Tue. Aug 19th, 2025
সকলের স্বপ্নকে ঐকমত্যের স্বপ্নে পরিণত করুন নয়তো -

সকলের স্বপ্নকে ঐকমত্যের স্বপ্নে পরিণত করুন নয়তো -। ‘ স্বপ্ন নিয়েই মানুষ। স্বপ্ন যেমন থাকতে হবে তেমনি স্বপ্ন পূরণে লক্ষ্যও থাকতে হবে । আর সেই লক্ষ্য অর্জনে থাকতে হবে-বাস্তবতার আলোকে যৌক্তিক পরিকল্পনা। এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তরিক হতে হবে; এক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে শ্রম ও মেধার যথাযথ ব্যবহারে মনোযোগীও হতে হবে। তাতে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে  চলার পথ প্রশস্ত হতে থাকবে। এবং এক পর্যায় লক্ষ্য অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন পূরণ হবে। কিন্তু সে ঐকমত্যের প্রয়োজন যদি হয়-‘দেশের স্বার্থে, জাতীয় ঐক্যে’র ? তাহলে দেশকে প্রাধ্যন্য দিয়ে অর্থাৎ দেশের স্বার্থে সকলের স্বপ্নকে ঐকমত্যের স্বপ্নে পরিণত করতে হবে।

 দেশ, জাতি ও জনগণের স্বার্থে সকলের স্বপ্নকে ঐক্যমত্যের স্বপ্নে পরিণত করতেই হবে। নয়তো দেশ, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। সে ঝুঁকি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন থেকে কঠিনতর  হতে পারে। যদি না তাৎক্ষনিকভাবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সকলে একযোগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বুকটান করে ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারে। তবে চব্বিশের চেয়েও বেশী রক্তক্ষয় ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল সমূহকে-‘ব্যক্তির উর্ধে সংগঠন আর সংগঠনের উর্ধ্বে দেশ’- এই অমর বাণীকে প্রধান্য দিয়ে দেশের প্রশ্নে সকলের স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু ‘দেশের স্বার্থকে’ বিবেচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার ব্যর্থ হলে বড় দলকেই উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থাৎ এ পর্যায়ে বিএনপিকে উদ্যোগ নিতে হবে।

তবে হ্যাঁ, উদ্যোক্তার অভাবে বা উদ্যোক্তার প্রতি আস্থার অভাব হলে ইতিহাসের স্বাক্ষ্য মতে-‘জনগনই রাজপথে নেমে আসবে; একাত্তর ও চব্বিশ তার প্রমাণ। শুধু সমাজ বদলের লক্ষ্যে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার ‘ডাক’ থাকতে হবে। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যকে সামনে আনতে পারলেতো কথাই নেই। ‘জনগণই নেতা ও জনগণই রাজপথের সৈনিক’ হবেন। যেমন ১৯৭১ সারের ২২ ফেব্রুয়ারী রাজধানীর পল্টন ময়দানে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ-শিক্ষাবিদ ও চিন্তক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ (সেদিনের ন্যাপ-ভাসানীর সহযোগী ছাত্র সংগঠন পূর্ববাংলা ছাত্র ইউনিয়নের সংগ্রামী সভাপতি) প্রকারন্তরে বামদলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ইসুকেন্দ্রিক কর্মসূচি হিসেবে ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা’র-রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো ভিত্তিক ১১ দফা কমৃসূচী ঘোষনা করেন বটে। কিন্তু বামদলগুলো বৃহৎ স্বার্থে মতানৈক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সশস্ত্র সংগ্রামকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন করতে পারে না। বরং শ্রেণী সংগ্রাম চলাকলে ও জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভেদাভেদ দূরীকরণে ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যর্থ হওয়ায় জাতীয় সরকার গঠনও সম্ভব হয়নি। এমনকি স্বাধীনতার প্রবক্তা মওলানা ভাসানীকে প্রধান করে সোভিয়েতের মদদে ভারতের উদ্যোগে বিশ্বকে দেখানো উপদেষ্টা পরিষদও অকার্যকর থাকে। 

অপরদিকে, উগ্রজাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে সৃষ্ট বাঙ্গালি জোয়ারে উজ্জীবিত নেতা-কর্মীদের ফেলে আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা না করেই, পাকিস্তানী সামিরক বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে পাকিস্তান চলে যান। আর অন্যান্য নেতারা পূর্ব সিদ্ধান্তমতে জনগণকে নিরাপত্তাহীন রেখে ভারতে পালিয়ে যান মুক্তিকামী জনগণ মাঠে। এমন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব শূণ্যতা পূরণ করেন সেদিনের অরাজনৈতিক সামরিক কর্মকর্তা ‘মেজর জিয়া’ বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যে কারণে বলা হয়-‘স্বাধীনতার উদ্দ্যোক্তা ভাসানী, নেতা মুজিব ও ঘোষক জিয়া’। এ নিয়ে এক্ষেত্রে আলোচনা বা বিতর্ক নয়। এভাবে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের আশ্রয়ে থেকে ভারতীয় বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা কি বলবেন জানি না। তবে আমরা যারা দেশর অভ্যন্তরে থেকে দেশের জনগণের উপর নির্ভর করে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি দেশের শতকরা ৮৫ জন কৃষকের মধ্যে কমপক্ষে ৮৩ জন কৃষকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহনে এবং তাদের বীর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন-মরন যুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের ফসল’ যখন ঘরে তোলার সময়; ঠিক তখনই সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ রাশিয়ার সাথে ভারতের চুক্তি মোতাবেক রাশিয়ার দেয়া অস্ত্র ব্যবহারসহ ভারতীয় সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের কভারিং ফায়ার দেয়া শুরু করে এবং শেষ পর্যায়ে অংশ গ্রহন করে। তা করেছে বাংলাদেশের মুজিবনগর সরকার বলুন আর প্রবাসী সরকার বলুন অর্থাৎ স্বীকৃত সরকারের সাথে ভারতের ৭ দফা গোপন চুক্তি ভিত্তিতে। কিন্তু সাত কোটি মানুষের আকাঙ্খা ও লক্ষ্যকে পাশ কাটানো পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। তাই ভারত প্রথম স্বীকৃতি দেয় স্বাধীন বাংলাদেশকে।

সকলের ঐকমত্যের কথা বলতে গিয়ে এতগুলো কথা বলার হেতু জনগণ এখন সেদিনের তুলনায় শতভাগের কাছাকাছি না হলেও বহু বহুলাংশে সচেতন এবং জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন আকাশ-পাতাল বৈষম্যের এই সমাজ বদল ছাড়া তাঁদের ভাগ্যের বদল হবে না। দেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সম্পদ যাদের ভোগ দখলে বা মালিকানায় তাদের প্রধান্যেই ক্ষমতা ভোগকারী ও ক্ষমতায় যেতে তৎপর রাজনৈতিক দলগুলো। সেহেতু তারা গভীর ভাবে লক্ষ্য করছেন, ভারতের মদদপুষ্টরা অস্থিরতা সৃষ্টিতে প্রধানত দায়ী এবং দ্বিতীয়ত ক্ষমতা প্রাপ্তির প্রতিযোগীদের মধ্যে বড় দল হিসেবে বিজয় নিশ্চত ভাবা বিএনপিসহ ক্ষমতায় স্বাদ ভোগে দিশেহারা যারা। যদিও আধিপত্য পুনর্বহালে মরিয়া ভারতসহ বৃহৎ শক্তিসমূহের এবং তাদের এদেশীয় দালালদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এতে করে স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব যেমন হুমকির মুখে তেমনি সর্বক্ষেত্রেই অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এমতাবস্থায় সত্যিকারার্থে রাষ্ট্রক্ষমতার স্বপ্ন বুকে নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবার নামে যারা ভোটপ্রার্থী হওয়ার দলগুলোর প্রতি আহ্বান। দোহাই-জনগণকে অস্থিরতায় রেখে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে রেখে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কেন্দ্র করে দলে দলে বিভক্তির মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করা বা দুর্বল করা সমূচিন নয়। কারণ, ভারত তার অভ্যন্তরীন সংকট মোকাবিলায় এবং হারানো সুবিধা ফিরে পেতে মরিয়া। তাই, সকলের স্বপ্নকে ঐকমত্যের স্বপ্নে পরিণত করুন ও তা করতে হবে। এবং তা করতে হবে দেশ, জাতি ও জনগণের স্বার্থে। ঐক্যমতের ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তিই এ মুহুর্তে অপরিহার্য, যা আমাদের কাম্য। 

আরও পড়ুন- জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য নয়তো জাতীয় সরকার কাম্য

By SK Mazid Mukul

প্রধান সম্পাদক, গণপ্রহরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *