Thu. Jul 10th, 2025
গণভবন এখন রাজকীয় ভবন থেকে জাদুঘরগণভবন এখন রাজকীয় ভবন থেকে জাদুঘর

গণপ্রহরী প্রতিবেদক : গণভবন এখন রাজকীয় ভবন থেকে জাদুঘর (!) আজ থেকে ৯২ দিন আগেও শেখ হাসিনার জীবদ্দশায়তো এমনটা হবে তা কেও হয়তো ভাবেননি। তিনি নিজেতো ২০৪০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়ন পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি যে পরিস্থিতি যা চেয়েছেন তা নির্বিঘ্নে হয়েও যাচ্ছিল।

তাইতো ‘গণভবন এখন রাজকীয় ভবন থেকে জাদুঘর’-এমনটা ভাবার অবকাশই ছিল না। কেননা, সংবিধান তাকে দিয়েছে সর্বোচ্চ ক্ষমতা। আইন-আদালত সবই ছিল তার এক আঙ্গুলের ইশারা নির্ভর। যা চাবেন তাই হবে এবং তা হচ্ছিলও। সেহেতু তিনি গণভবনকে পরিণত করেছিলেন রাজকীয় ভবনে। প্রকৃতির নিয়মে ‘যার জন্ম আছে তার মৃত্যু নিশ্চিত’। সৃষ্টিকর্তাতো, কে কতদিন পৃথিবীতে থাকবেন তা নির্ধারিত করেই পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে।

মানুষ পৃথিবীর বাস্তবতা দেখছেন-বুঝছেন ও মানছেনও ‘মানুষ মরণশীল’। কিন্তু পতিত স্বৈরাচারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারতো এমন নিয়ম-কানুন বা সৃষ্টিকর্তার বিধান মেনে নেয়ার বিষয় নেই। কেননা, মহান সৃষ্টিকর্তা-আল্লাহপাক যে নৌকা পয়গম্বর নূহ (আঃ) কে দিয়েছিলেন, সেই নৌকাইতো তাঁকে দেওয়া হয়েছে। যা তিনি ভোটারবিহীন ভোটের সময় বিশাল বিশাল জনসভায় বলেই জানান দিয়েছেন; তাঁর চিরস্থায়ী ক্ষমতার মাজেজা।

রসিক সমালোচকরা অবশ্য এর সাথে যোগ দিয়েছেন আরেক মাজেজার কথা। সম্প্রসারণবাদী ভারতের উগ্রহিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে ক্ষমতায় এনেছেন এবং তিনি ক্ষমতায় থাকবেন। হিন্দু ধর্মবলম্বীদের মতে মহান সৃষ্টিকর্তা ‘ভগবান’। উগ্র হিন্দুত্ববাদী আরএসএস-এর প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত বিজিপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘ভগবানের সাথে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি তার। যে কারণে ‘গণভবন এখন রাজকীয় ভবন থেকে জাদুঘর’-এটা ভাবার অবকাশ ছিল না।

কিন্তু যে সংবিধান এবং আঙ্গুল ব্যবহার করে গণভবনে চিরস্থায়ী আসন গেড়েছিলেন। সেই সংবিধান বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের মালিকানা দিয়েছে জনগণকে। অর্থাৎ জনগণই রাষ্ট্রের মালিক। সেই মালিক জনগণে’র বিশ্বাস ছিল   অন্যায়-অত্যাচার, জুলুম-বেবিচার কেও বা কোন গোষ্ঠি করতে পারে’। তবে সৃষ্টিকর্তার বিধান বলছে সীমা লঙ্ঘনকারী ক্ষমা পাবে না, ইত্যাদি।

গণভবন এখন রাজকীয় ভবন থেকে জাদুঘর
উপদেষ্টাবৃন্দ গণভবন পরিদর্শনকালে

জনগণের এই বিশ্বাস ভিত্তিতে নীরবে মেনে গেছেন, পতিত স্বৈরাচার যা করেন। জনগনের মধ্যে অনেকের বিশ্বাস ছিল, অত্যাচার সহ্য করতে করতে অত্যাচারিত-বঞ্চিত মানুষ একদিন জেগে উঠবেন। কারো বিশ্বাসে, বেবিচারী কার্যকলাপ ও লুটপাট দেখতে দেখতে এক সময় মানুষ এক জোটভুক্ত হবেন। অথবা ছাত্র ও রাজনীতিকরা যদি তাঁদের মুক্তির জন্য সঠিক কর্মসূচি ঘোষনা করেন। এবং জনগণকে ডাক’ দেন, তাহলে জনগণ নিশ্চয়ই সে ডাকে সাড়া দিবেন এবং অংশ নিবেন। সেদিন রাজশাসনের মতো শাসন-শোষণ চালাতে যে স্টিমরোলার চালাচ্ছেন। সেই স্টিমরোলারের চাপায় তারই গতান্তর থাকবে না। রাজকীয় ভবনই, মালিক জনগণের দখলে যাবে। তারই ফলশ্রুতি ‘গণভবন এখন রাজকীয় ভবন থেকে জাদুঘর’ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কজন সদস্য উপদেষ্টাবৃন্দ গনভবন পরিদর্শনও করেছেন।

গণভবন এখন রাজীয় ভবন থেকে জাদুঘর’-হিসেবে রূপান্তরিত করতে প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। প্রক্রিয়ার আওতায়-শিক্ষক ও লেখক এবাদুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ঘোষণার পর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে যেন উপরের আলোচনায় জনমতে বর্ণিত রাজশাসন চালানোর দূর্গ হিসেবে ব্যবহৃত গণভবনকেই জুলাই-গণঅভ্যূত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করার কথা ব্যক্ত করায় জনগণ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অপেক্ষা ছাত্রজনতার গণভবন এখন রাজকীয় ভবন থেকে জাদুঘর দেয়ার।

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জাদুঘর প্রাসঙ্গিক আলোচনায় জাদুঘরে ‘আয়নাঘর’- এর একটি রেপ্লিকা তৈরীর পরিকল্পনার কথা বলেছেন। তিনি ১৬ বছরে নিপীড়নের যে স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে বাংলাদেশে, জুলাই-গণঅভ্যূত্থান স্মৃতি জাদুঘরে সে সব স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি গবেষনার ক্ষেত্র হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন।

অপরদিকে, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে জনগণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে গণভবনে উল্লেখ করে বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী-ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণভবনের বিজয়ের যে চিহ্ন রয়েছে তা এই জাদুঘরে সংক্ষণ করা হবে। খবরটি ছড়িয়ে পড়ায় উৎসুক জনমনের জিঙ্গাসা মুখে মুখে, কতদিন অপেক্ষা করতে হবে দেখার জন্য ও পরিদর্শনের জন্য। এবং তাঁরা বলতে পারবেন ‘গণভবন এখন রাজকীয় ভবন থেকে জাদুঘর’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *