নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। বাস্তবসম্মত ও গুরুত্ববহ উক্তিটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। তিনি নিজে সতর্ক আছেন উল্লেখ করে, সকলকে স্মরণ করে দিতে বলেছেন, গণতন্ত্রবিরোধী স্বৈরাচারের দোসররা অন্তবর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে দেশ-বিদেশে ও প্রশাসনে সক্রিয় রয়েছে। তিনি সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে এমন কোন শক্তি নেই যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারে। তা নেই। ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমান।
১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে গত শ্রক্রবার লাখো মানুষের অংশ গ্রহনে রাজধানীতে শোভাযাত্রা করেছে বিএনপি। শোভাযাত্রা শুরুর প্রস্তুতিকালে একটি অঙ্গসংগঠনের বহন করা খাঁচায় বন্দী স্বৈরাচার হাসিনা যা, নজরে পরে অংশগ্রনকারীদের। এ অবস্থায় নয়া পল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধনী ভাষণে তারেক রহমান এসব কথা বলেছেন। নয়াপল্টন থেকে ৮ মার্চ বিকেল ৩টা ৮ মিনিটে শুরু হয় শোভাযাত্রা। নির্ধারিত রাজপথসমূহ প্রদর্শন শেষে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিএনপি মহাসচিব, রাজপথে নেতৃত্বদানকারী নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমাপনী ভাষণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

তার আগে বিকেল পৌনে পাঁচটায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণের এই শোভাযাত্রার সম্মুখভাগ যখন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পৌছে। তখন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি একটি মিনি ট্রাকের ওপর বানানো অস্থায়ী মঞ্চে উঠেন। তিনি শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনকারী আগন্তকদের উদ্দেশ্যে শোভাযাত্রা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে কেন তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ আমাদের সামনে। দেশের মানুষ এতদিন ভোট দিতে পারেনি। এখন তাঁরা ভোট দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের এই সংসদে পাঠাতে চান। এই বার্তা দেওয়া বিএনপির আজকের এই শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য’।
অপরদিকে, রাজধানীর বাইরে থাকা জনগণের অবগতির জন্য বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, শোভাযাত্রাটি কাকরাইল মোড় ও কাকরাইল মসজিদ, মৎসভবন, শেরাটন, কাওরানবাজার ও ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত প্রদর্শন করে। শোভাযাত্রাটি যেন তারেক রহমানের উক্তিটিকেই জানান দিয়েছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না’।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরও বলেছেন, ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার যেন আর কোনদিন বাংলাদেশে ফিরে আসতে না পারে। তা করা সম্ভব। যদি প্রত্যেক নাগরিক তার ভোট দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। তিনি বলেছেন, মানুষের ভোটের অধিকার যদি নিশ্চিত না করতে পারা যায়। তবে বাজার সিণ্ডিকেটের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা যাবে না, স্বল্প আয়ের মানুষকে। এই বিশাল সংখ্যক স্বল্প আয়ের মানুষকে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশও উপহার দেওয়া যাবে না। তিনি, লাখো জনতার শোভাযাত্রা ইঙ্গিত করে বলেছেন, এই মিছিল নিজরে অধিকার রক্ষার মিছিল। এই মিছিল নিজের ভোট দেওয়ার অধিকারের মিছিল। সর্বপরি এই মিছিল দেশের স্বার্থ রক্ষার মিছিল।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, শত্রু-মিত্র চেনার দিন ছিল ৭ নভেম্বর ১৯৭৫। আর বাংলাদেশের শত্রু চেনার দিন ৫ আগস্ট ২০২৪ এবং ছাত্রজনতার গণঅভ্যূত্থানের দিন ৫ আগস্ট ২০২৪। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে আরও বলেছেন, জনগণের ভোটের প্রতি জনপ্রতিনিধি হতে যারা আগ্রহী তাদেরকে যতক্ষণ জনগণের মুখাপেক্ষী করা যাবে না; ততক্ষণ গণতন্ত্রের সুফল পাবেন না মানুষ।
৮ মার্চ শুক্রবার পূর্বঘোষিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত শোভাযাত্রা শুরুর আগে ও শেষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভপতির বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে, আন্দোলনকারী সকল দল ও সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা যেমনি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য এবং একইভাবে গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা সবাই লড়াই-সংগ্রাম করেছি। আমাদের ছেলেরা আন্দোলন-সংগ্রাম ও গণঅভ্যূত্থানে রক্ত দিয়েছে। সেই রক্তের ও ত্যাগতিতিক্ষার ঋণ পরিশোধ ও তাঁদের প্রতি সম্মান দেখাতে চাই। তবে যত দ্রুত সম্ভব সংষ্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন দিলে আমরা জনগণের সংসদ ও সরকার গঠন করতে পারবো।
মির্জা ফখরুল বলেছেন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের আগে ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে একটি অভ্যূত্থান হয়েছিল। আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠায় ও একদলীয় শাসনের অধীনে দেশকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যই ছিল খালেদ মোশাররফের ৩ নভেম্বরের উদ্দেশ্য। কিন্তু আমাদের এই দেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনগণ মিলে অর্থাৎ সিপাহী জনতায় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উপর। ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস রচনা করে।
সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস বলেছেন, আজকের র্যালী স্বাক্ষ্য দেয়, আগামীতে যদি ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার দেশে ও বিদেশে তাদের দোসরদের লেলিয়ে দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টিসহ নানা ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টা করে; তাহলে সকল ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা প্রতিহত করবেন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী জনতা। পতিত স্বৈরাচারের সময় ৭ নভেম্বর পালিত হতো সীমিত কর্মসূচির মাধ্যমে। এবার নয়াপল্টন থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত শোভাযাত্রা হলো, সমাবেশ হলো। তাৎপর্যপূর্ণ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের সকল অনুষ্ঠানাদি কর্মসূচীরই ঘোষণা অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
৮ মার্চের শোভাযাত্রায় আরও অংশ নিয়েছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ, সালাউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. জাহিদ, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আজম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী, আব্দুস সালাম, মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, রশিদ্জ্জুামান মিল্লাত, শিরিন সুলতানা, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগীয় জেলার শীর্ষ নেতারও শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন।
