বইমেলা জ্ঞানের ভাণ্ডারহেতু বই ও বইমেলা তাৎপর্যপূর্ণ। জ্ঞানের আলো ছড়ানো বই ও বইমেলা গুরুত্ববহ। জ্ঞানের আলো ছড়ানো বই হচ্ছে মূলত: জ্ঞানের ভান্ডার। সেই জ্ঞানের ভাণ্ডার সংগ্রহে বইমেলা যেমনি গুরুত্ববহ তেমনি তাৎপর্যপুর্ণও বটে। কেননা, যে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে চান, সেই ভাণ্ডারই পাওয়া যাবে বইমেলায়। সেই বইমেলাকে বলা হয়ে থাকে প্রাণের মেলা। সেই ভাণ্ডার খ্যাত বইয়ে বিজ্ঞা-প্রযুক্তি, সাহিত্য-সংষ্কৃতি, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল এবং শুধু গল্প-কবিতা, উপন্যাস ও গান ইত্যাদি সব কিছু বিষয় বই নিয়েই হয় বইমেলা। সেই কারণে বলা হয় জ্ঞানের আলো ছড়ানোর জন্যই বই ও বইমেলা।
বই শুধু আমাদের মানসিক উন্নয়নেই সাহায্য করে না, বরং সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ভাবেও আমাদের অগ্রগতি ঘটায়। আমাদের সমাজে বই এবং বইমেলা উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা মানুষের মধ্যে শিক্ষা এবং সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে সহায়ক। কেননা, বই মানবসভ্যতার এক অমূল্য রত্ন, যা সময়ের সাথে আমাদের চিন্তা, সংস্কৃতি এবং জ্ঞানের বিস্তার ঘটায়।
কবি-সাহিত্যিক-ছড়াকার, ইতিহাসবিদ, অর্থনীতিবিদ-রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, দার্শনিক-সমাজবিজ্ঞানী, লেখক-প্রবন্ধকার, নাট্যকার-গীতিকার এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সকল পর্যায়ের পাঠকসহ দর্শক-শ্রোতা সকলের জন্য গুরুত্ববহ বইমেলা। কারণ, জ্ঞানের সীমারেখা নেই এবং নির্ধারিত এক-দুটি বই নেই, যা পড়লে ও বুঝলে জ্ঞান অর্জন সমাপ্ত হবে। এক্ষেত্রে একুশের শিক্ষা বলছে, প্রতিবাদী-প্রতিরোধী না হয়ে সৃজনশীল সাহিত্য শিল্প নির্মাণ করা যায় না। এছাড়া যে কোন একটি বইকে জ্ঞানের ভাণ্ডার (পাত্র) বলা যেতে পারে। যেমন গুদাম (ঠাণ্ডায় গুদামজাত করাকে বলা হয় কোল্ড স্টোরেজ)। নানাবিধ পণ্য বা দ্রব্যাদি বস্তায় বা বাক্সে (প্যাকেট জাত করে) ভরে গুদামে রাখা হয়। বিভিন্ন সামগ্রী বা পণ্য এভাবেই গুদামজাত করা হয়। পাঠাগার, বই ও বইমেলা তেমনটাই।
বাংলাদেশের বইমেলার শুরু থেকে যদি বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণ করা যায়। তহালে সহজেই এটাকে মিলনমেলা বলা যুক্তিযুক্ত হবে। বইমেলা আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম যেখানে লেখক, পাঠক এবং প্রকাশক সবাই একত্রিত হয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন।
আমরা যদি একটু দূরদৃষ্টি দিয়ে ভাবি তাহলে দেখবো বইয়ের মধ্যে নিহিত থাকে বিভিন্ন জ্ঞানের ভাণ্ডার। বই শুধুমাত্র গল্প বা তথ্যের সংগ্রহস্থল নয়, এটি আমাদের চিন্তাভাবনা, মনন এবং মানসিকতার বিকাশে এক অনবদ্য সঙ্গী। প্রতিটি বই আমাদের আলোকিত করে, নতুন ধারণা ও চিন্তা এনে দেয়। এটি মানুষের কল্পনা ও সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়তা করে। প্রাচীনকাল থেকেই বই সমাজের মেধাবী মানুষের চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন এবং পৃথিবী সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞানের উৎস হিসেবে কাজ করেছে।
জ্ঞানের ভাণ্ডার দুক্ষেত্রে বিদ্যমান। একটি হচ্ছে পাঠাগার বা লাইব্রেরি। যেখানে বসে বইয়ের তালিকা দেখে বা আলমারিতে সাজানো বই দেখে, পছন্দনীয় বইটি নিয়ে বসে বসে আরামে পড়া যায়। যদি পাঠাগারে নিয়ম-কানুনের আওতায় সদস্যপদ পাওয়া যায় তবে সদস্য পাঠকরা বাড়িতে নিয়েও বই পড়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে পারেন, আবার নিয়মানুযায়ী পড়া শেষ করেও দিতে পারেন।
আরেকটি মাধ্যম হলো, আমরা জেনে আসছি সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার ধারক-বাহকদের শিক্ষা আধুনিকতা হচ্ছে অপসংস্কৃতি বিস্তৃতি ঘটানো। এ বিষয়টি মাথায় রেখে, পাঠক ও ক্রেতা-পাঠকদের তথা পাঠক-দর্শক-শ্রোতাদের আগ্রহ সৃষ্টিতে এবং বই মেলায় যেতে বা আসতে এবং বই পড়তে ও কিনতে উদ্বুদ্ধ করতে বইমেলায় মনোরেম পরিবেশের ব্যবস্থা করতে সচেষ্ট হতে হবে। একইভাবে আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গির পাশাপাশি বিনয়ের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে সাংষ্কৃতিকবোধও প্রকাশ করতে হবে। সংষ্কৃতিবোধ অনুশীলন থাকতে হবে।
কারণ এটি একটি সৃজনশীল পরিবেশ তৈরি করে, যা সাহিত্য এবং শিল্পের বিকাশে সহায়তা করে। বইমেলা শুধুমাত্র বইয়ের ক্রয়-বিক্রয় এবং সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করার জায়গা নয়, বরং এটি এক বড় সামাজিক অনুষ্ঠানও বটে। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠক, লেখক এবং শিল্পী একত্রিত হন এবং তাঁদের মতামত ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। বইমেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা, লেখক এবং পাঠক একে অপরের সাথে মতবিনিময় করে, যার ফলে নতুন লেখকদের উদ্ভাবন এবং পুরনো লেখকদের কাজের নতুন দিক উন্মোচিত হয়।
কেননা, বইমেলা সাংষ্কৃতিক বাহক। ইতিহাস বলে সংষ্কৃতির মাধ্যমে একটি জাতি ও রাষ্ট্র বিশ্বের সামনে তাদের গৌরব ও ঐতহ্যকে তুলে ধরতে পারে। যেহেতু সংষ্কৃতি হচ্ছে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ভুমিকা পালন করে। সেহেতু সংষ্কৃতি একটি জাতি ও রাষ্ট্রের দর্পণ।
আর দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা দেখে আসছি নিজস্ব সংষ্কৃতিকে ভুলে ভিনদেশী সংষ্কৃতির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আকাশ সংষ্কৃতির আওতায় বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের সুবাদে আমাদের গৌরবের ও ঐতিহ্যের সংষ্কৃতিকে গ্রাস করছে, সেই ‘আকাশ সংষ্কৃতি’। আমাদের সংষ্কৃতির স্বকীয়তা বহুলাংশে হারোনোর পথে। নিজেদের ঐতিহ্যের সংষ্কৃতির এহেন পরিণতি কারো কাম্য হতে পারে না।
আজকে বিশ্ব জানে আমাদের বইমেলা। ভাষা আন্দোলন ও তার স্বাক্ষের শহীদ মিনার, পৃথিবীর দেশে দেশে নির্মিত হয়েছে ও হচ্ছে। এটা জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবের। এটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধরে রাখতে হবে। কারন, ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্তপথে উনসত্তরের শহীদদের জীবনদান। সেই শহীদদের রক্তপথেই মুক্তিযুদ্ধ। আর মুক্তিযুদ্ধের ফসলই বাংলাদেশ। সেই রক্তার্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও গৌরবেরই স্বাক্ষ্য বহন করে বইমেলা।
উল্লেখ্য, ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৫-ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘিরে ঐতিহ্যবাহী বইমেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। গণপ্রহরী পরিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আয়োজিত বইমেলার সফলতা কামনা করছে। বই পড়ুন ও বই মেলায় অংশ নিন।
আরও পড়ুন- ঝাড়ুদার থেকে লেখিকা

প্রধান সম্পাদক, গণপ্রহরী