Sun. Jul 13th, 2025
 শিল্পপতি ব্যবসায়ী উদ্বেগে শ্রমজীবিরা সংকটেশিল্পপতি ব্যবসায়ী উদ্বেগে শ্রমজীবিরা সংকটে

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিল্পপতি ব্যবসায়ী উদ্বেগে শ্রমজীবিরা সংকটে। পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় যে কোনো দেশের উন্নয়নে দেশের শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বানিজ্যের উন্নয়নই অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু ডলারের উচ্চমূল্য বা ডলার, সংকট বিদ্যুৎ-গ্যাসের অপর্যাপ্ততা, মুদ্রাস্ফীতি ও শ্রমিক অসন্তোষের পাশাপাশি পুঁজির ঘাটতি ও সুদের উচ্চহার শিল্প-বানিজ্যে সংকট সৃষ্টি করেছে। উপরন্তু সংকট মোকবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ উপেক্ষা করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা উদ্বেগে।

অপরদিকে, শতকরা ৮৫ জন কৃষকের কৃষিনির্ভর দেশটিতে শুরু থেকেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূমিহীন-গরীব সর্বহারা কৃষকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার প্রয়োজনবোধ করে না রাষ্ট্র ব্যবস্থা। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসী সরকারের সাথে ভারতের সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক স্বউদ্যোগে কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নেয়াও সম্ভব ছিলনা। উপরন্ত ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রীয় তহবিল তসরুপ ও ত্রান-সামগ্রীসহ সর্বক্ষেত্রে লুটপাট ও দখল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় কর্মসংস্থানের যথাযথ উদ্যোগ গৃহীত হয়নি। এতে কৃষক কমেছে, জমি কমেছে; কর্মসংস্থানও যথাযথ হয়নি। ফলশ্রুতিতে শ্রমজীবিরা সংকটে।

এদিকে, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (প্রেট্রোবাংলা) গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৩০ টাকা পচাত্তর পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারি কমিশনের (প্রেট্রোবাংলা) কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মতে, নানাবিধ সংকটে এমনিতেই উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে এবং নতুন উদ্যোক্তারাও প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পারবে না বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছন। শিল্পপতি ব্যবসায়ী ‘রা উদ্বেগের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন। যা শিল্প-ব্যবসার স্বার্থে কাম্য নয়।

শিল্পপতি ব্যবসায়ী উদ্বেগে শ্রমজীবিরা সংকটে। বিষয়টি নিয়ে অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞদেরসহ বিভিন্ন সচেতন অভিজ্ঞ মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। তাঁরা ভাবছেন, শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বানিজ্য চালু রাখা এবং শ্রমজীবিদের সংকট মোকাবিলা নিয়ে। ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা ভাবছেন, রড-সিমেন্টের উৎপাদন ও চাহিদা কমার বিষয় নিয়ে। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ বিশিষ্ট-বিশেষজনদের মধ্যে শিল্পপতিরা উদ্বেগের বিষয়ে মতামত দানকারীদের দু’চার জনের সংক্ষিপ্ত মতামত তুলে ধরছি। যাতে বিশিষ্টজনদের মতামত সরকারের বিবেচনায় সহায়ক হয় এবং সুষ্ঠ সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন।

পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রাসঙ্গিক মতামতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি শুধু শিল্পকারখানার জন্য নয়, দেশ ও জনগণের জন্য অশনিসংকেত বলে উল্লেখ করেছেন।

গ্যাসের দাম বাড়ানোকে গ্যাস ভিত্তিক নতুন শিল্পোদ্যোক্তাদের অন্তরায় হবে উল্লেখ করে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেছেন, পুরনো শিল্পপতিদের যেখানে খরচ পড়বে ৩০ টাকা সেখানে নতুনদের খরচ পড়বে ৭০ টাকা।

 দেশের অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম ‘এমনিতেই অস্থিরতা ও সংকটের কারণে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেছেন পোশাকখাতে অর্ডার কমেছে’।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই- এর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগের বিরোধীতার সাথে সতর্ক করতে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি গ্যাস চুরি হোক, গ্যাসের অপচয় হোক ও অবৈধভাবে ব্যবহার হোক-তা চাই না উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা চাইনা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে সরকার ক্রমাগত ভুর্তকী প্রদান করুক।

উল্লেখিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের বানিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশকে যৌক্তিক উল্লেখ করে শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ন্যায্য প্রস্তাব দিলে যেটা যৌক্তিক সেটাই বিবেচিত হবে।

‘শিল্পপতি ব্যবসায়ী উদ্বেগে শ্রমজীবিরা সংকটে’ শীর্ষক আলোচনার দ্বিতীয় প্যারায় উল্লেখিত বিবরণের প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষন করেই শ্রমজীবি ভূমিহীন-গরীব সর্বহারা মানুষের আক্ষেপের একটি কথা তুলে ধরছি। তাঁরা আক্ষেপ করে বলেন, গরীবের দুঃখের কথা কে শুনবে কাকে শোনাবো! শিল্পপতি ব্যবসায়ী ও বড় আমলাদের কথা আলাদা আলাদা উল্লেখ না করে সোজা-সরল কথায় বলেছেন, বড়লোকদের কথা সবাই শোনেন। কারণ, যারা শুনলে কাজ হবে তারাওতো একই ক্লাসের। এইতো বড় ব্যবসায়ীরা গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে হতাশা প্রকাশ করলে সরকারের বানিজ্য উপদেষ্টা তাদের হতাশা প্রকাশ যৌক্তিক এবং তাদের কাছে প্রস্তাব চেয়েছেন।

কিন্তু আমাদের (কৃষকদের) পূর্ব-পুরুষরা এবং বয়স্করা শতকরা ৮৫ জন কৃষকই কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিলেন। তাঁদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান না করে কৃষি জমিরই সর্বনাশ করা হয়েছে ও হচ্ছে। তাইতো দু:খের ঘানি টেনেই চলছেন তাঁরা।

সর্বজন স্বীকৃত যে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হলে মূল্যস্ফীতি হবে ও তা বাড়বে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে শ্রমনির্ভর গরীব-অসহায় মানুষের সবার উপর খরার ঘা- এর মতো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে। তাতে কষ্টের বোঝা বাড়বে সাধারণ মানুষের। এরই মধ্যে শীতে কাবু, কর্মের অভাব ও কর্ম করাও কষ্টসাধ্য; তদুপরি জীবন জীবিকার জন্য কাজ করে একটু সাশ্রয় মূল্যে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ)-এর পণ্য কিনতে পারতেন। তন্মধ্যে টিসিবি হঠাৎ করে চাল বিক্রি বন্ধ করে দেয়ায় কোটি পরিবারের মাথায় যেন বজ্রাঘাত পড়েছে। এ পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষায় চাল বিক্রি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অধিক সংখ্যক টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্র চালু করতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন-এ আশাবাদ জনগণের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *