Thu. Jul 10th, 2025
জাতীয় জীবনে বুদ্ধিজীবি হওয়ার তাগিদ শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসের -জাতীয় জীবনে বুদ্ধিজীবি হওয়ার তাগিদ শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসের-

গণপ্রহরী রিপোর্ট : জাতীয় জীবনে বুদ্ধিজীবি হওয়ার তাগিদ শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসের। গণপ্রহরী তার পরিবার পক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবিসহ সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে। স্বীকার্য যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুর লগ্ন থেকে ১৪ ডিসেম্বর আমাদের সামষ্টিক বুদ্ধিজীবিতার ওপর আঘাত এসেছিল। বুদ্ধিজীবি হত্যা দিবস পৃথিবীর ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। এও স্বীকার্য যে, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূণ্য করতে বাঙালি বুদ্ধিজীবিদের নির্মম ভাবে হত্যা করে।

একাত্তরে বিজয়ের চুড়ান্ত মূহুর্তে চৌদ্দ ডিসেম্বরের এই দিনে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড চালায় পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী। বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে, পাকিস্তানী সামরিক জান্তার মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী দেশের খ্যাতনামা সুনামধন্য বুদ্ধিজীবিদের তাঁদের বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে, ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়। আর এই শহীদদের স্মরণে বুদ্ধিজীবি দিবসই খ্যাত ‘দিবসটি জাতীয় জীবনে বুদ্ধিজীবি হওয়ারই যেন তাগিদ দিচ্ছে।

যদিও ২৫ মার্চ কালো রাতেই  বুদ্ধিজীবি হত্যা শুরু হয়। তবে একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানী নরপিচাশ সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্মম বুদ্ধিজীবি নিধনযজ্ঞের হত্যাকান্ডের শিকার হন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবি। দেশের খ্যাতনামা এসব বুদ্ধিজীবিদের  মিরপুর, রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতন করে এসব বধ্যভূমিতে হত্যা করে ফেলে দেয়। তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১। পৈশাচিক হত্যাকান্ড চালানো পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা বাঙালি জাতিকে সামাজিকভাবে এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে দুর্বল করার অসৎ উদ্দেশ্যে বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডও চালিয়েছিল। বন্ধুবেশি ভারতীয় বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’  পরিচালিত মুজিব বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীও পিছিয়ে নেই বিশেষত: বাম চিন্তার বুদ্ধিজীবি-মুক্তিযোদ্ধা ও সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হত্যার ক্ষেত্রে।

১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের শিকার শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী-সাহিত্যিক, আইনজীবি ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বদের আত্নীয়-স্বজনরা বধ্যভূমিতে খুঁজে খুঁজে স্বজনদের মৃতদেহ শনাক্ত করেন। ‘বাংলা পিডিয়ার তথ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ শিক্ষাবিদ-৯৯১, আইনজীবি-৪২ও চিকিৎসক-৪৯, এবং শিল্পী-প্রকৌশলী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব-১৬জনকে হত্যা করা হয়।

‘জাতীয় জীবনে বুদ্ধিজীবি হওয়ার তাগিদ শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসের’ শিরোনাম বলছে বুদ্ধিজীবি হওয়ার তাগিদের মূলে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দূরদর্শী সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে ভারতকে মাঝে রেখে-হিন্দুদের জন্য ভারত এবং মুসলমানদের জন্য সহস্রাধিক মাইল দূরত্বে দুটি অঞ্চলকে নিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠন করে বটে। কিন্তু পূর্ববাংলাকে (পূর্বপাকিস্তান) একতরফা ভাবে পাকিস্তানী শাসক-শোষকগোষ্টি শাসন শোষনের মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি করতে থাকে এবং ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত অব্যাহত রাখে। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হওয়ার এবং রাজনৈতিক চেতনাকে বিকশিত করার জন্যই শুধু পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবি হত্যা করেছে তা শতভাগ ঠিক নয়।

বুদ্ধিজীবি হত্যার মূলে গণপ্রহরী আরও দুটি বিষয়কে সামনে এনেছে। তন্মধ্যে গণপ্রহরী যেহেতু মনেই করে, অতীতের শিক্ষা থেকে বর্তমানের করনীয় নির্ধারন করে, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারন করা মানবজীবনে জরুরী। সেদিক থেকে স্বীকার্য যে, কোনো জাতিকে তার, ‘অতীতে’র বাস্তবতা থেকে নির্যাস বের করে সমৃদ্ধ ‘বর্তমান’ করার মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ ‘ভবিষ্যৎ’  গড়তে চাই চিন্তা-ভাবনায় ভরপুর বাস্তবমুখি বুদ্ধিজীবি। এক্ষেত্রে জাতির জন্য অপরিহার্য হচ্ছে; মানুষকে মানুষ বিবেচনায় নিতে হবে এবং মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব; সেহেতু মানবজীবনের বাস্তবতাকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথ নির্দেশনায় জাতির জ্ঞানবুদ্ধি-প্রজ্ঞার বিকাশে প্রয়োজন যথাযথ চিন্তা-ভাবনার বুদ্ধিজীবি।

তাহলে কি একাত্তরের বুদ্ধিজীবি দিবস স্বাক্ষ্য দিচ্ছে পাকিস্তান বাহিনী বুদ্ধিজীবি শূন্য করে গেছে বলেই ৫৩ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। ত্রিশ লাখ-শহীদের জীবনদান, আড়াই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম হারানো এবং দেশের সাত কোটি আপামর মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহনমূলক ভূমিকায় ও তাঁদের দামাল সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাজির মুক্তিযুদ্ধে ৫৩ বছরে অর্জন তবে কি? উত্তর নির্ভর করছে বুদ্ধিজীবিদের জ্ঞানগর্ব বক্তব্যে এবং তাঁদের লেখনির ওপর। দ্বিতীয়ত: রাজনীতিবিদদের ত্যাগতিতিক্ষার ভূমিকার ওপর।

গণপ্রহরী দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করে বাঙ্গালি শাসক, একটি পাতাকা, একটি মানচিত্র ও একটি জাতীয় সঙ্গীতের জন্য ত্রিশ লাখ মানুষ প্রাণ দেননি, মা-বোন সম্ভ্রম হারাননি এবং শতকরা ৮৫ জন কৃষকসহ শতকরা ৯০ জনের বেশী সংখ্যক মানুষ ছিলেন ভূমিহীন-গরীব, নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কৃষক, শ্রমিক-কর্মচারী-ছাত্র-যুবক ও চাকুরিজীবি। তাদের চাওয়া ছিল শোষণমুক্ত সমাজ। তাই যতক্ষন শোষনুমুক্ত  সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে না, হবে না বৈষম্যহীন সমাজ, ততদিন এই জাতি শহীদের রক্তঋণ থেকে মুক্তিপাবে না। এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস এবং ১৬ ডিসম্বরের বিজয় দিবসের অঙ্গিকার হোক-শহীদদের আত্মত্যাগ স্বার্থক করার জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের শপথ গ্রহণ। শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করুক এবং লক্ষ্য অর্জন পযন্ত এগিয়ে নিয়ে যাক’-এটাই গণপ্রহরীর কামনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *