Thu. Jul 10th, 2025
কথা মাজলে মোটা আর সুতা মাজলে চিকনকথা মাজলে মোটা আর সুতা মাজলে চিকন

ডেস্ক গল্প : কথা মাজলে মোটা আর সুতা মাজলে চিকন। কথায় আছে কথা মাজলে কথা মোটা (বাড়ে) হয়। আর সূতা মাজলে চিকন হয়। ঠিক তেমনি এক বেচারা হকার বল পেন (শিশ কলম অর্থাৎ কলম) বেঁচতে বেঁচতে কলমের দামের উছিলায় গণপ্রহরী ডেস্কে হাজির। দেখছেন তিনজনই লেখা লেখির কাজ করছেন। সুযোগ বুঝে শুরু করেন তার জীবিকা প্রাধান্যের কলমের কতনা গুণাবলির কথা। কালি শেষ হলে তার কলম আর লিখবে না। তা-না ভেবেই খুলে দেয় তার কথার ফুলঝুরি। প্রথমে বলতে চেয়েছি দুটি কথা। শেষের শব্দটি যে ‘কথা’ সেই ‘কথা’ নিয়ে কথা উঠতেই কত কথা যে তার মনে হয়ে যায়, সে তার হিসাব রাখে না।

চট্টগ্রামের সিরাজুল ইসলামের কাছে শোনা গল্পটি একজনের কাছে তার ওস্তাদ শুনে তাকে সাথে নিয়ে কথার সাথে কথা তাঁর সাথে কথা যোগ দিতে দিতে কথার ফুলঝুরি থেকে বানিয়েছেন রসগল্প। সব গল্প আয়ত্ব করার ওস্তাদ যান পরপারে। তরপরও যে রসটুকু আত্মস্থ করতে পেরেছি তাকে সম্বল করে চট্টগ্রাম থেকে ১০ ডজন কলম, কিছু নিয়েছিলাম সূচ-সূতা আর দিয়াশলাই (ম্যাচ)। চট্টগ্রাম অঞ্চলে চট্টগ্রামের ভাষায়, সিলেট অঞ্চলে সিলেটি ভাষায় তারপর থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখার সুবাদে আমার জ্ঞানে শুদ্ধ ভাষায় গল্প বলতে বলতে আপনাদের সামনে হাজির। তার গল্পের কথামালা নিয়ে আজকের ডেস্কের গল্প।

মুরুব্বীরা বলেন কথার নাম নাকি লতা। আসলেই তাই, কথা শুধু লতার মতো প্যাঁচাতেই থাকে আমার কলমও কাগজের উপর ধরে যে ভাষায় আকা-বাঁকা, মিষ্টি কথা, তিতো কথা, রসের কথা, যা চাবেন তাই লিখতে পারবেন। লতা যেমন এক গাছ থেকে আরেক গাছ ছাড়িয়ে যায়, তেমনি কথাও এক প্রসঙ্গ থেকে হাজার প্রসঙ্গে চলে যায়। আপনারা যেমন কোন ঘটনা ঘটলে, লিখতে কি লেখেন? লেখেন না? লেখেনÑকি ঘটলো, কোথায় ঘটলো, কখন ঘটলো, কিভাবে ঘটলো, শেষে কি হলো, সবই লেখেন।

আমার ও আমার পরিবারের ৬ সদস্যের জীবিকার জন্য এ পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছি। এটা করতে- শত কথার ফুলঝুরি মনের মাঝে উঁকি মারে প্রতিনিয়ত, আমরা বাঙালিরা আবার এমনিতেই কথার বেলায় এক ধাপ এগিয়ে। আর ভোট ভোট খেলেন যারা, তারাতো শত ধাপ এগিয়ে। যাই হোক, কথা বলতেই আমাদের হুস থাকে না। যেমনি এমপি হন দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন করতে। কত আইন হয়েছেও, হচ্ছেও। আমার যেমন শিক্ষার হার বাড়ায় কলম বিক্রি বেড়েছে, আগের থেকে দাম বেশি হওয়ায় টাকাও বেশি আসে পকেটে আর বাজারে গেলে তহবিল ঘাটতি, শুধু আস্তে আস্তে সংকটের বেড়াজালে জড়িয়ে যাচ্ছি, শুধু আমি নই, দেশের বেশিরভাগ মানুষ, দুঃখিত। দুঃখের কথা বলতে মানা, সম্মানিত মন্ত্রী, এমপি, চেয়ারম্যান- মেম্বার পুলিশ র‌্যাব-বিজিবি বাড়ীতে দিবে হানা, তাই কথা বলতে মানা-তওবা তওবা।

কথা মাজলে মোটা আর সুতা মাজলে চিকন। চাকুরীর জন্য কতনা অফিসে ঘুরেছি, ইন্টারভিউ দিয়েছি, টাকার জন্য চাকুরি পাই নাই। যে অফিসে গেছি দেখেছি কেরানি পিওনরা কম কথা বললেও কর্তাব্যক্তি কাজ ফেলে গল্প-কথায় মশগুল থেকে কত মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেদিকে কারো লক্ষ্য নেই। এভাবে প্রতিদিন সময় নষ্টের মূল্যমানে দেশের শত শত কোটি টাকা অপ্যব্যয় হচ্ছে; আবার যানজটতো সময় অপচয়ের রাক্ষসে পরিণত হয়েছে। কাজের কাজ হোক বা না-হোক মাস শেষে কাড়ি কাড়ি টাকা বেতন তো ঠিকই আসে। দোষ হলেতো পিওন-দারোয়ান-কর্মচারীদের। সেও সরকারি দলের হলেতো সবার ক্ষেত্রেই সমান। এ বাংলাদেশে কত রংয়ের কথার বাহার।

পথে ঘাটে, হাটে-মাঠে, হাওর-বিলসহ মিছিল-মিটিং আর জনসভায় কত কথা বলে চলেছেন আমাদের নেতারা। মাউথপিস বা স্পিকার সামনে পেলেই হলো, ব্যস, সব শেষ, চাপাবাজি মারতে মারতে মুখে ফেনা তুলে, প্রতিশ্রুতির কথা বলে জনসাধারণকে বোকা বানায়। এসব বাঁসি প্যাঁচাল শোনার সময় বা ইচ্ছে কারো আছে কিনা তা ভেবে দেখে না, তিনি শুধু বলেই যাচ্ছেন। অনেক সময় দেখা যায়-দর্শক বিরক্ত হয়ে কানে তুলা গুজে দেয় কিংবা এ চান্সে ঘুমটা সেরে নেন অনেকে; আর মোবাইল টেপাটেপিতো আছেই। প্রসঙ্গত একটা কৌতুক মনে পড়ে গেলÑজনৈক নেতা বক্তব্য শেষে দেখলেন, শুধু একজনই বসে আছেন। তিনি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলছেন, আপনি ধৈর্য ধরে আমার দীর্ঘ বক্তব্য শুনেছেন সেজন্য ধন্যবাদ।

পরক্ষণেই অপর ভদ্রলোক বলে উঠলেন, দয়া করে আপনি যাবেন না, আমিই শেষ বক্তা? মা-বোনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং ঘরবাড়ী দেখা শুনা করা সন্তান জন্ম দেওয়া ও লালন পালন করার দায়িত্ব পালন করতে (আগ থেকেই চলে আসছে) অভ্যস্ত হয়েই হয়তো বলবো কথা বলার ক্ষেত্রে তুলনা হয় না, কত কথা জানে তারা। কোনো কিন্ডারগার্টেন বা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল অথবা শিক্ষা বেঁচাকেনায় পারদর্শী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ভিড় দেখলে ধরে নিবেন সামর্থবান বা দুর্নীতিগ্রস্থ কর্তাদের পরিবারের নারী সদস্য (শ্রমজীবি-কর্মজীবি বাদে) অর্থাৎ মহিলা ‘হুইল’ নিয়ে মেতে আছেন। কার স্বামী কেমন, কাকে বেশি ভয় পায়, কার কতটা শাড়ি আছে, সর্বোচ্চ কত দামের শাড়ি আছে ইত্যাদি সব ফালতু বিষয় স্থান পায় তাদের আড্ডায়। আবার গ্রামগঞ্জের মহিলারা (শ্রমজীবি-কর্মচারী বাদে) জড়ো হলেই শেষ, চুলোর ভাত চুলোয় থাক, সেদিকে (কদাচিৎ দু’চারজন বাদে) কারো কোনো খেয়াল নেই, তারা আছেন মাথার উকুন বাছা নিয়ে, এদিকে পুরুষ শাসিত সমাজের কর্তা মিয়ার পেট ক্ষিধেয় চোঁ চোঁ করছে, কে রাখে কার খবর?

চলন্ত গাড়িতে আমাদের বিদ্যাসাগর আধুনিক মা বোনদের পড়ালেখার গল্প শুনলে অথবা মোবইলের কথোপকতোন শুনলে আপনি বিরক্ত হবেন না, এটাই হচ্ছে এখনকার অলিখিত নিয়ম, গাড়ীতে এরা (দু’একজন বাদে) চুপ থাকতে পারে না, আপনাকে তা হজম করতেই হবে, নয়তো অন্য কোনো উপায় নেই। কথা নিয়ে মিডিয়াতেও কম আলোচনা হয়নি। দীর্ঘদিন পূর্বে বিটিভিতে ‘কথার কথা’ নামে একটি মজার অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। আবার একুশেতেও কথার মারপ্যাচ নিয়ে ‘পথের প্যাঁচালী’ নামক একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল। জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত কথাকে নিয়ে আসেন অডিও জগতে, উনার কথা কথা বলো কম কম’ অডিও এ্যালবামটি বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। এ কথার সুনিপণ গাঁথুনিতেই লেখক লেখেন গল্প উপন্যাস, কবিরা কথা সাজিয়ে লেখেন-কবিতা।

অনেকেই আছেন যারা বেশি কথা বলেন, এদরে সবাই বাচাল নামেই জানে। অথবা বকবক করাই এদের কাজ, প্রয়োজনের চাইতে অপ্রয়োজনীয় কথাই এরা বলেন বেশি। অনেকেই তাদের এড়িয়ে চলেন। বেশি কথা বললে অনেক সময় বিপদে পড়তে হয়, এমন একটি ঘটনা শুনুন এবার ঃ আমার এক বন্ধু একবার গেল কনে দেখতে, সে আবার কথা না বলে থাকতে পারে না। তো কনের বাবা আসাতেই জিঙ্গেস করলোÑ তা আব্বা, আপনি কি দিয়ে ভাত খেয়েছেন? এমন আহমকি প্রশ্ন শুনে তিনি বলে উঠলেন, আপনি কি বিয়ে করেছেন. আর যায় কোথায়? আমার বাচল বন্ধুটিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল. কথা বেশি বললে যেমন সমস্যা, তেমনি কথা কম বলাটাও দোষের। আমার পথিক নামের আরেক বন্ধু ভালবাসতো একটি মেয়েকে, একদিন তাদের ডেটিংÑএ আমাকে নিল, গেলাম আমি আর পথিক, ওর প্রিয়া এলো, সাথে তার বান্ধবী। ওটাই ছিল পথিকের প্রথম ডেটিং। অনেক্ষণ ধরে বীচে হাটছি, আমি টুকটাক কথা-বার্তা বলছি, কিন্তু পথিকের মুখে কোনো কথা নাই। মেয়েটি এক পর্যায় বলে উঠলোÑ বোবা নাকি? এতক্ষণ একসাথে আছি অথচ কোনো কথা বলছে না। ব্যস হয়ে গেল সব এলোমেলো, রাগে-অপমানে পথিককে জায়গা ত্যাগ করে বলে যায়। আহারে বেচারা পথিক?

কথা নিয়ে তো কম কথা হলো না, পাছে আবার বিরক্ত হয়ে ডেস্ক থেকে বিদায় করে দিলে তো আমার আম-ছালা দুটোই গেল, সময়ও ফিরে পাবো না। বরং নিজেদের কাজের ক্ষতি ভেবে বড় কথা শুনিয়ে দিবেন, যা গরীব হলেও আত্মমর্যাদায় আঘাত আসবে। তার চেয়ে এই বাসী প্যাঁচাল শেষ করাই ভালো। তাতে কলম না নিলেও দেখার জন্য বারো রঙের যে বারোটা কলম দিয়েছি তার অন্তত; দামটা পাবো। মূলত ঃ যারা আজেবাজে মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে বলেন, তাদের আমরা চাপাবাজ নামে চিনি, চাপাবাজি নিয়ে আমার ওস্তাদের শিখানো একটি কথা বলেই আজকের কথার ফুলঝুড়ি শেষ করছি। দু’ চাপাবাজ বন্ধু গল্প করছে ঃ জানিস আমার দাদার এতবড় একটা গোয়াল ছিল যে, এক পাশ থেকে অন্যপাশে দুধ দোহন করে আসতে আসতে অন্যপাশের গরুটি আবার বাচ্চা দিত! অন্য বন্ধু : আরে ধুর, আমার দাদারতো এত বড় লম্বা বাঁশ ছিল যা দিয়ে আকাশের মেঘকে পর্যন্ত সড়ানো যেতো!

প্রথম বন্ধু : চাপা মারার জায়গা পাস না, তাহলে এত বড় লম্বা বাঁশটা কোথায় রাখতো তোর দাদা?

দ্বিতীয় বন্ধু : কেন তোর দাদার গোয়ালে।

বুঝা গেল চাপায় কেউ কারো চেয়ে কম নয়, প্রিয় পাঠক আমার কথার ফুলঝুড়ির কথা না মেজে সূতার মতো রেখে দিব। এখন বলুন কলম কয়টা দিব বা ক’ডজন দিবো। তবে আছে মাত্র দেড় ডজন। কলম নিন, কলম দিয়ে ভাল ভাল কথা লিখুন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম না কমালে সব উন্নয়নই অনুন্নয়নের সামিল হবে। আর গল্পটি ভাল লাগলে ছোট্ট কথায় ধন্যবাদ দিয়েন, না লাগলে বড় কথা শুনাইয়েন না। তাহলে এতটুকু কথা দিচ্ছি, গরীবদের কৃষক-শ্রমিক বলে মুখ বন্ধ করে না দিতে সরকারকে লিখুন। বলার পথে দেখা হলে কলম কিনবেন ডজনে ডজনে, কথা দিচ্ছি দেখা হবে, দেখা হলে কথা হবে-সে কথাই রইলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *