গণপ্রহরী ডেস্ক : ভয়াবহ ভূমিকম্পের আশঙ্কা : ভূমিকম্পনকালের সতর্কতা। ভূমিকম্প বর্তমানে একটি আতঙ্কের নাম। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ভূমিকম্প। তবে এর পূর্ভাবাস করা কঠিন। সম্প্রতি মিয়ানমারের ভূমিকম্পের ঘটনা সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। যদিও পৃথিবীর অতিত ইতিহাসে অনেক বড় বড় ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে আর তাতে অনেক মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে।
বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। কিন্তু ঝুঁকির দিকে থেকে রয়েছে অনেক উপরে। ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে যে পরিমান শক্তি জমা হয়ে আছে, আর সেই শক্তি যদি বের হয় তাহলে যে ভূমিকম্প হবে তার মাত্রা হতে পারে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার। এই ভূমিকম্পটা কবে হবে, কখন হবে তা বলা খুবই মুশকিল বা বলা যায় না। এটা সম্পূর্ণ প্রকৃতিগত বিষয়। তবে এটা হতে পারে আগামীকাল আবার হতে পারে আগামী ৫০ বছর পর।
গত ২৮ মার্চ মিয়ানমার ভয়াবহ ভুমিকম্পের শিকার হয়। প্রথমে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এবং ১২ মিনিট পরে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। যেন মরার ওপর খড়ার ঘাঁ। ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের এক মডেলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রমশ ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে উঠছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে ঘন ঘন মৃদু ভূমিকম্প হচ্ছে। ২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে ৯০ দিনে বাংলাদেশের আশপাশে মৃদু ও তীব্র মাত্রার ৫০টিরও বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। গত ১৫ বছরে ১৫০টির বেশি ছোট-বড় ভূমিকম্প হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস।
বিশ্বে ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের তালিকায় আছে ঢাকা। বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবুও কোনো সরকারই এ দুর্যোগে ক্ষতি কমাতে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।
গবেষণায় দেখা গেছে, মিয়ানমারের ভূমিকম্পের পর, ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ভূমিকম্পের ফলাফল অত্যন্ত বিপর্যয়কর হতে পারে। ঢাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে, বিশেষ করে যদি তা মধুপুর চ্যুতির মতো অঞ্চলে হয়, তবে শহরের ৪০ শতাংশ ভবনই ধসে পড়বে। এমনকি, ভূমিকম্পের মাত্রা যদি ৬.৯ হয়, তখন ঢাকায় ৮ লাখেরও বেশি ভবন ভেঙে পড়বে, আর মৃত্যু হতে পারে কমপক্ষে ২ লাখ ১০ হাজার মানুষের!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার ভূমিকম্প ঝুঁকি অত্যন্ত উচ্চ। এখানকার অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অল্প পরিমাণে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন এবং দুর্বল অবকাঠামো পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলবে। তুরস্ক-সিরিয়ার মতো ভূমিকম্পে, যেখানে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছিল, ঢাকায় এর চেয়েও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তুরস্কে অনেক ভবন ধসে পড়লেও পাশেই অনেক ভবন দাঁড়িয়ে ছিল। তার মানে, ওই ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয়ভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাঈয়্যাত মনে করছেন, ভূমিকম্পের বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে, বড় বড় স্থাপনাগুলোও নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়নি- ফলে এ অঞ্চলে ভূমিকম্প হলে বড় ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে। “স্ট্রাকচারগুলোকে যদি নিয়ম মেনে তৈরি করা হয় তাহলে ভূমিকম্পের ঝুঁকিটা কমে যায়। স্ট্রাকচারগুলোকে ভূমিকম্প সহনীয় করে তৈরি না করলে সমস্যা। নরমালি ভূমিকম্প হলে খোলা মাঠে থাকলে কিছুই হবে না। কিন্তু ভূমিকম্প হলে বিল্ডিংগুলো ভেঙে যায়, বড় বড় স্থাপনাগুলো ভেঙে যেতে পারে। ভূমিকম্প হলে অনেক সময় ফায়ার টর্নেডো হয়, ঢাকা শহরে এরকম ফায়ার টর্নেডো হলে ম্যাসাকার হয়ে যাবে। ভূমিকম্পে যা ক্ষতি হবে, তারচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে তখন। রাস্তাঘাট ছোট, জনবহুল শহর সবমিলিয়ে ভূমিকম্পের ঝুঁকি আছে।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ভূমিকম্পের সময় করণীয় নিয়ে একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সূত্রে করণীয়গুলো তুলে ধরা হলো:
- ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হবেন না।
- ভূকম্পনের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন।
- রান্নাঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে আসুন।
- বিম, কলাম ও পিলার ঘেঁষে আশ্রয় নিন।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে স্কুলব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।
- ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে খোলাস্থানে আশ্রয় নিন।
- গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল, মার্কেট ও সিনেমা হলে থাকলে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় কিংবা ধাক্কাধাক্কি না করে দুহাতে মাথা ঢেকে বসে পড়ুন।
- ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলাবালু শ্বাসনালিতে না ঢোকে।
- একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বের হয়ে খালি জায়গায় আশ্রয় নিন।
- ওপর তলায় থাকলে কম্পন বা ঝাঁকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে; তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে বা লিফট ব্যবহার করে নামা থেকে বিরত থাকুন।
- কম্পন বা ঝাঁকুনি থামলে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন এবং খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিন।গাড়িতে থাকলে পদচারী–সেতু, উড়ালসড়ক, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান।
- ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরে থাকুন।
- ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট, পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বাড়িতে রাখুন।
- বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করুন।
ভয়াবহ ভূমিকম্পের আশঙ্কা আছে বাংলাদেশে। ভয়াবহ ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাস্তবায়য়িত হতে পারে যেকোন সময়। তাই সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন- ঐতিহাসিক মুক্তাঞ্চল নিয়ে গঠিত সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার স্মরণে—
