Sat. Jul 12th, 2025
জাতীয় জীবনে ‘হায়রে মানুষ’ গানের বাস্তবতাই সারজাতীয় জীবনে ‘হায়রে মানুষ’ গানের বাস্তবতাই সার। ছবি: সংগৃহীত

গণপ্রহরী প্রতিবেদক : জাতীয় জীবনে ‘হায়রে মানুষ’ গানের বাস্তবতাই সার। এই সাতটি শব্দের শিরোনামটি রিখতে ৭ সাতবার ভাবতে হলো। উদ্বেগজনক তথ্য ভিত্তিক প্রতিবেদনটিতে লিখতেও কষ্ট হচ্ছে। কারণ, প্রতিবেদনে থাকছে পুষ্টি-হীনতায় দেশের ৭৩ শতাংশ মানুষ, অনিরাপদ খাদ্যের জন্য মারা যান ৩৫ হাজার মানুষ বছরে আর দেশের ৩৫ শতাংশ মানুষ ভুগছেন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়। এমন পরিস্থিতির শিকার হতেই কি মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন?

 যে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীনতার তেপ্পান্ন বছর অতিক্রমের পথে। অথচ পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটছেনা। এমনকি চব্বিশের রক্তার্জিত গণঅভ্যূত্থানের পরও সেই আগের অবস্থাই। বরং সংকট বাড়ছে জাতীয় জীবনে।

ঘুরে ফিরে সামনে ভাসছে ছাপা কপি ‘গণপ্রহরীতে ইতিপূর্বে’ অনেকবার প্রকাশিত একটি শিরোনাম-‘ভাবতে কষ্ট হয় বলতে লজ্জা হয়’ শিরোনামটি। এমনটা মনে হলো-দেশের অবহেলিত উত্তর জনপদের সমস্যাবহুল কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহনকারী-প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ শামছুল হকের লেখা ও প্রখ্যাত  সুরকার আলম খানের সুর আর বিশিষ্ট গুনী শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের কন্ঠে গাওয়া ‘বড় ভালো লোক ছিল’-চলচ্চিত্রের কালজয়ী ‘হায়রে মানুষ/রঙ্গীন ফানুস/দম ফুরালেই ঠুস’ গানের কলি তিনটি। গানের আলোকে মনে হলো ‘দম ফুরালেই ঠুস’ হওয়ার মতোই তো ‘মরণশীল মানুষ মরবেই’। শোষক শাসকরা মরলেতো আর পুষ্টিহীনতায়, খাদ্য নিরাপত্তা-হীনতায় বা অনিরাপদ খাদ্যের কারণে মারা যাবেন না।  সেক্ষেত্রে খাদ্যাভাব জনিত কারণে মৃত্যু হলে তাদের করারইবা-কি আছে (!) তাইতো বাস্তবতাও বলছে   ‘জাতীয় জীবনে’ “হায়রে মানুষে’ গানের বাস্তবতাই সার’। এসব কথা তাদের পড়ার ও শোনার সময় নেই। অফিস নথিতে থাকলেই হলো

‘জাতীয় জীবনে ‘হায়রে মানুষ’ গানের বাস্তবতাই সার ‘শিরোনামের ‘হায়রে মানুষ’ সস্বোধনকৃত মানুষকে স্মরণ করে দিতে চাই-তোমরা নিজেরাই জীবন দিয়ে বুঝেছো, নিজের চোখে দেখেছো এবং আগের প্রজন্ম সূত্রে জেনেও আসছো, লাখ লাখ ‘মানুষের প্রাণের বিনিময় এই দেশ, যাঁদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এইদেশ এবং যাঁদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশ গ্রহনে এবং তাঁদেরই সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন মরন মুক্তিযুদ্ধে রক্তার্জিত স্বাধীন এই ‘বাংলাদেশে’ তোমারাতো রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসোনি। বরং মুক্তিযোদ্ধারা সরল বিশ্বাসে অস্ত্র জমা দিয়েছেন।

ক্ষমতায় যারা ছিলেন এবং পর পর ক্ষমতা যারা ভোগ করে আসছেন সবাইতো শাসক-শোষক শ্রেনীরই। বরং তাদের পিছনে আছে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন ও ভারতের মতো শক্তিধর সাম্রাজ্যবাদী- সম্প্রসারণবাদী শক্তিধর রাষ্ট্রও শাসক শোষক-শ্রেনী। তাদের দালাল সামন্ত, আমলা-মুৎসদ্দি, পুঁজিবাদের প্রতিনিধিত্বকারী শাসক শোষক শ্রেনী।

তাইতো, ‘ঘুটঘুটে কালো আমাবস্যা’ তোমাদের ঘিরে রাখায়, তোমরা অনিরাপদ খাদ্যের কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ও পুষ্টিহীনতায় কষ্টভোগ করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। তাই এখন প্রতিবাদ-প্রতিরোধে সোচ্চার না হলে-ভবিষ্যত প্রজন্ম অভিশাপ দিবে, ধিক্কার দিবে। প্রতিবাদী মুক্তিকামী কবি বলেছেন, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। যদিও তরুণরা, খাদ্য বৈষম্যরোধে খাদ্য অধিকার আইন করার দাবি উত্থাপিত করছে।

অপরদিকে সকল শ্রেণীর মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে খাদ্য পণ্যের দাম কমানো আবশ্যক বলে মন্তব্য করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে খাদ্যের অন্যতম শর্ত হচ্ছে পূর্ণ পুষ্টি আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ, খাদ্য কেবল ক্ষুধার মধ্যে এখন সীমাবদ্ধ নয়। যা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সামনে এসেছে তা হলো আমরা যা খাই তা কতটা নিরাপদ সেটিও জানতে হবে-বুঝতে হবে। অনেকের মতে রঙিন সবজি পুষ্টির জন্য সহায়ক। কিন্তু রন্ধন (রান্না) বিশ্লেষকদের মতে, সঠিক প্রক্রিয়ায় রান্না না করলে অনেক পুষ্টিগুন রান্নার সময়ই নষ্ট হয়ে যায়।

কৃষি ও পুষ্টিখাত বিষয়ক এক আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের ২২ শতাংশ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন। এক তৃতীয়াংশ মানুষ পুষ্টিহীনতায় থাকলেও প্রায় ৭৩ শতাংশ মানুষ পুষ্টিকর খাবারই পান না।

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে ২ ফেব্রুয়ারি’ ২৫ শেখ মুজিব স্পেশালাইজড হসপিটালের হলে আয়োজিত সেমিনারে আলোচিত ‘অনিরাপদ খাদ্যই’ হচ্ছে পুষ্টির সমস্যার মূলে। সেই পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। আর অনিরাপদ খাদ্যেল কারণে ডায়রিয়ায় অক্রান্ত হয় ৫ শতাংশ মানুষ। এবং অনিরাপদ খাদ্যের জন্যই দেশে ৩৫ হাজার মানুষ মারা যায় বছরে।

অতিরিক্ত সচিব ও বিএফএস’র চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান, বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল খালেক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম, মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেছেন, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা এই তিনটি জিনিসকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। এগুলো একে অপরের পরিপোরক। আর সুস্থ থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কেননা বর্তমানে বিশ্বে ৭০০ বিলিয়ন লোকের খাদ্য কত নিরাপদ আজ সেই প্রশ্নটি জেগেছে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. খালেদা ইসলাম ‘বাংলাদেশে বছরে ৩৫ হাজার মানুষ অনিরাপদ খাদ্যের কারনে মারা যায়’ উল্লেখ করে বলেছেন, ভ্যাকটেরিয়া, কেমিক্যাল, কাঁচের টুকরা ইত্যাদির কারণে খাদ্য অনিরাপদ হয়। তা ছাড়া পানিবাহিত ভাইরাস, বিষাক্ত পদার্থের কারণেও অনিরাপদ হয়। অনিরাপদ খাদ্যের কারণে ১০ জনের একজন অসুস্থ হয়। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে বিশ্বে পাঁচ বছরের নিচে ৪ লাখ ২০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়।

‘জাতীয় জীবনে ‘‘হায়রে মানুষ’’ গানের বাস্তবতাই সার’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এ পর্যায় অনিরাপদ খাদ্য বিষয়ক আলোচনায় আলোচকদের মধ্যে তথ্য সম্বলিত আলোচনা জানা যাক। হাংগার ফ্রি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন বলেন, পেট পুড়ে খেয়েছে, কিন্তু শুধু ভাত আর আলু খেয়েছে। কার্বোহাইড্রেট খেয়েছে। কিন্তু অন্যান্য যে ভিটামিন ও মিনারেল দরকার সেটা তো আমি নিতে পারি নি। যে কারণে বাংলাদেশের অধিবাসীদের মধ্যে ভিটামিন এ ডেফিসিয়েন্সি অনেক প্রকট। আয়রনের ঘাটতিও অনেক বেশি।’

আইসিডিডিআরবি এর তথ্য মতে, ৩৫ শতাংশ জনগণ এখনো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে ছয় লাখ শিশু। বিবাহিত নারীর এক-তৃতীয়াংশ কম ওজনসম্পন্ন ও প্রসবকালীন জটিলতায় ভোগে। অপুষ্টি জনিত কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। যা উৎপাদনশীলতা হ্রাসের অন্যতম কারণ বলছে বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *