ইটিভি ও আব্দুস সালাম প্রসঙ্গে সংগ্রামে দৃঢ়তা থাকলেও আক্ষেপের কমতি নেই
সংগ্রামে দৃঢ়তা থাকলেও আক্ষেপের কমতি নেই। সে আক্ষেপ কোনো দুর্বলতা ভিত্তিতে নয়্ কেননা, দুর্বলতা ভিত্তিতে সংগ্রাম করা যায় না। আবেদন নিবেদন করা যায় মাত্র। সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ফসল যে দেশ সে দেশের প্রথম টেরিস্টিয়াল টিভি চ্যানেল বেআইনী দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করার সংগ্রামকে দু:সাহসী সংগ্রামই বলতে হয়। সেই সংগ্রামে বিজয় অর্জনে শুধু দৃঢ়তা নয়, জীবনকেও বাজি রাখতে হয়েছে চ্যানেলটির প্রধান ব্যক্তিত্বকে। সে নিয়েই ইটিভি ও আব্দুস সালাম প্রসঙ্গ বিষয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
‘সংগ্রামে দৃঢ়তা থাকলেও আক্ষেপের কমতি নেই’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন যাকে ঘিরে, তাঁর আত্মজীবনে তথা ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভূমিকা ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব হয়নি। এবং শিক্ষা জীবন শেষে কর্মজীবনে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত আছেন কিনা, তা জানা নেই। তবে তাঁর সংগ্রামে-যে দৃঢ়তার স্বাক্ষ্য রেখেছেন তাতে রাজনৈতিক ভূমিকা জানার প্রয়োজনও মনে করছি না। কারণ, দীর্ঘ সময়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দখলমুক্ত করে ইটিভি-তে তাঁর দখল স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেই প্রতিষ্ঠানের নামই বলে দিয়েছে, তাঁর হৃদয়ে লালিত রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ। যা, তাঁকে সংগ্রামে দৃঢ় রেখেছে এবং শেষ পর্যন্ত বিজয় এনে দিয়েছে।
আমরা যদি বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের প্রেক্ষাপটের দিকে তাকাই, তাহলে সোজাসাপ্টা কথায় বলতে হবে এবং একই সাথে স্মরণ করতে হবে ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের একুশে ফেব্রুয়ারীর বীর শহীদদের। যে বীর শহীদদের পথ বেয়ে উনসত্তরের বীর শহীদদের রক্তমিশ্রিত গণঅভ্যূত্থান। এবং এসব আন্দোলন সংগ্রামের রক্তপথেই এসেছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। আর এক নদী শহীদের রক্ত আর সেই রক্তে সম্ভ্রম হারানো এবং স্বজন হারানোদের চোখের পানি মিশে যে রক্তস্রোতের সৃষ্টি হয়। সেই রক্তস্রোতে গা ভাসিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজির মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনেন। সে কারণেই মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত না হলেও অর্জিত হয় রক্তার্জিত স্বাধীন দেশ-বাংলাদেশ।
রক্তার্জিত বাংলাদেশের সূচনার সংগ্রাম ও শহীদের আত্মবলিদান বা আত্মত্যাগের ২১ শে ফেব্রুয়ারী এ ক্ষেত্রে মূল ভিত্তি। সেই একুশকে উর্ধ্বে তুলে ধরতেই জাতিকে উপহার দিয়েছেন একুশে টেলিভিশন। যিনি দিয়েছেন তিনি আব্দুস সালাম, চেয়ারম্যান ও সিইও, একুশে টেলিভিশন (ইটিভি)। স্বাধীন সাংবাদিকতার বিশ্বাসী প্রধান নির্বাহী আব্দুস সালাম একুশে টেলিভিশনকে স্বাধীন সাংবাদিকতার উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এতটা নিশ্চিত হওয়ার পরও শিরোনাম কেন ইটিভি ও আব্দুস সালাম প্রসঙ্গে বলছে ‘সংগ্রামে দৃঢ়তা থাকলেও আক্ষেপের কমতি নেই’।
একজন মানুষ, মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগ্যদের পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে জাতীয় অগ্রগতিতে সার্বিক ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছিলেন। তাঁর এগিয়ে চলার পথে বাঁধা কেন? কেনইবা সংগ্রামে দৃঢ়তা থাকা সত্বেও আক্ষেপের বিষয় স্থান পায়। এ নিয়ে বিস্তর আলাপের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কেননা, ইতিমধ্যে আমরা সবাই নিশ্চিত হয়েছি, দেশের প্রথম টেরিস্ট্রিয়াল টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) এবং ইটিভি চেয়ারম্যান আব্দুস সালামকে কেন্দ্র করেই শিরোনাম।
আলোচনার মধ্য দিয়েই যেহেতু ‘সংগ্রামে দৃঢ়তা থাকলেও আক্ষেপের কমতি নেই’ শিরোনাম কেন্দ্রিক প্রশ্ন উত্থাপিত। সেহেতু সে বিষয়ে আলোকপাত করতে হবে। আলোচনার স্বার্থে উপরের লেখায় উল্লেখিত কথাকে পুনঃউল্লেখ করতে হচ্ছে। তাহলো, ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত না হলেও হয়েছে, তা রক্তার্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ’। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত হলোনা কেন। এর ব্যাখ্যাও হবে নতুন করে বাস্তবসম্মত যৌক্তিক তথ্য সম্বলিত ইতিহাসের একটি অধ্যায়। এখানে যা সম্ভব নয়।
সোজসাপ্টা কথায়ই দু’চার কথায় বলা যায়, ভারতরে অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তির উদ্দেশ্য এবং তা পূরণে ক্ষমতাধর ব্যক্তির নেতৃত্বাধীন দলকে (আওয়ামীলীগ) একমাত্র দলে পরিণত করার লক্ষ্যে দেশ পরিচালনা। এবং সে জন্যেই দেশের যাত্রালগ্ন থেকেই যেন সংবিধান কাটছাট শুরু করা।
পর্যায়ক্রমে, ক্ষমতাসীন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা তাঁর পিতাকে দেবতুল্য প্রমাণ করে পিতাকে রাজার আসনে (কাগজে-কলমে) অধিষ্ঠিত করার স্বপ্নে নিজের পরিবারকে রাজপরিবার এবং তাঁকে রাজরানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ‘ফ্যাসিজম’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশটাকে লুটপাট করে ফোকলা করে ফেলেন। ক্ষমতা ও অর্থসম্পদ জোড়ে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে যাওয়ার অংশ হিসেবে দখলে নেয়া ইটিভি (একুশে টেলিভিশন)।
কিন্তু পতিত স্বৈরাচারের শাসনামলে সবেমাত্র আলোচিত, সোজা-সাপ্টা কথায় বর্ণিত স্বপ্ন পূরণের মাহাত্ম যেন ফাঁস না হয়, সেজন্য কতনা আইন জারি, কতনা খুন-গুম, মিথ্যা-বানোয়াট মামলাসহ জেল-জুলুম ভোগ করতে হয়েছে হাজারো-লাখো মানুষকে, দেশবাসী তা সবাই অবগত। এমনিতর অপতৎপরতা অব্যাহত রাখতে ইটিভি ও ব্যাংক-বীমাসহ কতনা প্রতিষ্ঠান দখল করে লুট পাট করেছে তাও জানেন দেশবাসী।
ইটিভির কণ্ঠরোধ করতে ইটিভি দখলের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রধান আব্দুস সালামকে মিথ্যা-বানায়োট মামলায় কারাভোগসহ নানা ধরনের নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। পতিত স্বৈরাচার, লুটেরা, অর্থ পাচারকারী এস আলম গ্রুপকে ইটিভি দখল করে দিতে, শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী আব্দুস সোবহান গোলাপের নেতৃত্বে সকল প্রকার ক্ষমতা দিয়ে পাঠিয়ে ইটিভি দখল করে নেয়।
কিন্তু একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) চেয়ারম্যান ও নির্বাহী প্রধান আব্দুস সালাম হামলা-মামলা এবং অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেই তাঁর মহৎ উদ্দেশ্য পালনের ‘মাধ্যম’ প্রতিষ্ঠান-ইটিভি বেআইনী দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধারে দৃঢ়তার সাথে সংগ্রাম করতে করতে সফল হয়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম করণে যেমন আন্দোলন সংগ্রামের মাইল ফলক একুশকে তুলে ধরেছেন। তেমনি ৫ আগষ্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংগ্রামী-ত্যাগী আব্দুস সালাম, তাঁর গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানও ফিরে পান। তিনি মহৎ উদ্দেশ্যে সফলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যান সামন থেকে আরও সামনে-এ কামনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ১৯৮১ সালের মহান মে দিবসে ১ মে আত্মপ্রকাশিত ‘গণপ্রহরী’ পরিবারের।

প্রধান সম্পাদক, গণপ্রহরী