Fri. Sep 5th, 2025
গৃহকর্মীদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়তে হবেপ্রতিকী ছবি

গণপ্রহরী রিপোর্ট : গৃহকর্মীদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়তে হবে। কেননা, গৃহকর্মীরাও মানুষ এবং সৃষ্টির সেরাও ‘মানুষ’। সকল ধর্মগ্রন্থেই রয়েছে অসহায়দের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার তাগিদ। আর কোরআনেতো আছেই সৃষ্টির ‘সেরা’কে যে ভালোবাসে সৃষ্টিকর্তাও তাঁকে ভালবাসেন এবং তিনি যাকে ভালবাসেন তার জন্য ভাল ব্যবস্থা রয়েছে।

তাই বিবেকবান সমাজ সচেতন সকলকেই একযোগে গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। গৃহকর্মীকে মানুষ ছাড়া অন্যকিছু ভাবার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি আশ্রয়দাতা-রুজিদাতা বিবেচনা করা বা টাকার বিনিময়ের দাস-দাসী ভাবার সুযোগ নেই ধর্মীয়ভাবে। এছাড়া খাবার দেয়া হয় তার কাজের বা শ্রমের বিনিময়ে।  সেহেতু গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

কেন গৃহকর্মীদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং সুরক্ষা দিতে বিবেকবানদের একযোগে কাজ করতে হবে। কারণ, তাঁরা চলমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাধীনের সমাজ ব্যবস্থার শোষণ-শাসন ও বৈষম্যের শিকার, পাশাপাশি দেশের সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অীধকার ভোগসহ মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকায়। যে কারণে স্কুলে থাকার বয়সে তারা জীবন-জীবিকার তাগিদে ও কেওবা পরিবারের প্রয়োজনে নিজ স্বজনদের ছেড়ে অন্যের ঘরে কাজ করতে বাধ্য হন। যা লাখ লাখ মানুষের দামাল সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমরণ মুক্তিযুদ্ধের ফসল-‘বাংলাদেশে’ কাম্য নয়। একইভাবে চব্বিশের বৈষম্যহীন সমাজের প্রত্যাশায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সফল গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে পরিবর্তিত এদেশে কাম্য হতে পারে না। বরং সকলকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে এবং গৃহকর্মীদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়তে হবে।

গৃহকর্মীদের মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গণপ্রহরী দৃঢ়ভাবে মনে করে সামজ বদল এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে সাম্য, ন্যায়বিচার, মৌলিক অধিকারসহ মানবাধিকার বাস্তবায়নে জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার প্রয়োজন। আর এটা উপলব্ধি করলেও এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে আশানুরূপ পদক্ষেপ নিতে পারবেন। যেহেতু দেশের জনসমর্থনের পাশাপাশি বৃহৎ শক্তিধর আন্তর্জাতিক দাতা দেশ ও জাতীয় আন্তর্জাতিক দাতা সংগঠনেরও প্রতিনিধিত্ব করেন। এ ছাড়া জনগণের কাঙ্খিত প্রত্যাশা পূরণে সম্ভাব্য সংষ্কার করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। সেহেতু কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন-এ আশাবাদ থাকছে। এ মুহুর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ গ্রহনের ক্ষেত্রে মাস দেড়-দুয়েক আগে অক্সফাম বাংলাদেশের সহযোগীতায় ‘গণস্বাক্ষরতা অভিযান’ আয়োজিত এক সংলাপে অনুষ্ঠানের বিবেচিতব্য কিছু বক্তব্য তুলে ধরা যেতে পারে।

সংলাপ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে সমাজকল্যাণ উপদেস্টা শারমিন এস মুরশিদ- গৃহকর্মীদের প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যায়নি উল্লেক করে বলেছেন, বিভিন্ন সূত্রে মতে সংখ্যা ২৫ লাখ, যাদের অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে শিশু। শারমিন মুরশিদ মানবিক দিক বিবেচনা করে বলেছেন, গৃহকর্মী হিসেবে কাওকে কাজে নিলে তার শিক্ষার দায়ীত্ব গৃহকর্তা বা বাড়ীর অভিভাবককে নিতে হবে। এবং তাদের পরিবেশ তৈরী করে দিতে হবে সম্মান নিয়ে বড় হওয়ার ক্ষেত্রে।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক মিলনায়তনের সংলাপ অনুষ্ঠানে একটি শক্তিশালী আইনগত কাঠামো গঠনকে সময়ের দাবি উল্লেখ করে আক্ষেপ করে বলেছেন, গৃহকর্মীরা নূন্যতম সুরক্ষার আওতার বাইরে শুধু থাকেন না- তারা এখনো মানবিক সহায়তা দৃষ্টির বাইরে থাকছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রি: জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এইচ এম শরীফুজ্জামানকে এ বিষয়ে অভিযোগ সেন্টার গঠন ও একটি কমিশন গঠনের ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা প্রমুখ।

আরও পড়ুন- স্বস্তির বাতাসেও চ্যালেঞ্জ নামক ঘূর্ণিঝড়ের কালো মেঘ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *