গণপ্রহরী ডেস্ক : সংস্কার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঐক্য ছাড়া সংস্কার বা সংস্কার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে। ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন শীর্ষক সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন
ড. ইউনূস আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ ভোটের প্রস্তুতি নেওয়া। নির্বাচনের তারিখ না পাওয়া পর্যন্ত নাগরিকদের এই প্রক্রিয়ায় সময় দিতে হবে না। তবে সংস্কার কাজে সকল নাগরিককে অংশগ্রহণ করতে হবে। যারা ভোটার তারা অংশ নেবেন, সেই সাথে যারা আগামীতে ভোটার হবেন তাদের সংস্কারের কাজে পুরোপুরি নিয়োজিত হতে হবে।
নাগরিকদের জন্য সংস্কারের কাজ সহজতর করার জন্য ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা জানান, জানুয়ারিতে তাদের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, “প্রত্যেক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব হল মূল বিকল্পগুলি চিহ্নিত করা এবং একটি বিকল্প জাতির কাছে সুপারিশ করা।” প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে কীভাবে ভবিষ্যত গঠন করা হবে সে বিষয়ে সুপারিশ করা, নাগরিকদের পক্ষে তাদের মতামত নির্ধারণ করা সহজ করে।
কিন্তু কমিশন রিপোর্টের সুপারিশ আপনাদের-আমাকে মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এ জন্য জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন গঠন করা হয়েছে শেষ পর্যায়ে।
ড. ইউনূস বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশের রূপান্তর পর্বে প্রবেশের অধিকার অর্জন করেছি।। এই পরিবর্তনের দ্রুত এবং সফল বাস্তবায়নের জন্য সমস্ত শক্তি উৎসর্গ করার জন্য একটি অঙ্গীকার করা আবশ্যক। ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আমাদের কাঙ্খিত রূপান্তরের লক্ষ্য হবে সব ধরনের বৈষম্যের অবসানের রাজনৈতিক সংগঠন নিশ্চিত করা, এদেশে গণতান্ত্রিক ও নাগরিক সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন ছাড়া জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগ অর্থবহ হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশকে সকল আদর্শভিত্তিক লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গভীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেছে।। আমরা আবারও আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
সংলাপে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন- এই তিনটি লক্ষ্যের কোনোটি ছাড়া কোনোটাই সফল হতে পারে না।ঐক্য ছাড়া সংস্কার বা সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারে না। এছাড়াও আমরা ভুলতে পারি না যে আমাদের শিক্ষার্থীরা সাহসিকতার সাথে শিশু হত্যাকারীদের এবং পৈশাচিক হত্যাকারীদের মোকাবেলা করেছে। মানবতার বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুরতার বিচার করতে হবে।’
জুলাইয়ের অভ্যুত্থান শুধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করেনি, আমাদের স্বপ্নকে আরও সাহসী করে তুলেছিল। বাকহীন বাংলাদেশ শক্ত কণ্ঠে কথা বলার শক্তি ফিরে পেয়েছে। এই শক্তিশালী কণ্ঠ আবার ঐক্য গঠনের জন্য উত্থাপিত হয়েছে,’ যোগ করেন ড. ইউনুস।
অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, “যে কোনো স্বল্প আয়ের পরিবারে জন্মগ্রহণ করুক না কেন, প্রতিটি নাগরিক, সে নারী-পুরুষ হোক না কেন, কোনো বাধা ছাড়াই রাষ্ট্রের সংগঠনে তার সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটিয়ে যে কোনো স্তরে উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে হবে। অথবা তিনি যে ধরনের ক্যারিয়ার চান তা বেছে নিতে পারেন। একটি রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ থাকবে যেখানে এই সংখ্যালঘু-পরিসংখ্যানগত পরিচয় অপ্রচলিত হয়ে পড়বে। সবার একটাই পরিচয়- আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্র আমাকে আমার সব অধিকার দিতে বাধ্য।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে আমরা ঐতিহাসিক আত্মত্যাগের বিনিময়ে একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছি। আমরা যদি এই সুযোগটি গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক বা অক্ষম হই তাহলে বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।
