Sun. Jul 6th, 2025
বিএনপির রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎসই জনগণ- তারেক রহমানবিএনপির রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎসই জনগণ- তারেক রহমান

নিউজ ডেস্ক: বিএনপির রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎসই জনগণ। জনগণ সঙ্গে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের পরাভূত করতে পারবে না উল্লেখ করে নতুন করে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, অবশ্যই আজকের তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ। তরুণরা অতীত থেকে বেরিয়ে আসবে এবং নতুন পথ লিখবে। তবে প্রশ্নবিদ্ধ কোনো পথে নয়। পথটি অবশ্যই স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক হওয়া উচিত। তবে রাজনৈতিক দল গঠনের সময় কেউ রাষ্ট্রীয় বা প্রশাসনিক সহায়তা নিলে তা জনগণকে হতাশ করবে।

২৫ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে তিনি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শিক্ষকদের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট।

একটি নতুন দল গঠনের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, “দেশের তরুণরা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। এই সব তরুণ গত দেড় দশকে একটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেননি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত এই তরুণদের কেউ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলে বিএনপি অবশ্যই সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে, যদি কেউ রাজনৈতিক দল গঠনে রাষ্ট্র বা প্রশাসনিক সহায়তা নেন তবে তা জনগণকে হতাশ করবে। অথবা অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আচরণ বা বক্তব্য, মন্তব্য যদি ঝগড়া বা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়, তা হবে জনগণের কাছে অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্খিত হবে।

প্রচলিত পরিস্থিতিতে দেশের সমস্ত শ্রেণীর জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ” গণতন্ত্রের বিকাশ পুঁথিগত বিদ্যার উপর নির্ভর করে না। আমাদের ভিন্ন মত ও পথ থাকতে হবে। এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। আমাদের সকলের উদ্দেশ্য হ’ল একটি উদার গণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। ছাত্র অভ্যুত্থানে মাফিয়ার প্রধান দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর মাফিয়ামুক্ত বাংলাদেশর সামনে  বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ  প্রতিষ্ঠার অপার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের সবাইকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে যেন, ‘’পলাতক স্বৈরাচার ও দোসরদের ষড়যন্ত্র কিংবা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে অযাচিত ভুল-বোঝাবুঝির কারণে মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এবং সম্ভাবনা যাতে হুমকির সম্মুখীন না হয়”।

তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও গণতন্ত্রপন্থী শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও তর্ক-বিতর্ককে সময়ের অপচয় বলে মনে করি। তবে একই সাথে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনগণ যদি সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য ধরে মানতে পারে, মেনে নিতে পারে, তাহলে সরকারে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের ধৈর্য এবং সহনশীলতা আরও অনেক বেশি থাকা জরুরি বলে আমরা মনে করি।’

নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি সংস্কার ও নির্বাচন- দুইয়ের পক্ষেই। দুটোই খুব জরুরী। সংস্কার নাকি নির্বাচন—কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন নিয়ে কূট তর্ক করার অপচেষ্টা করেছে।’

পণ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি এবং ভ্যাট বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা যদি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখি, তাহলে কিন্তু সেটি আলাদা। এই মুহূর্তে দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সংসার পরিচালনা করা। একদিকে পণ্যদ্রব্যের দামবৃদ্ধি, অন্যদিকে ভ্যাটের বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। ফলে দেশের কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিক, স্বল্প আয়ের মানুষ, এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্তদেরও সংসার টেকানোই দায় হয়ে পড়েছে অনেক ক্ষেত্রে।

জনগণের দু:খ-দুর্দশা আর দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে তারকে রহমান বরেন, “অনেক পরিবারে নীরব হাহাকার চলছে। জনগণের প্রতিদিনের দুর্ভোগ কীভাবে হ্রাস করা যায়, কীভাবে বাজারের সিন্ডিকেটগুলি ভেঙে দেওয়া যায় এবং দামগুলি জনগণের নাগালের মধ্যে রাখা যায়, কীভাবে জনগণকে ফ্যাসিবাদী সময়ের মিথ্যা মামলাগুলি থেকে বাঁচাতে হয়, কীভাবে আইন ও শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেশি করে সক্রিয় করা যায়, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় এই বিষয়গুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি।’

বাজারের সিন্ডিকেটগুলি ভাঙতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জনগণ মনে করেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে মানুষকে বাজার সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত করা সহজ। সুতরাং প্রশ্নটি হল কেন এত দিনেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ? ভ্যাট কেন জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এমন পরিস্থিতিতে, জনগণের মনে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক – সরকারের কেউ কেউ কি অন্য কোনও ইস্যুতে বেশি মনোনিবেশ করে, নাকি সরকার পারছে না? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, আমরা মনে করি যে এই সরকারকে কোনওভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না. ‘

দলের অবস্থান তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি মনে করে রাজনীতি জনগণের নয়, জনগণের জন্য রাজনীতি। এ কারণে বিএনপি যেকোনো মূল্যে দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চায়। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার কার্যকর হাতিয়ার হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচন কর্মসূচী নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা মানে অজান্তেই পরাজিত পলাতক ফ্যাসিবাদীদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।

দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সজাগ থাকতে হবে যেন আপনাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে কেউ যাতে কোনো রকমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি বা বিতর্কের সুযোগ না পায়। বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ। জনগণ সঙ্গে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের পরাভূত করতে পারবে না।’

আরও পড়ুন

জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধতার বিকল্প নেই- তারেক রহমান

দেশ গড়তে হবে জনসমর্থনের ভিত্তিতেই- তারেক রহমান

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা দায়বদ্ধ: তারেক রহমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *