Tue. Aug 19th, 2025
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে আমাদের কথাআমাদের কথা : সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয় জীবনে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীজ রোপনের ভাষা আন্দোলনের মাস ‘ফেব্রুয়ারি’ দরজায় অপেক্ষমান। মাঝে শুধু তিন রাত দু’দিন অপেক্ষা মাত্র। বীর শহীদ বরকত, সালাম, জোব্বার, রফিকসহ নাম জানা-অজানা একুশের ভাষা শহীদদের রক্তপথ বেয়েই উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানের বীর শহীদদের রক্তের সাথে মিশে যাওয়া রক্তস্রোতে একাত্তরের মহান সফল মুক্তিযুদ্ধ। লাখো শহীদের রক্তার্জিত স্বাধীন ‘বাংলাদেশ’, সেই মুক্তিযুদ্ধেরই ফসল।

এই বাংলাদেশের গৌরবের-ঐতিহ্যের বইমেলা রাজধানীর ‘বাংলা একাডেমির চত্বর’ ঘিরে শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি। বইমেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। জাতি ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ শোষণমুক্ত সমাজের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে সাম্য, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় আত্মবলিদানকারী সকল শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

সেই সাথে রাজধানীর বইমেলা উদ্বোধনে সম্মতি দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে আগাম স্বাগতম জানিয়ে বাংলা একাডেমির বইমেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঐতিহ্যের বইমেলার আয়োজকদের ও স্বেচ্ছাশ্রমে নিয়োজিত কর্মীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। এবং গণপ্রহরী পরিবার পক্ষে ‘আমাদের কথা’র মাধ্যমে বইমেলার সফলতা কামনা করে সকল শ্রেনী পেশার ছাত্র-যুবকসহ সকলের প্রতি বই পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি। অনস্বীকার্য যে ‘জ্ঞান অর্জনে বই পড়ার বিকল্প নেই’।


আমাদের কথা’য় দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, যে মূহুর্তে সাম্রাজ্যবাদ হিসেবে আত্মপ্রকাশে মত্ত ও অখণ্ড ভারতের স্বপ্নে বিভোর প্রতিবেশি সম্প্রসারণবাদী ভারতের উগ্রহিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার, বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে উগ্রমৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করার পরিকল্পিত নীল নকশা মতে ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা করছে। এবং সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ভারতের অনুগত রাষ্ট্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারকে বার বার ক্ষমতাসীন করে, এগিয়ে যাচ্ছিল।

তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থানে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এবং শেখ হাসিনা সদলবলে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে, ভারতের মদদে আওয়ামীলীগের অসংখ্য তৃণমূলের নেতা-কর্মী সমর্থকদের ত্যাগ তিতিক্ষাকে পুঁজি করে, লুটপাটকারী-অর্থপাচারকারি ও সুবিধাভোগীদের যেহেতু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিসহ সর্বস্তরে অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ভারত সরকার সীমান্তে ‘বলপ্রয়োগ’ করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আওয়ামীলীগের শাসনামলেও জঙ্গীবাদ-মৌলবাদের নামে নানা ষড়যন্ত্র এবং আলেম-ওলামাদের অনেকের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে।

বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহকে দমনে দিনরাত নানাভাবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল। দেশের এমন পরিস্থিতিতে দেশের কোনো কোনো এলাকায় ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে কিছু সংখ্যক যুব ব্যক্তি অবাস্তব ও ভূল চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উগ্র মৌলবাদী বা তালেবানি জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত ওরসে, মাজারে ও গানের অনুষ্ঠানে হামলা করেছে ও করছে। পাশাপাশি ক্রীড়া মোদি নারীদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ হওয়ার এক স্কুল মাঠে হামলা-ভাঙচুর করে খেলাকে পণ্ড করে দেওয়া হয়। সম্মানিত পাঠকবৃন্দের প্রায় সকলেই কম-বেশি এ বিষয় যেমন অবগত হয়েছেন; তেমনি অবগত যে, মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টাও করা হচ্ছে। যা কারও কাম্য হতে পারে না। কেননা, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এবং শেষ নবী-রসুলে পাক হযরত মোহাম্মদ (সা:) নিজেও বলে গেছেন ‘সকল ধর্মের ও মতের মানুষ মিলে মিশে একসাথে থাকবে’।

তিনি এও বলেছেন ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য সূদুর চীনে যেতে হলেও যাবে’। শেষ নবীর জন্মস্থানের সৌদি আরবের নারীরা সুন্দরী প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহণ করছেন। এসব থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কোনোভাবে কোনো ক্ষেত্রেই বিভেদ নয়, ঐক্যই পারে সকল সমস্যার সমাধান করতে। এই বাস্তবতায় ইসলামের শিক্ষায় দেশের শান্তি প্রিয় ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে এবং রসুলে পাকের মহৎ নির্দেশনায় সকলে একসাথে মিলেমিশে থাকার জন্য আলেম-ওলেমা, পীর-আওলিয়া এবং সকল রাজনৈতিক দল সমূহ ও সরকারকে এহন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও ভবিষ্যতেও যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য সোচ্চার হতে হবে এবং সম্মিলিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে কোনো অপচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে।

সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকেও দেশ ও জনগণের স্বার্থে সকল মহলের নেতৃবৃন্দের সাথে মত বিনিময়ের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। নয়তো, ঘটনাগুলো যেহেতু ফৌজদারি আইনে অপরাধও, সেহেতু দেশ, জাতি ও জনগণের নিরাপত্তা বিধানে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীল ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য মতে, আইনীভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, পত্রপত্রিকায় টাঙ্গাইল শাড়ি ভৌগলিক পণ্য বা জিআই হিসেবে নিবন্ধন সম্পর্কে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, দেশের সংষ্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাব প্রকাশ পাওয়ায় ‘আমাদের কথা’র মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। যদিও ঐতিহাসিকভাবেই শুধু নয়, বিদ্যামান বাস্তবতায়ও স্বীকার করতে হবে যে, টাঙ্গাইল শাড়ির মতো এমন অনেক পণ্যই আছে যা বাংলাদেশ ও ভারত দু’ দেশেই উৎপাদিত হয়।

টাঙ্গাইল শাড়িও তেমনি। তবে বাস্তবতা বলছে টাঙ্গাইল শাড়ি মূলত: টাঙ্গাইলেই প্রথম। তারপরও এ নিয়ে বির্তক নয়। শুধু দুটো কথা না বললেই নয় যে, বাংলাদেশে যখন বিরোধী দল সমূহের, স্বৈরাচার হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলন চুড়ান্তভাবে প্রতিহত করতে সরকার ব্যর্থ হয়। উপরন্তু প্রবাসী ইউটিউবার পিনাকী ভট্টচার্য, কনক সরোয়ার, ইলিয়াস হোসন প্রমুখের উদ্যোগে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

এমন পরিস্থিতিতে ভারতের শিল্প মন্ত্রণালয় গত বছর ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’ নামে টাঙ্গাইল শাড়িকে নিবন্ধিত করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ-প্রচার হতে থাকে। এর ভিত্তিতে দেশের জাতীয় স্বার্থে দায়িত্ববান ও কর্তব্যপরায়নতার স্বাক্ষ্য হিসেবে ভারতীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যা শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আইনি বিষয়ে (ইস্যু হয়ে) পরিণত হয়। তবে ‘আমাদের কথা’র মন্তব্য হচ্ছে, টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে ভারতীয় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইনি অবস্থান যেমনি শতভাগ ন্যায্য, তেমনি শতভাগ যৌক্তিকও। তবে এও ঠিক যে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগীতার ক্ষেত্রে জিআই সনদপত্রে পণ্যের চাহিদা যেহেতু বেড়েই চলছে।

এমনকি জিআই ব্রাণ্ড পণ্যের গায়ে লেখা থাকলে আমাদনি-রপ্তানি মূল্যও বেড়ে যায়। সেহেতু টাঙ্গাইল শাড়িসহ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব পণ্যের জিআই স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেই বলতে হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, দীর্ঘ সূত্রিতা ও অবহেলার কারণে টাঙ্গাইল শাড়ি এখনও বিদ্যামান আইনি লড়াই নির্ভর থাকলেও ফজলি আম, রসগোল্লা ও নকশি কাঁথার মতো পণ্যের নিবন্ধন ইতিমধ্যে হাতছাড়া হয়েছে। কথায় আছে, ‘সময়ের এক ফোঁড় আর অসমেয়র দশ ফোঁড়’। ২৯.০১.২০২৫

জিআই

আরও পড়ুন- বিশেষ সম্পাদকীয় ও মতামত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *