ভাষ্যকার : লণ্ডনে চ্যালেঞ্জের বৈঠকের সাফল্য কাম্য। দেশ এক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বৈরাচারের পতনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে লণ্ডনে অবস্থান করছেন এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তি ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে পূর্ব নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ভিত্তিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করছেন। এবং তিনি রাজা চালসের কাছ থেকে মর্যাদাপূর্ন হারমনি পদক গ্রহন করবেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সাথেও সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এসব কিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশের আপামর মানুষ অপেক্ষা করছেন সফররত প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যেকার সফল বৈঠকের আশা নিয়ে। কেননা, দেশের ক্রান্তিকালকে সুষ্ঠভাবে অতিক্রম করতে বৈঠকটি জাতীয় ক্ষেত্রে গুরুত্ববহ।
আর দেশের সরকার প্রধান এবং অন্যতম রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠক নিয়ে এ মুহুর্তে জাতির কামনা- প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের বৈঠকটিতে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি নয়; বৈঠকটি হওয়া চাই খোলামেলা আলোচনার জন্য দুজনের একান্ত বৈঠক। যা জাতিকে বিদ্যমান ক্রান্তিকালের অস্থিরতা থেকে মুক্ত করতে এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুষ্ঠ পরিবেশে জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারেন। যা দেশ, জাতি ও জনস্বার্থে এ মুহুর্তে অত্যাবশ্যক। আর অত্যাবশ্যকীয় শর্তটি পূরণের বৈঠকটি সফল হলে উগ্রহিন্দুত্ববাদী-মৌলবাদী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের অখন্ড ভারতের স্বপ্নে বিভোর-নিজ দেশে গণহত্যাকারী শাসকদের পরিচালিত ভারত এবং তাঁর এ দেশীয় সেবাদাস আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে। ফলশ্রুতিতে এক পর্যায় বাংলাদেশের জনগণের সাথে ভারতের জনগণের বন্ধুত্ব দৃঢ় হবে।
‘লণ্ডনে চ্যালেঞ্জের বৈঠকের সাফল্য কাম্য’ শীর্ষক এই নাদান ভাষ্যকারের ভাষ্যে স্বৈরাচারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দশ মাসকাল সময়ের পরও কেন দেশে ক্রান্তিকাল চলছে? এবং ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও তারেক রহমানের এ মুহুর্তের বৈঠক কেন এত গুরুত্ববহ বা চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করার হেতু কি? বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিকাশের ফলে দেশবাসী কমবেশি জেনেছেন ও জানছেন প্রধান দুটো প্রশ্নাত্তর। তদসত্বেও ‘নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা’- বলার মতো উত্তর দেয়া যাবে না। যদিও বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত প্রবাদে একটি কথা বলে নিয়ে অতি সংক্ষেপে প্রশ্নাত্তর দিতে চেষ্টা করবো মাত্র। প্রবাদ বলছে, ‘জ্ঞানীর জন্য ইশারাই কাফি’।
বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে অদ্যাবধি সময়কালে অন্যতম বিশ্বনন্দিত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং এ জন্য দেশবাসীও গর্বিত। প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের আধিপত্যবাদী সম্প্রসারণবাদী ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী- মৌলবাদী নরেন্দ্র মোদি সরকারের ভারতের অনুগত রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহারের বিরুদ্ধে ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে ভারত এবং তার এ দেশীয় সেবাদাসের তর্জনগর্জন উপেক্ষা করে ভারতের হারানো স্বর্গ ফিরে পাওয়ার সকল প্রকার ষড়যন্ত্রমুলক অপতৎপরতা রোধে বুকটান করে দাড়ানোর মধ্য দিয়ে; অন্যান্য সকলের সাথে বন্ধুত্বের নীতিতে চীন, মার্কিনসহ বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন ও সার্বিক সহযোগীতার স্বীকৃতি লাভ করায় দিশেহারা ভারত। যদিও কতিপয় বিএনপি নেতার ভারত প্রীতি ও লুটেরা অর্থ পাচারকারী আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের গায়ে বিএনপির লেবাস পরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় নীল নকশা বাস্তবায়নে প্রকারন্তরে ভূমিকা পালন করা নিয়ে এই নাদান ভাষ্যকার গত ৩১ মে গণপ্রহরীর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ সংখ্যায় লিখেছিলাম ভারতীয় ভূতের আছরে বিএনপি কি দিশেহারা (?) জনমনের এমন প্রশ্নও ড. ইউনুসকে বিচলিত করেছে। এ সুযোগও নিয়েছে ভারত ও তার এ দেশীয় দোসর আমলাসহ ষড়যন্ত্রকারীরা। বিএনপির চিহ্নিত এসব নেতাদের কয়েকজনতো তাদের আচার-আচরণ ও কথা বার্তায় বিএনপির মুল চালিকা শক্তি যেন ‘তারাই কজন’ এমনটা প্রদর্শন করে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। যা লণ্ডনের বৈঠকটিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বিএনিপর নীরব সমর্থকরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। উপরন্ত বিএনপির কিছু কিছু নেতাকর্মী চাঁদাবাজী-দখলবাজি ও প্রভাব বিস্তারকারী ভূমিকা উদাহরণ হয়ে বিএনপি ও আওয়ামীলীগসহ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ চিহ্নিত হচ্ছে। এ কারণে বৈঠকটি চ্যালেঞ্জে রূপ নিয়েছে।
কেন লণ্ডনে চ্যালেঞ্জের বৈঠকের মুখে ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও তারেক রহমান? এ প্রশ্নের মূলে রয়েছে- ভারতের ঘৃণ্য নীল নকশার ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে একাত্তরের স্বাধীনতার ঘোষক ও ভারতের দখলকৃত বিশাল তালপট্টি দ্বীপ উদ্ধারকারী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির লণ্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিক দলীয় কার্যক্রম এবং নেতাকর্মীদের ভূমিকা পর্যবেক্ষণে রেখে ইতিমধ্যে বেশ কজনকে দল থেকে বহিষ্কার করলেও তাঁর পর্যবেক্ষণ বিদ্যমান থাকাকালে এবং ব্যাপক জনসমর্থন থাকা স্বত্ত্বেও দু’চারজন নেতা কিভাবে ভারত প্রীতিতে এত অস্থির হয়ে উঠার সাহস পেলেন ইত্যাদি। বিএনপি সমর্থক এবং দেশপ্রেমিক সচেতন জনমনে সন্দেহ দানা বাধছে। ফলে ‘বিশ্বাস করি বাকী দেই না’- দোকানদারের এমন উক্তির প্রবাদ তাদের মনে দোলা দিচ্ছে। এ কারণেই লণ্ডনের বৈঠককে চ্যালেঞ্জের মুখে বলে মনে করছেন সচেতনরা। তারেক রহমানের প্রতি বিশ্বাস আছে কিন্তু বাকী দেই না-এর মত অবস্থা। এটা নিশ্চিত যদি শহীদ রাষ্ট্রপতি ও আপোষহীন নেত্রী খ্যাত বেগম খালেদা জিয়ার মতো জনআকাঙ্খার ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী মনোভাব ধরে রাখেন তারেক রহমান ও বিএনপি তাহলে ভারতের সকল নীল নকশার ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা মুখ থুবরে পড়বে। কেননা, আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী অন্যান্য দলগুলো এক্ষেত্রে ঐকমত্যে রয়েছেন।
আশার দিক হলো- বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন-শহীদ জিয়ার প্রাণ কেড়ে নেয়ার মূলে ভারতের দখলকৃত ‘তালপট্টি উদ্ধার’ অন্যতম কারণ এবং দ্বিতীয়ত; ভারতের অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত না হওয়া এবং তাঁরও নির্বাচনে হেরে যাওয়ার মূলে ভারতীয় ষড়যন্ত্র। সেই আপোষহীন নেত্রী কতিপয় নেতার তর্জন-গর্জনে জনমতের বিভ্রান্তি উপলব্ধি করেই অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে দুরুত্ব সৃষ্টি না করার নিদের্শ দিয়েছেন। এবং সূত্র মতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে লণ্ডন সফরেও প্রধান উপদেষ্টার সাথে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাক্ষাত ও বৈঠকের ব্যবস্থা। এছাড়া তারেক রহমানের রাজনৈতিক শিষ্টাচারবোধও রয়েছে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে।
পরিশেষে লণ্ডনের বৈঠকের সফলতা কামনা করে আগের ভাষ্যের একটি বাক্য লিখে ইতি টানতে চাই, বৈঠকে ঐকমত্য চাই, নয়তো জাতয়ি সরকার গঠনের বিষয় সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে অনিহা কাম্য নয়। কারণ ভারত মরিয়া, নিজ দেশেও গণহত্যা চালাচ্ছে। তাই এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় ঐক্যের বিকল্প নেই। তবে ঐকমত্যের প্রয়োজনে নির্বাচন এক-দু’মাস আগপাছ হতেই পারে আর ঐকমত্যে ঘোষিত সময়ও নির্বাচন হতে পারে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যূত্থানে নেতৃত্বদানকারী বীরদের বীরত্বকে কোনোভাবেই যেন ছোট করা না হয়। ঐকমত্যে সবাই খুশি হবেন। এ বিশ্বাস গণপ্রহরীর।
আরও পড়ুন- ভারতীয় ভুতের আছরে বিএনপি কি দিশেহারা (?)
