জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সে কারণে বাংলাদশের জনগণ-মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজের মতই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের পথ ধরে সৃষ্ট গণঅভ্যূত্থানে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ নিশ্চিত দেখতে যেমন আশাবাদী। তেমনি আশাবাদী কাঙ্খিত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কার্যকর সংষ্কার করে নির্বাচিত সরকারের ঘাড়ে জনআকাঙ্কা পূরণের দায়িত্ব অর্পন করবেন অন্তর্বর্তী সরকার। গণঅভ্যূত্থানের ফসল সরকারের সময়কালেও কেন দ্রব্যমূল্যে অস্থিরতা?
এ জন্য সময়ের প্রয়োজন বটে। তবে লেখাটির এ পর্যায়ে স্বৈরাচার পতনের তারিখ ধরলে দু’মাস নয় দিন আর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তারিখ ধরলে পুরো দু’মাস ছয় দিন। এই সময়ে আকাঙ্খা পুরণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সংষ্কার কাজ ধীর গতিতে হলেও কার্যকরভাবে চলমান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পতিত কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারের ক্ষমতার অপব্যবহারে ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ, নদ-নদী, খাল-বিল দখলদারদের সন্মিলিত সিন্ডিকেট বেপরোয়া লুটপাট-অর্থপাচারসহ রাষ্ট্রীয় ভান্ডারই শুণ্য করে ফেলে।

সেই সাথে কালাকানুনের শাসন-শোষণের জন্য সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি সিন্ডিকেটের পর্যায়ক্রমে নিত্যপণ্য, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতিতে অতিষ্ঠ করে তোলা, সেইসব সিন্ডিকেট কার্যকর। কোথাওবা সে কারনেই চলছে গণঅভ্যূত্থানের ফসল ‘সরকারের’ সময়কালে সিণ্ডিকেটের কারসাজিতেই দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে অস্থিরতা। এখানেই শেষ? না।
পতিত স্বৈরাচারের একটানা দীর্ঘ সময়ের শাসনামলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম একদিনের জন্য কমেছিল-এমনটা জানা ও শোনা যায়নি। বরং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নিষ্ঠুর-নির্দয় সিণ্ডিকেট সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে যেন কুপোকাত করছে। কেননা, তাদের ব্যয় অনুপাতে আয় না বাড়ায় সীমিত আয়ের মানুষ ভীষণ কষ্টে আছেন। এ নিয়ে আরও অনেকের মত নিজেও বার বার লিখে চলছি। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণে নিত্যপণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ এখনও উল্লেখ করার মত নয়। ফলে মানুষের মাঝে হতাশা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।

একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংস করতে অস্থিরতা ও অপতৎপরতা। ভারতের অনুগত কর্তৃত্ববাদী পতিত স্বৈরাচার সরকারের মতোই ভারত সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায়। সেহেতু ও চাপ সৃষ্টিতে তাদের গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানেই সিণ্ডিকেটগুলো তৎপর। এছাড়া স্বৈরাচার আমলে দলের-জোটের সুবিধাভোগীদের যারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মত ভাগ্য পরিবর্তন করেছে; তারাও গার্মেন্ট শিল্পে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
এদিকে আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের অসংখ্য ত্যাগী-পুরাতন নেতাকর্মী সমর্থকদের উপর ভিত্তি করেই এসব করতে পারছে। কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত সিন্ডিকেটভুক্ত লুটেরা-সুবিধাভোগীরা নিজেদের ভাগ্য বদলিয়েছে। আর ত্যাগীদের বঞ্ছিত করেছেন দলীয় মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে। এবং তারা যে আকাঙ্খায় ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই আকাঙ্খাকে পদদলিত করে, তাঁদের প্রশ্নের মুখে রেখে অগোচরে কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে অথবা কেউ আত্মগোপনে গিয়ে।
