নিজস্ব প্রতিবেদক : মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রিয় আহ্বায়ক কমিটি চ্যালেঞ্জের মুখে। যদিও মুক্তিযুদ্ধেরই ফসল ‘বাংলাদেশ’। কিন্তু দুর্ভাগ্য জাতির, দুর্ভাগ্য এ দেশের মুক্তিকামী-স্বাধীনতাকামী মানুষের। চুয়ান্ন বছরেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এই সুযোগে জ্ঞান পাপীদের কেও কেও, আবার রাজনীতির ‘ব্যবসায়ী’ কথিত রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা কৌশলে প্রশ্নাকারে বলেছেন, পাকিস্তান শাসনামলে যেভাবে দেশ শাসন-শোষণ হয়েছে, এখনওতো সেভাবেই হচ্ছে, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ করে কি হলো। আবার জ্ঞান পাপীদের মধ্যে কেও কেও একাত্তরকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করাতে কৌশলী চেষ্টার ত্রুটি করছে না। এমন কৌশলী কার্যকলাপ রোধে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাইনবোর্ডে লিখিত ‘দেশ ও জনগণের অতন্দ্র প্রহরী’ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বাস্তব ভূমিকা থাকতে হতো। তা আছে কি?
অনস্বীকার্য যে, পতিত স্বৈরাচারের শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও তাদের দালাল নেতৃত্বকে ক্ষমতাসীন দল মাউথপিস হিসেবে ব্যবহার করায় বা ব্যবহৃত হওয়ায় ও ভূয়া মুিক্তযোদ্ধাদের (অমুক্তিযোদ্ধা) ভীড়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। এ সুযোগটাও সদ্ব্যব্যবহার করছে ষড়যন্ত্রকারীরা। বাস্তবতা বলছে ‘যেদিকে ঢালু থাকে, পানি সেদিকেই গড়িয়ে যায়’। লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এবং একাত্তরে দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮৫ জন কৃষকের মধ্যে প্রায় ৮০ জনের বেশি সংখ্যকই ভূমিহীন-গরীব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কৃষক অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক-শ্রমিক-কর্মচারীদের সন্তান ছাত্র ও যুব জনতার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন-মরণ মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন না হতেই অস্ত্র জমা দিয়ে নিজ নিজ পেশায় ফিরে যান। মুক্তিযুদ্ধের ‘লক্ষ্য’ শহীদের রক্তস্রোতে ভাসতে থাকে। সেই সাথে ভারতে আশ্রিত প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের সাথে সম্প্রসারণবাদী ভারত সরকারের ৭ দফা গোপন চুক্তি ভিত্তিতে সাম্য, ন্যায় বিচার, মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকারসহ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা বিধানের গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতাভোগের পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। তাইতো মুক্তিযুদ্ধের ফসলের দেশ মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের পথ হারিয়ে ফেলে, মুক্তিযোদ্ধারাও জাতির সামনে দাঁড়াতে পারে না। তারই ধারাবাহিকতায় চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চলতে হচ্ছে।
এমনিতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়োজনে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পুণর্গঠন করেন। তাতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গঠনতন্ত্র মেনে চলা ও কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো গুরুত্ব পদধারী সংসদ নেতৃত্বে না আসার বাধ্যবাধকতা ছিল। যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জাতির ক্রান্তিকালে জাতির সামনে দাঁড়িয়েছে। সেই দাড়ানো কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মাহসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীরকে আহ্বায়ক করে গঠিত ১১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিকে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে চ্যালেঞ্জ সমূহ মোকাবিলার প্রক্রিয়া চলমান রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে দেশ ও জনগণের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বাস্তব রূপ দিতে হবে। এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আবারো আত্মবলিদানে বলিয়ান নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবেন। মনে রাখতে হবে, পতিত স্বৈরচারের শাসনামলে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কারিগর দালাল নেতৃত্বকে চিহ্নিত করে শুধু মাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে মুখোশ খুলে দিতে হবে। আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের (অমুক্তিযোদ্ধা) তালিকা বাতিলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অভিযান অব্যাহত রাখবে। তবে ইতিহাস স্বাক্ষ্য দিচ্ছে, একজন মুক্তিযোদ্ধাও যদি তালিকাভুক্ত না হয়ে থাকেন, তাঁকে বা তাঁদের খুঁজে বের করে তালিকাভুক্ত করতে হবে, নয়তো ইতিহাসের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ থাকতে হবে। কেননা, আবেদিত মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা হয়েছে; দলীয় বিবেচনােই প্রাধান্য পেয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে বৈষম্যমুক্ত সমাজের প্রত্যাশায় চব্বিশের স্বৈরাচার বিরোধী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দালনের নেতৃত্বে অকাতরে জীবন দিয়েছেন ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। চব্বিশের নেতৃত্বদানকারী বীরদের ত্যাগের অবমূল্যায়নের সুযোগ নেই। একইভাবে একাত্তরকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনেরই বিরোধীতা। আহ্বায়ক কমিটির হাত ধরে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দেশ ও জনগণের অতন্দ্র প্রহরীতে পরিণত হোক-এটাই কাম্য।
এ পর্যায়ে জাতীয় মুক্তযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অনুমোদিত বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটিতে বাকী দশজন কারা রয়েছেন তা জানা যাক। ১১ সদস্যবিশিষ্টি অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন মো. নঈম জাহাঙ্গীর। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন মেজর (অব.) সৈয়দ মুনিবুর রহমান, সাদেক আহমেদ খান, সৈয়দ আবুল বাশার, সিরাজুল হক, আলহাজ্ব মো. মনসুর আলী সরকার, অনিল বরণ রায়, আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ হিল সাফী, জাহাঙ্গীর কবির ও প্রকৌশলী জাকারিয়া আহমেদ।
এবার সাধারণ জ্ঞানে চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ্য, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপির ‘অখণ্ড ভারতের নেশায়’ বিভোরদের প্রাধান্যের সরকার স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ‘হারানো স্বর্গ’ ফিরে পেতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঘৃণ্য অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের সুবিধাভোগী-লুটেরা, বিদেশে অর্থ-পাচারকারী ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের ভারতের গোয়েন্দা ‘র’ পরিচালিত ষড়যন্ত্র চলছে। দালাল নেতৃত্বকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে দূরে রাখা, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ন্যায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে ‘স্বাধীন ভূমিকা’ পালনের ক্ষমতা অর্জন, রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংষ্কৃতিক-সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিদের মধ্যে মতামত বিনিময়ের ব্যবস্থা থাকবে। জাতীয় যে কোনো দুর্যোগ বা সংকটকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে জাতির সামনে থাকতে হবে; যাতে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ বাস্তবাতার নিরিখে আস্থা রাখতে পারেন যে, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সত্যিকারার্থে দেশ ও জনগণের অতন্দ্র প্রহরী।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যক্রম পরিচালিনায় ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জামুকা কর্তৃক গঠিত ও অনুমোদিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করায় জামুকাকে এবং আহ্বায়ক কমিটির সকল সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধাকে-‘মহান মুক্তিযুদ্ধকালের ১১ নং সেক্টরাধীন ঐতিহাসিক রৌমারী মুক্তাঞ্চলের সংগটক-ঘোষক ও প্রথম মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী গড়ে তোলার সংগঠক, জেড ফোর্সের অধীন থার্ড বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিশেষ কোং ২ এম এফ কোম্পানীর যুদ্ধের নীতি কৌশল নির্ধারক উপদেষ্টা-সম্মুখ মুক্তিযোদ্ধা এবং গাইবান্ধা জেলা ইউনিটের সাবেক ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এসকে মজিদ মুকুল’ পক্ষে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ১৯৮১ সাল থেকে তাঁর প্রকাশিত গণপ্রহরী পরিবার পক্ষে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। গণপ্রহরীর প্রত্যাশা মতে নঈম জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সফলতা কাম্য। ব্যাপক মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ভালোবাসা ও নীরব আস্থা রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি।
আরও পড়ুন- অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকের পাশে
