গণপ্রহরী ডেস্ক: বাল্যবিবাহ নারীর জীবনের জন্য একটি বিরাট হুমকি। সাধারণত অপ্রাপ্ত বয়সে অর্থাৎ বিয়ের উপযুক্ত বয়সের আগে অনুষ্ঠিত বিয়েকে বাল্যবিবাহ বলে। বর্তমানে নারী উন্নয়ন অগ্রসর হলেও নারী উন্নয়নের জন্য যে প্রধান অন্তরায়গুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচেছ বাল্যবিবাহ।
নারীর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী অধিকার তথা স্বাধীনভাবে মুক্ত চিন্তা করার, প্রগতিবাদী চিন্তা করার ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। যা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নারীকে পিছিয়ে রাখে। বাল্যবিবাহের কারণেই নারীর ভবিষ্যতের অমিত সম্ভাবনা কুঁড়িতেই বিনষ্ট হয়ে যায়।
যে সময়টাতে মুক্ত পাখির মত উড়ে বেড়ানোর কথা, জীবন উপভোগ করার কথা, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারন করার কথা, স্বপ্ন বোনার কথা, মেধা বিকশিত করার কথা, সেই সময়ে পরাধীনতার শিকলে আটকে যেতে হয় নারীকে।
২২ ডিসেম্বর ২০২৪ নারীপক্ষ ও প্রথম আলো আয়োজিত ‘নারীর এগিয়ে চলা : বাধা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে নারী বিষয়ক সংষ্কার কমিশনের সদস্য হালিদা হানুম আখতার বলেন, বাল্যবিবাহ নারীর জীবনের জন্য একটি বিরাট হুমকি। ১৫ থেকে ১৯ বছরের ৪ জন কিশোরীর মধ্যে ১ জন গর্ভধারণ করছে। ১৭ শতাংশ কিশোরীর ১৫ বছরের কম বয়সে বিয়ে হচ্ছে। ১৫ বছরের কম বয়সী কিশোরীদের মধ্যে ১৫ জনের ১ জন মা হচ্ছে। এসব গর্ভধারণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৫ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী ৪৩ শতাংশ কিশোরী জীবনসঙ্গী দ্বারা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এর বাইরেও কিশোরীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এখনো দেশে মাতৃমৃত্যুর হার অনেক বেশি। গর্ভসংক্রান্ত জটিলতায় এখনো প্রতিদিন ১৪ জন নারী মারা যান।
২০১৬ সালের মাতৃমৃত্যু জরিপ অনুযায়ী, গর্ভসংক্রান্ত জটিলতার ১৩ শতাংশের মধ্যে ১ শতাংশ গর্ভপাত করতে গিয়ে মারা যেতেন। সেটা বেড়ে ৭ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ গর্ভপাতের ক্ষেত্রে নারীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০২৩ অনুযায়ী, ৪৩ শতাংশ নারী বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সন্তান প্রসব করছেন। আর ৫৩ শতাংশ নারী এখনো বাড়িতে সন্তান প্রসব করেন। এই ৫৩ শতাংশ ডেলিভারির মাত্র ৩ শতাংশ দক্ষ সেবাদানকারীর মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। অদক্ষ ধাত্রী দিয়ে ডেলিভারি করালে মাতৃমৃত্যু ও জটিলতা বাড়ে। আবার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে হওয়া ডেলিভারির মধ্যে সিজারিয়ান সেকশনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নারীর সিজারিয়ান সেকশন লাগে। সেখানে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৮০ শতাংশের বেশি সিজারিয়ান সেকশন হচ্ছে। তাই অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন বন্ধে কাজ করতে হবে।
নারীরা যেন ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। এইচপিভি টিকা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জরায়ু ক্যানসার কমিয়ে আনতে হবে। দায়িত্ব ও জবাবদিহির ওপর জোর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর অবদান এতটাই যে কোন জাতি তা অস্বীকার করতে পারবে না। কোন জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীকে সার্ভিকভাবে মূল্যায়ন অপরিহার্য। কেননা, সমাজ জীবনে রাষ্ট্রীয় জীবনে নারীর মূল্যায়ন যত বৃদ্ধি পাবে সমাজ ও রাষ্ট্র তত এগিয়ে যাবে। জাতি গঠনে নারী সমাজের দায়িত্ব পুরুষ সমাজের চেয়ে কম নয়।
নারীর এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে বাধাগুলো চিহ্নিত করে উত্তরণের উপায়গুলো যাতে কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে সেজন্য কঠোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। যেন পরাজিত সৈনিকের মতো নারীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে না ওঠে। বাল্যবিবাহ যেন নারীর জীবনকে কোনে অন্ধকার জগতে ঠেলে না দেয়। নারী যেন সর্বক্ষেত্রে তার মত, স্বাধীন চিন্তা প্রকাশের মধ্য দিয়ে অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে পারে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রকে তা গুরুত্বের সাথে কাজ করতে হবে।
