Thu. Jul 10th, 2025
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি সত্যিই দূরে (?)মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি সত্যিই দূরে (?)

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি সত্যিই দূরে (?) প্রশ্নটি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে রক্তার্জিত ‘বিজয়’ অর্জনের ৫৪ তম বিজয় দিবসের। যে ‘প্রশ্ন’টি ত্রিশ লাখ শহীদের বিদেহী আত্মার দীর্ঘশ্বাস থেকে বেরিয়ে ইথারে ভেসে বেড়াচ্ছে (!) কলমটি কাগজ থেকে তুলতেই দৃষ্টির সামনে সাদা কাগজে লাল কালিতে অংকিত দুটি প্রশ্নবোধক ‘চিহ্ন’ (??) বিদ্যুৎ বেগে বিবেকে যেন ধাক্কা অনুভব করলাম। তাতেই বুঝে নিলাম প্রশ্নবোধক চিহ্ন ‘দুটি’ কেন এবং জিঙ্গাসাইবা কি। এর তাৎপর্যটা জ্ঞানী-গুণী পাঠকদের বিবেকের ওপর ছেড়ে দেয়াই এ মূহুর্তে বুদ্ধিমানের কাজ। তাই-

পাঠক কি বলবেন জানিনা। তবে, আমি এ মূহুর্তে দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি-‘ব্যক্তি বা গোষ্ঠি স্বার্থে যারা অন্ধ, তাদের কাছে জাতীয় স্বার্থ বা দেশের স্বার্থের কথা হৃদয়ের নয়, বক্তৃতা-বিবৃতির’। তাইতো ৫৩টি বিজয় দিবস বিদায় দিয়ে, চুয়ান্নতম বিজয় দিবসে এসে শিরোনামে উল্লেখিত প্রশ্নের সম্মুখীন। একটি শোষণমুক্ত সমাজের স্বাধীন দেশের জন্য যাঁরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন ও করেন তাঁরাতো নিঃসন্দেহে ‘মহান’ এবং মানুষের প্রতি পরীক্ষিত ‘দরদী’। সেই দরদ থেকে কোনো একটি বিদেহী আত্মা যেন ৫৪তম বিজয় দিবসকে ঘিরে প্রশ্নটি উত্থাপনকালে সতর্ক করে গেলেন ‘সাবধান’। সাথে এও বলে গেলেন বিবেক বর্জিতরা-ব্যক্তি বা গোষ্ঠি স্বার্থে অন্ধ হওয়ায় আমাদের (শহীদি আত্মা) কথা শুনতে পারেনা। তাই সাহস থাকলে প্রশ্নটি নিয়ে-যৌক্তিকতার আলোকে লিখতে পারো। চুপিসাড়ে অস্পষ্ট শব্দে কানে পড়লে-শুভ কামনা রো’ল।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে রক্তার্জিত বিজয় অর্জনের ৫৪তম বিজয় দিবসের প্রশ্নে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি সত্যিই দূরে (?)’ এ নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য নয়, বাস্তবতার আলোকে যুক্তিযুক্ত আলোচনাই যথেষ্ট। এছাড়া বিতর্কিত বক্তব্য ঝুলিতেই নেই। প্রসঙ্গত ঘুরে ফিরে চীন বিপ্লবের মার্কসবাদী-লেনিনবাদী নেতা মাওসেতুঙ-এর ‘কোনো ত্যাগই বৃথা যায় না’ অমর উক্তিটি তুলে ধরছি। এক্ষেত্রে আলোচিত ‘বিজয়’ অর্জনে ত্রিশ লাখ মানব সন্তান শহীদ হয়েছেন। আড়াই লাক্ষার্ধিক মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। সাত কোটি মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহনে এবং তাঁদেরই দামাল সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমরণ মুক্তিযুদ্ধের ফলাফল কি তবে ব্যর্থ হয়েছে? না, তা হয়নি। তবে বাস্তবতা স্বাক্ষ্য দিচ্ছে, কিছু মানুষের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে, একাত্তরের রক্তার্জিত বিজয় দিবস-‘‘ষোল ডিসেম্বর উনিশশ একাত্তর’’। ভাগ্য বদল হওয়ার কথা ছিল সাত কোটি মানুষের। সেখানে হলো কিছু মানুষের। কিন্তু কেন এমনটা হলো? এমনটা হয়েছে বলেইতো চুয়ান্নতম বিজয় দিবস হাজির হয়েছিল ‘মুক্তিযুদ্ধে বিজয় কি সত্যিই দুরে (?)-প্রশ্ন নিয়ে।

পাঠকরা যতটা জানার কথা ছিল, তা জানার সুযোগ পাননি। তবে সাড়ে সাত কোটি মানুষের পরিবারিক ধারাবাহিকতায় পথ বেয়েই আজকের আঠারো কোটি মানুষ। সেই ধারাবাহিকতা সূত্রে এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিকাশ ও শিক্ষার হার বৃদ্ধির ফলে জ্ঞান-বুদ্ধি ও চর্চা-গবেষণা বেড়েছে, বাড়ছে। সেদিক থেকে সর্বজন স্বীকৃত যে, এক নদী রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি মিলেছে মাত্র। কিন্তু পাকিস্তানি শাসক-শোষকগোষ্ঠির ২৪ বছর কালের শাসন-শোষণের যে জগদ্দল পাথর ছিল মানুষের ওপর, আজও তা আছে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে শাসন-শোষনের নাম বা ব্যাখ্যা পরিবর্তন হলেও এক বাক্যে স্বীকার্য যে, কাঙ্খিত সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি।

অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি এবং সমাজ ব্যবস্থাও পরিবর্তিত হয়নি। যদিও রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সরকার বদল হয়েছে। মাঝে সাজে হচ্ছেও এবং হবেও। কিন্তু অনস্বীকার্য যে, রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সরকার বদল হলেই রাষ্ট্র বদল হয় না। এবং সমাজ বদলের লক্ষ্যে রাষ্ট্র পরিবর্তন না হলে সমাজ বদলও যেমন হতে পারে না। তেমনি অর্থনৈতিক মুক্তিও আসতে পারে না। রাষ্ট্রের উপর তলায় বসে সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা যায়, বক্তৃতা দেয়া যায়, রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় বা সুবিধাভোগী ও বিদেশী শক্তির বিশ্বস্ত দালালদের দিয়ে বই পুস্তক লেখানো যায়। এমনকি ইতিহাসও লেখানো যায় ও লেখানো হয়েছে, হচ্ছেও। যদিও তারা ইতিহাস পড়ে না ও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। যেমন বঙ্গবন্ধু খ্যাত শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালের সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বস্ত অনুসারি কমরেড মনি সিংহ নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টির মাধ্যমে সোভিয়েত রাশিয়ার পথে হাটতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনকে করে গেছেন সুদৃঢ় পরাহত। তবে তাঁর দল (আওয়ামীলীগ/বাকশাল), চলার পথের দোসর পরিবারসহ রুশ-ভারতের (বিশেষত ভারতের) স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থাও করে গেছেন। এবং তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনাতো দেশকে অবশেষে ভারতের অনুগত রাষ্ট্রেই পরিণত করে, গণঅভ্যূত্থানের মুখে পদত্যাগ করে নেতাকর্মীদের রেখে পালিয়ে ভারতের আশ্রয় নিয়েছেন এবং দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র করে চলছেন। ক্ষমতার জন্য তাঁদের কাছে দেশের স্বার্থ বিবেচ্য নয়। এটা শেষ প্রমাণ ৫ আগস্ট ২৪ এবং ভারত থেকে পরিচালিত ষড়যন্ত্র।

তবে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, যাঁরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাঁরা সকলেসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা যাদের ভাগ্যের পরিবর্তনসহ প্রভূত উন্নতি সাধন করে দিয়েছেন অর্থাৎ যাদের উন্নতি ঘটেছে। তারা আজ মুহুর্তেই এই ভোগবাদী সমাজের যাবতীয় উপকরণ কেনার ক্ষমতা রাখে। মুহুর্তেই প্রস্তুতি পর্ব শেষ করে হুট করে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেমন যেতে পারেন। তেমনি ভিন্ন দেশেও যেতে পারেন। ভিআইপি মর্যাদায় ভিআইপি রোডখ্যাত সড়ক পথ দিয়ে নিরাপদে ভিআইপি এলাকার বা ভিআইপি বাসভবনে নিজেদের জীবনকে উপভোগ করতে পারেন। তারা যা পারেন না, তাহলো তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার বা ক্ষমতাবলে উপার্জিত অবৈধ অর্থ নিয়ে কারও কোনো প্রকার সামলোচনা বা বিরূপ মন্তব্য যা শুনতে পারেন না।

বরং তাদের বিরোধীতাতো দূরের কথা, গঠনমুলক সমালোচনা করলেও সমালোচকদের রেহাই নেই। তদসত্বেও যদি দেশ, জাতি ও জনস্বার্থে কেও কোনো সমালোচনা করেন, তাহলে সমালোচনাকারী বা সমালোচকরা খেতাব পেয়ে যাবেন-‘এরা উগ্র মৌলবাদী-জঙ্গি এবং এরা দেশটাকে পাকিস্তান বানাতে চায়’। এটা তাদের বুলি, এটা তাদের ভিন্নমত বা প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার। যদিও দেশের আপামর মানুষ শুনে-জেনে আসছেন যে, রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য একাত্তরে পাকিস্তানি সামরিক স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শেষ পর্যন্ত আলোচনা চালিয়েছেন। এমনকি পাকিস্তানি সামরিক সরকারের মুজিব শেষ পর্যন্ত আলোচনা চালিয়েছেন। এমনকি পাকিস্তানী সামরিক সরকারের শর্ত সাপেক্ষের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু খ্যাত শেখ মুজিবের সহযোদ্ধা রাজনীতিক ও প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদ ২৫ মার্চ, ১৯৭১ রাতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র লিখে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য শেখ মুজিবের বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ফলে সেদিনের মেজর জিয়া ২৬ মার্চ বিদ্রোহ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। অথচ এক নদী রক্ত বেয়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের ক্ষমতায় বসে নিজেরাই হয়ে যান ঘোষক, হয়ে যান একচ্ছত্র নেতা। কাগজে-কলমে ও বক্তৃতা বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও ত্রিশ লাখ শহীদের জন্য নাটকীয় ভূমিকায় আবেগ প্রকাশের শেষ নেই ও ছিলও না।

ক্ষমতালোভী লুটেরা ও বিদেশে অর্থ পাচারকারি সুবিধাভোগকারিরা বিশেষত শোষিত: বঞ্চিত শ্রেণীর মানুষকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে, সান্তনা দেয়। যাতে শোষিত বঞ্চিতরা এক জোট হতে না পারে। কেননা, শোষিত-শাসিতরা দলবদ্ধ হয়ে ক্ষেপে উঠলে তাদের সুখের ঘর জ¦লে ভস্মিভূত হবে। তাই তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে ধর্মের দোহাই দিতেও পিছিয়ে থাকেনি ও থাকে না। ধৈর্য ধরার নামে, দেশ গড়ার নামে, উন্নতি-প্রবৃদ্ধির নামে এবং ধৈর্যশীলকে সৃষ্টিকর্তা পছন্দ করেন-এমন সব কথার মূলে ছিল-তারা যা করছে, তা দেশের জন্য করছে এবং জনগণের জন্য করছে। ধৈর্য ধরে সহযোগীতা করার জন্য আহ্বান জানাতে পটু ছিলেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর পর্যবেক্ষণে কাওকে কিনে, কাওকে পদন্নোতি দিয়ে কাওকে পুরুষ্কৃত করে বা সুখভোগের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে লেখক-বুদ্ধিজীবি ইতিহাসবিদ বানিয়ে রাজকীয় ইতিহাস বই-পুস্তক লিখিয়েছেন এবং প্রচার করিয়ে চলছেন। তাইতো চুয়ান্নতম বিজয় দিবসের প্রশ্ন-‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি সত্যি দূরে?

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যদি সত্যিকারার্থেই হতো, তাহলে তো দেশের সমাজব্যবস্থা হতো শোষণমুক্ত অর্থাৎ মানুষের কাঙ্খিত মুক্তি অর্জিত হতো। আর দেশ যখন শোষণমুক্ত হয় তখন স্বাধীনতা স্বাভাবিক গতিতেই অর্জিত হওয়ার মধ্য দিয়েই শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত ৫৩ বছরে তা হয়নি বলেই চব্বিশের জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে পরিচালিত রক্তপথের আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে রক্তার্জিত গণঅভ্যূত্থান সংঘঠিত হলো। এই অভ্যূত্থানকে কেও বলেছেন, নতুনভাবে বা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হলো, কেও বলছেন বিপ্লব বা গণবিপ্লব ইত্যাদি। তাহলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি প্রশ্নবিদ্ধ নয়? আজকের এই লেখার শিরোনামের প্রশ্নবোধক চিহ্ন (??) কে বাদ দিয়ে পড়তে হবে কি? পাঠক, এর উত্তরও আপনাদের সুচিন্তিত বিবেকের কাছেই থাকলো।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি সত্যিই দূরে (?)
2024 এর গণঅভ্যূত্থান ও বিজয়

তবে হ্যাঁ, চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যূত্থানে এবং সেই রক্তার্জিত গণঅভ্যূত্থানে আত্মবলিদানকারী বীর শহীদ ও আহত বীররা শ্রেনীগত সংখ্যা এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে অংশগ্রহনকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই আকাশ-পাতাল বৈষম্যের সমাজ ব্যবস্থার নিষ্ঠুর নির্মম শিকার। তাঁরা গরীব-সর্বহারা, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত স্বল্প আয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ও তাঁদের সন্তান। প্রায় দুই সহস্রাধিক শহীদের রক্তসহ আহত হাজার হাজার ছাত্র-জনতা-শ্রমজীবি মানুষের রক্তপথে স্বৈরাচারের পতন হলেও এক তিল পরিমাণ বৈষম্য সমাজ থেকে দূরীভুত হয়েছে কি? কোটা বিরোধী আন্দোলনে শোষিত-বঞ্চিত শ্রমজীবি মানুষের তেমন কোনো স্বার্থ ছিল না। কিন্তু তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘ব্যানারের’ লেখাকে ও প্রচারকে হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করেছিলেন এবং এখনও বিশ্বাস শেষ হয়ে যায় নি।

বায়ান্ন থেকে চব্বিশের সকল শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আহতদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে ছোট্ট প্রশ্ন উত্থাপিত করছি। চব্বিশের আন্দোলনে নেতৃত্বাদনকারিরা বলতে পারেন কি শহীদের রক্তের চাওয়া-‘বৈষম্য দূরীকরণে’ ভূমিকা রাখছেন? অথবা যে রাষ্ট্রীয় সংষ্কার হচ্ছে তাতে নির্বাচিত সরকার বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবেন এবং তা করতে তারা অঙ্গিকারবদ্ধ? বিগত তেপ্পান্ন বছর যার যার সুবিধামতে যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবহার করেছেন, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গর্ব করেছেন ও পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সামজ প্রতিষ্ঠার এক তিল সমতুল্য পরিমাণ পদক্ষেপ তুলে ধরতে পারলে আজকের উত্থাপিত প্রশ্নের জন্য ‘আগাম প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা’ করে রাখছি। একইভাবে প্রশ্ন থাকছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এবং তাদের পরামর্শক বিশেষ ব্যক্তিবর্গের প্রতি বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে কি? পচিশ বা ছাব্বিশের আগস্টে অথবা পরিবর্তিত সরকারের সময়ের আগস্টে আজকের প্রতিবেদনের শিরোনাম পুনরুল্লেখ করতে হবে না তো?

সম্মানিত পাঠক, বিবেকের তাড়নায় লেখার পরিধি বাড়ছে কারণে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে বিবেচনার অনুরোধের সাথে পুরো লেখাটি পড়ার পর লেখাটিকে আর সমৃদ্ধ করতে গঠনমূলক ও যৌক্তিক পরামর্শ দিলে বাধিত হবো। এ মুহুর্তে পাঠকদের প্রতি প্রশ্ন উত্থাপন নয়, আমার বিশ্বাস থেকে তুলে ধরছি যে, রাজধানীর গুলশান, বারিধারা, উত্তরা, ধানমণ্ডি, বনানীর মতো আভিজাত এলাকায় বসবাসকারী আমলা কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী-ধনাঢ্য ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতা আর একজন বিভন্ন ক্ষেত্রে শ্রম নির্ভর মানুষের চেতনা বা স্বাধীনতা কি এক? একই সাথে নিজের বিবেককে আর একটু হাল্কা করতে আরেকটি বিষয় তুলে ধরছি।

আমার বিশ্বাস মানুষের প্রতি মানুষের এবং দেশের প্রতি মানুষের প্রেমে আসক্ত অর্থাৎ দেশপ্রেম মানুষ প্রেমে আসক্ত হয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। সেই মুক্তিযোদ্ধার চাওয়া আর দেশের প্রতি ও মানুষের প্রতি ‘ভালবাসার কথা’কে যারা রাষ্ট্রীয় ও সামজ জীবনে ‘ক্ষমতার ভিত্তি’ হিসেবে ভালবাসার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন ও ফেলছেন; তাদের চাওয়ায় ভিন্নতা আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা শব্দ দুটি কেওতো কম শোনেন নি। এ লেখাতেও বার বার ঘুরে ফিরে আসছে। আর উন্নয়ন? সেতো শুনেছেন দিবারাত্রি। যে উন্নয়নের জোয়ার-ভাটার খেলায় পাকিস্তানের সময় দেশী-বিদেশী শাসন-শোষণ এবং চুয়ান্নতম বিজয় দিবস সময়কালের শাসন-শোষণে ‘পার্থক্য’ একটা চোখের সামনে ভাসছে। তাহলো পাকিস্তানি শাসক-গোষ্ঠি লুটে-পুটে পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তানে) নিয়ে যেতো। আর উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টিকারিরা সরাসরি বিদেশে পাচার করছে, দেশের মানুষের রক্তে-শ্রমে অর্জিত অর্থ; রাষ্ট্রীয় তহবিল-ফোকলা। অর্থাৎ দেশ গড়ার গান আমরা ৫৪ বছর থেকে শুনে আসছি। ত্রিশ লাখ শহীদদের জীবিত অবস্থায় পাকিস্তানে যে শাসন ব্যবস্থা, ভারতে যে শাসন ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থাইতো এখনো বিদ্যমান।

কিন্তু নির্বোধের মত বলতে বলতে এত কথা বললাম, অথচ দেশপ্রেমিক সৎ, ন্যায়পরায়ন ও সমাজ সচেতন পাঠকদের প্রত্যেকেই তার চারদিকে তাকালে এবং ক্ষেত্র বিশেষ বয়োজৈষ্ঠ্যদের কাছে জানতে চাইলে নিশ্চিত হতে পারবেন; তার চারদিকে থাকা নেতা ও নেতাদের বিশ্বস্ত ভক্তরা এবং আমলা-পুলিশকর্তাদের ভাগ্য কতটা বদল হয়েছে। কারও কারও পরিবর্তনতো আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার মতো। অর্থাৎ আগের অবস্থার সাথে পরের বা বিদ্যমান অবস্থা মিলালে বা যোগ বিয়োগ করলেই বুঝতে কষ্ট হবে না; তিনি দেশের জন্য ও জনগণের জন্য কি করছেন এবং তার ও তার পরিবারের জন্য কি করেছেন। পক্ষান্তরে বয়োজ্যৈষ্ঠদের কারও কাছে জানতে চাইলে তিনি চুপ করার ইসারা দিয়েই বলবেন- এটা বলা যাবে না, বললেই বিপদ। পাঠক নিশ্চয়ই নিশ্চিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি সত্যিই দূরে? নাকি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার কাজ চলমান (?), একপর্যায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় স্বার্থক হবে, স্বার্থক হবে শহীদদের আত্মদান।

ইতিমধ্যে মনের কোনা থেকে ভেসে আসলো-পাঠকদের কেও যদি জানতে চান, উন্নয়ন চাই কি-না। হ্যাঁ, আমরা উন্নয়ন চাই বলেইতো মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কাছে নাকি দূরে অর্থাৎ ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি সত্যিই দূরে’ শিরোনাম নিয়েই হাজির। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ না হলেও ভৌগলিক স্বাধীনতা অীর্জত হয় বটে। কিন্তু জাতীয় সরকার গঠন করে সর্বসম্মতভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে স্বার্থক করতে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের পথে দেশ চলতে পারে না। কারণ, স্বাধীনতাত্তরকালে ক্ষমতাসীন সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে সোভিয়েত সাম্রাজ্যবাদের প্রভূত্বকে স্বীকার করে সম্প্রসারণবাদী ভারতের তদারকিতে নিজেদের ন্যাস্ত করে। অর্থাৎ পাকিস্তান নামক ‘বাঘ’ তাড়িয়ে খাল কেটে ‘কুমির’ নামক ভারতকে নিয়ে আসা হয়। তাই বিজয় আজও দূরে।

অপরদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো এবং তাদের মাধ্যমে গঠিত ও নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত দাতা সংস্থাগুলো দেশ গড়ার সাহয়তার সাইনবোর্ড তুলে নানা নামে নানা প্রকল্পে বিপুল টাকা ঋণ ও সাহায্য দিতে থাকলো। ভাগ্য পরিবর্তন হতে থাকলো ক্ষমতাসীন দল ও তাদের অনুগত সুবিধাভোগীদের। ভারতও আত্মসমর্পণকারি পাকিস্তানী বিরানব্বই হাজার সৈন্যের অস্ত্রশস্ত্র-যানবাহন, খাদ্য-বস্ত্র এবং তাদের কাছে থাকা অর্থ-সম্পদসহ লুটপাটের অর্থ-সম্পদ, সোনাদানা সব নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে কুমিরের ভূমিকা পালন শুরু করলো। অথচ সেদিন দেশে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮৫ জন কৃষকের মধ্যে ৭৩ জনই ছিলেন ভূমিহীন-গরীব-কৃষক অর্থাৎ কৃষি শ্রম নির্ভর মানুষ। তাঁরাসহ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা এহেন বিপুল পরিমাণ ঋণের অর্থ ব্যয়ের প্রকল্প ও পরিকল্পনায় তাঁদের ভাগ্যের দরজা খোলে না। অথচ তাঁরাই এবং তাঁদের সন্তান-স্বজনরাই মুক্তিযোদ্ধা শতকরা প্রায় নব্বইজনের বেশী এবং তারাই মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে স্বাধীনতার সুফল ভোগকারীরা দেশ গড়ার নামে কৃষি জমি নষ্ট করে বিশাল প্রস্তের রাস্তা তৈরী করতে লাগলো। পাশাপাশি বিভন্ন এলাকায় সহজতর যোগাযোগের ক্ষেত্রে যাতায়াতের নামে পরিবহন ব্যবসা চালু করলো এবং এজন্য এ পর্যন্ত হাজার হাজার, লাখো লাখো মটরযান আমদানি করতে থাকলো। বিদেশী বণিকদের গাড়ীর বাজার গড়ে উঠলো। তেল, ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশসহ ছোট-মাঝারি নানা ধরণের শিল্প কারখানাও নিজেদের জন্য গড়ে তুলতে থাকলো। এর মধ্য দিয়ে দেশটাকে ভারতসহ বিভিন্ন শক্তির বাজারে পরিণত করতে সক্ষম হলো। সৌখিন গাড়ীর সাথে বিলাসীতার জন্য সৌখিন নানা সামগ্রী বা উপকরণ বেচাকেনার বাজারও গড়ে উঠলো। যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূমিহীন-গরীব-শ্রম নির্ভর মানুষের কোনো কাজে লাগে না। অথচ বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধে এবং মানুষের প্রয়োজনীয় তেল-চাল-ডাল-লবন-ঔষধসহ অন্যান্য নানা সামগ্রীর জন্য ভ্যাট-ট্যাক্স তাঁদেরকেই দিতে হচ্ছে বা দিয়ে চলছেন। অর্থাৎ স্বাধীনতার সুফলভোগী শাসক-শোষক গোষ্ঠি ও সাম্রাজ্যবাদীরা ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী গাছেরটাও খাচ্ছে এবং তলারটাও খাচ্ছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দূর থেকে বহুদূরে যাচ্ছে।

পক্ষান্তরে, সাম্রাজবাদী-পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থাধীনে পরিচালিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বৈষম্যের জগদ্দল পাথরের চাপায় পড়ে মানুষ যখন হাহুতাশ করছিলেন। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে অংশ নিয়ে জীবন দিয়ে রক্ত দিয়েও বৈষম্যের পাথর চাপা থেকে বের হতে পারছেন না। বরং যেদিক দিয়ে বের হতে চাচ্ছেন, সেদিকেই বিপদ যেন সশস্ত্রভাবে দণ্ডায়মান। সেই পাকিস্তানী সময়কার শাসন-শোষণসহ স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতীয় অনুগত রাষ্ট্র হিসেবে চলার পথে শাসন-শোষণ আজও বিদ্যমান। উপরন্ত অন্তর্বর্তী সরকারই চারদিক থেকে অস্থির পরিস্থিতিতে ঘেরাওয়ের মুখোমুখি। চাল তেল ও ঔষধসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি চলমান, সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে, আইনের শাসনে ঘাটতি অর্থাৎ মানুষ সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন। এখান থেকে বের হতে প্রয়োজন শোষণমুক্ত সমাজসহ বৈষম্যহীন সমাজ। তার জন্য প্রয়োজন সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন। কিন্তু দুর্ভাগ্যে জাতির। বিগত ৫৩ বছরের শাসক শ্রেণীর সাথে অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য বিভিন্ন দলকে বিভক্ত করে নির্বাচনের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে শ্রেণীগতভাবে তেমন পার্থক্য আছে কি? যাদের পক্ষে শোষণমুক্ত বা বৈষম্যমুক্ত বা বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা আশা করা যায়- বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায়। এসবই জনমতের জিঙ্গাসা।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি সত্যিই দূরে (?)
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন

এদিকে নির্বাচনের দাবি শক্তিশালী হচ্ছে। যারা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন। যে আন্দোলনের ফসল ‘অন্তর্বর্তী সরকার’। তার বিরুদ্ধেও ভোটের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন। এমনকি নির্বাচনকাঙ্খি দলগুলো পরিকল্পিতভাবে আন্দোলন করে সফল হতে পারেন। তাতে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের সম্ভাবনা এ মুহুর্তে নেই। কেননা, যে সংবিধান ভিত্তিতে ৫৩ বছর শাসন-শোষণ চালাতে চালাতে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে দূর থেকে বহুদূরে দেয়া হয়েছে। সে ভিত্তিতে পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের রাজনীতিতে বিচরণও নিষিদ্ধ করতে পারছেন না। অর্থাৎ কিছু সংষ্কার করেই সেই সংবিধান রক্ষায় ও ভিত্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে মিলে মিশে কেও ক্ষমতাসীন কেওবা বিরোধীদল হবেন। জনগণ হয়তো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন মাত্র।  এর বেশি কিছু এ মুহুর্তে আশা করা যায় না। কারণ আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে বা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে কেও ইচ্ছুক হলেও এবং কোনোটিতেই জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন না হলে বা পরিবর্তনের সম্ভাবনা না থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ শোষিত-বঞ্চিত-অধিকার হারা মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবো না বা হবেন না- এটা এ মুহুর্তে সহজবোধ্য। তবে পরিস্থিতি পরিবেশ মানুষকে একসময় বাধ্য করবে-এটা ইতিহাসের শিক্ষায় বলা যায়। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়-আগস্টের গণঅভ্যূত্থানে নেতৃত্বদানকারিরা প্রস্তুত ছিলো না। স্বৈরাচারের পতনের পর জনগণের কাঙ্খিত সামজ ব্যবস্থা কিভাবে গড়ে উঠবে এবং রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। ঘুরে ফিরে সেই ৫৩ বছর শাসন-শোষণের সংবিধানই ভিত্তি। তাই আজ হোক আর কাল হোক নির্বাচনের বিকল্প নেই।

উল্লেখ করার মতো সংখ্যক না হলেও সচেতন অংশের মধ্যে হাজারে পাঁচ-দশ জনের আলোচনায় বেরিয়ে এসেছে তত্বাবধায়ক সরকারের কাঙ্খিত বিধান ও আদালত তা ফিরিয়ে দেয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার কি তত্বাবধায়ক সরকারে পরিণত হবে-এমন প্রশ্নমুলক মন্তব্য বাজারে আছে। এ নিয়ে এ মুহুর্তে আলোচনা নয়। আলোচনায় অত:পর নির্বাচন হবে। নেতানেত্রীরা ক্ষমতায় বসবেন অর্থাৎ সরকার গঠন হবে। নতুন সরকার বলবেন, আগের সরকার সবকিছু শেষ করে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার আরও আগে নির্বাচন দিলে ভাল হতো। সে যাক দেশ গড়তে হবে। আমরা অঙ্গিকারবদ্ধ। নেতানেত্রীদের হাত শক্তিশালী করুন। এবং ধৈর্য্য ধরুন। আমাদের দেশ গড়ার সুযোগ দিন। যদিও সুযোগ যা দেওয়ার জনগণ তা ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়েই দিবেন ও দিয়েছেন। সংবিধানও নির্বাচিত সরকারই রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। আমরা ৫৪ বছরের মতই দেশ গড়ার গান শুনে যাবো। শুধু দূরে যাবে-‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে স্বার্থক করতে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন অর্থাৎ শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা ও বৈষম্যমুক্ত বা বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সকল বীর শহীদদের কাঙ্খিত বিষয়টি’। তবে শহীদদের আত্মত্যাগকে স্বার্থক করতে নেতা-নেত্রীসহ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের শুভবুদ্ধির উদয় হলে হয়তো ‘দূরে’ যাবে না।

নয়তো পূর্বাপরের মতো আমরা দেশ গড়ার ও দেশের উন্নয়নের গান-কবিতা, নাটক-সিনেমা এবং নেতা নেত্রীদের ভূয়সী প্রশংসার কথা শুনে যাবো। শুনতে শুনতে বিরক্ত বোধ হলে, আবার লিখবো-‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি সত্যি দূরে (?)’ কেও লিখবো বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের বহি:প্রকাশের বৈষম্যহীন বা বৈষম্যমুক্ত সমাজ কত দূরে (?) ইত্যাদি। আর চোখের দৃষ্টিতে দেখতে থাকবো এবং জীবন দিয়ে উপলব্ধি করতে থাকবোÑ ‘দেশ গড়া ও উন্নয়ন করার কাজ শেষ না হলেও রাজনীতিক, আমলা ও পুলিশ কর্তাদের ভাগ্যের বদল হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী বিশ্বের দেশ সমূহ এবং তাদের দাতা সংস্থাগুলো প্রশংসায় মেতে উঠেছে। বাংলাদেশে তাদের আধিপত্য বিস্তার ও বাজার দখলের দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে তারা তাদের রাষ্ট্রীয় আয় বৃদ্ধি করছে এবং শাসক শ্রেণীকে বাহবা দিচ্ছে। শোষকদের শোষণও অব্যাহত। ভারতও তাদের অংশীদার থাকছে রাষ্ট্রীয় চরিত্রের কারণে এবং সেভেন সিস্টার্স খ্যাত ভারতের সাত রাজ্যে প্রভু বিস্তার রাখতে পারছে। যদিও আমরা শাসিত শোষিত বঞ্চিতরা মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে ঐক্যবদ্ধ হলে, নিজেদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি ওপর নির্ভর করে এগিয়ে চললে বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। কারণ শহীদি আত্মারা আছেন ও থাকবেন মুক্তিকামী মানুষের সাথে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে। বৈষম্যহীন সমাজ যারা আন্তরিকভাবে চান তারাও সামিল হবেন একই ‘লক্ষ্য’ অর্জনে।

By SK Mazid Mukul

প্রধান সম্পাদক, গণপ্রহরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *