গণপ্রহরী ডেস্ক : ভারতে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা বৈষম্যের শিকার। ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী মুসলমান বিদ্বেষী সংগঠন সমূহের উপর নির্ভরশীল হিন্দু মৌলবাদী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার সম্প্রীতির দেশ হিসেবে পরীক্ষিত বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রমাণের ব্যর্থ অপচেষ্টা যখন বিশ্বের কাছে অবিশ্বাস্য হচ্ছে। তখন নিজে দেশে নিম্ববর্ণের হিন্দুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে মোদী সরকার নিষ্ঠুরতার বহি:প্রকাশ হিসেবে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। তারপরও উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার বার বার ব্যর্থ হচ্ছে- দমন অভিযানে।
ডেস্কে প্রাপ্ত বিভিন্ন সূত্রের খবর মতে, ভারতে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা বৈষম্যের শিকার ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার গারাপাড়ু গ্রামের কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে তেলেগু দেশম পার্টির মেদা রমনা নির্বাচিত হন। তার জয়ের পরপরই উঠে আসে এখানকার বৈষম্যের চিত্র। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই সরকারি সহায়তা থেকে তাদের অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে তার কাছে অভিযোগ জানান ।
দলিত, আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু- এমন প্রায় ৫০ গ্রামবাসী জানান, ২০২১ সাল থেকে ১০ হাজার রুপি থেকে ১ লাখ ২০ হাজার রুপি পরিমাণের বার্ষিক সহায়তা থেকে রাজ্য সরকার তাদের বঞ্চিত করে এসেছে।
প্রথম দৃষ্টিতে হয়তো মনে হতে পারে এটি অবচেতনভাবে তথ্য সংযোজনের ভুল। কিন্তু মেদা রমনা যখন বিষয়টি তদন্ত করলেন কাউন্সিলের স্টাফরা তাকে জানান, ‘বাইরে থেকে আসার’ কারণে তাদের সহায়তা কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারীরা বহু আগে থেকেই গারাপাড়ুতে বসবাস করছেন, কাউন্সিলে রমনা এমনটি জানালেও তাতে কোনো কাজ হয়নি ৷
এরপর তিনি উচ্চপর্যায়ে জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান। এর জেরে তারা গ্রামের কাউন্সিলের কর্মীদের এই নিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু কাউন্সিলের কর্মীরা এই নির্দেশ উপেক্ষা করেন। তখন মেদা রমনা এর মধ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের আভাস পান ৷
চলতি বছর মে মাসে অন্ধ্রপ্রদেশে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাজ্যের এই নির্বাচনে স্থানীয় দুই শক্তিশালী দল ক্ষমতাসীন ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টি ও বিরোধী তেলেগু দেশম পার্টির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। নির্বাচনে তেলেগু দেশম পার্টি জয়লাভ করে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা দায়িত্ব ছাড়ার আগে ভোটার তালিকার তথ্য ব্যবহার করে বিরোধীদলীয় সমর্থক দরিদ্রদের সরকারি সহায়তার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে যায় ৷
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, বিভিন্ন সময়েই এই অপচর্চা ‘দেশটির ক্ষমতাসীনরা করে এসেছে। জাতীয় পর্যায়ে বিজেপি ও আঞ্চলিক পর্যায়ে অন্যরা ভোটার তালিকায় নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার করে এসেছে।
অন্ধ্রপ্রদেশে সামাজিক সহায়তা সরবরাহ রাজনৈতিক সমর্থন জোগারের বড় এক হাতিয়ার। আগের ক্ষমতাসীন ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টি তাদের পাঁচ বছর মেয়াদে প্রায় ১২ কোটি ৭৪ লাখ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন রুপি সহায়তা দেয় ৷
বিভিন্ন গ্রাম কাউন্সিলে তারা বেতনভুক্ত ‘স্বেচ্ছাসেবক’ নিয়োগ করে যাতে অভাবগ্রস্ত নাগরিকদের দ্বোরগোড়ায় সরাসরি সহায়তা পৌঁছে যায় । প্রতি ৫০ বাড়ির জন্য একজনকে নিয়োগের মাধ্যমে রাজ্যে ২ লাখ ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়। প্রত্যেককে মাসে মাসে পাঁচ হাজার রুপি বেতন দেওয়া হয়। সরকার স্বেচ্ছাসেবকদের এমন ক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম সরবরাহ করে, যাতে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য তাদের হাতে থাকে। ভোটারদের তথ্য নিয়ে তারা সরকারি সহায়তা থেকে বিরোধী সমর্থক দরিদ্রদের বাদ দেওয়ার কৌশল হাতে নেয় ।
মেদা রমনা যখন গারাপাড়ু গ্রামের সামাজিক সহায়তাপ্রাপ্তদের তালিকায় নজর দেন, তিনি দেখেন তালিকা তৈরিতে একটি নির্দিষ্ট ধারা রক্ষা করা হয়েছে। সেখানে অন্যায়ভাবে বিরোধী সমর্থকদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
২০২২ সালের এপ্রিলে গারাপাড়ুর ২৭ নারী রাজ্যের হাইকোর্টে একটি মামলা করে। অভিযোগে বলা হয়, গ্রামের স্বেচ্ছাসেবকরা ও সরকারি কর্মকর্তারা রাজনৈতিক সমর্থনের বিবেচনায় তাদের বেআইনিভাবে সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত করেছে। আদালত তাদের দাবির যথার্থ প্রমাণ পাওয়ার পর সরকারের এই কাজকে ‘বেআইনি’ বলে মত দেয় ৷
