Thu. Jul 10th, 2025
আমাদের কথা

উৎপাদক জনগণের নির্ভিক জাতীয় সাপ্তাহিক গণপ্রহরীর নিয়মিত সম্পাদকীয় কলাম- ‘আমাদের কথা’র শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ, আন্দোলনকারী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলসমূহ এবং আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে গণপ্রহরী পরিবার পক্ষে অভিনন্দন। অভিনন্দন আন্দোলনের শেষ মুহুর্তে হলেও সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা অংশগ্রহনকারী সকলকেও।

আবারো নতুন করে কেন অভিনন্দন, তা উল্লেখ করেই সমাপ্তি টানবো আজকের এই সম্পাদকীয় কলামের। তার আগে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুঃখ-কষ্টের প্রতি সমবেদনা জানিয়েই সরকারের প্রতি আহ্বান জানানচ্ছি আর কাল-বিলম্ব নয়, এ মুূহুর্তেই দ্রব্যমূল্য কমাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। দেশের আঠারো কোটি মানুষের অন্তত: সতেরো কোটি মানুষ এখনও আপনাদের পাশেই রয়েছেন। আর দাঁড়িয়ে থেকেই তাঁদের আকাঙ্খা পূরণ যথাযথ সংষ্কার কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন। অর্পিত দায়িত্ব মতে, সংষ্কার শেষে নির্বাচনের মাধ্যমে কাঙ্খিত গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের ব্যবস্থা দেখার অপেক্ষায় তারা।

 

এতদসঙ্গে অভিনন্দিত নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস নেতৃত্বাধীন ‘পরিষদের’ উপদেষ্টাবৃন্দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপিসহ আন্দোলনকারী দলসমূহের নেতৃবৃন্দকে স্মরন করে দিতে চাই-সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহনের জন্যই, গণঅভ্যূত্থান সফল হয়েছে। সবার উর্ধ্বে জনগণ ও জনশক্তি। তাঁরা আবারো তা প্রমাণ করেছেন সফলতা অর্জনের মধ্য দিয়ে। সেই সফলতার পর জীবনদানে বলিয়ান জনগণের সার্বিক দুর্ভোগ লাঘবে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা নিন। থাকুন এবং ঐক্যবদ্ধভাবেই এটা তাঁদের মন থেকে চাওয়া ‘প্রাণের দাবি’।

আজকের এই সম্পাদকীয় কলামের প্রধান বিষয়ই হচ্ছে-দ্রব্যমূল্যের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে অন্যান্য বিষয়। মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে বলে নিতে চাই প্রচলিত কথার একটা কথা- ‘সতর্কতার মাইর নেই’। অর্থাৎ সতর্ক থাকলে বিপদ কাছে আসা দূরুহ। যেমন বিএনপিসহ আন্দোলনকারী দলগুলো আন্দোলন সংগ্রাম করেননি, অত্যাচার নির্যাতন কম সহ্য করেননি। লাখো মানুষের সফল সমাবেশও হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতো ছাত্রসহ সকল শ্রেনীপেশার মানুষ জীবনদানে বলিয়ান হয়ে গুলির মুখে এগিয়ে যাননি, এমনকি শেষ মূহুর্তে তেমন কর্মসূচী দিয়ে মাঠেও থাকেননি। এ বাস্তসতা স্বীকার করতে হবে।

চলতি সংখ্যাসহ পূর্বাপর প্রকাশিত ছাপা কপি গণপ্রহরীতে তার পরিবেশিত খবরাখবর-প্রতিবেদন ও উপসম্পাদকীয় মতামতে প্রায়ই লিখে আসছে ও লিখেছে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বৈষম্য নিয়ে। সেসব লেখায় স্থান পেয়েছে আকাশ পাতাল বৈষম্যের-সমাজব্যবস্থার দেশ আমাদের।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমনকি মৌলিক অধিকারসহ মানবাধিকার, সাম্য, ন্যায় বিচার ও গণতন্ত্রের পথও হয়েছে রুদ্ধ। সেই পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পরিচালিত আন্দোলনকে দেশের গণমানুষ শোষণমুক্ত সমাজের মতোই বৈষম্যহীন সমাজ করার আন্দোলন ভেবেছেন। এমনটাই গণমানুষকে আশান্বিত করেছিল বলেই, আন্দোলনে অংশ নিতে পিছুটান ছিল না। উপরন্তু একক কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী শাসনের অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যা, খুন-গুম, লুটপাট ও দুর্নীতি মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল।

সেই মানুষ আজও কেন বৈষম্যের শিকার থাকবেনই, নদী-খালবিল পুকুরসহ সরকারের সহায়-সম্পত্তি কেন এখনও বেদখল থাকবে। স্বৈরশাসকদের সিণ্ডিকেটসহ সবকিছুই কি আগের মতোই থাকবেই এমন নানা প্রশ্ন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। মনে রাখতে হবে দেশটি মুক্তিযুদ্ধের ফসল। তাই নামকরণে বৈষম্যবিরোধী নয়, বাস্তবতায় সর্বক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করেই বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হবে, সে সমাজই হবে শোষণমুক্ত।

গণপ্রহরী দ্রব্যমূল্য কমানোর আবেদন জানিয়েছে বার বার লেখার মাধ্যমে। এমনকি চলতি সংখ্যয়ও এ বিষয়ে লেখা আছে। সর্বজন স্বীকৃত যে, জনজীবনে দ্রব্যমূল্য নিয়ে অস্বস্তি নতুন নয়। গণপ্রহরীতে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও মতামতে অলোচিত হয়েছে পতিত স্বৈরাচারের শাসনামলে খাদ্যসহ নিত্যপণ্য দ্রব্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি হওয়া ছাড়া কমেছিল এমনটা জানা যায়নি।

এছাড়া আমরা জেনে আসছি, আামাদের দেশে দ্রব্যমূল্য কখনোই স্তিতিশীল থাকেনি। এটাও সকলেই স্বীকার করবেন যে, এই দেশে যে পণ্যের দাম একবার বাড়ে তা সাধারণ আর কমেনা, কোনো দ্রব্যসামগ্রীর ওপর ট্যাক্স (শুল্ক) বাড়ানো হলে তার দাম যেমন বাড়ানো হয়। সেই বাড়ানোটা ট্যাক্সের পরিমানের সাথে মিলিয়ে নয়।

আবার ট্যাক্স কমানো হলে বা ট্যাক্স ফ্রি (শুল্ক মুক্ত) করা হলে, সে সব পন্যের দাম কমে না এবং কমানোও হয় না। সে সব দেখার যেন কেও নেই। এখনও কি তাই দেখবো, আমরা জনগন? না, তা দেখতে চাই না। তারপরও মানুষ হাড়ে হাড়ে বুঝছেন। দ্রব্যমূল্যের ঝাঁজ কতটা এবং কম কষ্ট পোহাতেও হচ্ছে না।

অথচ পূর্বাপর পরিস্থিতি বলছে, একটি সরকার পরিবর্তন হলে মানুষ নতুন করে আশায় বুক বাধেন বা আশাবাদী হন। বিগত স্বৈরাচারের সময়ে মানুষ এমন আশা করেননি। তারা স্বৈরাচারী-বেবিচারী ছিলেন। গণঅভ্যূত্থানে জীবন বাজি ধরেছিলেন। সেহেতু মানুষ অর্ন্তবতী সরকার দ্রব্যমূল্য কমাবে-এ বিশ্বাস থেকেই মানুষ স্বস্তি পেতে চান। মানুষ এমন আশাবাদ ব্যক্ত থেকে পিছিয়ে ছিলেন না।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের সন্মেলনে যোগ দিয়ে তাঁর ভাষনে এবং ছাত্রÑজনতার গণঅভ্যূত্থানের বীরত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর গল্প বিশ^ নেতাদেরকে শুনিয়েছেন। কর্মসূচী জানিয়েছেন। তাতে বিশ্বের কাছে ভূয়সী প্রশংসায় প্রশংসিত হয়েছেন। জাতিসংঘ, আমেরিকা, চীন, মালয়েশিয়সহ বিশ্বের সার্বিক বিভিন্ন দেশ সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিমধ্যে সহায়তাও পাচ্ছেন।

সেদিক থেকে জনগণ ভেবেছিলেন এবার সবাই ইলিশ খেতে পারবেন। আর যাঁদের পাতে কোনদিন ইলিশ মাছের একটু-আধটুও জোটেনি, তারা অন্তত এবার ইলিশের সাদটা অনুভব করতে পারবেন। রাষ্ট্রীয় অর্থে কিনে ত্রান হিসেবে হলেও সরকার তা করবেন। এছাড়া, আগেতো দেশের চাহিদা পূরণ (?) তারপর বানিজ্য। দেশবাসীর কোনো ভাবনা বা আশাই পূরণ হলোনা। তারপরও গণহত্যার ঘটনাবলী বিবেচনায় নিয়ে নিরাশ হননি। আশা নিয়েইতো মানুষ।

এদিকে, অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেউদ্দিন আহমেদ ১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমেছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের আশ^স্ত করেছেন। যদিও দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার দূরন্ত ছুটাছুটিতে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস অবস্থা। দেশের সংবাদপত্র ও বিদ্যুতায়িত গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরব। তদসত্বেও উপদেষ্টা সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সন্মেলনে, অধৈর্য না হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়েন্ত্রনে আনার কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন। ডাল কেনা, সার কেনা ও এলএনজি অমদানির ওপর শুল্ক কমিয়ে তা অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন।

তবে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আশার বানীর সাথে জানিয়েছেন একটু সময় লাগবে। সেই বাড়াতি আশায় যোগ হয়েছে, সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো দ্রুত কার্যকর হলে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবারের দেখা পাবেন অনেক পরিবার। এ ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন সমাজই সবচেয়ে কার্যকর। সকল শহীদের আত্নত্যাগকে সফল করতে শোষনমুক্ত সমাজের বৈষমহীন ব্যবস্থা আমাদের কাম্য।

পরিশেষে, গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দল সমূহের দাবি ও সমালোচনা এবং বিশেষত প্রবাসী ইউটিউবারসহ গণমাধ্যমের পর্যালোচনা মূলক মতামত ভিত্তিতে করনীয় নির্ধারণ করে সংস্কার কাজকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এ জন্যই সংশ্লিষ্ট সকলকে আবারো আমাদের কথায় মাধ্যমে অভিনন্দ জানাছি। কথায় আছে ‘শেষ ভাল যার সব ভাল তা’।

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *