দুঃখে কথা আসে। আর বাস্তবতা কথা বলায়। যেমন, আমরা জেনে আসছি, দেখে আসছি বন্যা ও ভাঙ্গন মতো খেয়ালী বিধ্বংসী আচরণ মানুষকে সহায়-সম্পদ ও স্বজন হারাতেও বাধ্য করে ও করছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। যদিও আমরা এও দেখে আসছি, প্রকৃতির লীলা খেলার বন্যা পলিমাটি বয়ে এনে জমিকে করতো উর্বর। আর নদী এক কূল ভেঙে আরেক কূল গড়তো। ভেঙে যাওয়া কূলের মাটির চেয়ে গড়ে তোলা কূলের মাটি অল্প সময়ের ব্যবধানে হতো বেশি উর্বর। তাইতো নদীকূলের মানুষ কষ্ট-দুর্ভোগের মুখে পড়লেও মাটি কামড়ে যেন থাকতেন নদীকূলে, আজও কম-বেশি থাকছেন। অথচ জীবন দিয়ে দেখছেন-জানছেন, মুক্তিযুদ্ধের ফসল-রক্তার্জিত এই বাংলাদেশে, তাদের এহেন দুর্ভোগ থেকে রক্ষায় ৫৩ বছর ধরে বৈদেশিক সাহায্যে ও ঋণের অর্থ ব্যয়েও জনদুর্ভোগ অব্যাহত।
বরং দেশের আপামর মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বৈদেশিক ঋণের বোঝা। অর্থাৎ ফোঁড়ার উপর বিষ ফোঁড়াÑ প্রবাদের মতই যেন বন্যার্ত ও নদীর ভাঙ্গন বকলিত মানুষের দুর্ভোগের ওপর ঋণের বোঝা। এ অবস্থার হাত থেকে তাঁরা মুক্তি চান বলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাঁদের বীর সন্তানদের সাথে অংশগ্রহন ও জীবনদান। দুর্ভাগ্যবশত, তেপ্পান্ন বছরকালের ক্ষমতাসীন সরকার প্রতি বছরে দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে ও ঋণের বোঝা কমাতে পারেনি, যা দুঃখজনক। তাই বন্যার্ত জনগণ দীর্ঘশ^াসের মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন, বন্যা ও ভাঙ্গনরোধে পূর্বাপর সরকারের মত বৈষম্যের পথেই কি অন্তবর্তীকালীন সরকার? এটা কাম্য নয়।
আজকের এই লেখার ভূমিকাতেই যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তা উল্লেখ করে রাষ্ট্রের অর্থসহ বৈদেশিক ঋণের অর্থে কি কি করণীয় ছিল, যা না করায় জনদুর্ভোগ ও ঋণের বোঝা? সে বিষয়ে পাঠকদের সাথে মত বিনিময় ও ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকষর্ণে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেই বন্যার্তদের ঘিরে মূল লেখায় ফিরে যাব। তার আগে পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী ও লক্ষীপুরসহ উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কবলে আগষ্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় ৩০ জনের মৃত্যুর খবর এবং প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে প্রকাশ। গত মে-জুনে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে কয়েক দফায় ভয়াবহ আকারে আকস্মিক বন্যা বা ফ্লাশ ফ্লাড হয়েছিল।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে দেড় মাসেও বন্যার সৃষ্ট ক্ষতের জলাবদ্ধতা রয়েছে। বন্যার্তদের অভিযোগ মতে- কারণ হিসেবে উল্লেখ্য, পানি নামার ব্যবস্থা না থাকা এবং নদী ও খাল দখল ও দূষণের জন্যই বন্যার ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনী বন্যার্তদের মোকাবিলায় তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণের কার্যকর পদক্ষেপ মানুষকে আশ^স্ত করেছে।
পক্ষান্তরে সর্বক্ষেত্রে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বৈষম্যের শিকার-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম বীর শহীদ আবু সাঈদের রংপুর অঞ্চলের তিস্তা অববাহিকায় চতুর্থবারের বন্যায় সরকার, দাতা সংস্থা ও প্রশাসনসহ সবাই যেন দর্শকের ভূমিকায়। আলোচিত বৈষম্যকে বঞ্চনার অংশ বলা যায়, এহেন ভূমিকায়। সর্বক্ষেত্রে নদ-নদীর দেশ হিসেবে দেশের আপামর মানুষের জীবন দিয়ে অর্জিত উপলব্ধিবোধ থেকে পরস্পরের আলোচনাকে বাস্তবতা ধরে নেই তাহলে দৃঢ়ভাবে বলা যেতে পারে- প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনাশী কার্যক্রমই মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছে নানা ভাবে।
অথচ দেশের নদ-নদী যদি যথাযথ গভীরতায় বাধা বিঘ্নহীনভাবে প্রবাহিত হতে পারতো। তেপ্পান্ন বছরে ক্ষমতাসীন শাসকরা (সরকার) যদি প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশপ্রেমিকতার ভিত্তিতে, দূর দৃষ্টিকোন থেকে বিচার বিশ্লেষণ সাপেক্ষে, প্রকৃতির নিয়ম ও পরিবেশ রক্ষাকে প্রাধান্য দিতেন এবং আপামর মানুষের স্বার্থে ও দেশের লাভ-ক্ষতিসহ সার্বিক দিক ও যৌক্তিকতার আলোকে, শুষ্ক মৌসুুমে কাজের জন্য পরিকল্পনা গ্রহন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেন, তবে প্রতি বছরই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হতো না। অর্থ ও সময়ের অপচয় হতো না।
অপরদিকে আন্তর্জাতিকভাবে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত আইনী বিধি বিধানের প্রতি অবিচল থেকে ভূমিকা পালন বাঞ্ছনীয় ছিল। দেশাত্মবোধ থেকে জাতিসত্বাকে অক্ষুন্ন্ রেখে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিশেষত প্রতিবেশি ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে, কার্যকর চুক্তি সম্পাদন করলেও এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। বরং সম্প্রসারণবাদী চরিত্রের ভারতের কাছে অর্থাৎ বৃহৎ ভারতের জন্য সেভেন সিস্টার খ্যাত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও মিজোরাম এবং ভৌগলিক কারণে অরুণাচল রাজ্য সমূহকে দিল্লীর শাসনের অধিনে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে ভারতের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আবশ্যক। কেননা, তাদের প্রতিবেশী দেশ চীনের সাথে নিয়মমাফিক রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক এবং ভারতে চীনের বাজার থাকলেও চীনকে তারা প্রতিপক্ষ বিবেচনায় রাখে। এই যৌক্তিক বাস্তবতায় ১৯৯৬ সালে ভারতের ফারাক্কা বাঁধ ঘিরে বাংলাদেশের সম্পাদিত চুক্তি কার্যকর হতো এবং অন্যান্য নদ-নদীর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা দিতে চুক্তিবদ্ধ হতো। ফারাক্কার বাঁধের ক্ষেত্রে চুক্তি কার্যকর না করলেও অন্যান্য নদীর ক্ষেত্রে তা করতো বলে ধরে নিতে পারি। তাতে কিছু না কিছু লাভ হতো।
সে ক্ষেত্রে তেপ্পান্ন বছরের শাসকরা কোনোটাই তেমন কার্যকর করতে পারেনি। বরং স্বাধীনতাত্তর আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ এবং বাঁধটির কার্যকারিতা পরীক্ষার নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনুমতি নিয়ে তা কার্যকর করে। এবং পরবর্তীতে ভারতের অনুগত শেখ হাসিনা সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্তার্জিত বিষয়টি উপেক্ষা করে শুধু রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার শর্তে, এতে সেভেন সিস্টারের রাজ্যবাসীর জন্মগত স্বাধীনতার অধিকারকে (যদি কোনো রাজ্য চায়) পিষ্ট করে, তাদের দিল্লীর শাসনের যাঁতাকলে আবদ্ধ রেখে প্রাকৃতিক সম্পদ দিল্লীর অবাধ ব্যবহারের পথ নিশ্চিত করে দেয়। যা জনস্বার্থের পরিপন্থী এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্যও হুমকি। পাঠকদের সাথে মত বিনিময় ও অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়ে বন্যা নিয়েও কিছু কথা হয়েই গেল। মূল লেখায় ফেরার আগেই প্রাপ্ত খবর মতে আবারো পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে।
আকস্মিক এই বন্যায় ও বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ৯ জনের প্রাণহানিসহ ব্যাপক এলাকা তলিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। অপর খবরে প্রকাশ, কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর ভাঙ্গনে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আবহাওয়া দপ্তরের খবর মতে বৃষ্টি কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তাহলে আরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থা বন্যার্তদের রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিবে বলে আশা করছি।
এবার সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার উত্তরাঞ্চলের, বীর শহীদ আবু সাঈদের রংপুর বিভাগের তিস্তা কেন্দ্রিক বন্যা ও ভাঙ্গন বিষয়ক কথায় ফিরে আসি। তিস্তাকে ঘিরে চতুর্থবারের এই বন্যা ও নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনও যেন স্বাক্ষ্য দিচ্ছে বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার উত্তরজনপদ। তিস্তাকে ঘিরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বন্যা-ভাঙ্গন নিয়ে লেখার এ মূহুর্তে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও বন্যার পানি কমছে। তবে রংপুর অঞ্চলের মানুষের দুঃখগাথা তিস্তার অব্যাহত ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিস্তা অববাহিকার মানুষ। এখনও প্লাবিত জেলাগুলোর অনেক জায়গা জলাবদ্ধ।
প্রথমেই বলেছি দুঃখে কথা আসে। তেমনি দুঃখেই বলতে হয়, সরকার না জানলেও, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত-প্রকাশিত খবরাখবর থেকে দেশবাসী জেনেছেন- অতিবর্ষণ ও উজান হতে আসা ঢলে তিস্তা নদীর অববাহিকার রংপুর, নিলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ঘরবাড়ী, সরকারি-বেসরকারি সম্পদ, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট-হাট বাজারসহ নানা অবকাঠামো তিস্তার গর্ভে বিলীন হচ্ছে। ফসল উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
দারিদ্রতা হ্রাস পাওয়ার পরিবর্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া দুর্গত এলাকাগুলোতে ডায়েরিয়াসহ পানিবাহী রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। এসব কারণে বন্যা আক্রান্ত ও ভাঙন কবলিত অঞ্চল সমূহে মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। তদসত্বেও দুর্ভাগা মানুষ এখনও প্রয়োজনীয় সহায়তা পাননি। শুধু কি তাই? না, দৈনিক সমকালে কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বক্তব্য উদ্বৃত করে পরিবেশিত এক খবর মতে- তিনি বলেছেন, বরাদ্দ না থাকায় শুধু সরকারি স্থাপনা ব্যতিত অন্য কোন ভাঙনের ক্ষেত্রে কিছু করণীয় নেই। এক্ষেত্রে আবারো শুরুর কথায় ফিরে যেতে হয়।
শুরুতে বলা হয়েছে, বাস্তবতা কথা বলায়। সেই কথা বলতেই বাস্তবতা বলছে, দেশবাসীর কাম্য না হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগদান ও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ বিশে^ সারা ফেলেছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘসহ সবাই যেন সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন দেশকে এগিয়ে নেয়ার। এতে এ সরকারও পূর্বসূরীদের মত বৈষম্যবাদী হবেন কি-না? নাকি পতিত স্বৈরাচারের প্রধানমন্ত্রীসহ প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই যেমন ত্রাণ সহায়তার দাবি জানালে বা ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করলে, শুনতে হতোÑ এরা গরীব গরীব বলতে বলতে এদের নজরই গরীব হয়ে গেছে। এমন মন্তব্যের সাথে একমত হয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ করবেন, নাকি আমাদের এমন বর্ণনাকে এড়িয়ে যাবেন, জানিনা।
কথায় আছেÑ‘বিশ^াস করি বাকী দেই না’। এমনটা আশা করি না বরং বিশ^াস করি জনআকাঙ্খা পূরণে বিশ^াসকে অটুট রাখবেন। সেই সাথে বৈষম্যের শিকার অঞ্চলের একজন হিসেবে বলতে পারি-স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত যেমন হয়নি। তেমনি উপরোক্ত আলোচিত পন্থায় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হয়নি কারণে বলতে হচেছ বলেই বলছি। জীবন দিয়ে দেখা ও উপলব্ধি থেকে বলছি তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যুমনা ও ধরলাসহ উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর অববাহিকার মানুেষর জীবনে বন্যা ও ভাঙ্গন কোন নতুন ঘটনা নয়। তেমনি বন্যা ও ভাঙ্গনের মতো দুর্যোগের সাথে লড়াই করে জীবনপথ পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা নিয়েই তাঁরা চতুর্থবারের বন্যা ও ভাঙ্গনের মুখোমুখি।
এদিক থেকে বলা যেতে পারে, বন্যা ও ভাঙ্গনের মোকাবিলায় ‘কিছু সময়’ চলার সামর্থ্য অনেকের থাকে ও আছে। যাদের নেই তাদের বন্যা ও ভাঙ্গনজনিত দুর্যোগ শেষ হওয়াসহ আশ্রয়ের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সাহায্য-সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু সেই ‘কিছু সময়’ অতিক্রম করলেই দুর্যোগের শিকার হন কম-বেশি সবাই। তাই চিন্তা-ভাবনার অবকাশ নেই যে, বন্যা ও ভাঙ্গন কবলিত মানুষগুলো লোভী ও ত্রাণ নির্ভর। বরং তারা মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাসহ মানবাধিকার-ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গণতান্ত্রিক দেশ দেখতে চান।
অথচ ‘লক্ষ্য’ অর্জন করে শহীদের ঋণ শোধ করতে পারেনি ৫৩ বছরের শাসকরা। এখনও মানুষ বিশ^াস করে- মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের পাশাপাশি বৈষম্যহীন সমাজ করার অঘোষিত ছাত্র-গনআন্দোলনে শহীদের রক্তপথে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার সকল শহীদের রক্তঋণ শোধ করতে অর্পিত দায়িত্ব মতে সংষ্কার কাজ শেষ করবেন। যে সংষ্কার নিশ্চিত করবে বন্যা ও নদ-নদীর ভাঙ্গনরোধ।
পরিশেষে, তিস্তা পাড়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে দেশ বাঁচাও নদী বাঁচাও এর মতই তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের দাবী মতে তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ উত্থাপিত ছয় দফার সাথেও একাত্মতা প্রকাশ করছি। সেই সাথে উল্লেখ করছি খরা, বন্যা ও প্রতি বছরের উপার্যপুরি ভাঙনে তিস্তা অববাহিকার ২ কোটি মানুষের জীবনে মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় দিন দিন পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠেছে। দিন যত যাচ্ছে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন জটিলতার দিকে যাচ্ছে। তবে নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণের যে অর্থ লুটপাটের কাহিনী প্রকাশ পাচ্ছে তেমনটি কারই কাম্য নয় বলে মনে করছি।
শুধু তাই নয়, বৈদেশিক ঋণ ও সরাসরি বিদেশীদের বিনিয়োগকৃত অর্থে প্রকল্প চলমান, যা ‘মুক্তিযুদ্ধেরই’ কাম্য ছিল না। তা যেহেতু আছে, সেহেতু এবং বাস্তবতার তাগিদে ও শক্তিধর রাষ্ট্র সমূহের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। সেদিক থেকে নিজ অর্থে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে; চীন যেহেতু প্রকল্প যাচাই করেছে, সেদিক থেকে চীনের মাধ্যমে হলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
