আমাদের কথা’ র শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস তাঁর সরকাররের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণকে পর্যবেক্ষক মহল ইতিবাচক বলে অভিহিত করায় প্রধান উপদেষ্টাকে প্রথমেই অভিনন্দন। তাঁর ভাষণে দেশের বর্তমান ও ভবিস্যৎ পরিস্থিতির ইঙ্গিত রয়েছে।
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ শোনার জন্য অধির আগ্রহে যেন অপেক্ষা করছিল জাতি। জাতির বড় একটা অংশ আশা করছিল প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী দ্রব্যমূল্য কমিয়ে বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা বিধান মূলক ঘোষণা থাকবে।
একইভাবে জনস্বাস্থ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা দূর করে সাফল্য অর্জনের মধ্য দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করবেন। এবং তাতে জনগণ ও আমরা সকলে যারা ড. ইউনুস সরকারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছি, তাঁরা সরকারের প্রতি বিশ্বাস আস্থা অব্যাহত রাখতে কোনো দ্বিধা-সংকোচ থাকবে না।
কিন্তু এসবের নিশ্চয়তা না থাকায় জনগণ অনেকটা আশাহত হয়েছেন। যদিও তাঁরা আস্থাহীন হয়ে পড়েননি। আমাদের কথা’ র মাধ্যমে বিনীত আবেদন জনাবো-দ্রুত এসব ব্যাপরে পদক্ষেপ নিবেন।কারণ, প্রধান উপদেষ্টার সংক্ষিপ্ত ভাষণে তাঁর সরকার ১০০ দিনে কি কি কাজ করেছেন তার বিবরনে জনমনে ‘সঞ্চিত’ ব্যাপক যেসব জিজ্ঞাসা ছিল; সেদিকগুলোর প্রায় সবই উঠে এসেছে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে।
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের ভাষণের পর থেকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চসহ বেশ কিছু দল যেন অনেকটা আশাহত হয়েছেন অর্থাৎ সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। কারণ, তাঁদের চাওয়া ছিল নির্বাচনের রোড ম্যাপ। তার অর্থ এই নয় যে তাঁরা আর সংষ্কার কাজ চান না। তাঁদের চাওয়াটা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোসহ সব পক্ষকে আস্থায় এনে সংস্কার ও নির্বাচন- এই দুটো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

যদিও প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে স্পষ্টভাবেই বলেছেন, অত্যাবশ্যকীয় সংষ্কার শেষে নির্বাচন হবে। নির্বাচনী ট্রেন চলতে শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। সংষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত ঘোষণা করা হবে নির্বাচনের রোডম্যাপ। প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কারের কাজ শেষ হলে আয়োজন করা হবে নির্বাচনের।
তবে বিএনপি ও জামাতসহ অন্যান্য দলগুলোর চাওয়া মতে, নির্বাচন ও সংষ্কার বিষয়ে সরকারের বক্তব্য আরও স্পষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। এক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার একটি বক্তব্য প্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষক মহল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আরও একটু বেশি সহনশীল হওয়ার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কারণ, পতিত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিএনপি, জামাত, গনতন্ত্রমঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ওপর নির্ভর করছে সংষ্কার ও নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যেও এটা তুলে ধরেছেন।
আমরা সকলেই জানি, ছাত্রজনতার গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়েই পতিত স্বৈরাচার দেশ ও জনগণকে অরক্ষিত রেখে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের দুঃশাসনে, দেশের প্রায় সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার ছিল নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনা। সেই অবস্থা থেকে দেশ পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি সচল করার দায়িত্ব পড়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বলেছেন, সকলের সহযোগীতায় সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন, অর্পিত দায়িত্ব পালনে। এবং গত ১০০ দিনে গতিশীল হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন।
পরিশেষে আমরা শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সকল দলমতের সকলকে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও বেশি বেশি সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সফলভাবে পালনের সুযোগ দিতে আন্তরিক হবেন বলে আশা করছি।
