আমাদের কথা ’র শুরুতেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত আবেদন থাকছে। ‘পরিবেশ রক্ষায় গাছপালাসহ পাহাড় রক্ষা করুন’। এমনিতেই পরিবেশ দুষণে বিশ্বই হুমকির মুখে। সে পরিস্থিতিতে আমাদের জাতীয় সম্পদের গাছপালাসহ পাহাড়-টিলা এবং নদ-নদী রক্ষা করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এই সম্পদ সংরক্ষণ করার অপরিহার্যতাকে কার্যকর করতে পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতি-আইনি কাঠামো গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক। কেননা, প্রাণীকুল ও পরিবেশ ধ্বংসকারীদের এখনই রুখতে ব্যর্থ হলে, জাতি ও দেশ সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
সরকারি-বেসরকারি (ব্যক্তি মালিকানাধীনসহ) পাহাড়-টিলা দখলের মতোই নদী-নালা, খাল-বিল দখলের ঘটনা দেশের মানুষের কাছে নতুন কোনো ঘটনা নয়। এও নতুন নয় যে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার যোগাসাজশে এমন দখল ভোগের ঘটনা খবর আকারে প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। দুর্ভাগ্য জাতির, জাতীয় সম্পদগুলো এবং চিকিৎসা সরঞ্জামসহ রাষ্ট্রীয় অর্থের বিভিন্ন প্রকল্পের যন্ত্রপাতি যেন সবই বেওয়ারিশ।
তাই, আমাদের কথা ’র মাধ্যমে সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সকল পরিবেশবাদীদের আরও বেশি সতর্ক হওয়ার আবেদন জানিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রাধান্যের স্থানীয় প্রভাবপ্রতিশালী-অর্থলোভীরা যে যেভাবে যেখানে পাড়ছে দখলভোগ করে অর্থ-সম্পদশালী হয়েছে। সূত্র মতে, সিলেটের সমতল ভূমিতে মাথা উঁচু করে গৌরব করার মতো টিলাগুলো গত পনেরো বছরে প্রায় অর্ধেকেই বিলীন করে দিয়েছে প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসকারী অর্থলোভী প্রভাবশালীরা।
আমাদের কথা ’য়- পরিবেশ রক্ষায় গাছপালাসহ পাহাড় রক্ষা করুন শিরোনাম লিখতে বসে লেখার এ পর্যায়ে টেবিলের নিচের এক পাশে লক্ষ্য করতেই পত্রিকার পাতায় অংশ বিশেষ নজরে এলো। কাগজটা তুলে চোখ বুলাতে থাকি। তাতে দেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ১৭ রাবার বাগানের মধ্যে অন্যতম উপজেলার রূপাইছড়া রবার বাগান। পাহাড়-টিলা আর সমতল ভূমি নিয়ে বাগানটি মোট আয়তন ১ হাজার ৯৬৩ একর। তন্মধ্যে বাগানের ১৯ একর সরকার বা কর্তৃপক্ষের হাতছাড়া।
খবরে বাগানের পশ্চিম ও উত্তর দিকে অবস্থিত উঁচু টিলা কেটে মাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। টিলার গাছগুলো আগেই কেটে ফেলা হয়েছিল। সবুজ বাগানের আরও কিছু গাছ পরবর্তীতে কেটে নেওয়া হয়েছে। বিগত সরকারের শাসনামলের এই খবর দাবি করেছে, ক্ষমতার দাপটে শুধু বাগানের জমি দখল করে ক্ষান্ত হয়নি। দখল করে গাছ কাটা, মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন করতে করতে গাছ শুন্য প্রায় এবং সরকারি বাগানটির অস্তিত্ব হারানোর মুখে।
খবরে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের সূত্র মতে, অতীব গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি দিক রয়েছে। তাতে পুটিজুড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা তাঁতীলীগের সভাপতি মুদ্দত আলী বাগানের ভিতর ৩ (তিন) একর জমি নিজের দাবি করে উল্লেখিত ১৯ একর জায়গা দখলে নিয়ে গাছ কাটা, মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন করেছেন। বাগানের ভিতরের শ্মশানছড়া থেকেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর জায়গাটি অরক্ষিত থাকায় প্রভাবশালীদের যে যেমন পারছেন, পাহাড়-টিলা ও গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকায় মুদ্দত আলী প্রমুখদের মাটির ব্যবসার কারণে এলাকার ৭ বিঘা পরিমাণের খেলার মাঠ, পূর্বদিকে রবার বাগানের ১০ একর জায়গার নার্সারি ও ১২ ফুট প্রস্থের সড়ক বিলীন হয়েছে। এ পর্যায়ে আবারো আমাদের কথা-এর মাধ্যমে বারবারই বলতে থাকবো, ‘পরিবেশ রক্ষায় গাছপালাসহ পাহাড়-টিলা রক্ষা করুন ’।
এদিকে পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর অনুসন্ধানে সিলেটে টিলা নিধনের জন্য মূলত: দায়ি করা হয়েছে পাথর খোয়ারি হিসেবে টিলার ইজারাদারকে। এতে চা শিল্প যেমন চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তেমনি বন্যপ্রাণী আবাস্থল হারিয়ে লোকালয়ে আসছে। সার্বিক পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় টিলা নিধনের অপকর্ম মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা কারই কাম্য নয়।
‘বেলা’-এর উদ্যোগে ‘প্রকৃতি, পরিবেশ ও জনস্বার্থে পাহাড় ও টিলা সংরক্ষণের গুরুত্ব’ শীর্ষক আয়োজিত এক আলোচনায় নির্বিচারে সিলেটে পাহাড়-টিলা কাটার ঘটনা স্পষ্ট বলে দাবি করা হয়েছে। অনুসন্ধান-পর্যবেক্ষণ ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির মতে অপরিকল্পিতভাবে নির্বিচারে টিলা ও গাছ কাটার ফলে পরিবেশে বহুবিধ বিরূপ প্রভাব উদ্বেগজনক এবং পরিবেশের জন্যও হুমকি। পরিশেষে বেলার অনুসন্ধান প্রতিবেদনের আলোকে আমাদের কথা’র মাধ্যমে তাদের অভিমতের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
এতদসঙ্গে বলতে চাই-নদী যেমন একের পর এক হারাতে বসেছে। তেমনি প্রকৃতির লীলা ভূমিখ্যাত সিলেট অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম করার দৃশ্যের টিলাগুলোও এক পর্যায় খুঁজতে হবে, গবেষনা করতে হবে। প্রকৃতি বিনাশকারীদের পাহাড়-টিলা ও গাছপালা কাটার চলমান নৃশংস ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, উদ্যোগের অভাব ও আইন প্রয়োগের অভাব ইত্যাদি চিহ্নিত বিষয়গুলোতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের, যতদ্রুত সম্ভব কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
