Sun. Jul 13th, 2025
ভারতকে অস্থিতিশীল করছে বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় চরিত্রভারতকে অস্থিতিশীল করছে বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় চরিত্র

গণপ্রহরী ডেস্ক : ভারতকে অস্থিতিশীল করছে বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় চরিত্র। অভিযোগ উত্থাপন বিজেপির। অভিযুক্ত ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী, একদল অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর (স্টেস ডিপার্টমেন্ট) ও সমান্তরাল রাষ্ট্র (ডিপ স্টেট)। ভারতকে অস্থিতিশীল করা বিষয়ক অভিযোগটি শুধু আমাদের সামনে নয়, বিশ্বের সামনে এনেছে অনলাইনে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্স’ পরিবেশিত একটি প্রতিবেদন। শিরোনাম গণপ্রহরীর। শিরোনাম কেন্দ্রিক ডেস্কের আলোচনার সারসংক্ষেপ বিষয়াদি নিয়েই আজকের এই লেখা।

ডেস্কের আলোচনায় একটি বক্তব্যকে সূত্র ধরে আলোচনা শুরু। সূত্রমতে, সকল ধর্মীয় দৃষ্টিতে ‘সত্য’, শুধু সত্যই নয়। ‘সত্য’ আল্লাহ প্রদত্ত, ভগবান প্রদত্ত, গড প্রদত্ত অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত হচ্ছে ‘সত্য’। বস্তুবাদী দৃষ্টিতে সত্য সত্যই। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে আড়াল করা যায় না। এমনকি সত্যকে পাথর চাপা দিয়ে রাখলেও, সত্য বেরিয়ে আসে ও আসবেই। আর সত্যকে মিথ্যা প্রমানের চেষ্টাকারির শাস্তি হবেই। অর্থাৎ মিথ্যার প্রায়শ্চিত্ত আছেই। এসব সত্যও বলছে ভারতকে অস্থিতিশীল করছে বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় চরিত্র।

রয়টার্স পরিবেশিত প্রতিবেদনটি বিজেপি উত্থাপিত অভিযোগকে বিস্ময়কর ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে। কারণ হিসেবে প্রতিবেদন সূত্রে, গণপ্রহরী ডেস্কের সহজ-সরল ব্যাখ্যা হচ্ছে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে দিল্লীকে অর্থাৎ ভারতকে বন্ধুত্ব ভিত্তিতে ওয়াশিংটন ব্যবহার করে। সে ভিত্তিতে এশিয়াসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায়, গত দুই দশক থেকে নয়াদিল্লী ওয়াশিংটনের মধ্যে শক্তিশালী কৌশলী ‘বন্ধুত্ব’ সম্পর্ক বিদ্যমান। সেহেতু মার্কিনের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ডিপ স্টেটের পক্ষ থেকে ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে মর্মে বিজেপির অভিযোগকে ‘বিস্ময়কর’ বলা হয়েছে।

এদিকে, রাষ্ট্রীয় চরিত্র উল্লেখ না করলেও বিজেপির উত্থাপিত অভিযোগ মতে রাহুলগান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও। সে মতে দলটি ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এ কাজে ওসিসিআরপি (অর্গানাইজড ক্রাইম রিপোর্টিং প্রজেক্ট)- এর আদানি গ্রুপ ও সরকারের সাথে ঘনিষ্টতা সম্পর্কিত একতরফাভাবে লেখা নিবন্ধনগুলো কংগ্রেসে ব্যবহার করছে। বিজেপির অভিযোগে মার্কিনের ডিপ স্টেট ভারতকে অস্থিতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লক্ষ্যবস্তু করে এই মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। যদিও স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাগত উন্নয়নে সহায়তা দিলেও সম্পাদকীয় বা অন্য কোনো বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয় না।

বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যকার পরস্পর বিরোধী বক্তব্য ভারতের অভ্যন্তরীন ব্যাপার হলেও রয়টার্স পরিবেশিত প্রতিবেদন অভ্যন্তরীন রাখেনি। এছাড়া বাস্তবতা বলছে, প্রতিবেশীর বাড়ীতে ঝগড়া হলে তার শব্দ কানেতো পড়বেই। উপরন্ত, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার বাংলাদেশ বিরোধী মনোভাব নিয়ে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চেষ্টা করছে। বিজেপিতো ইতিমধ্যে কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের হাইকমিশনের অফিসে হামলা করেছে এবং বাংলাদেশের পতাকা অবমাননা করেছে। প্রতিবেশীর বাড়ীতে আগুন জ¦ালালে নিজের বাড়ীতেতো সেই আগুনের আঁচ লাগবে এবং এক পর্যায় সেই আগুনেইতো নিজের বাড়ী ভষ্মের কারণ হতে পারে। তেমনি ভারতের প্রজ্জলিত আগুনের ফুলকি উড়ে গিয়ে আগুনতো ভারতে লাগতেই পারে। এটাই বাস্তবতা।

যদিও রাজনীতির হিসাব হিসাব-নিকাশ ও কূটনৈতিক বিশ্লেষণে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলকে চীনের প্রভাবমুক্ত রাখতে দিল্লি, ওয়াশিংটনের কৌশলী ফাঁদে পা দিলেও এবং তাতে ভারত ও মার্কিনের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে বটে। কিন্তু ভারত নিজেকে সাম্রাজ্যবাদ হিসেবে প্রকাশ ঘটাক তা, ওয়াশিংটনের কাম্য নয়। এছাড়া রাষ্ট্রীয় চরিত্রের দিক থেকে সাম্রাজ্যবাদের পথে হাটা সম্প্রসারণবাদী ভারত। সেই ভারত সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত সামন্তবাদ-আমলা-মুৎসদ্দি-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে ভারতের জনগণ মুক্তি চান।

তবে, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ও অংশগ্রহনে পরিচালিত সাম্প্রদায়িক (মুসলমান হত্যা) দাঙ্গায় নিহতদের রক্তে রঞ্জিত হাত নিয়েই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি মুসলমানদের ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদের জায়গায় রামন্দির নির্মাণ করে, মুসলমান বিরোধী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করায় ভারতের সেভেন সিস্টার্স ‘খ্যাত’ সাত রাজ্যে শাসন শোষণ অব্যাহত রাখা নিশ্চিত ছিল। আজ তা নেই। সেহেতু  হিন্দু মৌলবাদী বিজেপিসহ অন্যান্য উগ্র-হন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বাংলাদেশ বিরোধী অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

অপরদিকে, ভারতের এহেন অপতৎপরতা শুধু বাংলাদেশকে নয়, কানাডা ও মার্কিনসহ গোটা বিশ্বকে ভারতের সাম্প্রদায়িক হিংস্রতা নিয়ে ভাবাচ্ছে। উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা সরকারের মতে, তার দেশে অবস্থানরত ভারতীয় প্রতিনিধিরা কানাডার নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। এমনটি হরদীপ সিং নিজ্জর নামের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারে প্রতিনিধিরা জড়িত মর্মে কানাডা সরকার নিশ্চিত হয়েছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ভারতের আদানি গ্রুপের অভিযোগ অভিযুক্ত করেছে। আদানি গ্রুপ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে কংগ্রেস যেহেতু অসাম্প্রদাযিকতার নীতির কথা বলে সেহেতু হয়তো কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদি বিরোধী ভূমিকায়।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *