Wed. Sep 3rd, 2025
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে আমাদের কথাআমাদের কথা : সম্পাদকীয়

আমাদের কথার শুরুতে, ভারতের মতো প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের কলকাতা ও আগরতলায় ভারত রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় থাকা বাংলাদেশের হাইকমিশন (উপ দূতা বাস) ও সহকারী হাইকমিশন অফিসে হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা ও পোড়ানোর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সাথে ভারত থেকে উসকানিমুলক সব ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকারও আহবান জানাচ্ছি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আন্তর্জাতিক নিয়ম-রীতিনীতির আওতায় আলোচনার মাধ্যমে শান্তির্পূন সমাধান করার পদক্ষেপ নেওয়া ব্যাপারে দু’ দেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সহনশীল হওয়া জরুরী। এ পদক্ষেপ পাশ কাটিয়ে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন বা হাই কমিশনে হামলা করলে তা কারও জন্য মঙ্গল জনক নয়। কেননা, বিশ্ব এমনিতেই যুদ্ধের দিকে আগাচ্ছে। মতে রাখতে হবে- ‘যুদ্ধ মানে ধ্বংস’।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ অবগত যে, অসম্প্রদায়িকতার পতাকাবাহি ভারতের এক সময়কার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহতদের রক্তে রাঙানো হাত নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে পরিকল্পিতভাবে মুসলমানেদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ-মাদ্রাসা এবং মুসলমান জনগণ নিরাপদ নন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বেই ভারতের ঐতিহাসিক ‘বাবরী মসজিদ’ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে ‘রামমন্দির’ স্থাপন করেছেন এবং তিনি তা উদ্ভোধনও করেছেন। এবং তখন থেকেই বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদীদের তৎপরতায় সংখ্যালঘুরা হুমকির মুখে-এমন প্রচার-প্রবাগান্ডা ভারত চালিয়ে আসছিল।

গত ৫ আগষ্ট গণভ্যূত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে সরকারের আশ্রয়ে আছেন। বাংলাদেশের সংবিধান মতে এই রাষ্ট্রের মালিক ‘জনগণ’। সেই ‘জনগণ’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনে রাষ্ট্রের, মালিক জনগণ যোগ দিলে ঘটে, অভ্যূত্থান। এই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ভারত মেনে নিতে পারেনি। যদিও ভারতের নীতি-নির্ধারকরা মুখে বন্ধুত্বের কথা বললেও কার্যত: বৈরী আচরন করছেন। এমনকি গণমাধ্যম গুলোতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বানোয়াট খবর প্রচার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত সৃষ্টি করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে। যা কাম্য নয়। বরং নিন্দনীয়। এক্ষেত্রে যে কথাটি না বললেই যেন নয়। প্রতিবেশীর বাড়ীতে একাধিক ঘরের একটিতে আগুন লাগালে সেই ঘরের আগুনের ফুলকি উড়ে গিয়ে নিজের বাড়ীও  জ¦লে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যায়-এটা স্মরণ সাপেক্ষ।

প্রসঙ্গত: আমাদের কথায় ভারত সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনের স্থাপনা সার্বভৌম সম্পদ। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভিয়েনা সনদ এর শর্ত মোতাবেক স্বাগতিক দেশ হিসেবে ভারত সরকারের দায়িত্ব ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করা-। তা নিশ্চিত থাকলে কি এহেন হামলা হতে পারত? নিশ্চয়ই নয়। এটা পুরোপুরি ভিয়েনা সনদ লংঘন।

ভারতের জনগণ বাংলাদেশের জনগনের বন্ধু হলেও এবং উভয় দেশে আত্নীয়-স্বজন থাকলেও, রাষ্ট্রীয় চরিত্রের কারণে ভারত সরকার জেগেও ঘুমাচ্ছেন। পক্ষান্তরে; উগ্রহিন্দুত্ববাদী-মৌলবাদী রাষ্ট্রসংঘ, হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি ও বিজিপি অপপ্রচার চালাচ্ছে। এবং হামলার চেষ্টা করে যাচ্ছে হিন্দু এ সব উগ্রহিন্দুত্ববাদী সংগঠন সমূহের সমর্থনপুষ্ট বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারতো জেগে থেকেও ঘুমের ভান করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে যাবেন। আর ঘুম থেকে জেগে দেখবেন, প্রতিবেশীরা ভারতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। প্রতিবেশীদের বিমুখ করে দিয়ে যত শক্তিধর হোন, হয়তো অন্যান্য শক্তিধরদের আক্রোশের শিকার হয়ে, বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে ছোট ছোট শক্তিতে পরিণত হতে পারেন।

পরিশেষে, আমাদের কথায় আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব ভারত সরকারের ক্ষমতাসীন দলগুলোসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল সমূহের প্রতি অসাম্প্রদায়িক ভারত প্রমান করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তরিক হবেন, তা হবেন নিজেদের স্বার্থে ও জনস্বার্থে। সেবেন সিস্টার খ্যাত সাতটি রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে নিতে কেন্দ্রিয় সরকারের নিয়ন্ত্রণকে চিরস্থায়ী করতে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করবেন, তা হয় কি? গোটা ভারতের জনগণই বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু ও বিশ্বস্ত প্রতিবেশী। ভারতের মুক্তিকামী জনগণই সিদ্ধান্ত নিবেন-ভারতের সাত রাজ্যের জনগনকে নিয়ে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ আছেন, সেভাবে থাকবেন, নাকি অন্য কোনোভাবে। কেননা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগন বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশ বন্ধু হিসেবেই থাকতে চায়, অনুগত রাষ্ট্র হতে নয়। ভারতকে এও মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধেরই ফসল বাংলাদেশ। আর ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত দিতে হয়েছে সেই মুক্তিযুদ্ধে। শহীদদের আত্মত্যাগকে ব্যর্থ করতে পারবেন না। রক্তার্জিত বিজয় দীর্ঘজীবি হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *