Tue. Aug 19th, 2025
মাইলস্টোন ঘটনায় স্বজনদের অশ্রুঝড়া নিয়ে

আমাদের কথা

মাইলস্টোন ঘটনায় স্বজনদের অশ্রুঝড়া নিয়ে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে রক্তার্জিত বাংলাদেশের ৫৪ বছরের বাস্তবতা যেন বলছে- নিত্যদিনই রক্ত দেওয়া ও জীবন দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্বজনদের অশ্রু ঝড়ছেতো ঝড়ছেই। দূরদর্শী কবি যেন বুঝেই লিখে রেখেছেন-‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কিসে’। কিন্তু ২১ জুলাই সোমবার ক্ষণিকের মধ্যে ধ্বংস্তুপ-মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া মাইলস্টোন স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার দুর্ঘটনায় সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে, অজানা প্রতিভার শিশু শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার র্মমান্তিক হৃদয়বিদারক ঘটনায় আজও স্বজন হারানোদেরসহ দেশবাসীও বেদনার সাগরে ভাসছেন। আজকের নিয়মিত সম্পাদকীয় মতামতের আমাদের কথা লেখার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত সময়ে অনেক মতামত প্রকাশ পেয়েছে এবং নানা প্রশ্নও উত্থাপিত হয়েছে ও হচ্ছে। তদসত্ত্বেও সোজাসাপ্টা কথায় ‘দুর্ঘটনা’ দুর্ঘটনাই বলার মতো দায়িত্বহীন মন্তব্য অশোভন বিবেচিত হচ্ছে।

উপরন্ত শোক ও সমবেদনা জানানোর ভাষাও আমাদের ভাণ্ডারে নেই। এও জানি, সন্তান হারানোদের চোখের পানি ঝড়তেই থাকবে। আর আশঙ্কাজনকদের মায়ের বুক খালি হওয়ার আশঙ্কা ন্যাস্ত থাকছে অনাকাঙ্খিত নিয়তির মর্জির উপর। যদিও আমরা চাইনা আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক, চাইনা আর একটি প্রতিভাও হারিয়ে যাক বা জীবন প্রদীপ নিভে যাক।

আরও পড়ুন – ঐতিহাসিক মুক্তাঞ্চল নিয়ে গঠিত সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার স্মরণে—

ভয়াবহ-মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের উর্ধ্বগতির অগ্নিশিখায় কত প্রতিভা বাতাসে ভেসে গেছে, কত প্রতিভা অঙ্গারে পরিণত হয়ে নিশ্চিহ্ন-নিরুদ্দেশ হয়েছে তা বলা যাবে না। আগুণে পোড়ার অসহনীয় যন্ত্রণায় কত প্রতিভা লোপ পেয়েছে ও পাচ্ছে, কতজনে স্মৃতি হারিয়েছে ও হারাবে তা বলা না গেলেও উদ্ধারের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আগুনে পোড়ার অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ও মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন এ কথাটুকু বলা যায়।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিকের নিষ্পাপ শিশুদের শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ ছুটি হবে হবে এমন সময়ে দুর্ঘটনার শিকার প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে আছড়ে পড়ে প্রাথমিকের ক্লাস চলা ভবনটিতে। ছুটি হলেই শুরু হতো কচিকাচার হৈ হুল্লুর আর তাতে হাসির প্রতিধ্বনি কানে বাজতো। সেটুকু সময় দেয়নি দুর্ঘটনা। মুহুর্তেই ১৮ নিষ্পাপ শিশুসহ ২০ জনের বেশি জীবন প্রদীপ নিভে যায়। ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী আহাজারি-আপসোস-দীর্ঘশ্বাস। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অগ্নিদগ্ধদের কতজনের না প্রাণ যায়।

সরকার পরিচালনায় রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনায় ও বাস্তবায়ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা-দক্ষতার অভাবহেতু যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তন্মধ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা, শীর্ষ পর্যায়ের রাজনেতিক নেতৃবৃন্দ যখন কোন দুর্ঘটনাস্থলে যান তখন সাথে নিরাপত্তাকর্মীসহ দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থক, সাংবাদিক। এবং দুর্ঘটনার শিকার হতভাগ্যদের স্বজনদেরসহ উৎসুক-কৌতহলি বহিরাগতদের ভীড়ে দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজসহ হাসপাতালে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয় ও দ্রুত চিকিৎসার ক্ষেত্রে সময়ের অপচয় হয়। সকলের দায়িত্ববোধের ঘাটতি ও অসচেতনতায় চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটে। যা বিমান দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনায়, হতাহতদের উদ্ধারে ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অদক্ষতার প্রকাশ ঘটেছে। সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহকেই দুর্ঘটনাস্থল থেকে আক্রান্তদের উদ্ধার ও হাসপাতাল স্থানান্তরে এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কাজকে নিরাপদ ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা জেনে আসছি পোড়া রোগীদের সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকেহেতু বহিরাগতদের হাসপাতালে প্রবেশে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন এবং কঠোর বিধিনিষেধ থাকতে হবে স্বজনদের ক্ষেত্রেও। যাতে রোগীদের বাড়তি সমস্যায় পড়তে না হন বা সংক্রমিত না হন।

আরও পড়ুন – আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে আমাদের কথা

তবে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে যাতে কোনো ত্রুটি না হয় সেদিক বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকর উদ্যোগে দেশের সেরা চিকিৎসকদের অব্যাহত চিকিৎসার পাশাপাশি চীন, সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ বিদেশী চিকিৎসকদের যুক্ত করায় সচেতন মহল সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ উদ্যোগ সরকারের ইতিবাচক দিক ও আশাব্যঞ্জকও বটে। তবে চিকিৎসকদের মতে আগুণে পোড়া রোগীর চিকিৎসা বিষয়টি যেমনি জটিল ও তেমনি সময় সাপেক্ষও বটে। সেদিক থেকে সময়ের ব্যবধানে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে যেন ভাটা না পড়ে। কেননা, বিবেক সম্পন্ন সকলের কাছেই সহজবোধ্য যে, শিশুদের যন্ত্রণা সহ্য করার ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম। তবে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, র‌্যাব-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম লক্ষণীয় ছিল।

এদিকে, আমাদের নজরে আসা সমালোচনার আদিঅন্ত না লিখে বিশেষ কিছু প্রশ্ন বক্তব্য মতামত প্রেক্ষিতে আমাদের সহজ সরল মতামতে প্রশ্নাত্তর হিসেবে তুলে ধরছি। যারা গণমাধ্যমের সূত্রে খোজ-খবর রাখেন তারাওতো আমাদের মতই জানেন যে, বিগত পঞ্চাশ দশকে সোভিয়েত রাশিয়ার নির্মিত মিগ-২১ যুদ্ধ বিমানের চীনা ভারসন মাইলস্টোন স্কুল ভবনের দুটি কক্ষের ওপর বিধ্বস্ত হয়। অতি পুরনো মডেলের এই বিমান বাংলাদেশ সরকার চীনের কাছ থেকে কিনেছে। প্রতিবেমী ভারতের মিগ-২১ বিভিন্ন সময়ের দুর্ঘটনায় শতাধিক পাইলটের প্রাণ হারানোর মধ্য দিয়ে ‘উড়ন্ত কফিন’ খ্যাতি অর্জন করেছে। আমাদের দেশের সরকার সে খবর রাখে বলে মনে হয় না। ভারত অনুমতি বা অনুমতিপত্র দেয়নি বলেই মিগ-২১ কিনেছে আগের সরকার। যার মধ্যে অর্ধডজন মিগ-২১ বিধ্বস্ত হয়েছে।

তারপরও কেন মিগ-২১ ব্যবহার হচ্ছে প্রশ্নাকারের এ মন্তব্যে বেরিয়ে এসেছে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার ভারতের অনুগত হওয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী আধুনিকায়ন হোক তা ভারতের চাওয়া নয়হেতু কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। এমনকি বিমান বন্দর এলাকা ও রুট জনবহুল হওয়া সত্ত্বেও সেই রুটেই মাইলস্টোন স্কুল স্থাপন। তবে এটাও সত্য যে, তেজগাঁও বিমানবন্দর স্থাপিত হয়েছিল তখনকার রাজধানী শহরের বাইরে।

প্রসঙ্গত: গণপ্রহরীর আশা বিমানবন্দর স্থান্তান্তর ও সশস্ত্রবাহিনীকে আধুনিকায়নে অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিবেন এবং নির্বাচিত সরকার তা কার্যকর করবেন। যদিও সকল দেশেই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। তবে জনবিরল এলাকাতেই বিমানবন্দর ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে সেসব দেশে। আমাদের দেশ ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত বিমানবন্দরগুলো চালু করলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যাবে। 27/07/25 – সম্পাদক

আরও পড়ুন – চব্বিশের শিক্ষায় পঁচিশকে স্বার্থক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *