Thu. Jul 10th, 2025
পাঠকের অভিযোগ ও আমাদের বক্তব্যপাঠকের অভিযোগ ও আমাদের বক্তব্য

পাঠকের অভিযোগ ও আমাদের বক্তব্য। গণপ্রহরীকে পাঠক তাঁর প্রিয় পত্রিকাই শুধু উল্লেখ করেননি, তিনি বলেছেন পত্রিকাটি সময়ের তালে তালে অনেকখানি অভিজ্ঞ। জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে পত্রিকাটি অনেক দিক- নির্দেশনা দিতে সক্ষম। সে কারণে তিনি পত্রিকাটির প্রতিটি লেখা গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন। তার মতে, গণপ্রহরী পতিত স্বৈরাচার সরকার ‘সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, গণপ্রহরী আজন্ম নির্ভিক ভূমিকা রাখলেও স্বৈরাচারের স্বৈরশাসনকালে সরকারের অনেকটা দলীয় মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেছে। যদিও উপসম্পাদকীয় ও মতামত গণপ্রহরীর ধারার সাথে সম্পর্কিত ছিল। তবে বৃহত্তম দল বিএনপি’র খবরাদি আশানরূপভাবে প্রকাশ না করায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন-এটাই তার অভিযোগ।

তিনি বিএনপি সমর্থক হিসেবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রের চিন্তা-চেতনা লালনও করেন বটে। তা দলীয় ফোরামে বললে বিপদের আশংকা ছিল মন্তব্য করে, তিনি পূর্ব প্রেরিত লেখায় পরিচয় দেয়া থেকে বিরত থাকেন। বর্তমানে অবসরে বয়সের কারণে। তবে গতকাল কম্পিউটার চালাতে তাঁর নাতনি গণপ্রহরীর ওয়েবসাই চালু হয়েছে জানালে একটু সময় ভিজিট করেন। অত:পর পাঁচ বছর আগের অভিযোগ পত্রটি (পত্রিকা কাটিংসহ) একটু সংশোধন করে মতামতসহ প্রকাশের অনুরোধ করে পাঠালাম। লেখাটি প্রকাশ হয়েছিল শুনেছিলাম। পত্রিকাটি পাইনি। ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে আশাবাদী হলাম গণপ্রহরী আগের ধারায়ই আছে। তাই নিম্নে উল্লেখিত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর  রহমানের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ এবং তাঁর ১৯ দফা কর্মসূচি ছাপা কপিতে ও ওয়েবসাইটে প্রকাশের অনুরোধ করেন।

‘পাঠকের অভিযোগ ও আমাদের বক্তব্য’ শীর্ষক লেখার এ পর্যায়ে পাঠক লিখেছেন, রাষ্ট্রপতি জিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং ১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান তার বিখ্যাত ১৯ দফার যে কর্মসূিচ ঘোষণা করেছিলেন তা কোন পত্রিকা থেকে ফটোকপি করে দিয়ে প্রকাশের অনুরোধ করেন। বিএনপি’র তৃণমূল পর্যায়ে এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে- যে কর্মসূিচ অনেক নেতা-কর্মী জানেনই না। আওয়ামীলীগেওতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের চার মূলনীতির কথাও বলে না। সে পথে চলেও না। ফলে আদর্শিক নেতা-কর্মী তৈরী হচ্ছে না। সেজন্য জনগণ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। পাঠক, উল্লেখিত অভিযোগকারী পাঠকের অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করবো না। শুধু বলবো সরকার দলীয় নয় পত্রিকাটি; উৎপাদক জনগণের নির্ভিক জাতীয় সাপ্তাহিক পত্রিকা। তবে পাঠকের চাহিদা মতে এমন লেখা দিলে অবশ্যই প্রকাশে সচেষ্ট আমরা। এতদসংগে জানিয়ে দিতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রকাশিত গণপ্রহরী মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনে কোন শক্তির কাছে মাথা নত করেনি বিগত ৪৩ বছরে। মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে সর্বদাই নির্ভিক । নীচে আপনার (পাঠকের) লেখা প্রকাশ করা হলো ।

জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচী :

১। দেশের স্বাধীনতা, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব সর্বতোভাবে রক্ষা করা।

২। শাসনতন্ত্র চারটি মূলনীতি অর্থাৎ সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি সর্বাত্মক বিশ্বাস ও আস্থা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় বিচারের সমাজতন্ত্র, জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে প্রতিফলিত করা।

৩। সর্ব উপায়ে নিজেদেরকে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলা । ৪। প্রশাসনের সর্বস্তরে উন্নয়ন কার্যক্রমে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

৫। সর্বোচ্চ অধিকারের ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ তথা জাতীয় অর্থনীতিকে জোরদার করা ।

৬। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং কেউ যেন ভূখা না থাকে, তার ব্যবস্থা করা ।

৭। দেশে কাপড়ের উৎপাদন বাড়িয়ে সকলের জন্য অন্তত মোটা কাপড় সরবরাহ নিশ্চিত করা। ৮। কোন নাগরিক যেন গৃহহীন না থাকে, তার যথাসম্ভব ব্যবস্থা করা।

৯। সকল দেশবাসীর জন্য ন্যূনতম চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা ।

১০। নিরক্ষতার অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করা ।

১১। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারী খাতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ দান।

১২। যুব সমাজকে সুসংহত করে জাতি গঠনে উদ্ধুদ্ধ করা এবং সমাজে নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।

১৩। জনসেবা ও দেশ গঠনে সরকারি চাকুিরজীবিদের মধ্যে মনোবৃত্তি উৎসাহিত করা এবং তাঁদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা।

১৪। শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি সাধন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে সুস্থ শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।

১৫। বিদেশী সকল রাষ্ট্রের সাথে সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করা।

১৬। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ করা।

১৭। প্রশাসন এবং উন্নয়ন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা।

১৮। দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়নীতি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা এবং

১৯। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করা এবং ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার পূর্ণ সংরক্ষণ করা।

পাঠকের অভিযোগ ও আমাদের বক্তব্য – এ রাষ্ট্রপতি জিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালে বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৫৫ সালে কমিশন পান ।

১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধের সময় জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন ফার্স্ট ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানী কমান্ডার এবং লাহোরের খেমখায়ান সেক্টরে বীরত্বের সাথে লড়াই করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি কাবুলস্থ পাকিস্তান সামরিক একাডেমীতে ইন্সট্রাক্টর নিযুক্ত হন । ১৯৬৬ সালে তিনি কোয়েটা স্টাফ কলেজে যোগ দেন ।

১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসে তাকে নবগঠিত অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব দিয়ে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ নিরস্ত্র জনগণের উপর সামরিক অভিযান শুরু করলে তিনি স্বাধীনতাকামী জনগণের পক্ষাবলম্বন করেন।

তিনি মতান্তরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন; ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ‘জেড ফোর্স অধিনায়ক ছিলেন’। বঙ্গবন্ধু সরকার তাঁকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে জিয়াউর রহমান কুমিল্লায় একটি ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৭২ সালের জুন মাসে তাকে সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীফ অব স্টাফ নিযুক্ত করা হয়। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর জিয়া উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসন নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সালের ২৯শে নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং ঐ দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত দেশের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জাতীয় সংসদে তিনশত আসনের মধ্যে দুইশত বিশটি আসন লাভ করেন। সাধারণ নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতি জিয়া দেশ থেকে সামরিক আইন জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া লন্ডন ও লুসাকায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলন, সিডনীতে কমনওয়েলথ রাষ্ট্রপ্রধানদের আঞ্চলিক সম্মেলন, কলম্বোতে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দেন এবং সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব- আমিরাত, কুয়েত, ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, জাপান, বার্মা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, মালী, সেনেগাল, গিনি এবং পশ্চিম জার্মানীতে রাষ্ট্রীয় সফর করেন। ১৯৮০ সালের ২৬শে আগস্ট রাষ্ট্রপতি জিয়া জাতি সংঘের বিশেষ অধিবেশনে ভাষণ দেন। ১৯৮১ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি মক্কা শরীফে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি ইসলামী সম্মেলনের তিন সদস্য বিশিষ্ট “আল কুদুস” কমিটি সদস্য নির্বাচিত হন। সার্ক গঠনে রাষ্ট্রপতি জিয়ার ভূমিকা গুরুত্ববহ।

রাষ্ট্রপতি জিয়া ইরাক, ইরান, যুদ্ধাবসানের প্রচেষ্টায়, ইসলামী সম্মেলনে গঠিত নয় সদস্যদের শান্তি মিশনে শীর্ষ স্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৮১ সালের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তেহরান ও বাগদাদ সফর করেন এবং মে মাসের ৩০ তারিখ গভীর রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আততায়ীর গুলিতে শাহাদত বরণ করেন। বিএনপি শহীদ রাষ্ট্রপতির ৩৮তম শাহাদত বার্ষিকী পালনের ব্যাপক কর্মসূচী পালন করেছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর ৩৮তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আমরা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *