গণপ্রহরী ডেস্ক : বিশ্বব্যবস্থায় বিনিয়োগের বিকল্প নেই। চলমান সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় বিশ্বের সাথে সাথে এগিয়ে চলতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। কেননা, দেশের আপামর বীর জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহনে এবং তাঁদেরই দামাল সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন-মরন মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্ত ও মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ভৌগলিকভাবে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে ৫৪ বছরেও শোষণ-বঞ্চনা ও কালাকানুনের শাসনের হাত থেকে মানুষ মুক্তি পাননি। এমনকি মৌলিক অধিকারসহ মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত মানুষ। একাত্তরেও দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৩ জন ভূমিহীন-গরীব-কৃষকসহ ৮৫ জন ছিলেন কৃষক এবং দেশ ছিল কৃষি প্রধান।
এ দীর্ঘ সময়ে কৃষি জমি কমতে কমতে, অধিক ফসল উৎপাদনের সময়কালেও খাদ্যসামগ্রী আমাদনি করতে হয় কর্মহীন মানুষের দু:খ কষ্টের সীমা নেই। সর্বক্ষেত্রে অস্থিরতা, হতাশা। এতে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে, আকাশ-পাতাল বৈষম্যের সমাজ জেঁকে বসেছে। তাই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ চলমান বিশ্বব্যবস্থায় বিশ্বের সাথে এগিয়ে চলতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসার আহ্বান জানান।
গত ৯ এপ্রিল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫- এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস এ আহ্বান জানান। তিনি উৎসাহব্যঞ্জক এ ভাষণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, বিশ্বকে বদলে দেওয়ার মতো অভিনব সব ধারণা রয়েছে বাংলাদেশের। এসব ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। কীভাবে মানুষ ব্যবসার মাধ্যমে সুখী হয়, এর বর্ণনা করে তিনি বলেন, টাকা উপার্জন করে মানুষ নিঃসন্দেহে আনন্দ পায়; কিন্তু অন্যকে সুখী করার মধ্যে নিহিত আছে অতিরিক্ত আনন্দ।
দেশের বাস্তবতা বলছে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন মন্দাভাব বিরাজ করায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। এ কারণে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের সামাজিক অস্থিরতা। গতি পাচ্ছে না দারিদ্র্য বিমোচনের কার্যক্রম। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, চাঁদাবাজি, মাস্তানিসহ সব ধরনের হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অবস্থার পরিবর্তন হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকার দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ; রেল, সড়ক ও নৌপথের যথাযথ উন্নয়ন এবং সমুদ্রবন্দরগুলোয় যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা বন্ধসহ দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হলে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা এদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন আসবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনুসের প্রত্যাশা-‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য তিনি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেবেন’।
প্রত্যাশার পাশাপাশি ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে। কারণ ব্যর্থতা ধূয়ে মুছে ফেলেই নতুনভাবে দেশে গড়া যাবে। ব্যর্থতার মধ্যে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, নীতির ঘনঘন পরিবর্তন, সুশাসনের অভাব, আইনের জটিলতা, প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা, সমন্বয়ের অভাব ইত্যাদি কারণেও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়ে থাকে। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা গেলে এদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কারণ, এখানে রয়েছে জনসংখ্যাগত সুবিধা। এদেশে রয়েছে সাড়ে ১৭ কোটিরও বেশি মানুষ, যাদের বড় অংশ তরুণ ও কর্মক্ষম। বড় বাজার এবং সস্তা শ্রমশক্তি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় এদেশের সঙ্গে ভারত, চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের রয়েছে সহজ যোগাযোগব্যবস্থা। দেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল। সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ট্যাক্স হলিডে, রপ্তানি প্রণোদনা, শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানির সুবিধা ইত্যাদি প্রদান করে থাকে। দেশে শতাধিক ইপিজেড ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পর অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগ আকর্ষণে বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মূলত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব অপার সম্ভাবনারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, এখানে বিনিয়োগ করলে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো এ অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে।
পরিশেষে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কৃষিজমি ও খালবিল-নদীনালা উদ্ধারসহ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ন হওয়ার দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবং এই বিবেচনা সামনে রেখেই বিনিয়োগের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখা জাতীয় স্বার্থেই আবশ্যক।
বিনিয়োগের বিকল্প
আরও পড়ুন – ধনীদের হাতে প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পদ
