ভাষ্যকার: জাতীয় পার্টি প্রথম ট্রায়েলে ব্যর্থ নাকি বাধাগ্রস্থ? অবশ্য জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতাদের একটা প্লাস পয়েন্ট আছে। জনসমর্থন বা অন্ধ সমর্থকদের সংখ্যা যতই কমুক। পতিত স্বৈরাচার খ্যাত সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময়কালের সংখ্যানুপাতে তুলনা করার মতো সমর্থক সংখ্যা না থাকুক।
এখনও আন্দোলনকারী অনেক দলের চেয়ে তাদের জনসমর্থন বেশী। এমন কি জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য সংখ্যা যতই কমুক, সংসদের পরপর পরীক্ষিত বিরোধী দল। জাপাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। জনগনের কাছে যেতে হয়েছে। তাদের ভালোবাসায়ই ‘শেষ পর্যন্ত’ও বিরোধী দলের আসন অলংকৃত করা সম্ভব হয়েছে। কারো দয়ায় জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হয়নি। নয় বছর শাসন করাও সম্ভব হয়েছে।
আগামীতেও জনসমর্থন নিয়েই সংসদে যাবে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এমন আশা থাকা ভালো। আশা নিয়েই মানুষ। আর জাপাতেতো সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ পরিবারসহ অনেক অবসর প্রাপ্ত সামরিক বেসামরিক আমলা রয়েছেন। রয়েছেন আইনজীবি, ব্যারিস্টার, ব্যবসায়ী এবং কমবেশী জনগণও রয়েছেন। জাপার জনসমর্থনকে বিবেচনায় নিতে বাধ্য হয়েছিল আওয়ামীলীগ।
এক পর্যায় আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও জনপ্রিয় নেতা এইচ এম এরশাদকে স্বৈরাচার বললেও তার দেওয়া নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল আওয়ামীলীগ। রাজনীতি ও নির্বাচন করতে হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়েই তা করতে হবে। এজন্য মিছিল-মিটিং বলুন আর ট্রায়েল বলুন তা করতে জাপা ভয় পায় না। বরং সাহসের সাথেই এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করেছে এবং সংসদে বিরোধী দলের আসন অলংকৃত করেছে। সেই জাপার অফিসে হামলা করা হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে, আগুন দেওয়া হয়েছে। জনগণ বোঝেন-এহেন কার্যকলাপ গণতান্ত্রিক আচরণ বিরোধী। হ্যাঁ, জাপার বিবরন সত্য বটে।
এছাড়া জাপাকে গৃহপালিত বা হাত তোলা পার্টি আখ্যা দেওয়ায় জনগণ বিভ্রান্ত হননি। বরং আস্থা রেখেছেন। শেষ নির্বাচনেও নির্বাচিত করে বিরোধী দলে বসিয়েছেন। জাতীয় পার্টির কম-বেশী সুবিধাভোগী মধ্যম ও নিম্নসারির নেতা-কর্মীদের সামনে এসব উপস্থাপন করতে জাপা নেতৃত্ব শান্তির ঢেকুর ছাড়ছেন ও ছাড়তে পারছেন এখনও। আর পরীক্ষিত অধিক বিশ^স্তদের কানে কানে হয়তো বলছেন আমরা (জাপা) ছাড়া বিরোধী দল হওয়ার কে আছে? আওয়ামীলীগের সময়ও আওয়ামীলীগ সরকারকেও টিকে থাকার জন্য আমাদের উপর নির্ভর করতে হয়েছে। একইভাবে নির্বাচনকে বৈধ করতেও নির্ভর করেছে আমাদের (জাপা) ওপর। এজন্য জাপাকে ট্রায়েল দিতে হবে না বা বাধাগ্রস্থ হওয়ারও কারন নেই। জাপা পরীক্ষিত বড় দল জনসমর্থনে।

জাতীয় পার্টির (জাপার)আরও কিছু প্লাস পয়েন্ট আছে। প্লাস পয়েন্টগুলো জাপা নেতৃত্ব সবই জানেন। তারপরও ভাষ্যকারকে তার ভাষ্যের জন্য আরও দুচারটা প্লাস পয়েন্ট আলোচনা করতে হবে। তবে জাপার জানা প্লাস পয়েন্টের উপর ভিত্তি করেই আওয়ামীলী নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের এ মূহুর্তে রাজপথে নামা বা প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসার সভ¦াবনা নেই। সেজন্য ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে। সেই ক্ষেত্র তৈরীর জন্যই রাজধানীর বিজয়নগরস্থ জাপার কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। জাপার সভাটি ব্যর্থ নয় বাধাগ্রস্থ।
পাঠক-শ্রোতাবৃন্দ, যারা এই অখ্যাত ভাষ্যকারের ভাষ্য ‘ছাপা গণপ্রহরীতে’ পড়বেন এবং ওয়েবসাইটে দেখবেন বা কারো মাধ্যমে শুনবেন, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকলো। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকালে চট্টগ্রামের লাল দিঘিÑময়দানে শেখ হাসিনার বক্তব্য যাঁরা শুনেছেন ও দেখেছেন, গণমাধ্যমে জেনেছেন, তারাতো জানেনই। তারপরও অন্যদেরকে বলবেন।
যদিও এই ভাষণ নিয়ে বাতাসে উড়ে বেড়িয়েছে নানা কথা, নানা মত। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিলÑ‘নেত্রী এটা কি বললেন? অর্থাৎ স্বৈরাচার এরশাদের আহবানে বা যারা র্নিাচনে যাবেন তারা জারজ সন্তান’। সেই সভাশেষের গভীর রাতেই আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশগ্রহনের ঘোষণা দেন। এবং নির্বাচনে অংশ নেন। জাপা এরই প্রতিদান দিয়ে চলছে আর সুবিধা যা ভোগের তা ভোগ করে চলছে।
গণপ্রহরীর প্রধান সম্পাদকের একটা লেখায় পড়েছিলাম, ‘রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ অংকের হিসাব নিকাশের চেয়েও কঠিন’। তেমন একটা হিসাব মিলানোর চেষ্টা করা যাক্। সমপ্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দু’জন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা রংপুর সফরে যাওয়ার কথা প্রচার হয়। জাপা নেতৃত্ব সফরকারী নেতৃবৃন্দকে রংপুরে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। জাতীয় পার্টি (জাপা) আগাগোরাই জনগণকে বোকা ভেবে আসছেন। কোনো সময় বাহের দেশের এরশাদের পার্টি জাপা ইনিয়েÑবিনিয়ে ও আবেগের সাথে প্রকাশ করে সহজ সরল মানুষকে বোকাও বানিয়ে আসছেন।
জাতীয় পার্টি জনগণের সরল বিশ^াস পুঁজি করেই স্বৈরাচারিত্ব চালিয়েছে ‘নয়’ বছর। আরেক স্বৈরাচার আওয়ামীলীগকে ক্ষমতাসীন করতে এবং ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ‘ সিড়ি’র ভূমিকা পালন করে আসছে অর্থাৎ জাপা নামের সিঁড়িকে ব্যবহার করে, ভোটার বিহীন ভোটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বৈরাচারিত্ব চালিয়েছে।
আর ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধীতাকারীদের হত্যা-গুম, আয়নাঘরে অকথ্য নির্যাতন করেছে। অত্যাচার নির্যাতন চালাতেও হত্যা করতে লেলিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। এবং পুলিশের নেতৃত্বে সামনে থেকে হামলা করেছে ছাত্রলীগÑযুবলীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে।
‘জাতীয় পার্টির নামের সিঁড়িটা যেন জাপা চেয়ারম্যান সংস্কারের জন্য ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর সাথে প্রথম সাড়ির নেতারাও গিয়েছিলেন হয়তো। তাই তাঁরা পতিত স্বৈরাচারের অত্যাচার নির্যাতন এবং প্রকাশ্যে গুলির ঘটনা জানেন না বা দেখেনওনি। ভারতে থাকায় যেন বাংলাদেশের পত্রপত্রিকাসহ গণমাধ্যমের প্রকাশিত-প্রচারিত সচিত্র প্রতিবেদনগুলোও নজরে আসেনি। জাপা নেতাকর্মীরা বেগম রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের সাহেবের নেতৃত্ব ও জাতীয় পার্টির প্রতি বিশ^াসী এবং জনগণও আস্থাশীল। জাতীয় পার্টি প্রথম ট্রায়েলে বাধাগ্রস্থ নয়। বাধা উপেক্ষা করেই জাপা আজকের অবস্থানে। ভবিষ্যতেও থাকবে।
এদিকে জাপার সাধারণ নেতাকর্মীরা তাঁদের চাওয়া পূরণে করণীয় জানতে চাইলে অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, মধ্যম ও নিম্ন সারির নেতা-কর্মীদের সামনে একটি সিনেমার দৃশ্য তুলে ধরেন। সিনেমাটিতে অপরাধজগতের এক গডফাদার জনৈক চৌধুরী তার এলকাবাসীকে শিখিয়েছেন-‘তিনি যাই করুন বা তার লোকজন যাই করুক, তোমরা কিছুই দেখোনি (চোখে হাত দিয়ে বন্ধ করে রাখবে) আর কিছু শোনওনি (কান হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখবে)’। স্বৈরাচার যত অপকর্ম করুক বা যে অপরাধই সংগঠিত হোক-জাতীয় পার্টির কেও কিছু দেখেনও না, শুনেনও না।
তাইতো স্বৈরশাসনের কোনো বর্বোরোচিত হামলা, প্রকাশ্যে রাইফেল বা বন্দুক দিয়ে গুলি করা, হত্যা-খুন-গুমের কথা শোনেনওনি, জানেনওনি। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ও গণঅভ্যূত্থান হচ্ছে কি-না তাও তারা জানেন না। এমনকি গণঅভ্যূত্থান প্রতিরোধে প্রকাশ্যে গুলি করার ‘গুলির’ শব্দই শোনেননি এবং কাউকেও হত্যা করতে দেখা কেন, রাস্তায় লাশ বা রক্তও দেখেননি। আর এসময়কালে তাদের কেউ হাসপাতালে না যাওয়ায় আহতদের হাসপাতালে নিয়েছেন কিনা তাও জানেন না। তাইতো তাঁরা রাজপথে নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা যানজট বৃদ্ধিও করেননি। তদসত্বেও কেন জাপা অফিসে ভাংচুর হবে, অগ্নিসংযোগ হবে? এসব করে জাতীয় পার্টির চলার পথ কেও বাধাগ্রস্থ করতে পারবে না।
যারা মিছিল নিয়ে বিজয়নগরে এবং বিজয় নগরের পর খুলনায় জাপা অফিসে আক্রমণ করেছে জাপা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তবে জাপা আকার ইঙ্গিতে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, তাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে। তা আছে বলেই রংপুরে মিছিল করেছে। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফরকারী দু’নেতাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে রংপুরে। এছাড়া, জাপা চেয়ারম্যানতো জাপা বিরোধীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টি কারো (আন্দোলনকারীদের বন্ধু) শত্রু নয়, বন্ধু। আর বন্ধুকে শত্রু বানালে তার পরিণতি ভালো হবে না’ ইত্যাদি।

ক’দিন আগে গণপ্রহরীর একটি লেখায় দেখলাম-‘জ্ঞানীর জন্য ইশারাই কাফি’ প্রবাদটি। তেমনটিই জাতীয় পার্টি তাদের শক্তিমত্তা সম্পর্কে জানান দিয়েই বিজয় নগরস্থ কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে এক সভায় মিলিত হন নেতা-কর্মীরা। যে সভাটি ছিল ‘জাতীয় পার্টি প্রথম ট্রায়েল’-এটা ধরে নেয়া যেতে পারে সাধারন জ্ঞানেই।
জাপা নেতৃত্বে প্রথম ট্রায়েলের বিষয় নিয়ে প্রয়োজন মনে করলে বলবেন, তাঁরা যেহেতু উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ট্রায়েল হিসেবে সভা করছিলেন না। জাপা নেতাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনের দাবিতে কর্মসূচি দিতে। সভাটি করেছিলেন। তা তাঁরা করেছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার ভিত্তিতে। তবে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ছাত্রজনতার ব্যানারে সেই সভায় হামলা চালায়। এবং জাতীয় পার্টিকে আওয়ামীলীগের দোসর আখ্যায়িত করে জাপাকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না মর্মে বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।
জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেছিলেন আমরা জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি। তবুও সমাবেশ হবে। কিন্তু সেখানে তাদের উপরে হামলা হয়েছে। অফিস ভাঙচুর করা ও আগুন দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করায় তারা পরবর্তী সভা স্থগিত করেছেন।
পক্ষান্তরে জাতীয় পার্টির প্রথম ট্রায়েল বাধাগ্রস্থ প্রসংগে ছাত্র অধিকার পরিষদের বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেছেন, ‘আমাদের কাছে খবর ছিল জাপা আওয়ামীলীগের ক্যাডার বাহিনীর উপস্থিতিতেই সভা করছে। তাদের দাবি হচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিষিদ্ধ করার জন্য বার বার আল্টিমেটাম দিয়ে আসছেন। জাপার হামলায় আহত ছাত্রনেতা মশিউর রহমান বলেছেন, তাদের ওপর জাতীয় পার্টি, আওয়ামীলীগ যৌথভাবে হামলা করে। জাপা অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তবে ক্ষুব্ধ জনগণ স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে জাপা কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছেন। তারা জাপা নেতাদের গ্রেফতারেরও দাবি জানিয়েছেন। যদিও জাপা নেতৃত্বের দাবি তারা আয়ামীলীগের দোসর নয় এবং ছিলও না।
জনমত ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত মতামতের সারসংক্ষেপই বর্ণনা আকারে পাঠকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা। আমরা শুনে আসছি কথা বতাসে ভেসে বেড়ায়। সে কথা শোনার ও বোঝার মানসিকতা অনেকের প্রখর হলেও এই ভাষ্যকারের দুর্বল। তাই বাতাসে ভেসে বেড়ানো কথা জানতে লালমনিরহাট জেলা এলাকার অধিবাসী রিক্সা চালকের রিক্সায় যাত্রাবাড়ী থেকে সদরঘাট যাচ্ছিলাম। যাত্রবাড়ী মোড়ে যানজটে রিক্সায়ই অপেক্ষা। এরই মধ্যে রংপুর শহর ও জেলার পীরগঞ্জ এলাকার দু’ রিক্সাচালকের সাথে তাদের হাসিমসকড়া। কেউই নাম ঠিকানা বলতে নারাজ। তবে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় তিনজনের সাথে আরও দুজন কথা বলতে রাজি। আমার উদ্দেশ্য জাতীয় পার্টির প্রথম ট্রায়ালে বাধাগ্রস্থ নিয়ে তারা কি ভাবছেন তা জানা।
মোড়ে অপেক্ষা সম্ভব নয়। তাদের প্রস্তাবে ডেমরা রোডের দিকে রওনা। অপর দুজন আসতে পারেননি। ভাষ্য লিখলেও ভাষন জানিনা। তাই কথা বেশি হয়ে যাচ্ছে। যথারীতি দাঁড়ালাম। তারা অবশ্য আমাকে রিক্সায় বসে কথা বলতে বলছিলেন। আন্দোলন শব্দ বলাতেই সমস্বরে তিনজন বললেন, আমরা ঢাকায় মিছিল করেছি।
পরক্ষণেই আমরা যে পার্টিতে এতদিন ভোট দিয়ে আসছি, সেই জাতীয় পার্টি আন্দোলন করেনি। এবং এত ছাত্র-জনগণ হাসিনার পুলিশ গুলি করে মারলো, তার বিরোধীতাও করেনি। সারাদেশের মানুষ আন্দোলনে। একজনতো বলেই ফেললেন জাতীয় পার্টির চেয়ে আমাদের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে সব দলের সমর্থন ছিল। দুই ছাত্রনেতা যেদিন রংপুরে যায় সেদিন বাড়ী গেছিলেন। মেয়র ছাত্রনেতাদের অবঞ্চিত ঘোষণা করায় আমরা বিরক্ত হয়েছি। অনেকেই তারে আর ভোট দিব না।
লালমনিরহাট ও পীরগঞ্জের দু’জনের দিকে তাকাতেই এক সাথেই বলে উঠলেন জাতীয় পার্টির দিন শেষ। লালমনিরহাটের রিক্সাচালক বললেন আমাদের নেতা জাপা চেয়ারম্যান খুনি হাসিনার আচলের নীচে থেকে নিজেরা সুবিধা নিলেন। ক’জন মানুষের চাকরি দিতে পেরেছন। শেখ হাসিনাতো গোপালগঞ্জ-ফরিদপুরের লোক চাকরি দিয়ে সব অফিস আদালত ও পুলিশ, আর্মি-বিডিআর বাহিনী ভরে ফেইলসে (ফেলেছে)। তাঁর মিষ্টি মিষ্টি কথায় মানুষ আর ভুলবে না। বোঝমনা (বুঝিনা) আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ করে না ক্যানে (কেন) সরকার? এরই মধ্যে চা খাওয়াও শেষ, কথাও শেষ। তাই গন্তব্যের পথে রওনা। জাতীয় পার্টি সবই বুঝতেছেন ও জানেনও। ‘কানা মনে মনে জানা’ প্রবাদই তাদের জন্য প্রযোজ্য। যদিও জাতীয় পার্টির প্রথম ট্রায়েল বাধাগ্রস্ত হলো।
ভাষ্যতো অনেক হলো। ভাষ্যে বের করতে পারিনি জাতীয় পার্টি কার দল ও কার জন্য কাজ করছেন। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত হয়েছি, তাহলো জাতীয় পার্টি সত্যি সত্যি স্বৈরাচার বা আওয়ামীলীগের দোসর না। তারা মূলত: স্বৈরাচারের রাজসিংহাসনে বসা ও ক্ষমতায় টিকে থাকার সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই আওয়ামীলীগ ও তার ১৪ দলীয় দোসররা সংসদে গিয়েছেন বার বার। দেশী-বিদেশী লুটপাটের ভাগ নিতে পারছেন বা সুবিধা গ্রহন করতে পেরেছেন। ১৪ দলই দোসর। আর সযোগ সুবিধার ভাগীদার জাপা হলো সিঁড়ি। সিঁড়ি হয়েই সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।
তাইতো সীমাহীন দু:খকষ্টে থাকা মানুষের স্বার্থে সংসদে দু’একটি কথা বললেও, ওয়াকআউট করেননি। এমনিক সারাদেশ ভারতীয় সামগ্রী বর্জনের মধ্য দিয়ে ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরোধীতা করেছে সারাদেশ। অথচ জাপা ভারত নিয়ে নীরব ভূমিকায়। রংপুর অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের অন্যতম কারণ ‘তিস্তা’ নিয়েও কোন কার্যকর দাবি উত্থাপন করেনি জাপা। কিন্তু বললেই যেন ‘ভারত’ তাদের মাথার উপর থেকে আশীর্বাদের হাত তুলে নিবে। সিঁড়িটাও বদলিয়ে দিবে। তাই ভারতের দোসর আওয়ামীলীগের অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের রাস্তা তৈরীতে জাপা প্রকাশ্যে আসছে। জাতীয় পার্টির প্রথম ট্রায়েল বাধাগ্রস্থ হলেও বাধা উৎরাতে সক্ষম হবে তারা।
তাই নতুনভাবে সিঁড়িকে কার্যকর করতে রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে রাজপথে নামার জাতীয় পার্টির তৎপরতা। জাতীয় পার্টি রাজপথে নামলে আওয়ামীলীগসহ ১৪ দলের সমর্থন এবং তাদের অংশগ্রহন থাকবে। আবার জাপা সংসদে যাবে বিরোধী দল হয়ে। না হলেও তৃতীয় অবস্থান কেও ঠেকাতে পারবে না। এমন মনোবাসনা নিয়েই জাতীয় পার্টি তৎপর। তবে রাজনীতির হিসাব নিকাশ অংকের চেয়ে; কঠিন বটে। তবে, উপরোক্ত বাস্তবতায়, ‘দুই যোগ দুই’ এবং ‘দুই গুনন দুই’ ফল একটাই চার। এভাবে মিলে যায় ফলাফল। কেননা, পতিত স্বৈরাচারের আজ্ঞাবহ আমলাসহ সর্বত্রই বসে আছে তাদের আজ্ঞাবহ সমর্থকরা। বাস্তবতাই প্রমাণ করবে ভবিষ্যতে কি হচ্ছে ও হবে। তবে জনগণকে কারোই বোকা ভাবা ঠিক নয়। বরং জনগণের পাশে না দাঁড়ানো এবং দেখেও না দেখার ভানকে ব্যর্থতা হিসেবে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে গণভিত্তি দৃঢ় করাই বাঞ্চনীয়।
