Thu. Jul 10th, 2025
বিশ্ববাসী ৪০ হাজার শিশুর কান্নার জবাব দিবেন কিগাজায় যুদ্ধবিদ্ধস্ত শিশু

বিশ্ববাসী ৪০ হাজার শিশুর কান্নার জবাব দিবেন কি? কেননা, শিশুরাই বিশ্বের ভবিষ্যত। ইসরাইলি বর্বরতায় গণহত্যার সাথে শিশু হত্যার ঘটনা শিশুদেরকে বিশ্বের ভবিষ্যত মনে করে না। আমরা যদি ফিলিস্তিনের গাজার দিকে তাকাই তাহলে কি দেখি? আমরা দেখি, ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত’-এই বাস্তব সত্য প্রবাদ বাক্যটি যেন গাজার ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে। পুরো বিশ্ব যেন গাজার ধ্বংসস্তুপের কাছে শক্তিহীন হয়ে পড়েছে। চাপা পড়া প্রবাদ বাক্যটি তুলে আনার ক্ষমতা যেন বিশ্বের নেই। বিশ্ব শক্তির কানে শিশুর চিৎকার পৌঁছায় না, বিশ্ব চোখ শিশুদের রক্ত দেখে না, দেখে না তাদের নির্মম করুণ দুরাবস্থা। তাহেল কি ইসরায়েলের ছোড়া বোমা বর্ষণের শব্দ আর কালো ধোয়ার কাছে বিশ্ব শক্তির কান ও চোখ চিরস্থায়ী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

ইসরায়েলের চরম বর্বরতার কারণে ফিলিস্তিনি ৪০ হাজার শিশু মা-বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে তাকিয়ে আছে বিশ্ব শক্তির দিকে। অথচ বিশ্ব শক্তি যেন পাত্তাই দিচ্ছে না শিশুদের নিষ্পাপ কোমল অশ্রুসিক্ত চোখের চাহুনি, চিৎকার, আর্তনাদ, কান্না আর আহাজারিকে।

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অর্ধ লক্ষাধিকেরও বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন যার মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু, আহত হয়েছেন সোয়া লক্ষাধিকেরও বেশি এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি।

গাজার ভবিষ্যত প্রজন্মকে রুখে দেওয়ার জন্য ইসরায়িলি বর্বরতা কেড়ে নিয়েছে ১৭ হাজারেরও বেশি শিশুর প্রাণ আর ৪০ হাজার শিশুর জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে মা-বাবা দুজনকেই।

ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো ৫ এপ্রিল ফিলিস্তিনি শিশু দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরাইলি গণহত্যার ৫৩৪ দিনের মধ্যে গাজায় প্রায় ৩৯ হাজার ৩৮৪ শিশু বাবা-মাকে হারিয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, গাজা উপত্যকা আধুনিক ইতিহাসের বৃহত্তম অনাথ সংকটে ভুগছে। এখানকার শিশুরা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার। ছেঁড়া তাঁবু ও ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে অমানবিক জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। অযত্ন আর মানবিক সহায়তার অভাবে কোনোরকমে বেঁচে আছে এসব শিশু।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, গাজায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ১৭ হাজার ৯৫৪ শিশু নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ২৭৪ জন নবজাতক এবং ৮৭৬ জন এক বছরের কম বয়সি রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে তীব্র শীতে মারা গেছে ১৭ শিশু। আরো ৫২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে অনাহার এবং অপুষ্টিতে। ইসরাইলের অবরোধের কারণে গাজায় কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে মৃত্যুঝুঁকিতে আছে ৬০ হাজার শিশু। গাজা এবং পশ্চিম তীরের ৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ফিলিস্তিনির প্রায় ৪৩ শতাংশ ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু।

‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত’ এই প্রবাদটি বিশ্ব শক্তিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্যের সাথে মনে রাখতে হবে। নয়তো প্রকৃতির অভিশাপে পুরো বিশ্ব থেকে সব শিশু নাই হয়ে যাবে আর কোন শিশুর মুখ দেখবে না বিশ্ব। বিশ্ব শক্তি গাজার ধ্বংসস্তুপের মতই আবর্জনার ভাগাড় হয়ে থাকবে।

তাহলে পুরো বিশ্ব কি নিষ্প্রাণ হয়ে যাবে? নিশ্চয়ই তা কেউ মেনে নিবেন না। এই সত্যকে না মানলেও যুদ্ধাবাজদের সাথে একাত্ম হয়ে বলতে চেষ্টা করবেন-‘আমরা শিশু ছিলাম না, আমরা বৃদ্ধ হব না এবং আমাদের মৃত্যু নেই’। এই বিশ্লেষনকে অস্বীকার করাও বিবেকহীনতা, মনুষত্যহীনতা, মৃত্যুকে অস্বীকার করা, যার প্রতিটি শব্দই বিবেকবান কেউই অস্বীকার করবেন না। বরং তা হবে বিবেকহীনদের দিবা স্বপ্ন। আর যদি দিবা স্বপ্ন না ভাবেন; তবে শিশুদেরসহ ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় প্রতিবাদ প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হোন, সোচ্চার হন। সেই সাথে মানবিক কারণে এতিম ৪০ হাজার শিশুর দায়িত্ব গ্রহণ করুন।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশ থেকেই আওয়াজ তুলতে হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *