়ে গেলো। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, জাতির জন্য গর্ব ব
য়ে আনা নারী ফুটবল দলের নারীদের; নারী হিসেবে নারী মর্যাদা বা সম্মানকে বাদ দিয়ে যেহেতু ইজ্জত শব্দটি নয়, সেহেতু তাদেরকে নারী মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে হয় ও হচ্ছে। পক্ষান্তরে তদন্ত কমিটির সামনেও একইভাবে উপস্থিত হয়ে, নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে ও হচ্ছে। যা তাঁদের সম্মানের জন্য, মর্যাদার জন্য লজ্জাস্করও বটে। আর যদি ন্যায় বিচার পান, নারীরা তখন হয়তো কিছুটা শান্তনা খুঁজে পাবেন।
কিন্তু নারী অধিকার ও নারী মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি নারী-পুরুষের সমঅধিকারে বিশ্বাসী যাঁরা, যাঁরা তাকিয়ে ছিলেন এবং প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাকিয়ে আছেন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি তাবিথ আউয়ালের এবং নেতৃত্বাধীন ফেডারেশন কমিটির দিকে। তাঁরা জেনেছেন বা জানতে পেরেছেন, তিনি বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন। এবং তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে উভয় পক্ষের সাথে বৈঠক মিলিত হয়ে আলোচনার পর ফুটবলারদের অনুশীলনে অংশগ্রহনের আহ্বান জনালে ফুটবলাররা কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন করতে রাজি হননি। হয়তো সম্মান -মর্যাদা সমন্বিত ইজ্জতের বিষয়তো-তাই।
তবে আশাবাদী আমরা সম্মানজনক সমাধান হবে। দৈনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে, বাফুফে মহিলা কমিটির প্রধান মাহফুজা খাতুন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সাবিনা খাতুনরা ফিরে আসবেন। সভাপতিও হয়তো তেমনটা চান বলেই মাঠে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। এ পর্যায়ে আমরা আশাবাদী সম্মানজনক সমাধানের। এবং সেক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক সমাজকারনে যেন পুরুষদের প্রাধান্য প্রকাশ না পায়। এবং নারী ফুটবলাররাও বিবেচনায় নিবেন তাদের কেরিয়ারে যেন কোন আঘাত না আসে বরং নতুন নতুন কেরিয়ার গড়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের কেরিয়ার উচ্চতায় নিতে পারেন এবং জাতিকে গর্বিত করে জাতীয় ক্রীড়া ইতিহাসে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।
কিন্তু বাফুফে সভাপতি ও মহিলা কমিটি প্রধানের আশার সাথে আমাদের আশাবাদ পূরণে প্রধান বাধা; দৈনিকের খবর মতে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত ‘শৃৃঙ্খলা ভঙ্গের’ জোরালো অভিযোগ। সেই সাথে লক্ষণীয় ভাবার বিষয় যে, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও বন্ধুত্ব যেমন স্বাভাবিক তেমনি কথাবার্তা-আচার আচরণও এমন একটি দেশের অধিবাসী কোচ পিটার বাটলার। কিন্তু আমাদের দেশ এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম। সেটাকে অবশ্যই উভয়পক্ষকে যেমন প্রাধান্য দিতে হবে, তেমনি কোচ বাটলারকেও বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। তাতে সংকট সমাধানের পথ প্রশস্ত হবে এবং একাধিকবার বা বার বার আলোচনা সমালোচনা ও পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানকে সহজতর করা যাবে। তবে নারী মর্যাদা প্রশ্নে কোচ বাটলারকে প্রকাশ্যে আত্মসমালোচনা করতে হবে। এ শৃঙ্খলার নামে দাম্ভিকতা বা পুরুষতান্ত্রিক একগুয়েমীপনা ক্ষমতার অপব্যবহারের সামিল নারী মর্যাদার ক্ষেত্রে; যদিও শঙ্খলা মেনে চলা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে যথাযথ নয় বলেই ধারণা।
পক্ষান্তরে দু’দুবার সাফ জয়ের মধ্য দিয়ে জাতির জন্য গর্ব বয়ে আনা নারীদেরকে, এক্ষেত্রে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে যে, তাঁরা নিজেদের মধ্যে সীমিত নন। তাঁরা শুধু পরিবারেরও নন,তাঁরা জাতির গর্ব বয়ে আনা সম্পদ। জাতীয় স্বার্থেকে প্রাধান্য দিতে হবে। কেননা, ‘ব্যক্তির উর্ধ্বে সংগঠন, আর-সংগঠনের উর্ধ্বে দেশ’। এসব বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা অব্যাহত রাখতে হবে, দ্রুত সময়ে সংকট নিরসনের লক্ষ্যে। মনে রাখতে হবে, লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
তবে এও ঠিক বাফুফে-কে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে কোচ বাটলারের আত্মসমালোচনার দিকটি। মনীষীদের কথায় আছে-‘এক পা আগাও, দু পা পিছাও’। অর্থাৎ এমন নয় যে, বাটলার বিনে আমাদের দেশসহ বিশ্বের কোনো দেশে, তার মতো বা তার চেয়ে ভালো কোচ পাওয়া যাবে না। তাই আত্মসমালোচনার বিষয়টিকে পাশ কাটানো ঠিক হবে না। অধিনায়ক সাবিনা, মাসুরা পারভিন, মারিয়ামান্দা, কৃষ্ণা, সানজিদা ও সুমাইয়াসহ নারী ফুটবলারদের আত্মসম্মান প্রশ্নে ঝড়ে পড়া চোখের পানি কোনোভাবেই যেন নারী ফুটবলে ধস চলবে না যে, নারী বলতেই তো মা-মেয়ে, স্ত্রী, ফুফু-খালা, চাচী-মামী এবং নানী-দাদী। তাদের সম্মান মর্যাদা বা ইজ্জত রক্ষা আমাদের সবারই দায়িত্ব ও কর্তব্য। এও মনে রাখতে হবে-ভুল সিদ্ধান্ত জাতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। কোনো ঘটনাই ছোট নয়। মনিষীদের কথায় আছে- ‘একটি স্ফুলিঙ্গ বিরাট দাবানলের সৃষ্টি করতে পারে’।
পরিশেষে, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি, সাফজয়ী নারী ফুটবলদলের কৃতি সন্তান মেয়েরা বলেছেন, তাদের কঠিন সময়ে কেও পাশে নেই। এমনটাই বলার কথা। কারণ দেশে গণমাধ্যমে প্রকাশ ছাড়াও অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। যার শিকার নারীরা। যে কারণে বলা হয়ে থাকে, নারীরা ঘরেও নিরাপদ নয়। এই যৌক্তিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। যাতে মেয়েরা আর কোনদিন না বলতে পারে, তাদের পাশে কেও নেই। বাবার নিষেধ অমান্য করে মায়ের সাথে পরামর্শক্রমে অংশ নেয়া বাংলাদেশ দলের খেলোয়ার সুমাইয়াসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বাফুফে; এ আশাবাদ প্রকাশ করেই দৃঢ়তার সাথেই বলছি, বাণিজ্যিক কারণে বিন্দু সমতুল্য সুযোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ৪৩ বছর থেকে ক্ষুদ্রাকারে সীমিত পরিসরে হলেও প্রকাশিত গণপ্রহরী নারী ফুটবল দলের নারীদেরসহ নারী অধিকার মর্যাদার পক্ষে অবিচল আছে ও থাকবে, গণপ্রহরী। মনে রাখবে, গণপ্রহরী তোমাদের পত্রিকা। এ পত্রিকা আপোষ করেনি কারও কাছে কোনোদিন কোনো শর্তে। গণপ্রহরীর প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক এসকে মজিদ মুকুল ১১নং সেক্টরাধীন ঐতিহাসিক রৌমারী মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলে, মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী গড়ে তুলেছেন এবং জেড ফোর্সের অধিন থার্ড বেঙ্গল রেজিমেন্টের ২ এমএফ কোম্পানীর সম্মুখ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি নারী ফুটবল দলের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করেছেন এবং নারীদের পাশে আছেন ও থাকবেন।
খেলার আরও খবর- এশিয়া জয় বাংলাদেশী যুবাদের: আলোর মশাল জ্বলছ সামনে-
