মলয় চন্দ্র ভট্টাচার্য : ধর্মীয় দৃষ্টিতে জন্মাষ্টমী ও এবারের জন্মাষ্টমী পালন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মশাস্ত্র মতে প্রথাগত আনুষ্ঠানিকতায় পার্থক্য থাকলেও মৌলিক বিষয়ে কোনো প্রভেদ নেই। ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। তিনিই সর্বশক্তিমান এবং সর্বত্র বিরাজমান। তিনি ঈশ্বরে পরম করুণাময়। আঁধার থেকে আলোর পথের দিশারী হিসেবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি। দ্বাপের যুগে ভাদ্র মাসে রোহিনী নক্ষত্রের অষ্টমী তিথিতে আভির্ভূত হন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণের জন্মলীলাই জন্মাষ্টমী নামে অভিহিত। তাই জন্মাষ্টমীর শুভদিন উপলক্ষে কামনা হোক- ‘সবার মধ্যেই শুভ বুদ্ধির উদয় হোক’।
ধর্মগ্রন্থ গীতা এবং স্বামী বিবেকানন্দের বানী ও রচনার বর্ণনা থেকে ধর্মীয় দৃষ্টিতে জন্মাষ্টমী ও এবারের জন্মাষ্টমী পালন নিয়ে অতি সংক্ষিপ্ত আলোচনায়-উপস্থাপনায় অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি থাকলে সম্মানিত পাঠকদের প্রতি তা নিজগুণে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে বিবেচনার অনুরোধ থাকছে। তবে জন্মাষ্টমী পালনের ক্ষেত্রে গণপ্রহরী ডেস্কে সংরক্ষিত রাজধানীর জাতীয় মন্দির-‘ঢাকেশ্বরী মন্দিরে’ সেনাবাহিনী প্রধানের মিছিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের খবরটি আলোচ্য।
ধর্মগ্রন্থের শিক্ষামতে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে, মানবজাতির কল্যাণের নিমিত্তে জন্ম নেয়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানুষের মধ্যেকার পাপ-পঞ্চিলতাকে দূর করে মানুষের মুখে দিয়েছেন ধর্মের কথা- ‘অমৃতসুধা’। গীতায় স্পষ্টক্ষরে লেখা রয়েছে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমের মূর্তবিগ্রহ। তিনি ভিন্নভাবে বলেছেন, তাতে শ্রীকৃষ্ণেই পরতত্ত্ব পুরুষোত্তম। লোকে অক্ষর ও অক্ষয় এই দুই পুরুষ প্রথিত আছে। আমি অক্ষরের অতীত এবং কূটস্থ হতেও উত্তম, এ জন্য আমি পুরুষোত্তম বলে খ্যতি লাভ করেছি। আমাকে পুরুষোত্তমরূপে জানলে আর কিছুই জানার বাকি থাকে না। তখন জীব বুঝতে পারে যে, আমি নির্গুন, আমিই সগুণ, আমি বিশ্বরূপ, আমি অবতার, আমি আত্মা। এই পুরুষোত্তম তত্ত্ব অতিগুহ্য। এটা জানলে জীব কৃতবিদ্যা হয়, সে সর্বতোভাবে আমাকে ভজনা করে।
গীতায় পুরুষোত্তম যেমন সম, শান্ত, নির্গুন, অনন্ত, অখিলাত্মা, আবার তিনিই গুন-পালক, গুণধারক, প্রকৃতি বা কর্মের প্রেরয়িতা, যজ্ঞ-তপস্যার ভোক্তা, সর্বলোক মহেশ্বর।
গীতার বর্ণনায় রয়েছে, শ্রীকৃষ্ণ নিজে যা বলেছেন, তার বঙ্গানুবাদ হচ্ছে- ‘যখনই ধর্মের অধ:পতন ও অধর্মের উদ্ভব হয়, তখনই সাধুদের পরিত্রান, দুষ্ট লোকের বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপন করার জন্য আমি পৃথিবীতে অবতীর্ণ হই’।
ধর্মগ্রন্থ গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ‘আমাকে পাওয়ার জন্য সব বন্ধন ত্যাগ করো’। শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বাস ও প্রেমের দেবতা, পাণ্ডিত্যের দ্বারা তাঁকে পাওয়া যায় না। তাঁকে পাওয়া যায় ভালবাসা দিয়ে। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনায় আরও জানা যায়, গোপীদের কাছে প্রেম ও ঈশ্বর এক বস্তু। তার ভাষায় মানবজাতির উদ্ধারের জন্য অবতীর্ণ হওয়া ‘শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বরাবতার’। স্বামীজির রচনায় আরও জানা যায়- গোপীলীলা প্রেম ধর্মের পরাকাষ্ঠা, এই প্রেমে সব ব্যক্তিত্ব লোপ পায় এবং পরম মিলন ঘটে। দ্বারকায় শ্রীকৃষ্ণ কর্তব্য শিক্ষা দিয়েছেন। বৃন্দাবনে প্রেম’।
পাঠক আমরা উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় যাঁর জন্মলীলাই ‘জন্মাষ্টমী’ নামে অতিহিত সেই সর্বশক্তিমান এবং সর্বত্র বিরাজমান এবং যিনি পরম করুণাময় শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে অবগত হলাম’। এবার গণপ্রহরী ডেস্কে সংরক্ষিত সেনাবাহিনী প্রধানের গত ১৬ আগস্ট শনিবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জন্মাষ্টমীর মিছিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ধর্মীয় দৃষ্টিতে জন্মাষ্টমী ও এবারের জন্মাষ্টমী পালন শীর্ষক খবরটিতে কি বলা হয়েছে তা জেনে দেখা যাক।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশে জাতি-ধর্মে ভেদাভেদ থাকবে না উল্লেখ করে বলেছেন, সম্প্রীতির বাংলাদেশে শত শত বছর ধরে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পাহাড়ী, বাঙ্গালি, উপজাতি সবাই মিলেমিশে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আমরা শান্তিতে বসবাস করে আসছি। তিনি বলেছেন, আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগিরিক। এই দেশে আমাদের সবারই সমান অধিকার।

সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধানত্রয়ের মোমবাতি জালিয়ে উদ্বোধনের পর সেনাপ্রধান জন্মাষ্টমীর আনন্দঘন পরিবেশে শ্রীকৃষ্ণের হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে আমাদের সাথে নেয়ায় সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি ঐতিহাসিক শুভ জন্মষ্টমীর কেন্দ্রিয় মিছিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি পরিচালিত ও উদ্বোধনকৃত শোভাযাত্রাটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে শুরু হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন প্রদিক্ষণ শেষে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে সমাপ্ত হয়।
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন এবং আনন্দ উদযাপনের ব্যবস্থা করবেন, আমরা একসাথে আনন্দ ভাগ করে নিব। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী দেশে মোতায়েন রয়েছে এবং তারা আপনাদের সাথে কাজ করে যাবে। নিশ্চিন্তে বসবাস করার পাশাপাশি আনন্দ-উৎসবের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি উদযাপন করবেন। সেনাপ্রধান বলেছেন, ভবিষ্যতে আমাদের সোনালী দিনগুলো আমরা একসাথে দেখতে চাই।
প্রসঙ্গত, পুন:পুন উল্লেখ্য যে, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিনি শুভ জন্মাষ্টমী উদযাপন করে থাকেন আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস-অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন শ্রীকৃষ্ণ।
লেখাটি গণপ্রহরীর প্রিন্ট কপির ফাইলবন্দি থাকায় যথাসময়ে ওয়েব সাইটে পোষ্ট করা সম্ভব হয়নি। তবে পাঠকের চাহিদা পূরণে পোস্ট করা হলো।
