Thu. Jul 10th, 2025
পবিত্র আশুরা নিয়ে আমাদের কথাপবিত্র আশুরা

পবিত্র আশুরা নিয়ে আমাদের কথা শুরুতে প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি-‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্যামের শিক্ষা ও চেতনার আলোকে ত্যাগের মহিমা অন্তরে লালন করে জাতি এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাবে জাতি হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম কারবালা প্রান্তরের সত্য মিথ্যার লড়াইয়ের আত্মত্যাগের শিক্ষায়’। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) সপরিবারে নিজেদের জীবন উৎসর্গকরে সত্যের জয়গান গেয়ে গেছেন। সেহেতু ১০ মহররম ১৪৪৭ হিজরি বিশ্বের ইসলাম ধর্মাবলম্বী মুসলমানদের জীবনে শোকের দিন। সেদিনের আত্মত্যাগ আজকেও মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করে। একইভাবে ঐতিহাসিক কারবালার হৃদয়বিদারক এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্ব ও তাৎপর্যতার আলোকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র আশুরা পালিত হয়ে আসছে ও হবে।

ইসলামের ইতিহাসের তথ্য মতে মহান আল্লাহতায়ালার সন্মানিত করা হিজরি সনের মহররম, সফর, জিলকদ ও জিলহজ মাসের মধ্যে হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম অত্যন্ত তাৎপর্যপূণ মাস। এ মাসটিকে বিশেষ মর্যাদা ও সন্মানের দৃষ্টিতে বিবেচনা করতো বা মানতো আইয়্যামে জাহিলিয়াত যুগের আরব্য বেদুইনরাও্ । এমনকি যুদ্ধ বিগ্রহ সম্পূর্নরূপে নিষিদ্ধ ছিল এই তাৎপর্যপূর্ণ মাসে। সেই আরবিতে ‘আশারা’ শব্দের অর্থ দশ আর আশুরা মানে দশম। আরবি শব্দার্থ মতে ‘মহররম শব্দের অর্থ মর্যাদাপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ। তাৎপর্যপূর্ণ এই দিন অর্থাৎ হিজরি ৬১ সাল মতে ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের কুফা নগরের নিকটবর্তী ফোরাত নদীর তীরের কারবালা প্রান্তরে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রাঃ) অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে এজিদ বাহিনীর হাতে স্বপরিবারে সঙ্গীদেরসহ নির্মমভাবে শহীদ হন।

পবিত্র আশুরা নিয়ে আমাদের কথার এ পর্যায়ে ইসলামের ইতিহাসের তথ্য মতে হিজরি ৬১ সালের আগেও আশুরার দিনে বা ১০ মহররম তারিখে শুধু মহান আল্লাহতায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেননি। বরং পৃথিবী সৃষ্টি করার পাশাপাশি ইতিহাসে উল্লেখিত অনেক গুরুত্বপুর্ণ ঘটনারও বর্ণনা রয়েছে। যেমন এই দিনে মহাপ্লাবন থেকে হজরত নূহ (আ.) রক্ষা পান। এবং হজরত মুসা (আ.) লাঠি দিয়ে রাস্তা করে নীলনদ পার হয়েছেন, ইত্যাদি। এমন দশটি উল্লেখযোগ্য তাৎপর্যপুর্ন ঘটনার মধ্যে সর্বশেষ ঘটে যাওয়া কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা স্মরনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মুসলমানরা দিনটি পালন করে আসছেন। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়-হজরত মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর অবৈধভাবে তারই পুত্র ইয়াজিদ ক্ষমতা স্থায়ী করার মোহে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ক্ষমতা প্রয়োগে মনোযোগ দেন। সেই ক্ষমতা প্রয়োগের এক চক্রান্তে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ(স.)-এর অপর দৌহিত্র হযরত ইমাম (রা.) কে বিষপান করিয়ে হত্যা করা হয়। এমন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) পরিবার-পরিজন ও ৭২ জন সাথীসহ শাহাদত বরণ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস পবিত্র আশুরার দিন উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালা প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে যাঁরা শাহাদত বরণ করেছেন তাঁদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বলে বাসস সূত্রে প্রকাশ। অপরদিকে সূত্রমতে, কি দিবসটি উপলক্ষে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযযোগ্য মর্যাদায় সুষ্ঠ ও সুশৃঙ্খলভাবে দিবসটি পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। তারা কর্তব্য কাজে মাঠে তৎপরও রয়েছেন। সূত্রমতে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও গণমাধ্যমে বাণী পাঠিয়েছেন।

 এদিকে, শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্য পালনীয় দিন হলেও সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান দিবসটি পালনে নফল রোজা, নামাজ ও দানখয়রাতের মধ্য দিয়েই দিবসটি পালন করে আসছেন ও করবেন। শিয়া সম্প্রদায় তাজিয়া মিছিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে ও করবেন। জাতীয় ক্ষেত্রে এই দিবসের ত্যাগের শিক্ষাই কাম্য।

-ফাতেমা মজিদ, সম্পাদক

আরও পড়ুন- ঐতিহাসিক মুক্তাঞ্চল নিয়ে গঠিত সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার স্মরণে—

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *