আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের দাবানলে ক্ষতির শিকার ১২ হাজার বাড়িঘর। দেড় লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিজ্ঞান প্রযুক্তির অকল্পনীয় উন্নয়ন এবং সামরিক শক্তির দিক থেকে এখনো সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী বিশ্বের নাম্বার ওয়ান প্রভূশক্তি। সেই দেশের ৭ জানুয়ারি শুক্রবার ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে সৃষ্ট দাবানলে ২৪ জনের মৃত্যুসহ ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির শিকার ১২ হাজার বাড়িঘর। যা বিশ্বকেই ভাবিয়ে তুলেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে ইসরাইলী বাহিনী স্বাধীন ফিলিস্তিনের ভূমি দখলের লক্ষ্য নিয়ে ৪৬ হাজারের বেশি নারী-শিশুসহ আপামর মানুষকে নির্বিচারে হত্যা ও বাড়িঘর, সহায়সম্পত্তি ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা করেও আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেনা। তবে আগুণ পূর্বদিকে বিস্তৃতি ঘটছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপির সূত্রমতে লস অ্যাঞ্জেলেসে কাউন্টি মেডিকেল পরীক্ষক নিশ্চিত করেছে সংঘঠিত অগ্নিকাণ্ডে বিভিন্ন স্থানে স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে আর কালিসোডার ফায়ার জোনে ও ইটন ফায়ার জোনে মোট ২৪ জনের মুত্য হয়েছে। নিখোজ রয়েছেন ১৩ জন। প্রাপ্ত তথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দাবানলে মৃত্যুসহ ক্ষয়ক্ষতি ১২ হাজার বাড়িঘর বা স্থাপনা। দাবানলের আগ্রাসে পুড়ে গেছে ২২ হাজার একর জায়গা।
সূত্র মতে যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলে মৃত্যুসহ ক্ষয়ক্ষতি ১২ হাজার বাড়িঘর শীর্ষক তথ্যাবলীতে প্রকাশ,
ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি করোনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মেডিকেল পরীক্ষক বা করোনার অফিস আগুনে নিহতদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।। তবে তালিকায় নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় বা বিবরণ দেওয়া হয়নি। নথিতে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে পালিসেডস ফায়ার জোনে এবং ইটন ফায়ার জোনে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এরই মধ্যে আগুন পূর্ব দিকে যেতে শুরু করেছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাতে এ প্রবণতা শুরু হয়। নানা বাধা সত্ত্বেও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দমকল কর্মীরা রয়টার্স সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে লস অ্যাঞ্জেলেসে বাতাসের তীব্রতা কিছুটা কমেছে।। এটি ক্লান্ত অগ্নিনির্বাপকদের জন্য একটি স্বস্তি ছিল, কিন্তু আগুনের দিক পরিবর্তন কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিকে নতুন করে খালি করতে প্ররোচিত করেছিল। এ ছাড়া অন্তত ১২ হাজার বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম দাবানল নিয়ন্ত্রণে পানির ঘাটতির বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবিসি জানায়, বাতাস আবার তীব্র হওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন। লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ প্রধান ম্যাকডোনেল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছেড়ে আসা বাসিন্দাদের অবিলম্বে ফিরে না যেতে বলেছেন।
প্রেসিডেন্ট জো বিডেন দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গভর্নর গ্যাভিন নিউজম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্যালিফোর্নিয়া সফরের অনুরোধ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ট্রাম্পকে আগুন নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানান। এক্স-এর একটি পোস্টে তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন।
“আমাদের উচিত কোনো মানবিক বিপর্যয়ের রাজনীতি করা উচিত নয়,” গেভিন নিউজম পোস্টে বলেছেন। ভুল তথ্যও ছড়ানো উচিত নয়. হাজার হাজার আমেরিকান তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত, তিনি বলেছিলেন। তাই পরিস্থিতির দ্রুত উত্তরণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পুনর্গঠনের জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো উচিত।
সিনেটর সাশা রিনি পেরেজ বলেন, আলতাদেনা ও পাসাদেনা এলাকার বাসিন্দারা আগে কখনো এমন দাবানল দেখেনি। এ অবস্থায় পানি সংকটের বিষয়টি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লস এঞ্জেলেস ফায়ার ডিপার্টমেন্টের ক্যাপ্টেন. অ্যাডাম ভ্যান গার্পেন বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমরা যা করি তা হল আমরা অন্য কোথাও থেকে জল এনে ট্যাঙ্কে রাখি। কিন্তু এটি আগুন প্রতিরোধ কার্যক্রম ব্যাহত করছে।”
অ্যাডাম ভ্যান গার্পেন বলেন, অগ্নিনির্বাপক হিসাবে, তারা আশা করে যে ফায়ার হাইড্রেন্টগুলি সঠিকভাবে কাজ করবে এবং সঠিক জলের চাপ থাকবে।
এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার চিফ ক্রিস্টিন ক্রাউলি বলেছেন, তার শহর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে ভুগছে।। তিনি বলেন, ‘তিন বছর ধরে এটা আমার কাছে পরিষ্কার যে ফায়ার সেফটি ডিপার্টমেন্টকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। আমরা যে অবস্থায় আছি সেখানে থাকতে পারি না।’
নিউইয়র্কের পল স্মিথ কলেজের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস শেখ এএফপিকে বলেছেন যে শহরের অগ্নিনির্বাপক অবকাঠামো ব্যাপক দাবানল প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়।
কীভাবে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে তার কোনো তথ্য নেই। লস এঞ্জেলেস ডিপার্টমেন্ট অফ ওয়াটার অ্যান্ড এনার্জির প্রধানের কাছে এক চিঠিতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউজম বলেছেন, “এটা কীভাবে হল তার উত্তর আমাদের দরকার।”
