Sat. Jul 12th, 2025
ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছরভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর

গণপ্রহরী ডেস্ক : ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, ভোটের বয়স কমিয়ে ১৭ বছর করা উচিত। তবে প্রধান উপদেষ্টার এই অভিমতে রাজনৈতিক দলগুলো নারাজ। নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীও একই ধারণা পোষণ করে। জাতীয় নাগরিক কমিটি এ বিষয়ে তাদের অবস্থান জানায়নি।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। নাগরিক কমিটি প্রস্তাব করেছে যে শুধুমাত্র যোগ্য ভোটাররা প্রার্থী হতে পারেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ জন। প্রতিবেদনটিতে ১৭ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা আলাদা করে উল্লেখ নেই। তবে ১৭ বছর বয়সীদের গড় সংখ্যা ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৩০ জন।

গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটার ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৩৭ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। পাঁচ বছরে ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৫৬ জন। বার্ষিক ভোটার বৃদ্ধি ৩১ লাখের বেশি

বিবিএস ও নির্বাচন কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ করা হলে ৩০ লাখের বেশি মানুষ ভোট দেওয়ার যোগ্য হবে। প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দুই বছরে ৬০ লাখেরও বেশি তরুণ ভোটার তালিকায় যোগ হবেন। বয়স ১৭ বছর হলে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় এক কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হবে।

ভোটার হওয়ার বিষয় নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের নজির কি-

জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী যারা, তারা শিশু হিসেবে বিবেচিত। তাই, অধিকাংশ দেশে যেখানে নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু আছে, সেখানে ভোট দেওয়ার বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর। কিছু দেশে এটি 20 থেকে 25 বছর। কিন্তু ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় তা ১৬। আর্জেন্টিনায়, 15 বছর বয়সীরাও প্রার্থী নির্বাচনে ভোট দিতে পারে যদি নির্বাচনের সময় তাদের বয়স 16 বছর হয়।

যুক্তরাজ্যের চারটি দেশে ভোট দেওয়ার বয়স ১৮- ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েলস। তবে ১৬ বছর বয়সীরা স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের প্রাদেশিক এবং স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে। জার্মানিতে, একই বয়সের লোকেরা প্রাদেশিক এবং স্থানীয় নির্বাচনেও ভোট দিতে পারে।

গ্রিস, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর কোরিয়া, নেপাল, সুদান, পূর্ব তিমুরে ভোট দেওয়ার বয়স 17। বসনিয়া এবং সার্বিয়াতে, 16 বছর বয়সীরাও ভোট দিতে পারে যদি তারা কর্মজীবী হয়। কিউবা, ইকুয়েডর, মাল্টায় ভোট দেওয়ার বয়স ১৬।

কে কি বলছে?

শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনকে উৎখাতকারী ছাত্র অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই কিশোর-তরুণ। গুন্জুন রয়েছে যে অভ্যুত্থান ছাত্র নেতৃত্ব যে রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে তারা বয়স কমানোর সুবিধার অধীনে ভোট দিলে লাভবান হতে পারে। তবে ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। রোববার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অবস্থান ঘোষণা করা হতে পারে বলে সংগঠনটির সূত্র জানিয়েছে। সংগঠনটি প্রধান উপদেষ্টার মতামতকে সমর্থন করতে চায়।

গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ করতে হবে। আমি জানি না নির্বাচনী সংস্কার কমিশন কী সুপারিশ করবে। তবে দেশের বেশির ভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশকৃত বয়স পছন্দ করে, আমি ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য তা মেনে নেব।”

নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি গণমাধ্যমে বলেন, ভোটের বয়স কমানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা বা অন্য কারো কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাব এলে আলোচনা করা যেতে পারে। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোটের বয়স কমানোর চিন্তা নির্বাচন বিলম্বের জন্য কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ২৮ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এটা করতে গেলে আরও সময় লাগবে, আরও বিলম্ব হবে। জনগণের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে যে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন কী করা উচিত? নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। আমি মনে করি এটা ভালো হতো যদি আমরা অংশগ্রহণকারীদের সাথে কথা বলতে পারতাম এবং তারপরে বিষয়টি এভাবে না বলে বিষয়টি তুলে ধরতাম। এখন আরও বেশি মানুষ হতাশ হবে. ভোটের বয়সের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সরকারের প্রধান নির্বাহী। এক বছর কমাতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব দিতে হবে। যখন প্রধান উপদেষ্টা বলে দেন, নির্বাচন কমিশনের জন্য তখন চাপ সৃষ্টি হয়।

জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, ভোটের বয়স কমানোর চিন্তা অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করবে। এতে চলমান অস্থিরতা বাড়বে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু বলেননি। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গণমাধ্যমে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা শুধু তার মতামত দিয়েছেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিলে জামায়াত সাড়া দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *