বর্তমান বিজ্ঞানের যুগ এবং উন্নত প্রচার ব্যবস্থার কারণে স্বাস্থ্য বিষয়ে অনেকটা সচেতন আগের দিনের তুলনায়। সেদিক থেকে স্বাস্থ্য রক্ষায় চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু দুর্ভাগ্য জাতির, আজও তা তাঁদের ভাগ্যে জোটেনি (!) স্বাস্থ্য বিষয়ক সরকারের মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতো শব্দ দূষণ ও ধুমপান প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছে। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাও এ কাজ করছে। অথচ শব্দ দূষণে বিশেষত অতিষ্ঠ নগর-শহর জীবন। আর ধুমপানেতো আক্রান্ত গোটা দেশ। এই চিহ্নিত জীবন সমস্যার- শব্দদূষণ ও ধুমপান থেকে মানুষকে রক্ষা করা, জরুী হয়ে পড়েছে।
আলোচনার জন্য আলোচনা নয়। মূলত: আমরা এই সমাজের ও রাষ্ট্রীয় জীবনের একেকজন। তাই জীবন দিয়ে দেখা ও উপলব্ধি করা কথাতো বলতেই হবে। শব্দ দূষণ ও ধুমপান প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলো বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয়ের সাথে শ্রম ও মেধাও ব্যয় করছেন। শতভাগ কাজ হয়েছে- ‘না’ বললেও দশভাগও কাজ হয়নি, তা বলবো না। তা হয়েছে বলেই দেশের সহজ সরল সাধারাণ মানুষ সংস্থা দুটোর পক্ষের প্রচার শুনেছেন। এবং তা নিয়ে পরস্পর পরস্পর আলোচনাও করছেন বিশেষত: ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে। আলোচনায় বেরিয়ে আসছে আলোচিত জীবন সমস্যা থেকে রক্ষায় শব্দদূষণ ও ধুমপান প্রতিরোধে ছাত্রদেরই অর্থাৎ শিক্ষার্থীদেরই মাঠে নামতে হবে। কেননা, শব্দ দূষণ ও ধুমপান থেকে রক্ষা জরুরী।

সরকারী-বেসরকারি সংস্থা দুটোর প্রচার থেকে যে দশভাগ কাজ হয়েছে, তা কিন্তু কথার কথা নয়। সংস্থা দুটোর পক্ষে চিকিসৎক-গবেষকসহ বিশিষ্টজনদের বক্তব্য থেকে আত্মস্থ করেছন। হুবহু সবই আত্মস্থ না করতে পারলেও একেবারে কম করেছেন তাও নয়। যেটুকু করেছেন তা সারসংক্ষেপে তুলে ধরেই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর বর্ণনা করবো। সারসংক্ষেপে উল্লেখ্য, ধুমপানকে বিষপান আখ্যায়িত করার বিষয়টিকে আত্মস্থ করেছেন। এবং শব্দ দূষণকে শ্রবন শক্তির জন্য যে মারাত্মক হুমকি তা বুঝেছেন। একইভাবে তাঁরা বুঝেছেন কলকারখানায় দুষণ সৃষ্টিকারী একরকম তীব্র শব্দের উৎপত্তি হয়। আবার বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মটর সাইকেলের হর্ণের তীব্র শব্দসহ যানজটও তীব্র শব্দের সৃষ্টি করে থাকে। রাজনৈতিক – সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সভ-সমাবেশ এবং সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত সাউন্ডবক্সসহ বিভিন্ন প্রচার কাজে ব্যবহৃত মাইকের তীব্র শব্দও মারাত্মক দূষণের কারণ। মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচার আচরণ উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা সৃষ্টি শব্দ দূষণে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যৌক্তিক শিক্ষাগুলোর মধ্যে শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে যা রয়েছে। তা হলো মানুষের কান সংবেদনশীল হওয়ায় কানের পর্দাকে নষ্ট করে দেয় ও দিতে পারে। শিশুদের শব্দের অধিক তারতম্যেল জন্য বৃদ্ধ বয়সে তাদের কানে নানারকম সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। শিশুদের মানসিক বিকাশ ব্যহত করছে শব্দদূষণ। এমনকি ঘুমের ব্যঘাতসহ দুশ্চিন্তার, উগ্রতার পাশাপাশি অন্যান্য বিরুপ প্রতিক্রিয়াও ঘটতে পারে ও ঘটে থাকে শব্দ দুষণের কারণে।
‘ধুমপান বিষপান’- এ সত্যকে সংস্থা দুটো পক্ষে বিশিষ্টজনদের প্রচার মূলক হলেও শিক্ষা মূলকহেতু বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখার তাগিদ বলে জনগণ মনে করেন। সেদিক থেকে সমাজ জীবন থেকে দেখে-শুনে ও জেনে অর্জন করছেন শিক্ষা। তাঁরা বুঝেছেন বাহির থেকে কোনো মানুষকে দেখে বোঝা না গেলেও একজন মানুষ ধুমপানে ভেতরে ভেতরে নি:শেষ হয়ে যান ও যাচ্ছেন। যারা চিকিৎসা-বিজ্ঞানের প্রমাণিত ‘সত্যে’র ধুমপান করা আর বিষপান করা একই মনে করে, ধুমপান ত্যাগ করবেন না বা ছেড়ে দিবেন না, তার জন্য করুণ পরিণতি অপেক্ষমান। কেননা, ধুমপানে সৃষ্ট রোগ মানুষের প্রতি অঙ্গ বিকল করে দেয়, নি:শেষ করে দেয়।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালে এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করেছে, বিশে^র প্রায় ৮৭ লাখ মানুষ সরাসরি তামাক সেবনে মৃত্যুবরণ করেন। সেমতে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশের বেশি মানুষ তামাক দিয়ে তৈরী দ্রব্যের বিড়ি, সিগারেট, গুল, তামাক পাতা (সাদা পাতা) ও জর্দায় আসক্ত। এই তামাক দ্রব্য ব্যবহার ও ধুমপানের কারণে আমাদের দেশে বছরে প্রাণহানি ঘটে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের। নেশাদায়ক তামাক ‘ধূয়াহীন’ ব্যবহার বা ‘ধুমপান’ দু’পথই বিষপানের পথ।

বিষ আখ্যায়িত তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ধুমপায়ীদের ধূয়া যেমন বিষ ছড়ায় তেমনি তুলনামূলক কম হলেও গুল-জর্দা প্রভৃতির গন্ধও বিষ ছড়ায়। ই-সিগারেটও ক্ষতিকর বটে। এসবে আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন মানুষ। আর ক্ষতি নয়; নিজেকে বাঁচাতে, ধুমপানের ক্ষতিকরের হাত থেকে পরিবার বাঁচাতে ও সার্বিকভাবে দেশকে বাঁচাতে ধুমপান পরিত্যাগ করুন, তামাক বর্জন করুন। নিজে বাঁচলে পরিবার বাঁচাতে ও দেশ বাঁচাতে কাজ করতে পারবেন।
পরিশেষে, আমরা মনে করি এ বিষয়ে শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। দেশের জনগণ জুলাই আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পথে সফল গণঅভ্যূত্থানের মতোই জনগণ-ছাত্র সমাজকে চাচ্ছেন মাঠে। শব্দদূষণ ও ধুমপানের ব্যাপকতর ক্ষতি যেমন বুঝেছেন মানুষ, তার জীবন দিয়ে । তেমনি জীবন দিয়ে জুলাই আগস্টের গণঅভ্যূত্থানে থেকে অর্জিত উপলব্ধি থেকে শব্দদূষণ ও ধুমপান প্রতিরোধেও শিক্ষার্থীর আবশ্যকতা বুঝেছেন।
প্রসঙ্গত: আশার দিক হলো-১৬ অক্টোবর ২০২৪ গুলশানের সিএমকে সেন্টারে জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট আয়োজিত ‘চ্যালেঞ্জেস ফর গার্লস ইন এডুকেশন অ্যান্ড ওয়েজ টু ওভারকাম দেম’ শীর্ষক অ্যাডভোকেসি ডায়ালগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ, সেন্টমার্টিনসহ উপকূলীয় এলাকায় দূষণ প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হবে। এ কাজে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তরুনদের সহযোগিতাও নেওয়া হবে।