স্বপন চৌধুরী : জ্বালানি তেলের সংকট রংপুরাঞ্চলে : আন্দোলনের হুঁশিয়ারি। রংপুর অঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা, পদ্মা ও যমুনার ডিপোতে তেলের মজুত শেষের দিকে। জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের রংপুর রেলহেড ডিপোতে তেল সরবরাহ না থাকায় সংকটে পড়েছে বিভাগের অন্তত পাঁচ জেলা। এতে গত কয়েক মাস ধরে এ ডিপোর অধীন পেট্রোল পাম্প মালিক ও এজেন্টদের চাহিদা মতো তেল সরবরাহ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ট্রেনের ইঞ্জিন সংকটের কারণে জ¦ালানি তেল পরিবহনের এই সংকট কবে নাগাদ সমাধান হবে তা কোনো কর্মকর্তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। পরিস্থিতি উত্তরণে দ্রুতই সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রংপুরের নেতৃবৃন্দ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রংপুরের তিনটি জ্বালানি ডিপোতে মাসে অন্তত আড়াই কোটি লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু গত আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম থেকে তেল সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ২১ লাখ লিটার, যা দিয়ে দুই দিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। ফলে বাধ্য হয়ে বাঘাবাড়ি এবং পার্বতীপুর ডিপো থেকে তেল এনে কোনো কোনো পাম্প মালিক তাদের ফিলিং স্টেশন চালু রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এতে তাদের খরচ লাগছে অনেক বেশি। চট্টগ্রাম থেকে রেলওয়ের মাধ্যমে তেল সরবরাহ কমে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে জানিয়ে পাম্প মালিকরা অভিযোগ করেন, আগে রেলপথে প্রতি মাসে ৮ থেকে ৯টি র্যাক আসতো, যেখানে প্রতিটি র্যাকে ২৭টি ওয়াগান থাকতো। বর্তমানে প্রতি মাসে এক থেকে দুটি র্যাক আসে। এই অবস্থা গত ছয় মাস ধরে চলে আসলেও রেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।
রংপুরের একাধিক পাম্প মালিক জানান, রংপুর ডিপোতে জ্বালানি তেল না থাকায় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে পার্বতীপুর এবং বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তবে এতে পরিবহন বাবদ দ্বিগুণ খরচ গুনতে হচ্ছে। এছাড়া সিরিয়াল পাওয়ার জটিলতাসহ জ্বালানি তেল নিয়ে ফিরে আসতে দুই দিনের বেশি সময় লাগছে। পেট্রোলপাম্প মালিক মঞ্জুর আজাদ বলেন, ‘রংপুরের ডিপোতে জ¦ালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষের খেয়ালিপনার কারণে বাঘাবাড়ি ও পার্বতীপুর ডিপো থেকে তেল এনে ফিলিং স্টেশন চালু রাখতে হচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে তেল সংকটে রংপুর অঞ্চলের পাম্পগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে, রংপুর বিভাগীয় দাহ্য পদার্থ বহনকারী ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলাউল মিয়া লাল¬ু বলেন, ‘রংপুরে চাহিদা অনুযায়ী তেল না আসায় প্রায় ৬০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। রংপুর অঞ্চলে নিয়মিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।’
রংপুরে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি তেল সরবরাহে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রংপুরের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর একটি আবেদন দিলেও গত আট মাসে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া গত ১৪ আগস্ট রংপুর ডিপোতে নিরবিচ্ছিন্ন তেল সরবরাহের দাবিতে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েও প্রতিকার মেলেনি। ওই পত্রে উল্লে¬খ করা হয়, রংপুর ডিপো থেকে বিভাগের পাঁচটি জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে নিয়মিত তেল না আসার ফলে ডিলার ডিস্ট্রিবিউটরদের চাহিদামতো তেল সরবরাহ হচ্ছে না। যার ফলে জ্বালানি সংকট তৈরি হয়েছে। রংপুরে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রংপুরের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ শহীদ শোভন বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনের ওয়াগানে করে কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রোল এবং অকটেন নিয়ে আসা হয়। ইঞ্জিন সংকটে সময়মতো জ্বালানি তেল না পেয়ে পাম্প মালিকরা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় পাম্প চালু রাখতে দূর-দূরান্ত থেকে তেল সংগ্রহ করতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন। সংগঠনের রংপুর সভাপতি আজিজুর ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে তেল আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় জ¦লানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় গ্রাহক পর্যায়ে তেল সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি উত্তরণে দু’একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ডিপো সূত্রে জানা যায়, ট্রেনের ইঞ্জিন সংকটের কারণে জ¦ালানি তেল পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মেঘনা পেট্রোলিয়াম রংপুরের ম্যানেজার সাইদ হোসেন। রংপুর রেলওয়ের সুপারিনটেনডেন্ট শংকর গাঙ্গুলী বলেন, ইঞ্জিন সংকটে ট্রেনের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে এ সমস্যা আরো বেড়েছে। বিশেষ করে জ¦ালানি তেল পরিবহনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের লালমনিরহাট ডিভিশনের যন্ত্র প্রকৌশলী (লোকো) শাহিনুল হক অপু বলেন, ‘ডিভিশনে বর্তমানে রেলের ২২ ইঞ্জিনের মধ্যে ২০টি চালু রয়েছে। আরো অন্তত ১৫টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। কবে নাগাদ এ সংকট দুর হবে জানিনা।’
আরও পড়ুন- বিভাগীয় খবরা-খবর
