সাধারণের সাধারাণ ভাবনা
ভাষ্যকার : জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য নয়তো জাতীয় সরকার কাম্য। সাধারণের সাধারণ ভাবনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশকে রক্তপাতমুক্ত ও অস্থিরতা থেকে উদ্ধারে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য নয়তো জাতীয় সরকার কাম্য। জাতীয় ঐক্যমত্য সৃষ্টিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। আলোচনার সফলতা কাম্য। যদিও তিনি পদত্যাগেরও আভাস দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের সাধারণ দৃষ্টিতে লক্ষণীয় যে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যে দৃঢ় ঐক্য ছিল, আজ তা নেই। বরং পরস্পর বিরোধীতা-সমালোচনা ও পদত্যাগের দাবি উত্থাপন ভাল লক্ষণ নয়। কেননা, উগ্রহিন্দুবাদী-মৌলবাদী ভারতীয় মোদি সরকার নিজ দেশেই গণহত্যা চালাচ্ছে। যে সম্প্রসারণবাদী ভারত শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার ও তার দোসরদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করে একতরফা সুবিধা নিয়েছে। সেই ভারত এবং দেড় দশকের বেশি সময় বেপরোয়া লুটপাটকারী ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীরা আবার তাদের হারানো স্বর্গ ফিরে পেতে অপচেষ্টা-অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এবং ব্যাপক রক্তপাতের আশঙ্কা অবশম্ভাবী হয়ে উঠছে। তাই সাধারণের ভাবনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশকে রক্তপাতমুক্ত ও অস্থিরতা থেকে উদ্ধারে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য নয়তো জাতীয় সরকার কাম্য। মনে রাখতে হবে-“ব্যক্তির উর্ধ্বে সংগঠন আর সংগঠনের উর্ধ্বে দেশ”।
দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি বলছে-‘দেশে রক্তপাতের আশঙ্কা ঘনিভুত হচ্ছে এবং সর্বক্ষেত্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তা করছে-‘চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করা কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের সময় থেকে’। স্বৈরাচারের পতন হলেও পূর্বপরিকল্পনা ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না থাকায় রাষ্ট্র পরিচালনায় তড়িঘড়ি করে, সকল সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী শক্তিধর দেশগুলোর সমর্থন আদায়ের অভিপ্রায়ে তাদের পছন্দনীয় উচ্চ শিক্ষিত বিদ্যান ও এনজিও প্রাধান্যের সমাজ কর্মে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার করা হয়। যে সরকার শপথ নেন স্বৈরাচারের প্রণোদিত-সংশোধিত সংবিধান বলে এবং আগের সামরিক-বেসামরিক আমলাদের পরিচালিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। যার ফলশ্রুতিতে পাল্টা অভ্যূত্থান স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-জনতার ও রাজনৈতিকদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির মুখে তা না হলেও, শুরু থেকেই ভারত এবং তার অনুগত পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসররা অপতৎপরতা অব্যাহত রাখে ও আছে। যার ফলশ্রুতি আজকের ‘অস্থিরতা ও রক্তপাতের’ আশঙ্কার পরিস্থিতি। আর এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুধু চব্বিশের অভ্যূত্থান সময়ের মতো জাতীয় ঐক্য পরিহার্য।
এদিকে সাধারণ মানুষ গভীরভাবে এসব নিয়ে ভাবছিলেন। তাদের ভাবনা সূত্র ধরেই এই নাদান ভাষ্যকার গত ১৯ এপ্রিল ২০২৫ তারিখের এই ছোট্ট পত্রিকায় প্রকাশিত-‘জনসমর্থনে এগিয়ে থাকা সত্বেও বিএনপির ভয় কেন (?)’ শিরোনামের লেখায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তাঁর সহধর্মিনী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভারতের আনুগত্য বিরোধী ভুমিকা, বৃক্ষ রোপন ও খালকাটাসহ কৃষি ফসল উৎপাদনের কর্মসূচি ভিত্তিতে নীরব সমর্থক ভোটার জনগণের ফিস ফিস আলোচনায় বেরিয়ে আসা মতামত তুলে ধরেছিলাম। তাঁদের চাওয়া উগ্রহিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের ভারতকে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করার ভিত্তিহীন আকাঙ্খা হৃদয়ে লালন করে নীরব থাকবে না। একইভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়া পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা দেশকে পৈত্রিক সম্পত্তি এবং রাজতান্ত্রিক ক্ষমতালোভী স্বৈরাচার-পৈত্রিক রাজত্বের রাজকন্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লোভে যে কর্তৃত্ববাদী শাসন-শোষণ ও লুণ্ঠনের রাজত্ব কায়েম করেছিল সেই আওয়ামীলীগ ও তার দোসররাও নীরব থাকবে না। কেননা, তাদের একচ্ছত্র লুটপাটের স্বাদ ভোগের লালসা পূরণে তাদের অর্জিত লুটপাটের অর্থ ও অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করছে না ও করবে না। এমন পরিস্থিতি অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রাধান্যের অন্তর্বর্তী সরকার মোকবিলা করতে পারছে না ও পারবে না। সাধারণের ভাবনার ফল হলো-‘আজকের অস্থিরতা ও রক্তপাতের আশংকা’ পরিস্থিতি। ভারতের স্বার্থে তার দালাল রাজনৈতিক সংগঠনের সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক সরকার গঠনে দ্রুত নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। ব্যর্থতায় জনগণ রাজপথে নামতে পারেন- এটার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এমন পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলে সুষ্ঠ পরিবেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনও সম্ভব নয়। তাই আজকে এই নাদান ভাষ্যকার মনে করে সেই সাধারণের সাধারণ ভাবনাকে বাস্তবরূপ দেয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক ক্ষমতা সম্পন্ন রাষ্ট্রপতি ও অভ্যন্তরীন রাষ্ট্র পরিচালনায় বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে পরীক্ষিত রাজনৈতিক দল ও উপদেষ্টা পরিষদ থেকে মন্ত্রী পরিষদ সদস্য নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে সম্ভাব্য সংষ্কার কাজ সম্পন্ন করে সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আর যদি সেই নির্বাচনের পরও পরিস্থিতি কম-বেশি নাজুক থাকলে আবারো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রস্তাবিত জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। যাতে দেশের উন্নয়নকে সকল দলের ও শ্রেনী ঐক্যমতের ভিত্তিতে এগিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চুড়ান্ত লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে সকল শহীদের আত্মত্যাগ স্বার্থক করা যায়। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। এক্ষেত্রে জনগণ কোনো চক্রান্ত ষড়যন্ত্র মেনে নিবে না।
আরও পড়ুন- জনসমর্থনে এগিয়ে থাকা সত্বেও বিএনপির ভয় কেন (?)
