ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা নিন- ঈদ মোবারক। সাম্যের কবি- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গজল আকারের অমর গান- ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ….’। লাইনটি উল্লেখ করেই আমাদের কথা শীর্ষক নিয়মিত সম্পাদকীয় কলামের মাধ্যমে গণপ্রহরী পরিবার পক্ষে আমাদের সম্মানিত পাঠক, গ্রাহক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপণদাতা এবং আমাদের কলযোদ্ধা সাংবাদিক-প্রতিবেদক, লেখক ও শুভানুুধ্যায়ীকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা।
সিয়াম সাধনা ও সংযমের মাস অতিক্রম করে মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবের ‘ঈদুল ফিতরে’র মধ্য দিয়ে এক বছরের জন্য বিদায় নিচ্ছে। আর এই বিদায়ের প্রাক্কালে দিয়ে যায় সাম্য ও ভাতৃত্ববোধের শিক্ষা; যে শিক্ষা সামাজিক সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্য গড়ার সহায়ক। ‘আনন্দ’- এর শব্দার্থের ‘ঈদ’ উৎসবের মধ্যে আকাশ-পাতাল শ্রেণী বৈষম্যের সমাজ ব্যবস্থায় আমাদের চাওয়া-পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা-অপরাগতা এবং কারো অনেক কেনাকাটা সত্বেও সময়াভাবে অপূর্ণতা থাকলেও সামর্থ অনুযায়ী আনন্দের এক সমান অনুভূতি রয়েছে সবার মধ্যেই। সেই আনন্দের অংশীদার হতে সকলের প্রতি আবেদন জানাই ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা নিন- ‘ঈদ মোবারক’।
আরও পড়ুন- ঈদ আসিল্ অ্যালাও নয়া কাপড় হইল্ না
আমরা জেনে আসছি, হাসির বিপরীত শব্দ কান্না। সেই হাসির প্রকাশ ঘটে আনন্দ অনুভব করলে। যে আনন্দের অংশীদার হতে আহ্বান জানিয়েছি ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা নিন-ঈদ মোবারক। তার অর্থ এই নয় যে, হাসির বিপরীত শব্দের বিদায় ঘটেছে। আমরা কেউ হয়তো অস্বীকার করতে পারবো না যে, এক শ্রেণীর অসাধু-অধিক মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেমন জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়, তেমনি যানবাহনের ভাড়াও বৃদ্ধি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে আসছে। এবারো রোজার আগ থেকে (প্রথমদিকে) এহেন অপতৎপরতা জোরদার করছিল বটে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সময়োচিত কার্যকর পদক্ষেপে সেই অপতৎপরতার প্রবণতা অনেকাংশেই প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। স্বস্তির যাত্রায় জনসন্তুষ্টি পরিলক্ষিত হয়েছে।
এটা আবশ্যক। মুনাফা লোভীদের ভাব ভূমিকায় মনে হয়, ‘সিয়াম-সাধনা’ পালনে বাধ্যবাধকতা এবং সৎপথে চলার প্রমান হিসেবে ‘অধিক মুনাফা’ না করার নির্দেশনা তাদের জন্য নয়। লোভে ভুলে যায় যে, এটা সকল ধর্ম-বর্ণের ও জাতি গোষ্ঠির মানুষের জন্য প্রযোজ্য। এ বিষয়ে আমাদের কথার মাধ্যমে সরকার ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা নিন-‘ঈদ মোবারক’ প্রাসঙ্গিক আমাদের সম্পাদকীয় কলামের এ পর্যায়ে গণপ্রহরী পরিবার পক্ষে মহান ভাষা আন্দোলন-উনসত্তরের-গণঅভ্যূত্থান ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের যে সকল বীর শহীদদের রক্ত ও হাড়হাড্ডি এই মাটিতে মিশে জমি উর্বর করেছে; চব্বিশের জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের শহীদদের রক্ত যেন এখনও শুকানো শেষ হয়নি এবং এখনও আহতদের কান্না বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গৃহীত কিছু কর্মসূচি এখনও চলমান অবস্থাতেই; আনন্দ উৎসবের ঈদুল ফিতর অর্থাৎ রোজার ঈদ। যদিও বীর শহীদ ও আহত বীরদের পরিবারগুলোতে ঈদের দিনটি স্বভাবতই দু:খের। স্বৈরাচার হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন ঘটাতে প্রায় দেড় হাজারের মত মানব সন্তান প্রাণ হারিয়েছেন। পাশাপাশি আহত হয়ে অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন কয়েক হাজার। স্বজন হারানো এবং পঙ্গু ও অন্ধ হওয়া পরিবারগুলোকে সরকারের ‘সহায়তাদান’ থেকে এবং ‘কর্মসংস্থানের’ ব্যবস্থা থেকে কেউ যেন বাদ না যান-এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি। সেই সাথে শোকাভূত ও দু:খগ্রন্থ স্বজনরা শোক ও দু:খকে সামলে নিতে সামর্থ হবেনÑ এ কামনা করছি।
পরিশেষে গার্মেন্টস শ্রমিকসহ যে সকল শ্রমিক-কর্মচারী যথারীতি বেতন ভাতা না পেয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ থেকে শ্রম দিয়েও বঞ্চিত হয়েছেন, সে বিষয় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এতদসঙ্গে বিশ্বের মুসলমানরা যখন ঈদ করছেন তখন মার্কিনের মদদপুষ্ট ইসরাইল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনি শিশু-নারীসহ ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেকের ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছি।
আরও পড়ুন- প্রধান উপদেষ্টার প্রতি গণপ্রহরীর আহ্বান
গণপ্রহরী ‘পাঠক (বিক্রয়) নির্ভর’ পত্রিকা কারণে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর কর্তৃক বিজ্ঞাপন তালিকাভুক্ত না হয়েও তেতাল্লিশ বছর থেকে প্রকাশ হয়ে আসছে। গ্রাহকদের পত্রিকা কেনা অর্থের পাশাপাশি কতিপয় শুভানুধ্যয়াীর বিজ্ঞাপন সহায়তায় আমাদের প্রকাশনা ব্যহত হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তবে পাঠক চাহিদা পূরণে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষাবিদ-অর্থনীতিবিদ- লেখক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, রাজনীতিবিদ-সংগঠক রাজেকুজ্জামান রতন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক এসকে মজিদ মুকুল এর মতামত সম্বলিত লেখাসহ জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি দৃষ্টি আকর্ষণীয় বিভিন্ন প্রতিবেদন ও খবরাখবর প্রকাশ হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির আলোকে জাতীয়, রাষ্ট্রীয় ও সমাজ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই গণপ্রহরীর ভিত্তি। ফলে পাঠক প্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। পরীক্ষামূলক ওয়েবসাইটটি ব্যাপক সামদৃত হচ্ছে। শহীদদের আত্মত্যাগ স্বার্থক হোক। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত হোক। কাঙ্খিত বৈষম্যমুক্ত সমাজে ঈদ হোক সর্বজনীন। ঈদ মোবারক। – সম্পাদক, গণপ্রহরী।
