নিজস্ব প্রতিবেদক : রেলপথ নিরাপদ হোক মানুষের জীবনপথে। মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে আরামদায়ক ও নিরাপদ যানবাহন হচ্ছে রেল। বিশ্ব এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে। বাংলাদেশের মানুষও বিশ্ববাসীর সাথে একমত পোষণ করে আসছিলেন। আজও নিরাপদ মনে করেন বটে। নানাবিধ যৌক্তিক কারণে ‘ট্রেনে যাতায়াতে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এখনও নিম্নের আলোচনা প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা গৃহীত হলে, মানুষ যাতায়াতে রেলপথ ব্যবহার বা রেলমুখী হবেন।
মানুষকে রেলমুখী করতে প্রথমে প্রয়োজন নির্ধারিত সময়ে যেন যাত্রীরা ট্রেনে চেপে যাত্রা শুরু করতে পারেন এবং নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারেন। দ্বিতীয়ত: যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয় : নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৪র্থ : আসন সংখ্যা অনুপাতে যাত্রীদের টিকেট প্রদান করতে হবে। ৫ম : প্রতিটি বগির যাত্রী সংখ্যানুপাতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং পেসাবখানা-পায়খানা (বাথরুম) হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত। সেই সাথে হাত-মুখ ধোয়ার পৃথক ব্যবস্থা (বেসিন) থাকতে হবে। ৬ষ্ট : প্রতিটি রেলপথে থাকা প্রতিটি রেলক্রসিংয়ে গেটকিপার ও গেট থাকতে হবে। ৭ম : প্রতিটি ট্রেনে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত থাকতে হবে। এসব দাবি বাস্তবায়িত হলে মানুষ হবেন রেলমুখী। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা বললেও ‘রেলপথ নিরাপদ হোক মানুষের জীবনপথে’ এমন শিরোনাম হবে না।
প্রতিবেদনের এপর্যায়ে মানুষকে রেলমুখী করতে উত্থাপিত দাবি সাতটি কার্যকর করা অপরিহার্য। এই অপরিহার্য-দাবীগুলো বিষদ আলোচনা আজকের এই প্রতিবেদনে নয়। রেলপথ জনকল্যাণে এবং রাষ্ট্রীয় আয় বৃদ্বির অংশ সে বিবেচনায়ও নয়। যদিও বিগত ১৫-১৬ বছরের রেলপথের উন্নয়নের নামে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এতে মানবকল্যাণ কতটা হয়েছে এবং রেলপথ কতটা নিরাপদ হয়েছে, তাও এ মূহুর্তে আলোচ্য নয়। গণপ্রহরী জনগণের পক্ষে আরামদায়ক-নিরাপদ ও সময়ানুপাতিক চলাচলকারী রেলযাত্রী হতে আগ্রহী। সেদিক থেকে ঢাকা-গাইবান্ধা যাতায়াতের অভিজ্ঞতার কিঞ্চিত ইঙ্গিত স্বরূপ তথ্যের পাশাপাশি রেলক্রসিং নিয়ে দুটো কথা বলতেই হচ্ছে।
পাঠক, পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই জেনেছেন, গত ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলাধীন কালিকাপুর রেলক্রসিংটি অরক্ষিত থাকায় ট্রেনের ধাক্কায় ৭ জন অটোরিক্সা যাত্রী নিহত হয়েছেন। জনমতে গণপ্রহরী জেনে আসছে, দেখে আসছে সারাদেশের রেলপথে এমন অরক্ষিত রেল গেটের সংখ্যা অনেক। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কাকে দায়ী বলবেন। রেলবিভাগ, নাকি স্থানীয় সরকার বিভাগ, নাকি অবকাঠামো খাতের সংশ্লিষ্টি বিভাগ। তবে গণপ্রহরী মনে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত ও কাঠামোগত কারণে নিশ্চিতভাবে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের দুর্ঘটনা ও হত্যাকান্ড ঘটে আসছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ-পৌরসভা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ রেললাইনের উপর দিয়ে রাস্তা বা সড়ক নির্মান করেছে। রেল কর্তৃপক্ষের মতে, তাদের অনুমতি না নিয়ে যে সব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান সড়ক নির্মান করেছে। সে সব সড়ক বা রাস্তার সেই রেলক্রসিংগেটের নিরাপত্তা দেয়া তাদের দায় দায়িত্বের আওতায় নয়। তাহলে কি ট্রেনেও চলাচল করেন জনসাধারন এবং ওইসব রেলগেটও ব্যবহার করেন জনসাধারণ, সেহেতু জনসাধারনই কি দায়ি? জনগণকে দায়ী মনে করলে বক্তব্য নেই। বরং বলতে হয়, জাতির দুর্ভাগ্য। তা না হলে বলতেই থাকবে গণপ্রহরী রেলপথ নিরাপদ হোক মানুষের জীবনপথে।
প্রসঙ্গত: ট্রেনযাত্রী সাধারণের পর্যবেক্ষন সূত্র মতে ট্রেনের বগিতে থাকা বাথরুমগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বরং যাত্রী সাধারণ বাথরুম ব্যবহার করলে পেসাব-পায়খানা সরাসরি রেলাইনের ওপর পড়ায় পরিবেশ দৃষিত হয় এবং বায়ুদূষণ হয়। এটা কাম্য নয়।
এছাড়া, প্রতি বগিতে যাত্রীদের-সেবা দেয়ার জন্য একজন করে কর্মী নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে। তন্মধ্যে যতজন ট্রেনে থাকেন ও তারা বগিতে সেবা কাজে নিয়োজিত না থেকে ট্রেনের খাবার বগিতে বা কোন বগিতে একত্রিত হয়ে আড্ডা দিয়ে থাকেন। আবার খাবার বিক্রিতে মনোনিবেশ করে থাকে অনেকে। কেওবাটিকেট চেকিংও করে থাকেন। যেমন রেলষ্টেনে টিকেট বিক্রেতার বা টিকেট মাষ্টারের স্থলে অনেক স্টেশনে অন্যান্য কর্মীরা টিকেট বিক্রি করে থাকেন। যা নিশ্চিত সেবার পরিপন্থি।
পরিশেষে রেলকর্তৃপক্ষ এবং সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেয়া বাঞ্চনীয় যে, লোকাল ট্রেনে যারা চলাচল করেন তারাও দেশের নাগরিক এবং মানুষ। সে হিসাবে ট্রেন হতে হবে মানসম্মত এবং সেবা হবে যথাযথ। সতর্ক থাকতে হবে দুই বগির মাঝে বা ছাদে কোন মানুষ যেন বসে যাতায়াত না করেন। রেলপথ নিরাপদ হোক মানুষের জীবনপথে- এটাই জনগণ পক্ষে গণপ্রহরীর কাম্য।
