গণপ্রহরী রিপোর্ট : বিধ্বস্ত বিমান দুর্ঘটনায় শোকাচ্ছন্ন দেশ। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া রাজধানী উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় আহাজারি আর আপসোসে ভাসলো দেশ। ২১ জুলাই সোমবার দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার দুর্ঘটনায় সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে নিষ্পাপ শিশুদের মুত্যুর মর্মান্তিক দুর্ঘটনাই আহাজারি-আপসোস দেশব্যাপী মানুষের। স্বজনদের আহাজারি এবং দেশবাসীর আপসোস-দীর্ঘশ্বাসই যেন জানান দিচ্ছে- মৃত্যুপুরীতে পরিণত মাইলস্টোন স্কুলের বিমান দুর্ঘটনায় শোকের মাতমে ভাসলো দেশ।
ভয়াবহ-মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের উর্ধ্বগতির অগ্নিশিখায় কত প্রতিভা বাতাসে ভেসে গেছে, কত প্রতিভা অঙ্গারে পরিণত হয়ে নিশ্চিহ্ন-নিরুদ্দেশ হয়েছে তা বলা যাবে না। আগুণে পোড়ার অসহনীয় যন্ত্রণায় কত প্রতিভা লোপ পেয়েছে ও পাচ্ছে, কতজনে স্মৃতি হারিয়েছে ও হারাবে তা বলা না গেলেও উদ্ধারের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আগুনে পোড়ার অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ও মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন এ কথাটুকু বলা যায়। আর বলা যায়, সর্বশেষ খবর মতে নিহত ৩১ তন্মধ্যে শিশু ২৯ এবং অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন ১৬৫ জন।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিকের নিষ্পাপ শিশুদের শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ ছুটি হবে হবে এমন সময়ে দুর্ঘটনার শিকার প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে আছড়ে পড়ে প্রাথমিকের ক্লাস চলা ভবনটিতে। ছুটি হলেই শুরু হতো কচিকাচার হৈ হুল্লুর আর হাসির প্রতিধ্বনি কানে বাজতো। সেটুকু সময় দেয়নি দুর্ঘটনা। মুহুর্তেই ১৮ নিষ্পাপ শিশুসহ ২০ জনের বেশি জীবন প্রদীপ নিভে যায়। ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী আহাজারি-আপসোস-দীর্ঘশ্বাস। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অগ্নিদগ্ধদের কতজনের না প্রাণ যায়।
এমন হৃদয়বিদারক ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ মহিয়সী নারী শিক্ষক, নীলফামারীর জলঢাকার গর্বিত নারী মাহেরীন চৌধুরী দেহে প্রাণ থাকা পর্যন্ত সময়ে মমত্ববোধ আর মানবিকতায় স্বাক্ষর রেখে গেলেন ২০ জন শিক্ষার্থীর জীবন রক্ষায় কক্ষ থেকে বের করে দিতে পারলেও নিজের প্রাণ প্রদীপ নিভে যায়। অপরদিকে, রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান দুর্ঘটনা কবলিত বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম প্যারাসুটের সাহায্যে নিজের জীবন রক্ষা না করে বিমানটিকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি অবিচল থাকার স্বাক্ষ্য রেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এদিকে ‘কারও পৌষমাস কারও সর্বনাশ’ প্রবাদের মতই দেশ বিরোধী-গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারেরও চেষ্টা করছে। তবে কিছু যৌক্তিক প্রশ্নও উত্থাপিত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে। তন্মধ্যে জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমানের দুূর্ঘনা মাইলস্টোন স্কুলেই প্রথম। তারপও প্রশ্ন হচ্ছে বিমান চলাচলের পথে কেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং কেনইবা জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান ইত্যাদি। এমন প্রশ্নমালার পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য।
বিমান বিধ্বস্তের দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণকারীদের প্রতি গভীর শোক ও আহতদের দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গণপ্রহরী পরিবারের সমবেদনা রইল।
আরও পড়ুন- শহীদি আত্মাদের যেন ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে (!)
