নিজস্ব প্রতিবেদক : নূর হোসেন গণতন্ত্রের মূর্তপ্রতিক তবে কেন আওয়ামীলীগ? ‘সূর্য যেমন পূর্ব দিকে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়’ তেমনি যুক্তিযুক্ত ও সত্য হচ্ছে, শিরোনামে উত্থাপিত প্রশ্নটি। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে শহীদ নূর হোসেন নিজেই যেন ‘স্লোগান হয়ে-পোস্টার হয়ে’ সামনে ছিলেন শহীদি কাফেলার। ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখা ছিল অকুতোভয় নূর হোসেনের বুকে ও পিঠে। কারণ, নূর হোসেনের হৃদয়ে লালিত আকঙ্খা পূরণে প্রয়োজন ছিল স্বৈরাচার মুক্ত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। সেই দেশ হলে-মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত হতো, তারও আকাঙ্খা পূরণ হতো।
কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, যে মিছিলের সামনে ছিলেন নূর হোসেন ‘গণতন্ত্রের মূর্তপ্রতিক হিসেবে’ সেই মিছিলটি রাজধানীর জিরো পয়েন্ট খ্যাত এলাকায় পৌঁছলে, স্বৈরাচারের লাঠিয়াল ‘পুলিশ বাহিনী’ মিছিলের উপর গুলি চালায়। মিছিলে গুলিতে ২৪ বছর বয়সী অপ্রতিরোধ্য যুবক নূর হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন। তারপরও শহীদী কাফেলার মতো মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয় না। বরং শহীদ নূর হোসেনের লাশ নিয়ে মিছিল বীরদর্পে এগিয়ে চলতে থাকে। আর গুলিবিদ্ধদের হাসপাতালে নিয়েও শেষ রক্ষা করা যায়নি। তাইতো গণতন্ত্রের মূর্তপ্রতিক নূর হোসেন তবে কেন আওয়ামীলীগ।
শিরোনামে গণতন্ত্রের মূর্তপ্রতিক নূর হোসেন তবে কেন আওয়ামীলীগ? বাক্যটিতে আওয়ামীলীগ কেন আলোচনার দাবি রাখে। কেননা, নূর শহীদ হয়েছেন স্বৈরাচার এরশাদের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে। তবে কেন আওয়ামীলীগ? তার কারণ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্টের দেশের কমপক্ষে সতেরো কোটি মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহনে স্বৈরাচার হাসিনা বিরোধী ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থান। স্বৈরাচার এরশাদ ও স্বৈরাচার হাসিনার দোসর এবং ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের মদদপুষ্ট প্রেতাত্মাদের বাদ দিয়েই সেই সংখ্যা। সতেরো কোটি মানুষের রায় হচ্ছে-‘শেখ হাসিনা স্বৈরাচার’। আর স্বৈরাচার বিরোধী শহীদ নূর হোসেন ছিলেন গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতিক। অল্প বিদ্যার নূর হোসেন কিভাবে জীবন উৎসর্গের মতো ভূমিকায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। তা জানতে পারলো না জাতি, তাঁর নিত্য রাতে লেখা ডায়েরিটি পুলিশ নিয়ে যাওয়ায়।
পক্ষান্তরে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম- এর সরকার উৎখাতের মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় আসে স্বৈরাচার এরশাদ সরকার। গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ একসাথে চলতে পারে না। তাইতো আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রের সাইনবোর্ড তুলে উন্নয়নের নামে চৌদ্দ দলীয় জোটভুক্ত দোসরদের নিয়ে এবং স্বৈরাচার এরশাদের জাতীয় পার্টির উপর নির্ভর করে স্বৈরাচারিত্ব চালিয়েছে, দেশ ও জনগণের জন্য স্বৈরাচার মারাত্মক হুমকি হয়েছে। এবং দেশের অর্থপাচারে বিশ্বের সামনে ব্যাতিক্রমী মডেল-এ পরিণত হয়েছিল। গণতন্ত্রের নাম ব্যবহার করে স্বৈরাচার (ফ্যাসিজম) প্রতিষ্ঠা করে। জনগণকে বোকা ভেবেই দেশের বীর জনগণকে স্বৈরশাসনের বিধি বিধানের সাহায্যে স্তব্ধ করার অপচেষ্টা করেছিল। অর্থাৎ গণতন্ত্রের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে তারা। মনে রাখতে হবে, ‘শত্রুর চেয়েও বিশ্বাস ঘাতক হচ্ছে মহাশত্রু’। এই মহাশত্রুদের রাজনীতির অধিকার দেওয়াও অপরাধ। সেহেতু তারা শহীদ নূর হোসেন দিবস পালনের অধিকার রাখেনা। কেননা, শহীদ নূর তাঁর বুকে ও পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখেই, শহীদি কাফেলায় অর্থাৎ স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের মিছিলের সামনে ছিলেন। এই সত্য ও বাস্তবতাই পাঠকের সামনে এনেছেন ‘গণতন্ত্রের মূর্তপ্রতিক নূর হোসেন তবে কেন আওয়ামীলীগ?
ব্যাবিট্যাক্সি চালক শ্রমজীবি মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী মরিয়ম বিবি দম্পতির দ্বিতীয় ও গর্বিত সন্তান শহীদ নূর হোসেন। শহীদ নূর হোসেনের ৩৭ তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গণপ্রহরী কর্র্তৃপক্ষের আদিষ্ট হয়ে গণপ্রহরী পরিবারের পক্ষে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি শহীদ নূর হোসেনকে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনার সাথে ২০০৫ সালে প্রয়াত তাঁর গর্বিত পিতা মুজিবুর রহমানেরও আত্মার শান্তি কামনা করছি। সেই সাথে শহীদের গর্বিত মা মরিয়ম বিবির গর্বিত সন্তান হারানো এবং ভাইবোনদের প্রিয় ভাই হারানোর ব্যাথা ও কষ্ট সময়ের সাথে গভীর হলেও ভুলবার নয়।
সেক্ষেত্রে শহীদ নূর হোসেন? না, নূর হোসেনকে শুধু শহীদ পরিবারের সদস্যরা নয়, দেশ, জাতি ও জনগণও ভুলবে না ও ভুলতেও পারবেনা। কারণ গণতন্ত্রের সাথে জড়িয়ে থাকবে তার নাম। এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে এগিয়ে চলার পথ দেখানো ‘ইতিহাসে’ স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে শহীদ নূর হোসেনের নাম।
এখানে উল্লেখ্য ১০ নভেম্বর ১৯৭৫ শহীদ নূর হোসেনের অহংকারের দেহটি যখন স্বৈরাচার এরশাদের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বর্তমান শহীদ নূর হোসেন চত্বরে লুটিয়ে পড়েছিলেন রাজপথে। তাঁর রক্ত যেন রাজপথকে স্বাক্ষী হিসেবে ব্যবহারের জন্য লিখে গেছেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। সত্যি সত্যি, সেই লেখাকে বাস্তব রূপ দিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শহীদ নূর হোসেন চত্বরে বিশাল ছাত্র জনতার গণজমায়েত করে এবারের ১০ নভেম্বর। নূর হোসেনের আত্মত্যাগে বলিয়ান হয়েই, বীর সন্তানরা চব্বিশের গণঅভূত্থ্যানে হাজারো শহীদের রক্তে সফল করতে পেরেছে গণঅভ্যূত্থান। চব্বিশের গণঅভ্যূত্থান ‘শহীদ নূর হোসেন, ডা. মিলন এবং আবু সাঈদ, মুগ্ধ’দের আত্মত্যাগ সফল করতে তাঁদের অবদান ইতিহাসসহ পাঠ্য পুস্তকে লিপিবদ্ধ করার তাগিদও দিচ্ছে।
শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগকে বৃথা করতে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার গণতন্ত্রকে সাইনবোর্ডের চাপায় হত্যা করে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু শহীদ নূর হোসেনের রক্ত বৃথা যেতে পারে না বলেই জুলাই-আগস্টের গণঅভূত্থানকে রক্ত দিয়েই সফল করা হয়েছে। সে ভিত্তিতে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সেই স্বৈরাচারের আস্তানা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায় করে বিশাল গণসমাবেশ। শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে যেন উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজধানীসহ বিভিন্ন মহানগর, জেলা ও উপজেলা শহর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাখা কমিটিগুলো আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শহীদ নূর হোসেন দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে। এবং স্বৈরাচার আওয়ামীলীগকে সমাবেশ করার অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগকে স্বার্থক করতে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করার সুযোগ নেই, ব্যক্ত করেছেন। তাহলো তো আবারো বলতে হচ্ছে, গণতন্ত্রের মূর্তপ্রতিক নূর হোসেন তবে কেন আওয়ামীলীগ?
