নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তী সরকারই যেন আগের সমস্যার জন্য দায়ি। যদিও পতিত স্বৈরাচারের বিশেষত ১৫ বছরের শাসনামলেই সর্বক্ষেত্রের সমস্যাদি সৃষ্টি। কিন্ত আজ যখন সে সব সমস্যা তুলে ধরা হচ্ছে, তখন স্বৈরাচার ও তার দোসরদের সুবিধাভোগীরা এমনভাবে প্রচার করছে যেন সমস্যা সৃষ্টি করেছে এই অন্তর্বর্তী সরকার এবং দায়ও এই সরকারের। আগের সমস্যার দায় এই সরকারের ওপর চাপানো কি যৌক্তিক?
না, অন্তর্বর্তী সরকারের উপর পূর্ব সৃষ্ট কোনো ব্যাপারে কোনো দায়দায়িত্ব বর্তায় না। তবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায়। এবং পতিত স্বৈরাচারের সময় মানুষের বাক স্বাধীনতা ছিল না। সেই আইনি জটিলতার জন্য স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম নিরাপদ ছিল না। যেহেতু মুখ বুজে এবং দুঃখ-কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে রেখেছিলেন। সেহেতু এই সরকারের কাছে জনগণের অনেক চাওয়ার পালা শুরু হয়েছে।
সরকারের কাছে চাওয়া পাওয়ার বিষয় নির্ধারিত নেই। তাই দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবি বিভিন্ন মহলের ও শ্রেনী পেশার মানুষের। শ্রমিক চাচ্ছে শ্রমের ন্যায্য মজুরি ও বকেয়া বেতন পরিশোধ ও ছাত্রদের মধ্য থেকে নানা বিষয়ে দাবি উত্থাপিত হচ্ছে। দাবি নিয়ে রাজপথে ছাত্ররা, গার্মেন্টস শ্রকিরা ও অটোরিক্সা শ্রমিকরা ইত্যাদি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সব দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তবুও শুনতে হবে, আশ্বস্ত করতে হবে। এবং যতটা সম্ভব তা বাস্তাবয়ন করতে হবে।
এতদসঙ্গে সমস্যা আগের হলেও দায় যেন অন্তর্বর্তী সরকারের। আগেই আলোচিত হয়েছে পূর্বসৃষ্ট কোন ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো দায় নেই। তারপরও সারাদেশে দখলকৃত নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় মুক্ত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ থাকছে। গণঅভ্যূত্থানের সরকার হেতু অন্তর্বর্তী সরকারই যেন আগের সমস্যার জন্য দায়ি- এমনটা ভেবেই বিবেচনায় নিতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার জরুরী ভিত্তিতে যশোর কেশবপুর উপজেলার ১০৪ টি গ্রামের মানুষকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশা রাখছি। তবে জেনে রাখা ভাল যে, আগের জলাবদ্ধতায় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। স্থায়ী পরিকল্পনা না থাকায় বন্যার সময় ছাড়াও ঝড়-বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
প্রতি বছর বছর কেশবপুরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া হরিহর নদ ও বুড়িভদ্রা নদী পলিতে ভরাট হয়ে যায়। এতে করে জলাবদ্ধতা দূর করতে সরকারি অর্থ যেমন অপচয় হয়, তেমনি ভুক্তভোগী জনগণকে দুর্ভোগও পোহাতে হয়। যা কাম্য হতে পারে না। যদিও সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ আছে। তবুও জনস্বার্থে ও জনকল্যাণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন কাম্য।
বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবর বলছে, জলাবদ্ধতার পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আর এই পচা পানি মধ্য দিয়ে জনগণকে চলতে বাধ্য হওয়ায় তাঁদের অনেকের শরীরে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। এবং অনেক গাছপালা মারা গেছে। জলাবদ্ধতায় কারো কারো ঘরেও পানি জমেছে। উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ৯,৮৩০ টি পরিবারের ৩৯,৩২০ জন সদস্য পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন এই জলাবদ্ধতায়।
এমন পরিস্থিতিতে যশোর-সাতক্ষিরা সড়কের দু’পাশে খুপড়ি তুলে শতাধিক পরিবার দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিবেন- এ বিশ্বাস থেকে আবারো লিখতে হচ্ছে দায় না বর্তালেও সাংবিধানিকভাবে দায়িত্ব যেহেতু সরকারের, সরকার তা করবেন। ধরে নিতে হবে- অন্তর্বর্তী সরকারই যেন আগের সমস্যার জন্য দায়ি।