কারণ, কোনটাতেই তাদের অসুবিধা নেই। অর্থবিত্ত ও সহায়-সম্পদের পাহাড় গড়েছে ক্ষমতারপ্রভাব বলয়ে। সেই অর্থ-সম্পদ নির্ভর করে, আরাম আয়েশে থেকে রুচিকর খাবার খেয়েই বেশভূসা পরিবর্তন করে সময় কাটাচ্ছেন। তাদেরসহ পরিবারের সদস্যদেরও আয় রোজগারের জন্য কোনো ধরনের শ্রমের প্রয়োজন নেই, যুগের পর যুগ। ক্ষমতার বদৌলতে যা কামিয়েছেন তাতেই জীবন কেটে যাবে। এই সুযোগে পতিত স্বৈরাচারের প্রধান শেখ হাসিনাসহ প্রতিবেশী ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের আশ্রয় প্রশ্রয়ে যারা নিরাপদে থাকছেন।
অপরদিকে, উগ্রহিন্দুত্ববাদী মোদি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের মদদে ও গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর পরিকল্পিত ভূমিকায় পুনরায় বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর হয়েই ষড়যন্ত্র করছেন। পাশাপাশি নানা কৌশলে দীর্ঘ সময়ের ত্যাগী-বঞ্চিত নেতাকর্মীদের কাছে ভাল মানুষ সাজার জন্য উদ্দেশ্যে প্রণোদীত বক্তব্য প্রচার করছে সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে। এবং জনগণের মধ্যেও নানা কৌশলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। যা গণঅভ্যূত্থানের বিজয়কে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য নানা কূটকৌশলের সাথে লুটে নেয়া অর্থ ছিটাচ্ছে।

ফলশ্রুতিতে সিণ্ডিকেটের ‘সিন্ডিকেট’-এর মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দ্রব্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রেখে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। একইভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাতের গার্মেন্ট সেক্টরে নানাভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করে এখাতের বাজারকে ভারতের বাজারে পরিণত করতে যাচ্ছে।
এহেন অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টিতে গণঅভ্যূত্থানের সরকারকে ব্যর্থ করার অপচেষ্টা নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক কথাই বলা হয়েছে। তারপরও পাঠকদের মধ্যে যাতে তেমন কোনো পশ্ন্ন দেখা না দেয় এবং মনের ভাব প্রকাশ সম্পন্ন করতে আরও কিছু কথা লিখতে হচ্ছে। আর লেখার প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে সম্মানিত পাঠকদের সাথে মত বিনিময়ের সুবিধার্তে ‘জ্ঞানীর জন্য ইশারাই কাফী’- প্রবাদের বাস্তবতালোকে কথাগুলো তুলে ধরতে চেষ্টা করছি।
সর্বজন স্বীকৃত যে,লাখো লাখো শহীদের আত্মবলিদানে, লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এবং বীর জনগণের অকুতোভয় সন্তান-বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনবাজির মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। দেশ পরিচালনায় প্রণোদীত সংবিধান ভিত্তিতে পরিচালিত দেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমনকি স্বাধীনতার বৈশিষ্ট্যের মৌলিক অধিকারসহ মানবাধিকার, সাম্য-ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতাসহ গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং সেই সংবিধানও কাঁটা-ছেড়া করতে করতে জনগণের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পথই রুদ্ধ করা হয়েছে।
পক্ষান্তরে গণতান্ত্রিক সরকারের সাইনবোর্ড তুলেই রাজতান্ত্রিক কায়দায় ফ্যাসিজম পদ্ধতিতে রাষ্ট্রকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার মতই ভারতের একান্ত অনুগত হাসিনা সরকার কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী রাষ্ট্র কায়েম করে। তাঁর নেতৃত্বাধীন শাসনকে প্রতিপক্ষহীন ও নিরাপদ করতে আওয়ামীলীগসহ ১৪ দলীয় জোট সরকার গঠন করে। এবং ভারতেরই পরামর্শে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে পাশে রেখে চালাতে থাকে স্বৈরাচারের স্টীম রোলার। হত্যা, খুন, গুম, গ্রেফতার, অত্যাচার-নির্যাতনের পথ বেছে নেয়।
এভাবে ভিন্নমত ও বিরোধী দল সমূহকে দমনে রক্তের হলিখেলায় মেতে ওঠে স্বৈরাচার। যদিও স্বৈরাচারের শাসন-শোষণের নাতিদীর্ঘ ইতিহাস লেখার প্রয়োজন নেই। তদসত্বেও গণঅভ্যূত্থানের সরকারের সময়েও কেন অস্থিরতা তা তুলে ধরতে ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অতীতের শিক্ষা নিতেই বাস্তবতার আলোকে ইতিহাসের কিছু ঘটনা তুলে ধরতে বাধ্য হলাম, অসহনীয় পরিস্থিতি কাম্য নয় বলেই।
এই অসহনীয় পরিস্থিতির হাত থেকে মুক্তির জন্য স্বাধীনচেতা মুক্তিকামী মানুষ ও তাঁদের হৃদয়ে লালিত মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে ফুঁসে উঠছিলেন। কিন্তু ‘বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে’-প্রবাদের মতই কে ঘন্টা বাঁধছে ও সেই ঘন্টার শব্দ শোনার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন মানুষ। তবে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলো ঘন্টা ‘বাঁধার’ ক্ষেত্র তৈরী করেও ঘন্টা বাজাতে পারেনি।
তবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ভারতীয় হুমকির হাত থেকে রক্ষায় দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলার জন্য অনুপ্রাণিত করতে প্রবাসে থাকা বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা দূরদর্শী চেতনায় সজ্জিত ইউটিউবাররা জ্ঞানগর্ব ও যৌক্তিক বক্তব্যের মাধ্যমে অনুপ্রেরণা যোগাতে থাকেন। গণমাধ্যম কর্মীরাও অনেকাংশে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।
এমন পরিস্থিতিতেই ঘন্টা বাঁধতে, ঘন্টা হাতেই হুংকার ছাড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই হুংকারে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ যেন ঐক্যবদ্ধভাবেই জীবন দিতেই স্বৈরাচারের গুলির মুখেই রাস্তায় নামেন। শুরু হয় গণঅভ্যূত্থানের দিকে এগিয়ে চলা। রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জীবন-মরণ আন্দোলনে অংশ নেন। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ গণজোয়ারে সুশীল সামজ ও সাংষ্কৃতিক গোষ্ঠি রাজপথে নেমে আসেন।
দেশপ্রেমিক সেনাসদস্যদের ব্যাপক সংখ্যক জুনিয়র কর্মকর্তা ও সকল সদস্যের সমর্থনে সেনাবাহিনীর বীর সেনানীরা সমর্থন জানানোর পাশাপাশি আন্দোলনে অংশ নেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চিহ্নিত খুনী ও নির্যাতনকারীরাবাদে অন্যান্যদেরসহ প্রশাসনের মধ্যে থাকা স্বৈরাচার বিরোধীরাও সরকারের আদেশ অমান্য করে সমর্থন দেন আন্দোলনে। ফলশ্রুতিতে স্বৈরাচারের গণহত্যার হলিখেলা পর্যদুস্ত করার মধ্য দিয়ে সফল হয় গণঅভ্যূত্থান।

অতঃপর রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ে অুনষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদেরকে সর্বসম্মতিতে মনোনীত করা হয়।
নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। সেই সরকারের রাষ্ট্রীয় সংষ্কারের কাজ কিছুটা ধীরগতিতে হলেও কার্যকরভাবে চলমান। যে সংষ্কারের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সত্যকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সকলকে মানতে হবে ও বিশ্বাস করতে হবে। তারপরও গণঅভ্যূত্থানের ফসল সরকারের সময়কালেও কেন দ্রব্যমূল্যে অস্থিরতা? এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থতার আশংকার কথা ।
গণঅভ্যূত্থানের সরকার কেন চ্যালেঞ্জের মুখে, কেনইবা দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ে ও গার্মেন্ট সেক্টরে অস্থিরতা সে নিয়ে বিশাদ আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। কারণ আগেই বলেছি ‘জ্ঞানীর জন্য ইশারাই কাফী’।
এবার আসা যাক, ‘জ্ঞানীর জন্য ইশারাই কাফী’-প্রবাদের ‘ইশারা’ হিসেবে বাতাসে ভেসে বেড়ানো ‘প্রশ্ন’ উহ্য রেখে কথাগুলোর সার সংক্ষেপে। গণঅভ্যূত্থান হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো, সরকার সংষ্কার কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন এবং সরকার প্রধান-প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে বিশ^কে জানালেন গণঅভ্যূত্থান সফল করতে ছাত্র জনতার বীর গাঁথা কাহিনী ও ভাষণের মাধ্যমে সাড়া ফেললেন বিশ্বে।
দেশকে এগিয়ে নেয়ার সাহায্য-সহযোগীতা চাইলেন বিশে^র। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্ব এবং চীন ও মুসলমান বিশ্বের অনেক দেশ সার্বিক সহযোগীতায় আশ^াস দিলেন। সহযোগীতা প্রাপ্তি শুরু হয়েছে। তবে যারা সহযোগীতা করবেন ও করছেন তারা তাদের দেশের নীতিমালার করবেন।
জাতিসংঘসহ বিশ্বে নেতৃবৃন্দের এসব সহযোগীতার আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতিতে অসনতুষ্টিও আছে কারো। বিশেষত: প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে নয় সম্প্রসারণবাদী ভারত সরকার তার অন্তর্জালা মিটাতে পতিত স্বৈরাচারকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন সংবিধান-গণঅভ্যূত্থানের অনুমতি দিয়েছে? অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও সংষ্কার কাজ করার ক্ষমতাই-বা কে দিয়েছে? সোজাসাপ্টা উত্তর গণঅভ্যূত্থান। কারো ভাষায় বিপ্লব-গণবিপ্লব, কারো ভাষায় গণঅভ্যূত্থান।
যে যাই বলুন, বাংলাদেশসহ বিশ্ব স্বীকৃত যে, বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষ গণঅভ্যূত্থান করে পতিত স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। সংবিধান বলছে, জনগণই রাষ্ট্রের মালিক’- সংবিধান বলে মালিকদের গণঅভ্যূত্থানে স্বৈরাচারের পতন। সেই ক্ষমতাবান বীর জনগণের সমর্থনে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বীর সেনানীদের সম্মতিতে এবং আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের যুক্তিযুক্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতিতে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাই অন্তর্বর্তী সরকার ও তার জনআকাঙ্খা পরূণের মত সংস্কার কাজ ১৬ কোটি মানুষের।
পক্ষান্তরে পতিত স্বৈরাচার ভারতকে নানাবিধ সুবিধা দিয়ে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার মতলবে পরিকল্পিতভাবে কাঁটা-ছেড়া করেছে ‘সংবিধান’। সেই সংবিধান মতে গণতান্ত্রিক অধিকার বা ধরাবাহিকতা রক্ষার নামে ‘গণতন্ত্র হত্যা করে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠাকারিদের রাজনৈতিক অধিকার’- এ পর্যায়ে গ্রহণ যোগ্য নয়। রাষ্ট্রপরিচালনায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের চিহ্নিত স্বৈরাচারের সেবকদের রেখে এসবের স্থায়িত্ব থাকতে পারেনা।
অথচ শহীদের আত্নত্যাগ ও জনগণের জীবন বাজির ভূমিকা পাশ কাটিয়ে সবই আছে বলেই সর্বক্ষেত্রে যেমন অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তেমনি ভারতের মদদে আবারো ক্ষমতায় ফিরে আসার স্বপ্নে বিভোর হয়ে স্বৈরাচার ও তার সিন্ডিকেট অপতৎপরতা চালাচ্ছ্।ে গার্মেন্ট সেক্টরে অস্থিরতাসৃষ্টির মধ্য দিযে এখাতে বাংলাদেশের বাজারকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। অনেকটা সফলও।
পশ্চিমা বিশ্ব এখাতকে সার্বিক সহযোগীতার নিশ্চয়তামুলক আশ^াস দেওয়ায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাও জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রয়োজনে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে যেমন ভিন্নমত ও বিরোধীদলকে স্তব্ধ করে দিতে নিজেরাই হত্যাÑ অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে বিরোধী দল ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপর চাপিয়েই ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসেছে।
তবে অস্থিরতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আন্দেলনে তীক্ষ্ণবু্দ্ধি ও বীরত্বের পরিচয় বহনেকারী গর্বিত বীর সৈনিক ছাত্র নেতৃবৃন্দের প্রতি অকুন্ঠ বিশ্বাস থাকলেও রাজনৈতিক ‘দুরদর্শিতার অভাব’ তা স্বীকার্য। সেহেতু বিজয় অর্জনের চেয়েও সফলতা ধরে থাকা যে বহুগুনে কঠিন, তা বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতার ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। একইভাবে বিশ^নন্দিত নোবেলজয়ী প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টবৃন্দ বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জনকারী-দায়িত্ব পালনকারী জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব বটে। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে অভিজ্ঞতা-দূরদর্শীতা ও বিচক্ষণতা অর্জনে ঘাটতিও স্বীকার্য।
পক্ষান্তরে স্বৈরাচারের অকথ্য অর্ত্যাচার-নির্যাতন মোকবিলা করে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ধৈর্য্যরে সাথে এগিয়ে চলা রাজনৈতকি দলগুলোও ফাঁকা মাঠে দলীয় রাজনীতি করার চিন্তা থেকে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। নিত্যপণ্যের দাম কমাতে না পারাসহ প্রায় সর্বক্ষেত্রে সৃষ্ট অস্থিরতায় ও নানা কূটকৌশলী ষড়যন্ত্রে সরকার চ্যালেঞ্জের মুখে ও ব্যর্থতার শঙ্কায় থাকছেন।
উপরোল্লিখিত সাধারণ জ্ঞানের মতামতের আলোচনাকে সকল বীর শহীদ, আহত বীর এবং জীবনের ঝুকি নিয়ে অংশগ্রহণকারী বীর ছাত্রজনতার ত্যাগকে স্বার্থক করতে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে বিবেচনার অনুরোধ থাকছে। সেই সাথে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন পতিত স্বৈরাচারের সিণ্ডিকেটের কাছে অবমূল্যায়িত দীর্ঘ সময়ের দুঃখ-কষ্ট করা অসংখ্য ত্যাগী-নিঃস্বার্থ পরায়ন নেতা-কর্মী সমর্থকদের স্মরণ করে দিতে চাই। আপনাদের ত্যাগের- উপর নির্ভর করেই স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি, আপনারাও যথাযথ মূল্যায়িত হননি।
অথচ ইতিহাস বলছে, কোন ত্যাগই বৃথা যায় না। আপনারা যদি দেশ, জাতি ও জনগণের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনসহ স্বাধীনতার বৈশিষ্ট্যসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মসূচী গ্রহণ সাপেক্ষে সুবিধাভোগীদের বাদ রেখে নতুন ভাবে এগিয়ে যান, নিশ্চয়ই জনগন এক সময় মূল্যায়ন করবেন। কিন্তু একটানা স্বৈরশাসনের প্রায় ১৮ বছর কালে দলের ছত্রছায়ায় আপনাদের বঞ্চিত করে মুখোশধারী সুবিধাভোগীরা নানা ভাবে সুবিধা ভোগ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছের মতো নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। তাদের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না। জনগণের সাথে থেকে সৃষ্ট অস্থিরতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হোন। দেশের স্বার্থ, ব্যক্তি ও সংগঠনের উর্ধ্বে।
রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে যারা রয়েছেন তাঁরা চিহ্নিতদের বিষয়ে সরকারকে তথ্য দিয়ে সততা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান থাকছে এই লেখার মাধ্যমে। বিনীত অনুরোধ করবো বিশ্ব নন্দিত প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস নেতৃত্বাধীন সরকারকে- সংবিধান নয়, বরং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রতিনিধিদের সাথে উপদেষ্টা পরিষদের ঘন ঘন মত বিনিময় সভা করে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত মতে সংষ্কার কাজকে এগিয়ে নিন এবং অস্থিরতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় কঠোর হন। ষোল কোটি মানুষের রায়ের চেযে শক্তি কারো বেশি হতে পারে না। তাই ভয়-ডর নয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নয়, ষোল কোটি মানুষের আকাঙ্খা পূরণে সফলভাবে সংষ্কার কাজ সম্পন্ন করতে একটু সময় লাগলেও সংষ্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জনআঙ্খাকা পুরণের জন্য যা যা করা দরকার তা করুন, নির্বাচিত সরকারই তা অনুমোদন দিবেন। নির্বাচিত সরকার সকলের আত্মত্যাগকে স্বার্থক করতে গণঅভ্যূত্থান কেন্দ্রিক বাতিল বা স্থাগিত করা সংবিধান নতুন ভাবে সংশোধিত-সংযোজিত করে নতুন সংবিধান জাতিকে উপহার দিবেন বলে মনে করি। কেননা ষোল কোটি মানুষের সাথে জড়িত। তাই সকল মহলের চক্রান্ত ব্যর্থ হতে বাধ্য এবং বিজয় নিশ্চিত।

প্রধান সম্পাদক, গণপ্রহরী