Thu. Sep 4th, 2025
দেশ গড়তে হবে জনসমর্থনের ভিত্তিতেই- তারেক রহমানদেশ গড়তে হবে জনসমর্থনের ভিত্তিতেই- তারেক রহমান

গণপ্রহরী ডেস্ক: দেশ গড়তে হবে জনসমর্থনের ভিত্তিতেই উল্লেখ করে লাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, দেশ গড়তে সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে এবং কাজ করতে হবে। সবার মতামত উপস্থাপন করে যে মতামতের সবচেয়ে বেশি সমর্থন আছে তার ভিত্তিতেই দেশ গড়ব।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যে বিভেদ এমন পর্যায়ে না পৌঁছায় যেখানে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। যেখানে দেশের মানুষের স্বাভাবিক চাওয়া-পাওয়া বাধাগ্রস্ত হবে। দলের মধ্যেই হোক বা বিভিন্ন মানুষের মধ্যে, মতভেদ থাকতেই পারে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে পার্থক্য ন্যূনতম পর্যায়ে স্থিতিশীল রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

তারেক রহমান বলেন, দেশের মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় অর্থাৎ উল্লেখিত পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পতিত স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন স্বৈরাচার মুক্ত। এখন আমাদের সামনে আরেকটি বড় যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধ বা সংগ্রাম হল সেই আন্দোলন যা এদেশের মানুষ গত ১৬ বছর ধরে লড়াই করে আসছে, বিশেষ করে স্বৈরাচার বিরোধী রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা, সাধারণ মানুষের ন্যায্য কথা বলার অধিকার। জনগণের সহযোগিতায় যে অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা তা ধীরে ধীরে আমাদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে অনলাইনে সংযুক্ত নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাচুড়ি দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। 

‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে ক্রসফায়ারে নিহত নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপি নেতা গোলাম রাব্বানীর পরিবারের উন্নত জীবনযাপনের জন্য নির্মিত নতুন বাড়ির চাবি হস্তান্তরের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গোলাম রব্বানী দেশের মানুষের কথা বলার অধিকারের জন্য লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে তারিক রহমান বলেন, দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রাব্বানীর মতো অসংখ্য মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছেন।। তাদের লক্ষ্য ছিল একটাই, আর তা হলো জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। মানুষের বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা। গোলাম রব্বানীকে হত্যা করা হলেও গোলাম রাব্বানী শুধু একজন নয়। গত 16 বছরে, স্বৈরশাসক, যারা তার ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্য গুম ও খুন করেছে, ৫ আগস্ট, ২০২৪-এ বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে স্বৈরাচার হাজার হাজার দাস শ্রমিককে হত্যা করেছে, লাখ লাখ পরিবারকে নির্যাতিত করেছে। পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন আগেও স্বৈরাচার প্রায় দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল। ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষকে বিভিন্নভাবে আহত ও নানাভাবে নির্যাতন করা হয়।

তারেক রহমান বলেন, গোলাম রব্বানী সাধারণ মানুষ হলেও একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। তার দোষ ছিল দেশের মানুষের অধিকার, বিশেষ করে কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার নিয়ে তিনি সোচ্চার ছিলেন।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট যে স্বৈরশাসক দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, যে অধিকার বঞ্চিত করতে চেয়েছে, গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। তিনি জনগণের পক্ষে কথা বলেছেন। জনগণের কথা বলার জন্য, জনগণের অধিকারের জন্য জনগণের রাজনৈতিক অধিকারের জন্য কথা বলেছেন। সে কারণে স্বৈরশাসকের বন্ধুরা তাকে হত্যা করে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার এ ধরনের বহু হত্যাকাণ্ড করেছে। গোলাম রাব্বানীসহ আমাদের শহীদ ভাইদের আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব না। আমাদের সকল ভাই-বোনদের যারা ভুক্তভোগী, বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার, পঙ্গু, তাদের চিকিৎসার মাধ্যমে আমরা হয়তো তাদের কাউকে পুরোপুরি সুস্থ করতে পারবো, হয়তো তাদের কাউকে কিছুটা হলেও সুস্থ করতে পারবো। যে পরিবারগুলো বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আপনিসহ বাংলাদেশের মানুষ (যারা এটা করতে পারেন) ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে আমরা যদি তাদের পাশে দাঁড়াই, তাহলে সেই পরিবারগুলো যে কয়দিন বেঁচে থাকবে তার জন্য ভালো থাকবে।’

দেশে অনেক সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের এই সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করতে হবে। এখন এটি সমাধান করার জন্য, এমন কেউ থাকতে হবে যে এই সমস্যাটি আপনার কাছে নির্দেশ করতে পারে। গোলাম রব্বানীরা চেয়েছিলেন দেশে একটি ব্যবস্থা হোক, দেশে ধীরে ধীরে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে উঠুক, যাতে কেউ কেউ আপনার সমস্যা, এলাকার মানুষের সমস্যা, গ্রামের লাখো মানুষের সমস্যার কথা বলতে পারে। যাতে মানুষের কথা ঠিক কোথায় পৌঁছাতে পারে। গোলাম রব্বানীসহ হাজার হাজার মানুষ হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন এই ব্যবস্থা। যাতে আমরা একটি সুন্দর দেশ গড়তে পারি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আজ এখানে জড়ো হয়েছি, আপনাদের মতো কোটি কোটি মানুষ, যারা বাংলাদেশকে একটি স্বাভাবিক অবস্থায় দেখতে চায়, যেখানে একজন বেকার যুবক, শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, একজন বেকার যুবকে তার কর্মের জন্য বেশি ঝামেলা বা বেগ পেতে হবে না। যেখানে শিক্ষার্থীকে তার লেখাপড়ার জন্য চাপ দিতে হবে না। আমাদের এমন একটি দেশ গড়তে হবে যেখানে মানুষ রাতে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটার সময় কমবেশি নিরাপদে হাঁটতে পারে, একজন সাধারণ মানুষ তার দেশ সম্পর্কে যে চিন্তা-ভাবনা করে বা দেশকে যেভাবে দেখতে চায়, সেভাবে আমাদেরকে দেশ গড়তে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আজ এখানে এসেছি গোলাম রাব্বানীর পরিবারকে নতুন বাড়ি দিতে। আমি আগেই বলেছি, আপনারা নিজেরাই জানেন যে গোলাম রাব্বানীর পরিবারের মতো হাজার হাজার পরিবার এই মুহূর্তে সারা বাংলাদেশে রয়েছে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আসাদুল হাবিব দুলু, পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আ.খ.ম আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম ও নিহত বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীর বড় মেয়ে রহমত জাহান রিক্তা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন।

একই অনুষ্ঠানে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নীলফামারী, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার ১২টি শহীদ পরিবারকে পরিবার প্রতি ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ঠনঠনিয়া গ্রামের রব্বানীর মামা আলী হোসেন ও মিয়া হোসেনের বাড়ি থেকে গোলাম রব্বানীকে তুলে নিয়ে যায় র‌্যাব। ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি সকাল সাতটার দিকে নীলফামারী সদর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন নীলফামারী-ডোমার সড়কের গোচামারী সেতুর পাশ থেকে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত গোলাম রব্বানী নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *