নিজস্ব প্রতিবেদক : ভাবতে হবে বঞ্চিত অমূল্যায়িত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের। গণপ্রহরীর প্রধান সম্পাদক ডেস্কে আওয়ামীলীগের রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামীলীগের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রসঙ্গক্রমে অনেক কথাই বলেছেন। আজকের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেই বলেছেন, তিনি মনে করেন আওয়ামীলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী এখনও আছেন। যাঁরা দলের জন্য তাঁদের দীর্ঘ সময়ের ত্যাগ তিতিক্ষা ও অবদানের জন্য মূল্যায়িত হননি। বরং যোগ্য মর্যাদা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।
অথচ তাঁরা দলকে ভালবাসতেন এবং দেশকে ভালবাসতেন। এটাই তাদের জন্য হয়েছে কাল। যা কাল হয়েছে, সেটাই সঠিক। সেহেতু তাদের পালাতে হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও হয়নি। এবং হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এখনও তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। আর তাদের চোখের সামনে যারা ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতো নিজেদের ভাগ্য বদলিয়েছেন, তাদের পরিস্থিতি দেখছেন। এবং যাদের জন্য আওয়ামীলীগের আজকের পরিস্থিতি, তাদের কথায় হয়তো আর কর্ণপাত করবেন না। কেননা, শান্তনা তাঁদের তারা লুটাপাটের সাথে জড়িত নন-এটা প্রমাণিত। এখানে যে কথাটি ঘুরে ফিরে প্রশ্ন আসে তাহলো, বঞ্চিত ও অমূল্যায়িত নেতাকর্মীরা কিভাবে নেতাকর্মী বিবেচিত হন?
ভারতের নীল নকশায় বাংলাদেশকে অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করতে শেখ হাসিনাকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর তত্বাবধানে ও মগজ ধোলাই করেছেন। এমনিতে আশ্রয় দিয়ে কৃতজ্ঞ করেছে। অনেক সমালোচকের মতে রক্তের ধারায়, নেতৃত্বের প্রতি মোহগ্রস্থ ছিলেনই শেখ হাসিনা। যেখানে রাজনীতি বা নীতি আদর্শ প্রাধান্য ছিল না। যা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার ক্ষমতা লিপ্সারই স্বাক্ষ্য রেখে গেছেন। দলের নেতাকর্মীদের কথা ভেবে আগেই পদত্যাগ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিশ্চিত ছিলেন, তিনি যা করেছেন তাতে লাভবান হয়েছে তার পরিবার, মন্ত্রী-এমপি এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সুবিধা ভোগীরা। এটা জাতি যেমন মেনে নিবে না। তেমনি দলের ত্যাগী অসংখ্য নেতাকর্মীরাও তাঁদের অপকর্মের জন্য ঝুঁকি নিবে না। তাই শেষ চেষ্টা করেছেন।
এদিকে, রক্তার্জিত স্বাধীন দেশকে করেছে ভারতের অনুগত রাষ্ট্র। এটা বাংলাদেশের আন্দোলনকারী ছত্রজনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নিবে না। দেশবাসীতো ভারতীয় সামগ্রী বর্জনের মধ্য দিয়ে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেনই। তিনি তার কৃতকর্মের জন্য আত্মবিশ্বাস রাখতে পারেননি। দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দলের জন্য ত্যাগী অসংখ্য নেতাকর্মীদের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। কারণ, শেখ হাসিনা এবং তার তোষামদকারী-সুবিধাভোগীরা তাঁর উন্নয়নের জোয়ারে ভাসলেও। বিদেশে অর্থপাচার করে আবাস গড়ে তুললেও ত্যাগীদের জন্য কিছুই করেননি বলেই। যদি দেশের কলকারখানাগুলো চালু রাখতেন, আরও শিল্প কলকারখানা গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতেন মানুষের চিকিৎসার জন্য বড় বড় হাসপাতাল করে চিকিৎসা নিশ্চিত করতেন, তাহলে তাঁদের উপর নির্ভর করতে পারতেন। তাই সময় এখনই, ভাবতে হবে বঞ্চিত অমূল্যায়িত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের।
আবারো প্রধান সম্পাদকের ডেস্কের কথার ফিরে যেতে হয়। হাসিনা যখন প্রথম ক্ষমতায় আসেন, তখনও একটু সংখ্যা কম থাকলেও অসংখ্য নেতাকর্মী ছিলেন। যারা আওয়ামীলীগের বাইরে আর কোনো দল বা রাজনীতি নিয়ে ভাবেনও না। তাঁদের মধ্য এমনই নেতাকর্মী আছেন, যারা আওয়ামীলীগ বিরোধী রাজনীতির কথা উঠলেই বলে থাকেন, আওয়ামীলীগ করতে করতে জীবনটাই শেষ করলাম। এখন আর দল বদলিয়ে লাভ কি’ ইত্যাদি। জীবনের বেশী সময় তাদের বেশির ভাগই কোন সময় বাড়তি সুবিধা প্রত্যাশী ছিলেন না। কিন্তু তাঁরা শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত নেতাদের কাছে মূল্যায়িত হননি এবং কিঞ্চিৎ সম্মানও পাননি।
আজকে অমূল্যায়িত বঞ্চিত আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ভাবতে হবে- এবং প্রতিদিন যে লুটপাটের তথ্য বেরিয়ে আসছে তা নিজেদের বিবেক দিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। তাদের উপর ভিত্তি করেই শেখ হাসিনা ও তার পরিবার লুটপাট করে ক্ষান্ত হয়নি। মন্ত্রী-এমপিসহ নিজ নিজ এলাকার আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতারা কিভাবে নিজেদের ভাগ্য বদলিয়েছেন। এজন্য প্রত্যেকের চারদিকে তাকালেই বড় নেতারা কি কি দুর্নীতি করেছে তা জানার খুব প্রয়োজন হবে না। ‘হাড়ির একটা ভাত টিপলেই সব ভাতের খবর নিশ্চিত হওয়া যায়’।
কিন্তু এ দেশটার জন্য ও দলটার জন্য আপনাদের অবদান রয়েছে। রয়েছে আপনাদের ত্যাগ তিতিক্ষা। শেখ হাসিনা নিজে রাজকন্যা হয়ে রাজপ্রাসাদে থাকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে তার পিতা শেখ মুজিবকে জাতির পিতা বানাতে গিয়ে আজকে তার অতীত ভূমিকাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন। আলোচিত নেতাকর্মীরা অভিজ্ঞ ও সচেতন। সেহেতু যে প্রশ্নগুলো বেশির ভাগ মানুষের দীর্ঘকাল আলোচনায় আসেনি।
এখন স্পষ্ট ভাষায় পরস্পর পরস্পরকে বলছে শেখ মুজিব ৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যদি ঘোষণা করতেন, তাহলে ২৫ মার্চ কালো রাতের নির্ধারিত সময়ের আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য আলোচনা করেছেন কেন। মওলানা ভাসানী আলোচনায় নিষেধ করেছিলেন। পাকিস্তানের অধীনে ভোট করেছেন যারা। সেই সকল এমপিরা বাংলাদেশের সরকার গঠন করে কি করে? সেদিন কেন জাতীয় সরকার গঠন করা হয়নি। তারপরও সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র লিখে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়ে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর চেয়েছিলেন। তিনি তা দেননি। বরং বলেছেন, তোমরা কি আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বানাতে চাও’? তিনি শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর না করে বিদায় করেছেন তাদের। এমন অনেক বিষয়ই এখন আলোচনায় এসেছে। ’৬০ ও ’৭০ দশকের পত্রপত্রিকা ও বইপুস্তকেও অনেক তথ্য আছে, জানতেন মানুষ।
তাই আবারো বলতে হয়, ভাবতে হবে বঞ্চিত অমূল্যায়িত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের। নতুন করে ভাবতে হবে। কেন্দ্রিয় পর্যায়েও অনেক নেতাকর্মী অমূল্যায়িত হয়েছেন। তারাও নতুন করে ভাবছেন। গণমাধ্যমে তা প্রকাশ হচ্ছে। আপনারও দেখছেন, জানছেন এবং নিজেরাতো বোঝেনই। তবে সাবধান থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে, দেশের স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের সাথে একাত্ম থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ নানা ধর্ম-বর্ণ ও গোত্রের মানুষ একাত্ম হয়েই মুক্তিযুদ্ধ করেই বাংলাদেশ। আবার মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টনসহ সকলে মিলেই গণঅভ্যূত্থান, সেও রক্ত দিয়েই সফল করা হয়েছে। তাই দেশে যাতে স্বৈরশাসন ফিরে না আসে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয, সে বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে। সকলের বিশ্বাস রাখতে হবে- শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না।
