আকাশ সংষ্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব
কেএস মৌসুমী : ‘‘খবর ছোট্ট ঘটনা বড়’’ এর দুটি খবরের প্রথম খবর হচ্ছে-আকাশ সংষ্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় প্রতিযোগীতার যুগে প্রযুক্তির বিকাশ অপরিহার্য শর্তে পরিণত হয়েছে। যদিও বিকাশমান প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের চেয়ে নেতিবাচক ব্যবহার দ্রুত বেড়ে চলছে। যেমন ‘এআই’ প্রযুক্তির অপব্যবহার লক্ষণীয় হয়ে ওঠেছে। যা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে- এমন আশঙ্কাও জনমনে দেখা দিয়েছে। তার সাথে আমাদের দেশে পাল্লা দিচ্ছে আকাশ সংষ্কৃতি। গণমাধ্যমের খবরেই প্রকাশ-ইতিমধ্যে শতকোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। আর ক্ষতির মূলে ভারতের দখলে থাকা আকাশ সংষ্কৃতি। এ পরিস্থিতিতে সচেতন বিশ্ববাসীকে ভাবিয়েও তুলছে প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার নিয়ে।
অপরদিকে আমাদের দেশের দেশপ্রেমিক প্রগতিশীল গণমাধ্যম ও সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সচেতন মহলকেই ভাবিয়ে তুলেছে ভারতের দখলে থাকা আকাশ সংষ্কৃতি এবং তাঁরা বিষ্মিতও বটে। বিস্মিত যে হতেই হবে সকলকেই। কেননা, দেশের তথ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ৩৩২টি টিভি চ্যানেলের মধ্যে দেশীয় ফ্রী চ্যানেল সংখ্যা ৩৯। বাকী ১৯৩টি চ্যানেলের মধ্যে দেড় শতাধিকই ভারতের টিভি চ্যানেল। এই দেড় শতাধিকের মধ্যে ১৩০ টির বেশি বেক্সিমকো গ্রুপের তত্ত্বাবধানে ডাইরেকট টু হোম (ডি এইচ) ‘আকাশ’- এর মাধ্যমে চ্যানেলগুলো চলমান। এ প্রেক্ষিতে দেশের টিভি চ্যানেল মালিকদের সংগঠন (অ্যাটকো) নেতাদের মতে দেশকে আকাশ অপসংষ্কৃতি গ্রাস করায় শতকোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে আকাশ সংষ্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারের ফলে নিজেদের সংষ্কৃতি ভুলে উন্নত বিশ্বের তথা ভিনদেশী সংষ্কৃতির উপর নির্ভর হয়ে পড়ছি আমরা। অথচ নিজেদের সংষ্কৃতির মাধ্যমেই আমাদের গৌরব ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে পারি বিশ্বব্যাপী। সেহেতু সংষ্কৃতি একটি জাতি ও রাষ্ট্রের দর্পণ হিসেবে বিবেচ্য। নিজেদের আত্মসচেতনতা ও দায়িত্ববোধ থেকে দায়িত্বশীল-যত্নবান হতে না পারায় বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের বদৌলতে আমাদের সংষ্কৃতিকে গ্রাস করছে আকাশ সংষ্কৃতি। আমরাও হারাতে বসেছি আমাদের নিজস্ব সংষ্কৃতির স্বকীয়তা। যা কারই কাম্য হতে পারে না। বরং প্রতিরোধ হিসেবে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে দেশীয় সংষ্কৃতির আলোকে তরুণ ও যুব সমাজকে আকৃষ্ট করার মতো বৈচিত্র আনতে হবে। যাতে করে আকাশ সংষ্কৃতির নেতিবাচক ব্যবহার না করে ইতিবাচক ব্যবহারে মনোযোগী হতে পারেন। সরকার এবং রাজনৈতিক সামাজিক সাংষ্কৃতিক অঙ্গনে সংশ্লিষ্টদেরসহ সাংবাদিক-সাহিত্যিক লেখক বুদ্দিজীবির পক্ষেও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আরও পড়ুন- ভারতপুষ্ট আওয়ামীলীগের সশস্ত্র অপতৎপরতা রুখে দিন
মূল্যবোধ রক্ষা করুন

ফাতেমা মজিদ জুঁই : ‘‘খবর ছোট্ট ঘটনা বড়’’ এর দুটি খবরের দ্বিতীয় খবর হচ্ছে-পরিবারই হচ্ছে মূল্যবোধ সৃষ্টির ভিত্তি। মূল্যবোধ শিক্ষা ও চর্চার গোড়াপত্তন পরিবারেই। আর পরিবার যদি বড় হয় ও যৌথ হয়, সেই পরিবারের মূল্যবোধের প্রভাব ও শিক্ষা দ্রুত সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। সমাজ হয় সমৃদ্ধ এবং সমৃদ্ধ সমাজের রাষ্ট্রে মূল্যবোধের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐক্য থাকে সুদৃঢ়। এবং দেশও উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলে দ্রুত। বৈষম্য, অত্যাচার-নির্যাতন, শোষণ-নিপীড়ণ, অবিচার-জুলুম ও কালাকানুনের গণবিরোধী শাসন জেকে বসতে পারে না। ন্যায়, সাম্য, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারেন মানুষ এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থাও হয় গণতান্ত্রিক।
মূল্যবোধের অবক্ষয়ে সমাজ বদলে যাচ্ছে, রীতিনীতিও বদলে যাচ্ছে। যৌথ পরিবার বা বড় পরিবার ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এমনকি পারিবারিক বন্ধন বা সম্পর্কও ছিন্ন হচ্ছে। সবই যেন গণপ্রহরীতে অহরহ পরিবেশিত মন্তব্যকে বাস্তবায়ন করতে ব্যস্ত। যদিও মন্তব্যটি গণপ্রহরীর নয়। গণপ্রহরীর মতে, বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের দীক্ষা গুরুরই দীক্ষা। অর্থাৎ সে দীক্ষা বলছেÑ ‘অর্থ-সম্পদ কামাও, বাড়-গাড়ী সম্পদ করো আর উপভোগ করো’। যেন এমন দীক্ষাই যেন সবাই ছোট সংসার বা ব্যাক্তি হিসেবে যার যার সংসার নিয়ে সেই সেই ব্যস্ত। ফলে পরিবারেও ন্যায় বিচার বা ন্যায্যতা থাকছে না। বরং পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। এ সবই মূল্যবোধের অবক্ষয়ের স্বাক্ষ্য। তাই মূল্যবোধে অবক্ষয় রুখতে আন্তরিক হতে হবে সকলকে। সামাজিক অবক্ষয় রোধ করুন, শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানের সমাজ গড়ে তুলতে মূল্যবোধ রক্ষা করুন।
আরও পড়ুন- সময় -ই ভবিষ্যৎ নির্ধারক
