- দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য
- আসন্ন নির্বাচন ঘিরে বিভক্তিরোধে দলীয় কর্মসূচি প্রচার
- হিংসা-বিদ্বেষ নয়, গণতান্ত্রিক সম্প্রীতি চাই
- সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশাশি রাজনৈতিক দল পক্ষেও সর্বদলীয় সভা সমাবেশ কাম্য
- দেশের অভ্যন্তরে আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের অপতৎপরতায় গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা মাথায় রাখতে হবে
ভাষ্যকার : ভারত পুষ্ট আওয়ামীলীগের সশস্ত্র অপতৎপরতা রুখে দিন। ঐতিহাসিকভাবে স্বীকার্য যে, অভ্যূত্থান বা গণঅভ্যূত্থান হলে পাল্টা অভ্যূত্থান হয় অথবা বিপ্লবের পর প্রতি বিপ্লব হয় বা হয়েছে কিংবা তার চেষ্টা হয়েছে। চব্বিশের রক্তার্জিত সফল গণঅভ্যূত্থান ছিল ব্যতিক্রম। গণরোষই যেন চিৎকার করে জানান দিচ্ছিল ক্ষণিকের মধ্যেই স্বৈরাচারের পতন নিশ্চিত। গণরোষের চিৎকার ঠিকই শেখ হাসিনা সরকারের প্রভূ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কানে পৌঁছে। তার তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাপে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সহায়তায় পালিয়ে ভারতে গিয়ে গণরোষ থেকে নিজেকে রক্ষা করেন।
কিন্তু না, ভারত চায় বাংলাদেশকে অনুগত রাষ্ট্র হিসেবে ব্যবহার করে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আওয়ামীলীগকেও পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে ভারতের ‘র’ এর তত্বাবধানে আওয়ামীলীগ ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ ও অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বার বার ব্যর্থও হচ্ছে। তারপরও ভারতের মদদে ও ভারতের মাটিতে বসে শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা মরিয়া হয়েই অপতৎপরতা চালাচ্ছে ও চালাবেও। ফলশ্রুতিতে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। জাতীয় পার্টিতো গৃহযুদ্ধ শব্দটাকে সামনে আনছে। জুলাই অভ্যূত্থানকে ব্যর্থ করতে গোপালগঞ্জের সূচনা থেকে দেশব্যাপী অস্থিরতা সৃষ্টির সেই অপতৎপরতা কেন তা আলোচনার দাবী রাখে। কেননা, এক্ষেত্রে জুলাই গণঅভ্যূত্থানসহ তাদের কাছে মুখ্য।
তবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জাতীয় ঐক্য যেমনি প্রয়োজন, তেমনি আসন্ন নির্বাচন ঘিরে দলীয় মতাদর্শগত বিভক্তিরোধে দলীয় কর্মসূচি নির্ভর প্রচার প্রবাগান্ডা চালাতে হবে। একইভাবে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলসমূহ পক্ষেও ভারতের মদদপুষ্ট আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের অপতৎপরতারোধে কোন প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ নয় গণতান্ত্রিক সম্প্রীতির স্বাক্ষ্য হিসেবে সর্বদলীয় সভাসমাবেশ করতে হবে। শত্রুকে ছোট না ভেবে এবং সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হলে, সতর্ক থাকতে বলতে হবে। ওরা বার বার ব্যর্থ হলেও গৃহযুদ্ধের আশঙ্কাসহ অপতৎপরতা অব্যাহত। আওয়াজ তুলতে হবে ও জাতির উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাতে হবে-‘ভারতের মদদেই আওয়ামীলীগের সশস্ত্র অপতৎপরতা রুখে দিন’। বাস্তবতার আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করা যাক শিরোনামে উল্লেখিত আহ্বান-‘বারংবার ব্যর্থ তারপরও ভারতের মদদেই আওয়ামীলীগের সশস্ত্র অপতৎপরতা রুখে দিন’। জাতীয় ঐক্যই সকল অপতৎপরতা রুখে দিতে সক্ষম। এ জন্য করণীয় নির্ধারণে আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে জুলাই অভ্যূত্থানকে ব্যর্থ করতে গোপালগঞ্জের সূচনা থেকে দেশব্যাপী অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতা বিষয়ক আলোচনা।
অনস্বীকার্য যে, জুলাই অভ্যূত্থান ব্যর্থ করতে অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারা চলছে দেশব্যাপী। যার সূচনা রক্তাক্ত গোপালগঞ্জ থেকে। রক্তার্জিত সফল জুলাই গণঅভ্যূত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বীর ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গত ১লা জুলাই অভ্যূত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গোপালগঞ্জে আয়োজিত পদযাত্রা ও সামবেশ বানচাল করতে, পতিত স্বৈরাচারের সশ্রস্ত্র ক্যাডারদের আক্রমণের মধ্য দিয়ে রক্তাক্ত হয় গোপালগঞ্জ। অর্থাৎ রক্তাক্ত জুলাইয়ে রক্তাক্ত গোপালগঞ্জ থেকে জুলাই গণঅভ্যূত্থানকে ব্যর্থ করতে, ভারতের মদদপুষ্ট আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের এক বছরকালের প্রস্তুতিরই বহি:প্রকাশ। দেশব্যাপী অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতা চলছে।
দেশব্যাপী অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতা বিষয়ক গোয়েন্দা তথ্যসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। সচেতন মহলে আলোচনাও শুরু হয়েছে। তাতে যেসব যুক্তিযুক্ত মতামত বেরিয়ে এসেছে তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরার মধ্য দিয়ে সরকার, অভ্যূত্থান সফলের মুল ভিত্তি ছাত্র-যুবজনতা ও নেতৃত্বদানকারী ছাত্র নেতৃত্ববৃন্দ এবং সফল আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরীর ভূমিকা পালনের আন্দোলনকারী রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংষ্কৃতিক-ব্যক্তি-গোষ্ঠি ও সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবিদের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এবং সম্মানিত পাঠকেরও সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই নাদান ভাষ্যকারের বিনীত আবেদনে একাধিকবার আলোচিত-‘জ্ঞানীর জন্য ইশারাই কাফি’- প্রবাদটিও পুনরায় উপস্থাপন করছি। সারসংক্ষেপ হিসেবে জুলাই অভ্যূত্থানের এক বছরকালের সময়ের চাওয়া পাওয়ার অভ্যূত্থান ব্যর্থ করার চেষ্টাই কি রক্তাক্ত জুলাইয়ের রক্তাক্ত গোপালগঞ্জ (?) তাহলে ফেব্রুয়ারি’২৬ মধ্যে সরকার ঘোষিত নির্বাচনের কি হবে? অভ্যূত্থান ব্যর্থ হলে তো অন্তর্বর্তী সরকার কি ব্যর্থ প্রমাণিত হবে কি হবে না (?) ইত্যাদি বিষয়ে অতি সংক্ষিপ্তভাবে হলেও আলেচনার দাবি রাখে। তাহলেই করণীয় বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি।
জুলাই অভ্যূত্থানের চাওয়া পাওয়া :
জুলাই অভ্যূত্থানে চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে পাঠককে নিকট অতীতের দিকে তাকাতে হবে। কারণ, রাজধানীর বিভিন্ন রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণে এই ভাষ্যকার যা দেখেছেন তার সাথে আপনাদের দেখা ও জানা বাস্তবতাকে মিলাতে হবে। সাদামাটা চোখে দেখেছিÑ ছাত্রছাত্রী, শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, নারী-পুরুষ, বেকার-কর্মহীন, দোকানি-গৃহকর্মী যেই হোক, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিলেন শ্রমজীবি-কর্মজীবি। শ্রেণীগতভাবে গরীব-সর্বহারা, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। তাঁদের প্রশ্নাকারের আলোচনা ও মতামত ভিত্তিতেই আজকের এই ভাষ্য। সেহেতু তাঁদের কথাবার্তার ধারাবহিকতায় লিখলে ভাষ্যটি তাঁদেরই কথার বহি:প্রকাশ বিবেচিত হবে। যেহেতু তাঁরাই ছিলেন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এবং তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি প্রধান বিবেচ্য।
কেননা, তাঁদের সবকথা বা আলোচনায় আক্ষেপ ছিল-তাঁদের বাপ-দাদা, কারো ক্ষেত্রে তাঁদেরও বাপ-দাদা শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন বুকে নিয়েই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধকে সফল করতে ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু ৫৩ বছরেও তা হয়নি। বরং স্বৈরাচারের জগদ্দল পাথরের চাপায় পিষ্ট হয়ে আসছিলেন। তারা বুঝেছিলেন-বৈষম্যবিরোধী সমাজ হবে, মৌলিক অধিকারসহ মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। এবং রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে তারাই জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত করবেন। তাই জীবন দিয়ে উপলব্ধি করা-‘বৈষম্যে’র নিষ্ঠুর ছোবল থেকে মুক্তির জন্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। এবং স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পেটোয়াবাহিনীর বন্দুকের নলের সামনে এগিয়ে চলতে গিয়ে, জীবন দিতে দ্বিধা করেননি। সেজন্যই তাদের দৃঢ় বক্তব্য-‘রক্তার্জিত সফল গণঅভ্যূত্থানের বৈষম্যমুক্ত সমাজসহ মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা কাম্য। এবং জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার হবে যা তারাই নির্বাচিত করবেন’। মূলত : এটাই তাদের চাওয়া-পাওয়া।
আমরা কি দেখলাম। এক জুলাই অভ্যূত্থানের বর্ষপূর্তির শেষ সময় পর্যন্ত বৈষম্যমুক্ত সমাজের আলোচনাই যেন শহীদের রক্ত সাগরে ভাসছে। যদিও কোটা সংষ্কার আন্দোলনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থ ছিল গৌণ। ‘বৈষম্য বিরোধী’ শব্দ দুটি তাঁদের যেন নিশ্চয়তা দিয়েছিল বৈষম্যমুক্ত সমাজের রাষ্ট্র ব্যবস্থার। তাইতো জুলাইর আন্দোলনে যখন রক্ত ঝরলো, আন্দোলন যেন লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে থাকলো। ভাবলাম আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে মণিষীদের অনেক উক্তি রয়েছে। তন্মধ্যে মহান লেনিন বলেছেন-‘এক পা আগে দু’পা পিছে’। এক্ষেত্রে আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়বে না-তো? ভাবনাটা শেষ না হতেই মুহুর্তেই মন থেকে যেন উধাও হলো। মাঠ তৈরী। শুধু প্রয়োজন ‘বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধা’র প্রবাদের মতো ‘অবলম্বন’। কারণ দীর্ঘ দিনের শোষণ নিপীড়নের ও বৈষম্যের শিকার মানুষের যা হবে অবলম্বন। সেটাই ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষেত্র তৈরীতে ঐক্যবদ্ধ থেকে জনআকাঙ্খা বৃদ্ধি করলেও চুড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দিতে পারেনি।
বরং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদের বা আহতের এক ফোটা রক্তে যেন শতফোঁটা রক্তদাতার-জীবনদাতার অংশগ্রহন আন্দোলনে। বাস্তবতা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছিল-শ্রমজীবি-কর্মজীবি, কর্মচারী-গৃহিনী, রিক্সাচালক, পথশিশু ও প্রবাসীদের ভীড় ঠেলে যেন এগিয়ে এলো সাংবাদিক-শিক্ষক, কবি-শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংষ্কৃতিককর্মী এবং স্বৈরাচার বিরোধী সামগ্রিক রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাঁরা শুধু দলে দলে অংশ নিলেন না; বরং একে অপরের অনুপ্রেরণা ও সাহসে পরিণত হলেন, মৃত্যুর মুখোমুখি অবস্থান নেয়া ও এগিয়ে চলার মধ্য দিয়ে। দেশব্যাপী শত-হাজারো উদাহরণ রয়েছে, দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতে উল্লেখও রয়েছে। তন্মধ্যে ভাষ্যের এ পর্যায়ে প্রবাসী জনপ্রিয় ইউটিবার লেখক পিনাকী ভট্টাচার্যের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ৫ আগস্ট’২৪ বাবা-মার উদ্দেশ্যে লেখা চানখারপুলে শহীদ হওয়া ১০ম শ্রেণীর ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস তার মাকে চিরকুটে লিখে গেছেন- ‘ মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই’।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বৈষম্যবিরোধী’ শব্দ দুটি এবং সাধারণ ছাত্র, সকল ছাত্র সংগঠন ও বিভিন্ন দল গোষ্ঠির মানুষের মধ্যেকার অভূতপূর্ব ঐক্য যেন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে। আকাশ-পাতাল সমতুল্য বৈষম্যের নিষ্ঠুর শিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবি-কর্মজীবি-গরীব-সর্বহারা বেকার ছাত্র-যুবজনতাকে যেন জোয়ারের পানির মতো সামিল করেছে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে। সে বিবেচনায় মনে রাখতে হবে- আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জেগে ওঠা অধিকার সচেতন মানুষকে এ কথা, সে কথা ও পাণ্ডিত্যচিত্ত শব্দ বলে ভোলানো যাবে না। সোজাসাপ্টা ও সহজ-সরল কথায় মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের পথে বৈষম্যমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার রাষ্ট্র করার বিষয়ে তাঁরা নিশ্চয়তা চান। রাজনৈতিক কৌশলী বা বিশ্বব্যবস্থাধীনে পরিচালিত পুরোনো রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের প্রত্যাশা পূরণের চালবাজি কর্মসূচি দিয়ে বা ধর্মের দোহাই দিয়ে উন্নয়ন ও কল্যাণের গালভরা বক্তব্যে মানুষ বিভ্রান্ত হবেন না। বরং মানুষকে ক্ষুব্ধ করবে।
বাংলাদেশকে ভারতের অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করা ভারত এবং আওয়ামীলীগ ও তার দোসররা তাদের দালাল আমলাদের পরিচালনায় রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম চালালেও নিশ্চিত হয়েছেন যে, তাদের কোন বক্তব্যই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তারা, দেশব্যাপী জুলাই অভ্যূত্থান ব্যর্থ করতে অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। যেহেতু তাদের সংবিধান ও তাদেরই নির্বাচিত আমলারা এখনও বহাল সে সবের ওপর ভিত্তি করে গৃহযুদ্ধেরও প্রস্তুতি হিসেবে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং মাঝে মাঝে মহড়াও দিচ্ছে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদেরকে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।
নিজেদের জীবন দিয়ে অর্জিত উপলব্ধিবোধ থেকে জন্ম নেয়া চেতনায় দেশের আপমর মানুষ ২৪-এর আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। এই বাস্তব সত্যটা সম্প্রসারণবাদী ভারত ও তার অনুগত শেখ হাসিনা বুঝতে পারেনি ও ভাবতেও পারেনি। সেহেতু রক্তের হলিখেলায় মেতে ওঠে শেখ হাসিনা। সরাসরি নিদের্শ-মিছিলে গুলির। মিছিল ছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কসহ দেশব্যাপী শহর-বন্দরে। শেখ হাসিনা রক্তস্রোত বয়ে দিয়েও ক্ষান্ত না হয়ে, উজানির মায়ের মতো নারী-শিশু ও ছাত্র-যুবজনতার রক্তস্রোতের উজান ঠেলে তাঁরই সৃষ্ট সংকটের সাগর পাড়ি দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। রক্তবন্যা বয়ে দেয়ার অস্ত্রধারীরা প্রকারন্তরে পরিচালিত হচ্ছিল ভারতের গোয়েন্দো-‘র’ এর তত্বাবধানে। এবং সেনাসদর ও গণভবনে অবস্থানরত ভারত ও শেখ হাসিনার একান্ত অনুগত-ঘনিষ্ঠ স্বজন-শুভাকাঙ্খী সুবিধাভোগী জেনারেল ও র্যাব-পুলিশ কর্মকর্তাসহ উর্ধ্বতন আমলা-কর্তাদের।
কিন্তু বিধিবাম। কেননা, রক্তস্রোত সৃষ্ট সংকটের সমুদ্রে তখন শুরু ভাটির টান। শেখ হাসিনার ক্ষমতার নদীতে সেই ভাটির এমন টান তাকে ভারতের কোলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। এবং তাও সম্ভব ভারতীয় বিমান বাহিনীর সৌজন্যে। উপরোক্ত বিষদ আলোচনাও যেন বলছে-‘তাতো হবেই’। ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিয়ে নিজের ও নিজের পরিবারসহ তার দলের ইতিহাস রচনায় ব্যস্থ থাকায়। যদিও জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের মতো মনিষীদের সতর্কতা অবলম্বনে শিক্ষনীয় শত হাজারো অমর বাণী ও উক্তি রয়েছে। যেমন জাতীয় কবি নজরুল তাঁর গানের কলিতে লিখেছেন- ‘চিরদিন কারো সমান নাহি যায়/আজ যে রাজা বিরাজ, কাল সে ভিক্ষা চায়’। তারও অনেক আগে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের তত্বের অন্যতম প্রবক্তা মহান কাল মার্কসের কালজয়ী উক্তিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে- ‘এটাই ইতিহাসের শিক্ষা যে কেউই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না’।
তবে হ্যাঁ, দেশের সাধারণ মানুষ ইতিহাস না পড়লেও জীবন দিয়ে যে শিক্ষা নিয়েছেন এবং সেই শিক্ষায় উপলব্ধিতে ও অনুভূতিতে যে চেতনার জন্ম দিয়েছে, সেই চেতনায় চব্বিশের জুলাইর গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং অতীতেও বার বার করেছেন ও ভবিষ্যতেও করবেন। ইতিহাস এও স্বাক্ষ্য দেয়-‘যতক্ষণ তাঁদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ হবেনা, ততদিন তারা অবিচল থাকবেন’। এভাবেই এগিয়ে চলার পথে তাদের দুটি হাত ছাড়া যেহেতু হারাবার কিছু নেই, সেই শ্রমিক শ্রেণী নেতৃত্ব নিয়ে নিবে এবং ব্যাপক জনগণকে সামিল করে তাদের উপর নির্ভর করেই বৈষম্যমুক্ত সমাজসহ মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে সকল শহীদদের আত্মত্যাগ স্বার্থক করবেন ও রাষ্ট্রের মালিকানা হাতে নিবেন- এটাও ইতিহাসের স্বাক্ষ্য। জনগণই হবে সকল ক্ষমতার উৎস ও রাষ্ট্রের মালিক। শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
গোপালগঞ্জের সূচনা কেন : ভাষ্যকার উপরোক্ত উল্লেখিত গোপালগঞ্জ থেকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতা আলোচনা আবশ্যক মনে করে পাঠকের সামনে গোপালগঞ্জ থেকে সূচনা কেন তুলে ধরছি।
কেননা, সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থাধীনে পরিচালিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শোষকের সাথে শোসিতের, শাসকের সাথে শাসিতের, ক্ষমতাধরের সাথে ক্ষমতাহীনদের ও মালিক পক্ষের সাথে শ্রমিকের এবং সাম্রাজ্যবাদের সাথে স্বাধীনতাকামী-মুক্তিকামী দেশ সমূহের বৈষম্য যেমন থাকবে, তেমনি প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য দ্বন্দ্ব থাকবে। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো আধিপত্য ও বাজার দখলে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্বের ফলশ্রুতিতে দেশে দেশে অস্থিরতা লাগিয়ে রাখবে এবং যুদ্ধ ও যুদ্ধাবস্থা থেকেই যাবে। বর্তমান যুগে বিশ্ব হাতের মুঠোয় থাকায় জনগণ অনেক অনেক বেশি সচেতন। সচেতন জনগণ সময় বুঝেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। সেই পদক্ষেপে জনগণ তাঁদের বিজয়ের ফসল ঘরে তুলবেন।
এক চিলতে পর্যালোচনা : জুলাই অভ্যূত্থান’২৪। এক বছর পেরিয়ে ফিরে এসে বিদায় নিয়েছে। এই বছরটিকে উত্থান-পতনের বলবো না, বলবো নানা ঘটনাবহুল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্যের ফলশ্রুতিতে, স্বৈরাচার পতনের ৫ আগস্টকে মিছিলের গগনবিদারী স্লোগান জানান দেয়- ৩৬ জুলাই অর্থাৎ রক্তার্জিত সফল জুলাই গণঅভ্যূত্থান। ইতিহাস বলুন আর অতীত বলুন স্বাক্ষ্য দিচ্ছে- অভ্যূত্থান পাল্টা অভ্যূত্থান বা প্রতিবিপ্লব হয়ে থাকে বা হতে পারে। সে কারণে অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘পাল্টা অভ্যূত্থান বা প্রতি বিপ্লব’ সামাল দিতে অথবা যাতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেজন্য পরিবর্তন পূর্বাবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধান স্থগিত রেখে ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সামরিক-বেসামরিক প্রধান প্রধান আমলাদের পরিবর্তন করে সাময়িক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এবং সংক্ষিপ্ত সময়ে সকল শ্রেণী পেশার মানুষে প্রতিনিধিদের সর্বসম্মতিতে জাতীয় সরকার (অথবা জাতীয় সরকার আগেই গঠন করে রাখা হয়) অথবা তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু দু:খজনক হলেও অতিত বা ইতিহাসের শিক্ষা থেকে ব্যবস্থা গৃহিত না হওয়ায় আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতায় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে সম্ভাবনাকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলছে রাজনেতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন কেন্দ্রিক স্ব স্ব দলের পরিকল্পনায় একের সাথে অপরের দূরত্ব তৈরী হচ্ছে। এনসিপি বৈষম্যের সমাজের পরিবর্তে মধ্যপন্থা অবলম্বন করায় বিশেষত বিএনপির মুখোমুখি পর্যায়ে, যা কারও কাম্য নয়।
ঘরের শত্রু বিভিশন জেনেও গণহত্যাকারী শত্রু ও তাদের দোসরদের ঘরে রেখেই পুরনো ব্যবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনা অব্যাহত থাকলে নির্বাচন বানচালের পথে হাটবে ভারত ও আওয়ামীলীগ এবং তাদের দোসররা। গৃহযুদ্ধ বাঁধতে কুণ্ঠা করবে না। কারণ, জুলাই অভ্যূত্থান ও অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে হারানো স্বর্গ ও রাজ্য ফিরে পাওয়ায়। যদিও এটা নিশ্চিত রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করে ঐক্যবদ্ধাভাবে সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে জনপ্রত্যাশা পূরণে নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে সুষ্ঠ নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হলেও ইতিহাস বলে জনগণ ব্যর্থ হবেন না। বরং বীর জনগণ রাজপথে নেমে আসবেন এবং আবারো জীবন দিয়ে দেশী বিদেশী সকল ষড়যন্ত্র পদদলিত করে জনগণের মালিকানাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র রক্ষা করবেন। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই বিশ্ব ইতিহাসে নতুন করে স্থান দখল করবেন।
পরিশেষে জুলাই গণঅভ্যূত্থানের শহীদদের আত্মত্যাগকে স্বার্থক করতে এবং আহতদের যন্ত্রণা লাঘব করতে রাজনৈতিক দলসমূহ ব্যক্তির উর্ধ্বে সংগঠন আর সংগঠেনের উর্ধ্বে দেশ- এই সত্যকে উর্ধ্বে তুলে ধরে বিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিভেদ-বিভ্রান্তি নয়, বাগাড়ম্বরি বক্তব্য বা পাণ্ডিত্য জাহিরের যুক্তিতর্ক নয়। দেশ, জাতি ও জনস্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে জাতীয় সরকার গঠনে ঐক্যবদ্ধ হোন। তবে এ ভাষ্যকারের বিশ্বাস, একের সাথে অপরের দূরুত্ব শুন্যের কোঠায় থাকলেই সরকার ঘোষিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা নির্ধারিত সময়েই সম্ভব। তবে অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ তৈরী হয়েছে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যকার দূরত্ব, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যূত্থানকে মুখোমুখি দাড় করানোর ষড়যন্ত্রকারীদের অপচেষ্টায়। এবং সরকারের কিছু ব্যর্থতা এবং ভারতসহ শক্তিধর রাষ্ট্রব্যবস্থার নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে ভূরাজনৈতিক কৌশলী তৎপরতায়। এ সবই সহজবোধ্য বাস্তবতা। তাই আন্দোলনকারী সকল দল ও গোষ্ঠিকে প্রমাণ করতে হবে সকলেই ঐক্যবদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধ জাতীয় শক্তিই তাদের পাথেয় ও জনআকাঙ্খা পূরণই তাদের লক্ষ্য।
আরও পড়ুন- ভারতের অর্থনীতি ধ্বংসে আমেরিকার শুল্কারোপই যথেষ্ট
ভারত, ভারত, ভারত, ভারত, ভারত, ভারত
