Tue. Aug 19th, 2025
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে আমাদের কথাআমাদের কথা : সম্পাদকীয়

আমাদের কথা। একুশ আমাদের প্রেরণার উৎস। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ আমাদের আত্মপরিচয়ের দিন। একুশ যেমন বাঙালির জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি; তেমনি বাংলাদশেী জনগণের অধিকার আদায়েরও ভিত্তি। সর্বোপরি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার মতো অধিকারসহ জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা, প্রতিবাদ করা, মানা না মানার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলার সিঁড়িতে পরিণত হয় একুশ। আর ‘সিঁড়ি’ যে বীর শহীদদের রক্তে দৃঢ় হতে হতে ইস্পাত কঠিন সিঁড়িতে পরিণত করেছেন এবং স্বাধীনতার বীজ যে শহীদদের রক্তভেজা মাটিতে রোপীত হয়েছে সেই একুশে বীর শহীদদের আত্মার প্রতি গণপ্রহরী ও গণপ্রহরী পরিবার পক্ষে বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আত্মবলিদানকারী বীর শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জোব্বারসহ নাম জানা-অজানা বীর শহীদদের। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সকল ভাষা সৈনিককে। তেয়াত্তর বছর আগের বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি; ঘুরে ঘুরে জাতীয় জীবনে আগত একুশে ফেব্রুয়ারি, দুই হাজার পঁচিশ।

একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলাদেশী বাঙালি জনগণের নয়। একুশ এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বর প্রায় সব দেশে পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশী বাঙালির ঐতিহাসিক ঐক্যের একুশ আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির ভাষা ও সংষ্কৃতি রক্ষার সংগ্রামের এক অনি:শেষ প্রেরণার উৎস। তাইতো, প্রতিবছর আন্তর্জাাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিশ্বব্যাপী তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। ভাষা শহীদদের স্মরণ করা হয়। ভাষা শহীদদের স্মরণে বার বার উল্লেখ করতে হয়, হচ্ছে ও হবে যে, একুশের ভাষা শহীদদের রক্তপথে উনসত্তরের ছাত্র-গণআন্দোলন-গণঅভ্যূত্থান। এসব ন্যায়সঙ্গত অধিকারের আন্দোলন-সংগ্রামে জীবনদানকারী বীর শহীদদের রক্তপথেই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ।

প্রসঙ্গত: প্রধান সম্পাদক মহান মুক্তিাযুদ্ধের ১১নং সেক্টরের ঐতিহাসিক রৌমারী মুক্তাঞ্চলের ঘোষক-মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী গড়ার সংগঠক ও জেড ফোর্সের অধীন থার্ড বেঙ্গল রেজিমেন্টের ২ এম এফ কোম্পানীর যুদ্ধের নীতি-কৌশল নির্ধারক ও সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এসকে মজিদ মুকুল মহান ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় আক্ষেপ করে  বলে থাকেন, আমাদের ‘ভাগ্য ভাল, কপাল খারাপ’। তাঁর কথার সূত্র ধরে বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত হলে বাক স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার ও গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিতে হতো না।

একইভাবে চব্বিশের রাষ্ট্রভাষার  জুলাই গণহত্যার শিকার হতে হতো না এবং রক্তার্জিত গণঅভ্যূত্থান সংঘটিত করতে  হতো না। তা যেহেতু হয়েছে, সেহেতু সকল শহীদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আহতদের সুচিকিৎসাসহ সকল শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনে অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন, যা পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার বাস্তাবয়ন করবেন। পাশাপাশি যে রাষ্ট্রভাষা বাংলা স্লোগানে আন্দোলন থেকে বাংলাদেশ সে দেশে বাংলা ভাষার চর্চা, বিকাশ ও প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন-এ আশাবাদ গণপ্রহরীর। সেই সাথে স্মরণ সাপেক্ষ সতর্কতা হচ্ছে- ‘শহীদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা কারও এবং কোনো গোষ্ঠি বা শক্তির জন্য ধ্বংস বা পতন বৈ আর কিছু থাকে বলে জানা নেই এবং ইতিহাসে আছে বলেও শুনিনি। 

আমাদের কথার এ পর্যায়ে আলোচ্য শিক্ষক এবং তাঁদের অধিকার প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে ‘গণপ্রহরী’ অবশ্য ‘শিক্ষাদানকারী হিসেবে শিক্ষক ব্যবহার করলেও মূলত: ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ বিবেচনাকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যদিও শেনী বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থার ও বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাতেই মানুষে মানুষে বৈষম্য প্রকট এবং সেই কারনেই শিক্ষাখাতেও বৈষম্য প্রকট। ফলে শিক্ষক ও তাঁদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে, অবশ্যই ‘শিক্ষকদের কর্তব্য পালন এবং শিক্ষাব্যবস্থা আলোচনার দাবি রাখে।

এজন্য সম্পাদকীয় মতামতে এতটা আলোচনা সম্ভব নয়। এমনকি উপসম্পাদকীয় বা মতামতে এতটা লেখা দূরুহ। সেহেতু আজকের আমাদের কথায়, সংক্ষিপ্ত আলোচনায় থাকছে এমপিও ভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘৪০ (চল্লিশ) হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর পেনশনের টাকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের অশু হস্তক্ষেপ কামনা থাকছে। যে ব্যবস্থা অন্তর্বতী সরকারের ওপর অর্পিত দায়িত্বের সংস্কার কাজ ও সম্ভাব্য ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যেই বিবেচ্য বলে, আমরা মনে করি।

গণপ্রহরী এও মনে করে, ক্ষমতাসীনরাসহ শাসক ও শোষক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বিদ্যালয়ে প্রকট বৈষম্যের শিকার। ফলে বৈষম্যের শিকার ‘শিক্ষকরা রাষ্ট্রীয় অবহেলায় উপেক্ষিত হয়ে আসছেন। যদিও জাতির ভবিষ্যত বিনির্মাণে বিদ্যমান ব্যবস্থায় শিক্ষকদের অপরিসীম পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের শিক্ষাদানকে পাশ কাটিয়ে শিক্ষকদের পেনশন দিতে কতনা টালবাহানা ও শিক্ষক কর্মচারীদের হয়রানি-তার যেন শেষ নেই। তাঁদেরকে ন্যায্য অধিকারের পাওনা পেনশনের অর্থের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। গণমাধ্যমে এসব নিয়ে খবরাখবর প্রকাশ হচ্ছে। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনকও বলে মনে করি।

এতদসঙ্গে উল্লেখ্য, শুধু কি তাই? না, কল্যাণ ট্রাষ্টের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীর পেশকৃত ৩৯ হাজার আবেদন ফাইলে লালফিতার শক্ত বাঁধনে যেন বন্দি হয়ে আছে। অফিস সূত্রে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে এ ক্ষেত্রে ৮ হাজার ২শ কোটি টাকার প্রয়োজন। অথচ কত শত শত কত হাজার হাজার, কত লাখো, লাখো, কত কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে, বিদেশে পাচার করা হয়েছে। একই এসব খবরও প্রচার হচ্ছে, বিশ্ব জানছে। এসবের সবই জাতির জন্য লজ্জাজনকও বটে। তাই, অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষক-কর্মচারীদের পেশাগত ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে পেনশনের টাকা প্রদানে এবং কল্যাণ ট্রাষ্টের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রধান দল বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে স্ব স্ব দলের পক্ষ থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষে তাঁদের সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানাবেন-এ আশাবাদ গণপ্রহরীর।

আমাদের কথা প্রাসঙ্গিক সম্পাদকীয় মতামতের শেষ পর্যায়ের আলোচনার শুরুতে ক্ষমতাসীন সরকার এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংষ্কৃতিক সংগঠন সমূহের স্ব স্ব অবস্থান থেকে, আগত পবিত্র মাহে রমজানের রোজা উপলক্ষে, সকল শ্রেণী পেশার মানুষ যাতে সেহরি ও ইফতারিসহ দু’বেলা খাবার পান। তার নিশ্চয়তা বিধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিবেদন-এ আবেদন গণপ্রহরীর।

সরকার পক্ষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং নিশ্চয়তা বিধানে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় পরামর্শদান এবং সকল ক্ষেত্রে সিণ্ডিকেট কারসাজিরোধ এবং বাজারে খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ রাখতে ও আইন প্রয়োগকারি সংস্থাকে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষাসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। তা করতে হবে জনস্বার্থে এবং উপার্জনক্ষম শ্রমনির্ভর মানুষ যাতে উপার্জিত অর্থে সংসার জীবন পরিচালনা করতে পারেন।

এবার আমাদের কথা প্রাসঙ্গিক শেষ আলোচ্য ‘চা শিল্প’ নিয়ে অতিসংক্ষেপে দুটি কথা সরকারের অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তুলে ধরছি। একইভাবে রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে পণ্য ও দ্রবাদি বাংলাদেশ ভূখণ্ড থেকে উৎপাদিত হয়ে রপ্তানি করা হতো সে সব অর্থকারি ফসল-পণ্য সংশ্লিষ্ট শিল্প-কলকারখানা পুনরায় চালু করণ ও পুণ:স্থাপনে এবং দক্ষ শ্রমিক কর্মচারীসহ কর্মক্ষমদের ‘কর্মক্ষেত্র’ পরিণত করার কর্মসূচি-দাবি উত্থাপান করতে হবে। বেদখলকৃত জমাজমি-সম্পত্তি উদ্ধার করতে হবে। যাতে দেশ এসব ফসল-পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানী করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, অব্যবস্থাপনা, জমির অবক্ষয় ও শ্রমিক সংকট সামনে এসছে। বিশেষত চা শিল্পে সমস্যাগুলো প্রকট হচ্ছে।

যদিও অন্যান্য শিল্পের ক্ষেত্রেও সংকটগুলো কম-বেশি বিদ্যমান। যা দেশের অর্থনীতিতে অগ্রগতির পথে অন্তরায় ও উদ্বেগজনক। জাতীয় স্বার্থে উন্নত জাতের ও মানের চা উৎপাদন ও প্রক্রিয়া আধুনিকায়নের মাধ্যমে আগের দিনের সুখ্যাতি পুনরুজ্জীবিত হয় ও করতে হবে। এবং একইভাবে কর্মসংস্থানের স্বার্থে পাট, চিনি ও চামড়া শিল্পের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের বর্তমান অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারাসহ সংকটাদি মোকাবিলাসহ আলোচিত বিষয়গুলো প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐকমত্যের বিকল্প নেই। সেহেতু সরকার ও বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল সম্মিলিত উদ্যোগ নিবেন- এ আশা গণপ্রহরীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *